![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালোবাসার ফুল কোর্স...
চলো- ভালোবাসি... বলো- ভালোবাসি
- আবছার তৈয়বী
মানুষ মানেই ভালোবাসার খনি। যার মনে ভালোভাষা নেই, সে মানুষ না- পশু। সরি- ভুল বললাম, সে পশুও না, সে একটা পাথর- 'সঙে মর্মর'। আপনি যদি নিজেকে মানুষ মনে করেন- তো আপনাকে ভালোবাসতেই হবে। আপনি খেয়াল করুন- আপনার সৃষ্টিতে ভালোবাসা আছে, আপনার শুরুতে ভালোবাসা আছে, আপনার অন্তিমেও ভালোবাসা আছে। তো মধ্যখানে 'ভালোবাসা' থাকবে না কেন? মধ্য জীবনটাই মানুষের শ্রেষ্ঠ সময়। ভালোবাসার সময় এবং ভালো বাসায় বাস করার সময়। সে হিসেবে মানুষের মধ্যজীবনটাই 'ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ' সময়। হেলাল হাফিজ বলেছেন, "এখন যৌবন যার/ যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় তার"। আমি আবছার তৈয়বী বলছি- "এখন যৌবন যার/ ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ সময় তার"। তাই প্রাণখুলে ভালোবাসুন, মন ভরে ভালোবাসুন এবং হৃদয় উজাড় করেই ভালোবাসুন।
এখন প্রশ্ন- আপনি ভালোবাসবেনটা কাকে? প্রথম ভালোবাসবেন- যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন, তাঁকে। কারণ, তিনি যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতেন, তাহলে আপনি এই সুন্দর পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ কিছুই উপভোগ করতে পারতেন না। তাই আপনি যদি 'মানুষ' হিসেবে নিজেকে দাবি করেন, তো প্রথমেই আপনার স্রষ্টাকে ভালোবাসুন। কেননা তিনি বড় ভালোবেসেই আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার মনে ঠেসে ঠেসে ভালোবাসা ভরে দিয়েছেন। তিনি চাইলে আপনাকে গরু-ছাগল, শৃগাল-কুকুর ইত্যাদিও বানাতে পারতেন। কিন্তু না, তিনি আপনাকে মানুষই বানিয়েছেন। রূপ দিয়েছেন, লাবণ্য দিয়েছেন, যৌবন দিয়েছেন, সম্পদ দিয়েছেন এবং জীবন দিয়েছেনভ দেখার, শোনার, ধরার, চলার এবং চিন্তা করার শক্তি দিয়েছেন। তো- আপনি তাঁকে ভালোবাসবেন না কেন- কোন যুক্তিতে? দুনিয়ার সবকিছু আপনার মাথায় আসে; কিন্তু এই সহজ-সরল ও সত্য কথাটি আপনার মাথায় আসে না?
মানলাম, আপনি আপনার স্রষ্টাকে ভালোবাসার দাবি করেন। দাবি তো অনেকেই অনেক কিছু করে। কিন্তু আপনার দাবির পেছনে প্রমাণ থাকা চাই, যুক্তি থাকা চাই এবং সত্যতা থাকা চাই। আপনি যদি আপনার স্রষ্টাকে ভালোবাসেন, তো আপনি আপনার স্রষ্ট্রার গাইড লাইনের বাইরে যেতে পারেন না। যদি যান- তা হবে 'মিছামিছি ভালোবাসা'। ভালোবাসা নয়; বরং ভালোবাসার নামে 'ভড়ং'। আপনার স্রষ্টা বলেই দিয়েছেন- "ক্বুল ইন কুনতুম তুহিব্বূনাল্লাহা ফাত্তাবিয়ূনী ইউহবিবকুমুল্লাহু ওয়া ইয়াগফিরু লাকুম যুনূবাকুম ওয়াল্লাহু গাফূরুর রাহীম"। ' অর্থাৎ হে হাবীব (দরুদ)! আপনি বলে দিন- যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসার দাবি করো, তো আমারই অনুসরণ করো। (তাহলেই কেবল) আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ মার্জনা করবেন, আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান: ৩১) ভালোবাসার প্রেক্ষিত এবং অবয়ব আপনার স্রষ্টা আপনাকে বলে দিয়েছেন। এবার আপনি মন খুলে ভালোবাসুন। যতো ইচ্ছা ভালোবাসুন। মনে রাখবেন- যতো বেশি ভালোবাসবেন, আপনি ততোই আপনার স্রষ্টার প্রিয় হতে থাকবেন।
স্রষ্টাকে ভালোবাসতে গেলে প্রথম শর্তটাই হচ্ছে- নবীর অনুসরণ। আর কারো অনুসরণ ততোক্ষণ পর্যন্ত অনুসরণই হবে না, যদি না আপনি তাকে ভালোবাসেন। আর 'নবীকে ভালোবাসা' একজন মানুষের ঈমানের প্রথম এবং প্রধান শর্ত। প্রিয় রাসূল (দরুদ) বলেছেন, "লা ইউমিনু আহাদুকুম হাত্তা আকূনা আহাব্বা ইলাইহি মিন ওয়ালাদিহী ওয়া ওয়া-লিদিহী ওয়ান্নাসি আজমাঈন"। অর্থাৎ 'তোমাদের মধ্যে কেউ মুমিনই হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার সন্তানাদি, পিতা-মাতা এবং সকল মানুষের চেয়ে প্রিয় না হই। (বুখারী) অন্য হাদীসে আছে, "হাত্তা আকূনা আহাব্বা ইলাইহি মিন আহলিহী ওয়া মালিহী ওয়ান্নাসি আজমাঈন" অর্থাৎ 'যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পরিবার-পরিজন, তার ধন-সম্পদ এবং সকল মানুষ থেকে প্রিয় না হই'। (মুসলিম) আপনি শুধু আল্লাহর রাসূলকে ভালোবাসলেই হবে না। আপনার পরিবারে সেই ভালোবাসার চাষ করতে হবে। আল্লাহর রাসূল (দরুদ) নিজেই বলেছেন, "আদ্দিবূ আওলাদাকুম আলা সালাসি খিসালিন, হুব্বি নাবিয়্যিকুম ওয়া হুব্বি আহলি বায়তিহী ওয়া তিলাওয়াতিল ক্বুরআন"। অর্থাৎ 'তোমাদের সন্তাদেরকে তিন বিষয়ে শিক্ষা দাও। ১. তোমাদের নবীর ভালোবাসা ২. নবীর পরিবার-পরিজনদের ভালোবাসা এবং ৩. কোরআনের তিলাওয়াত। (তাবরানী)। তো যতো বেশি বেশি পারেন, এই ভালোবাসার চর্চা করুন। আরে ভাই, আপনার পরিবারে ভালোবাসার হাল-চাষই শুরু করে দিন না- কোন অসুবিধা আছে? ও হ্যাঁ, এই ভালোবাসাটাই কিন্তু আপনার স্রষ্টা তার নবীর মাধ্যমে আপনার কাছ থেকে চেয়েছেন। বলেছেন- "ক্বুল লা আসআলুকুম আলাইহি আজরান ইল্লাল মাওয়াদ্দাতা ফিল ক্বুরবা" অর্থাৎ ' হে হাবীব (দরুদ)! আপনি বলুন- আমি তোমাদের ঈমানের বিনিময়ে এবং তোমাদেরকে মানুষ বানাতে গিয়ে যে মেহনত করেছি- তার বিনিময়ে তোমাদের কাছে কিছুই চাই না। শুধু চাই- আমার নিকটজনের ভালোবাসা। (সূরা- শূরা: ২৩)
আল্লাহ, রাসূল (দরুদ), নবীর পরিবার-পরিজন এবং দীনকে ভালোবাসার পর প্রথম ভালোবাসতে হবে- আপনার মাতা-পিতাকে। এরপর আপনার জীবনসঙ্গী বা সঙ্গীনীকে। তারপর আপনার সন্তান-সন্ততিকে। তারপর আপনার আত্মীয়-স্বজনকে। তারপর পৃথিবীর অন্য মানুষদেরকে। অন্য মানুষদের ক্ষেত্রে প্রথমেই আসবে মুমিনদের পালা, তারপর অন্যদের। এভাবে স্টেপ বাই স্টেপ আপনি পৃথিবীর সব মানুষকেই ভালোবাসুন। শুধু মানুষকে নয়- পশু-পাখি, তরু-লতা, চন্দ্র-সূর্য সবকিছুকেই ভালোবাসুন। কারণ হাদীসে আছে, "আল খালক্বু ইয়ালিল্লাহ"- মানে 'পৃথিবীর সকল সৃষ্টিই আল্লাহর পরিবার'। তো আল্লাহকে ভালোবাসতে গেলে পৃথিবীর সবাইকে এবং সবকিছুকেই ভালোবাসতে হবে এবং তাদের কল্যাণ চিন্তা করতে হবে। মনে রাখবেন, 'ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু হলেন- নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'। সুতরাং তিনি যাদের ভালোবেসেছেন আপনিও তাদের ভালোবাসুন। তিনি যাদেরকে ভালোবাসতে বলেছেন এবং যেভাবে বলেছেন- আপনিও তাদেরকে সেভাবে ভালোবাসুন। ভালোবাসার বাঁধভাঙা জোয়ারে আপনার হৃদয়-মন প্লাবিত করুন। ভালোবাসতে কোন বাঁধা নেই।
মনে রাখবেন, মুমিন জীবনের ভালোবাসা কোনভাবেই একদিনের জন্য নয়, এক সপ্তাহের জন্য নয়, এক মাসের জন্য নয় এবং এক বছরের জন্যও নয়। মুমিনের ভালোবাসার ব্যাপ্তি সারাজীবনের জন্য। শুধু জীবনে নয়, মরণেও মুমিনের ভালোবাসা কমে না। কবরেও না, হাশরেও না। আল্লাহর প্রিয় রাসূল (দরুদ) বলেছেন, "আল মারউ মা'য়া মান আহবাবতা" মানে আপনি দুনিয়াতে যাকে ভালোবাসবেন, কিয়ামতের দিনে আপনার সাথে তার হাশর হবে। সূতরাং যাকে ভালোবাসবেন, তাকে তা জানিয়ে দিন যে, আপনি তাকে ভালোবাসেন। আর আপনিও জেনে রাখুন- মরার পরে তার সাথেই আপনার হাশর হবে এবং তার সাথেই আপনি জান্নাতে বা জাহান্নামে যাচ্ছেন। সুতরাং ভেবে-চিন্তে ভালোবাসুন।
আরেকটি কথা অতি অবশ্যই মনে রাখবেন- 'ভালোবাসার জন্ম হয় মনে এবং অবস্থান করে হৃদয়ে আর প্রকাশ পায় আচার-ব্যবহারে'। সুতরাং যে পুরুষ ভালোবাসার বিনিময়ে অবৈধভাবে আপনার দেহ চায়, সে আপনাকে মন থেকে ভালোবাসে না। আপনার দেহ ভোগ করেই সে পালাবে। পালানোর আগে যে যদি ধূর্ত ও প্রতারক হয়, আপনার অবৈধ ঘনিষ্ট মেলামেলার প্রমাণ জোগাড় করে নেবে। তারপর সে আপনাকে ব্লাকমেইল করবে। তদ্রুপ, যে নারী ভালোবাসার বিনিময়ে আপনার পকেট খালি করতে চায়- সেও আপনাকে মন থেকে ভালোবাসে না। আপনার হৃদয়ে সে ভালোবাসা খুঁজে না। খুঁজে আপনার সম্পদ। সে আপনার চিত্ত চায় না, বিত্ত চায়। আর আপনার চেয়ে বিত্তশালী কাউকে পেলে সে নির্ঘাত চম্পট দেবে। ভালোবাসার এই সূত্রটি মনে রাখুন- আপনি ঠকবেন না।
আমাদের দেশে এখন ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি যে 'ভালোবাসা দিবস' চালু হয়েছে- তা আমাদের নয়, ভিনদেশের। ভিন জাতির এবং ভিন ধর্মের। এই দিবস ঘৃণাভরে বর্জন করুন। কারণ, এই 'ভালোবাসা দিবস' আমাদের ধর্ম অনুমোদন করে না, আমাদের সমাজ স্বীকৃতি দেয় না, আমাদের সভ্যতা সায় দেয় না এবং আমাদের কৃষ্টির সাথে যায় না। দূর্ভাগ্যজনক ভাবে আজ কিছু মেয়ের সম্ভ্রমহানি হবে এবং আজ কিছু ছেলের কুমারত্ব নষ্ট হবে। আজ কেউ প্রথম আপনার হাত ধরবে। আজ কেউ প্রথম আপনার গা ঘেঁষে বসবে। ধীরে সে ছড়িয়ে পড়বে আপনার সারাদেহে। সুতরাং আপনি সতর্ক হোন। সেই মেয়ে বা ছেলেটি আপনি বা আপনার পরিবারের কোন সদস্য নয় তো? ভালোভাবে খেয়াল রাখুন। আল্লাহ না করুন, এমনটি হলে দুনিয়াতে আপনার যিল্লতি এবং আখিরাতে কঠিন শাস্তি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসার আগে প্রথমে নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন। আপনার নিজের মাঝে ভালোবাসার চর্চা করুন এবং আপনার পরিবারে ভালোবাসার শিক্ষা দিন। আপনার আশে-পাশে, আপনার সমাজে ভালোবাসার চাষ করুন। আপনার রাস্ট্রে ভালোবাসার হাট বসান- প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ। প্রিয় ভাই, বোন ও বন্ধুগণ! চলুন- ভালোবাসি। প্রিয় দেশবাসী! বলুন- ভালোবাসি।
তারিখ: ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।
©somewhere in net ltd.