নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যবাক

অাবছার তৈয়বী

আবছার তৈয়বী

অাবছার তৈয়বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কওমী সনদের স্বীকৃতি: লাভ কি এবং ক্ষতি কী? (পর্ব: ০১)

১২ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:০৫

কওমী সনদের স্বীকৃতি: লাভ কি এবং ক্ষতি কী? (পর্ব: ০১)
-আবছার তৈয়বী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমমান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এই স্বীকৃতির ফলে ইসলামিক স্টাডিজে এবং আরবি বিষয়ে এমএ ডিগ্রি পাবেন কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার রাতে গণভবনে কওমি মাদ্রাসার আলেম-ওলামাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই স্বীকৃতি প্রদান করেন। কওমি মাদ্রাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে এবং ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিকে ভিত্তি করে এই সমমান দেওয়া হলো বলেও তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী আলেমদের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রথমে একটা প্রজ্ঞাপন হবে। তারপর আপনারা যেভাবে চান সবকিছু মিলিয়ে একটা আইনি ভিত্তি দেওয়া হবে।’ (সূত্র: প্রথম আলো) প্রথমেই বলে রাখি- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবতা বিবর্জিত, রাজনৈতিক উদ্দশ্য প্রণোদিত এবং সবচেয়ে বড়ো কথা যেটা, সেটা হলো: 'এই ঘোষণা সংবিধান পরিপন্থী'। কীভাবে? চলুন- তা ব্যাখ্যা করি।

তার আগে বলে রাখি, এই বিষয়টি নিয়ে আমি লিখতে চাইছিলাম না। কারণ, বাংলাদেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে 'কর্তার ইচ্ছায়ই কর্ম হয়'। সেই কর্তাটি যদি সরকার হয়, তাহলে মনে রাখবেন- সরকার যা চায় তাই হবে। তবে কর্মটি যদি 'জঙ্গি দোসর' ও মারমুখো কোন গোষ্ঠির সাথে সংশ্লিষ্ট হয়- তাহলে তাদের ইচ্ছাও এতে প্রতিফলিত হবে। তারপরও আমি লিখছি এজন্য যে, আমার পাঠক/পাঠিকাদের পীড়াপীড়ি একেবারে সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। একজন তো লাফিয়ে লাফিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন এবং করজোড়ে অনুরোধও করেছেন। কয়েকজন সুন্নী নেতৃবৃন্দ এবং বিপূল সংখ্যক পাঠক ইনবক্সে বিভিন্ন ছবি ও নিউজ দিয়ে লিখতে বেশ তাগাদা দিয়েছেন। আমার আইডির সাথে সংযুক্ত এক ওহাবী বন্ধুও ফেবু মেসেঞ্জারে দু'বার কল দিয়েছেন। ব্যস্ত থাকায় তার কল রিসিভ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই অনুরোধে ঢেঁকি গেলা নয়, একেবারে বটগাছ গেলা! বাধ্য হয়ে লিখতে বসলাম। লিখবো যখন- তখন আমার পাঠক/পাঠিকাদের জন্য তথাকথিত এই কওমী মাদ্রাসার ইতিহাস, সিলেবাস এবং লেখাপড়ার মান ও উদ্দেশ্য নিয়ে একটু বলতে হয়। তারপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাটা ব্যাখ্যা করবো।

হালে যেটাকে 'কওমী মাদ্রাসা' বলে প্রচার চালানো হচ্ছে বা স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে- বাংলাদেশের জনমানুষের কাছে সেই মাদ্রাসার পরিচিতি ছিল 'খারেজী মাদ্রাসা' বা 'ওহাবী মাদ্রাসা' নামে। ওহাবীরা বলতো 'বড় মাদ্রাসা'। আমাদের ছোটকালে এ রকম বহু ছোট ছোট বড় মাদ্রাসার 'বড় সভা' হতো। সেই বড় সভাগুলোতে দোজখের ভয় ও বেহেশতের লোভ দেখিয়ে কেঁদে-কেটে মানুষের পকেট কাটা হতো। ফসলী মওসূমে ধান তোলা, কোরবানীর সময় পশুর চামড়া কালেকশন এবং ধর্মপ্রাণ মহিলাদের কাছে বেহেশত বিক্রি করে বাড়ি বাড়ি 'মুঠিচাল' ও হাঁস মুরগির আন্ডা কওম মোল্লাদের হাতে তুলে দিতে প্রলুব্ধ করা হতো। কোরআনের কথা বলে কৃষকের ক্ষেত থেকে আলু, মূলা, বেগুন, সিম, বাঁধাকপি, কাঁচা মরিচসহ তরি- তরকারি সংগ্রহ করা হতো। রমজানের সময় যাকাত- ফিতরা তো আছেই। এসব ওহাবী, খারেজী কওমী মাদ্রাসার বড় বড় যেসব দালানকোঠা দেখছেন- তাও ভিক্ষাবৃত্তির টাকায় বানানো এবং সবগুলোই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সরকার, দাতা সংস্থা ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের চাঁদায়। এখনো প্রতি রমজানে একই মাদ্রাসার বিভিন্ন শিক্ষক চাঁদার রশিদ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ভ্রমণ করেন এবং ব্যাপক চাঁদাবাজি করেন। তবে সেই চাঁদাবাজি জোরে-জব্বরে নয়- চেয়ে-মেগে, ভিক্ষা করে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ হবার পর তারা পাসপোর্টে স্থায়ী ভিসা লাগিয়ে নিয়েছেন। খুবই ছোট ছোট রশিদ বই নাভির নিচ থেকে হাঁটুর উপরে 'বিশেষ বিশেষ জায়গায়' বিশেষ কায়দায় বহণ করেন। তবে বেশিরভাগ মাদ্রাসা যেগুলো আগে থেকেই এনলিস্টেড, তারা বিপূল টাকা পান এবং সরকারি ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে সেই টাকা দেশে পাঠান। এখানে তারা দোকানে দোকানে ঘুরেন কোরআন পড়ার ছবি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেন। বিশেষ করে রমজান মাসে ঝাঁকে ঝাঁকে এসব ওহাবী কওমী মোল্লারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে আসেন। সেই টাকা দিয়ে তারা একটার পর একটা মাদ্রাসা এবং দালান কোঠা গড়ে তুলছেন।

বর্তমানে দেশের জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বিপূল সংখ্যক কওমী মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। সে সব কওমী মাদ্রাসার কোন পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই, নেই সরকারি বেসরকারি কোন সংস্থার কাছেও। এমনকি সেই হিসাব কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে-'বেফাক'র কাছেও নেই। উকিপিডিয়ার মতে- দেশে কওমী মাদ্রাসার সংখ্যা ১৫ হাজার। বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে জানা যায়, কওমী মাদ্রাসার সংখ্যা ২৩-৫৭ হাজার! সরকারি অনুমোদন ব্যতিরেকে এতো বিপূল সংখ্যক ওহাবী কওমী মাদ্রাসা কিভাবে গড়ে ওঠে- তা এক আশ্চর্যের বিষয়! প্রায় প্রতিটি মাদ্রাসায় কোমলমতি শিশুদেরকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এমনকি যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ভুরিভুরি। যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুটি মারা গেলে বা নির্যাতনের মাত্রা বেশি হলে- আচানক সেই খবর জাতি জানতে পারে। কিন্তু শতকরা ৯৯.৯৯ টি ঘটনা লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যায়। কোমলমতি শিশুদের কান্নায় খোদার আরশ কাঁপে, কিন্তু পাষাণ নির্যাতকের মন গলে না। অভিভাবকের হুঁশ হয় না এবং সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও জানতে পারে না। মানবাধিকার সংস্থাগুলোও কোন উচ্চ্যবাচ্য করে না। ফলে দিনের পর দিন সেই নির্যাতন বাড়ছে।

এমতাবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে আসল একেবারে সর্বশেষ শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি! কিন্তু কেন এই স্বীকৃত আসল, কিভাবে আসল, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং ডিগ্রি লেবেল বাদ দিয়ে কেন 'দওরায়ে হাদিস'কে স্নাতকোত্তর মান দিলেন, এসব জানার আগে চলুন জানি- কওমী শিক্ষাটা আসলে কী? খারেজী বা ওহাবী মাদ্রাসাগুলোকে 'কওমী মাদ্রাসা' বলার কারণটা কী? আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন- পৃথিবীর কোথাও 'কওমী মাদ্রাসা' বলে কোন মাদ্রাসা নেই। ভারতেও না, পাকিস্তানেও না এবং সৌদি আরবেও না। এমনকি বাংলাদেশে যেগুলোকে 'কওমী মাদ্রাসা' বলা হচ্ছে, সেগুলোও না। আপনি খবর নিয়ে দেখুন- কোন মাদ্রাসার নামের সাথেই 'কওম' বা কওমী শব্দটি যুক্ত নেই। ব্যাপারটি কতোটা হাস্যকর- তা আগে বুঝতে হলে 'কওম' মানে কী- তা আগে বুঝতে হবে। 'কওম' একটি আরবী শব্দ। যার অর্থ গোত্র বা সম্প্রদায়। বৃহৎ অর্থে জাতিকেও 'কওম' বলা হয়ে থাকে। যদি তাই হয়, তো আমাদের বুঝতে হবে- এই মাদ্রাসাগুলো কোন 'কওম' বা সম্প্রদায়ের আদর্শে গড়া? যদি বলেন- কওমী মাদ্রাসা মানে 'জাতীয় মাদ্রাসা'- তা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। কারণ, তা পুরোটাই মিথ্যা। এই সব কওমী মাদ্রাসার কোনটিতেই জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। বরং তার জাতিয় সঙ্গীতকে শিরক জানে। কোন কওমী মাদ্রাসাতেই জাতীয় পাঠ্যক্রমও পড়ানো হয় না। জাতীয় নেতাদের জীবনী পড়ানো হয় না। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্যের ইতিহাস পড়ানো হয় না। বাঙালি জাতির উত্থান-পতন, আনন্দ-বেদনা-কান্না সংগ্রাম কিছুই না। দেশপ্রেমের কোন কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ পড়ানো হয় না। তো জাতীয় চেতনাবোধে উজ্জীবিত দেশপ্রেমিক মানুষ তথাকথিত এই কওমী মাদ্রাসাগুলো থেকে কিভাবে বের হবে? সেক্ষেত্রে কওমীরা 'জঙ্গি' বা 'জঙ্গি দোসর' না হয়ে আর কারা হবে- বলুন? সরকার যদি 'মান্দার গাছে' কাঠাল ফল বা তরমুজ ধরেছে বলে দেখতে পান- তো আমাদের বলার কিছুই নেই। (চলবে- ইনশাআল্লাহ)

(বি.দ্র.: জনসচেতনতার লক্ষ্যে এবং সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে লেখাটি বেশি বেশি শেয়ার করুন। কপি করে অবিকৃতভাবে নিজেদের টাইমলাইন থেকে একযোগে পোস্ট করুন। সকলকেই ধন্যবাদ।)

তারিখ: ১২ এপ্রিল, ২০১৭ খৃ.
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.