নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যবাক

অাবছার তৈয়বী

আবছার তৈয়বী

অাবছার তৈয়বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতীয় পতাকার অবমাননা রুখো

১৯ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৭:৩৩

জাতীয় পতাকার অবমাননা রুখো
-আবছার তৈয়বী
বাংলাদেশের জনগণের জন্য গর্ব করার মতো যে কয়টা বিষয় আছে- তার মধ্যে আমাদের জাতীয় পতাকা অন্যতম। কারণ, পৃথিবীর কোন দেশের পতাকাতেই তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এভাবে ফুটে ওঠেনি, যেভাবে ফুটে ওঠেছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায়। আমার তো মনে হয়- এই পতাকাতে পুরো বাংলাদেশটাই ওঠে এসেছে। গাঢ় সবুজ জমিনে রক্ত লাল বৃত্ত আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে ৩০ লক্ষ শহীদ আর লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমহানির স্মারক আমাদের এই পতাকা। আমি 'খুনরাঙা দেশে তুমি মাছরাঙা হও' (পর্ব-১) লেখায় লিখেছিলাম- 'বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদের রক্তগুলো যদি একত্র করে পুরো দেশটাকে রাঙাতে বলা হয়, তাহলে ৫৫৫৯৮ বর্গমাইলের এই দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিনকে কয়েকবার রাঙানো যাবে'। এই পতাকার অবমাননা হতে দেখলে যে কোন দেশপ্রেমিক নাগরিকের মন ব্যথিত হবে এবং ক্ষুব্ধ হবে- এটাই স্বাভাবিক।

একেতো আমাদের দেশে 'পতাকা আইন' মানা হয় না। মানবেই বা কেমন করে? আমরা পতাকার রঙ, সাইজ এবং ব্যবহারবিধি সম্পর্কে অনেকেই জানি না। আমি একবার বাছাইকৃত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের বাংলাদেশের পতাকার রঙ ও সাইজ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। আশ্চর্য হয়ে গেলাম- শতকরা ৫ জন ছাত্রও সঠিক উত্তর দিতে পারেনি! তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় মাদ্রাসার ছাত্ররা ভালো উত্তর দিয়েছিল। এমনকি অনেকেই দেখে দেখেও পতাকার রঙ বলতে পারেনি- আপনি বিশ্বাস করবেন? আমি একবার আমার পাঠক/পাঠিকাদের কাছেও এই প্রশ্নটি করেছিলাম শতকরা ১৫% পাঠক/পাঠিকা সঠিক উত্তর দিতে পেরেছিল! সাধে কি আর বিসিএস পরীক্ষায় বাংলাদেশের পতাকার রঙ ও সাইজের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করে? যেখানে স্টারমার্ক বা এ প্লাস পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের এই অবস্থা- সেখানে আপনি সাধারণ জনগণের কাছে যে এই প্রশ্নটির সঠিক উত্তর পাবেন না- তা আমি হলফ করেই বলতে পারি। সেজন্য আপনি দেখবেন- বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট অফিস, ব্যাংকপাড়া এমনকি সরকারি অফিসেও জাতীয় পতাকার একেকটির রঙ একেক রকম। অনেকক্ষেত্রে সাইজের সাথে বৃত্তের মিল নেই। অথচ স্বাধীনতার কথা বলে চেতনাধারীরা মুখে ফেনা তুলছেন! বিষয়টি যুগপৎভাবে লজ্জার ও গ্লানির।

সেটা না হয় মানা গেল। কিন্তু হাজার হাজার লোকের সামনে এবং শিক্ষিত নাগরিক কর্তৃক বিশেষ করে তথাকথিত চেতনাধারীরা যদি জাতীয় পতাকার বেইজ্জতি করেন- সেটা তো কোন অবস্থাতেই মানা যায় না। জাতীয় পতাকার সবচেয়ে বেশি অবমাননা হয়- আমাদের জাতীয় দিবসে এবং খেলার সময়। জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানগুলোতে দেখবেন- যে পতাকা হাতে নিয়ে, বুকে নিয়ে এবং মাথায় নিয়ে কুচকাওয়াজ করলো, অনুষ্ঠান শেষে সেই পতাকাগুলো কিনা পদতলে গড়াগড়ি খায়! একবার এক অনুষ্ঠানে দুই পক্ষের মাঝে মারামারি লেগে গেলে দু'পক্ষই পতাকাযুক্ত লাঠি দিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে লেগে যায়। লাল-সবুজের পতাকার লাঠির আঘাতে মাথার 'লাল রস' বের হয়! আরেকবার এক সংস্কৃতিবান চেতনাধারীণী তার কুকুরের শরীর জাতীয় পতাকায় আবৃত করে! আরেকবার আরেক চেতনাধারীণী কুকুরের শরীরে জাতীয় পতাকা এঁকে দেয়। আরেকবার আরেক চেতানাধারী মহিলা পতাকার মানচিত্র খচিত শাড়ি পরিধান করে জাতীয় অনুষ্ঠানে যায়। কিন্তু রক্তের লাল বৃত্তটি থাকে তার 'তশরীফ' (নিতম্ব) বরাবর। এক চ্যানেল কর্তৃপক্ষ জাতীয় দিবসে মঞ্চের ফ্লোরে জাতীয় পতাকার জিজাইন করে। আর পতাকার লালবৃত্তের ওপর দাঁড়িয়ে চেতনাধারীরা গান-বাজনা করে! কেমন দেশপ্রেম- ভাবুন তো একবার! গত বছর কি তার আগের বছর বাংলাদেশের একটি সাস্কৃতিক দল বিদেশে পারফরমেন্স করতে যায়। তারা বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পোশাক পরিধান করে। সেই পোশাক পরিধান করেই ধিরিঙ্গি মেয়েগুলোর কী নর্তন-কুর্দনরে বাবা! তাতেও কোন অসুবিধা ছিল না। কিন্তু বাঁদরের লাফালাফির মতো নাচের সময় তাদের বুকের মাঝ বরাবর লাল বৃত্তটি বুকে ঝোলা মাংসপিণ্ডের সাথে একবার এদিকে যায়, আরেকবার সেদিকে যায়! রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় পতাকার এহেন অবমাননা কি বরদাশত করা যায়- আপনিই বলুন?

আরো কতোভাবে যে জাতীয় পতাকার অবমাননা হয়- সবগুলো বলতে গেলে একটি ছোটখাটো বই হয়ে যাবে। কিন্তু কোন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যদি 'ঝাড়ুর লাঠি'র সাথে বেঁধে জাতীয় পতাকা উড়ায়- আপনার কেমন লাগবে? তাদের কি পতাকার লাঠি কেনার টাকার অভাব? নাকি কয়েক হাত লম্বা লাঠি কিনতে ব্যাংকের গভর্নিং বডির মিটিং বসাতে হবে? নাকি বাজারে সে ধরণের লাঠি বা কঞ্চির অভাব? কী মনে হয়- আপনার? জামাত পরিচালিত 'ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ' এবং বিদেশী মালিকানাধীন 'ডাচ বাংলা ব্যাংক' এই ধৃষ্ঠতাপূর্ণ কাজটি করেছে! তার মানে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সেই শাখাগুলোর ম্যানেজার স্বাধীনতা বিরোধী। কিন্তু তাদের এই ধৃষ্ঠতাপূর্ণ কাজের জন্য কোন জেল-জরিমানা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী মন্ত্রী থাকাকালে যতো জায়গায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন- সবই করেছে বাম হাতে। আমাদের এক জাতীয় নেত্রীকে বাম হাতে পতাকা উড়াতেও আমি দেখেছি। ওরে বেআক্কেল! তোমাদের ডানহাতে কি 'মাইল্লাফিরা' হয়েছে? তোমাদের ডানহাত কি অবশ। মন্ত্রী বা জাতীয় নেতা হয়ে কেন আমাদের পতাকার অবমাননা করো? স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-শিবিরের কোন এক লেখায় আমি পড়েছিলাম- এই পতাকা তাদের পছন্দের না। পছন্দের হবেই বা কেমন করে? তারা কিংবা তাদের আদর্শের নেতারাই তো ৩০ লক্ষ স্বাধীনতাকামী মানুষের খুনী। ওদের হাতে শহীদের রক্ত লেগে আছে যে!

এবার আমাদের জাতীয় পতাকার অবমাননা করলো- মার্কিন কোম্পানী 'ঝাঝল' (Zazzle)। তারা তাদের ওয়েবসাইটে লাল-সবুজ রঙের অনেক পণ্যের সঙ্গে জুতা-সেন্ডেলেরও বিজ্ঞাপন দেয়। এমনকি কোন কোনটিতে বাংলাদেশের মানচিত্রও স্থান পায়। (১ম ছবি দ্রষ্টব্য)। যে কয়টি দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে প্রথমে মেনে নিতে পারেনি- তার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। বাংলাদেশের প্রতি এই ফিরিঙ্গিদের ক্ষোভ যে এখনো যায়নি- তা তাদের এই ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডে প্রমাণিত হয়। খবরে বেরিয়েছে- আমাদের সচেতন অনলাইন একটিভিস্টদের জোর প্রতিবাদে তারা বিজ্ঞাপনটি তাদের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তাদের ফ্যক্টরি বা বাজার থেকে তাদের প্রোডাক্টগুলো সরিয়ে নিয়েছে কি-না, তা জানা যায়নি। আমরা আমাদের জাতীয় পতাকার এই অবমাননার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানাই। বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি জানাই- সরকারি পর্যায়ে যেন এর শক্ত প্রতিবাদ জানানো হয় এবং ফ্যক্টরি বা বাজার থেকে প্রোডাক্টগুলো তুলে নিতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে। দেশেও কেউ যেন জাতীয় পতাকার অবমাননা করতে না পারে, তার জন্য সার্কুলার জারি করে। কারো দ্বারা জাতীয় পতাকার অবমাননা হলে যেন কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে। আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারক আমাদের 'জাতীয় পতাকা' আমাদের অহঙ্কার। আমরা আমাদের এ অহঙ্কারের অর্মযাদা হতে দেবো না, দিতে পারি না।


তারিখ: ১৯ মার্চ, ২০১৭ খৃ.
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.