নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যবাক

অাবছার তৈয়বী

আবছার তৈয়বী

অাবছার তৈয়বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওহাবী-কওমীদের উল্লম্ফন ও মিথ্যাচার, সরকারের দায়সারা ভাব এবং সুন্নীদের প্রতি মিডিয়ার অবমূল্যায়ন

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:১০

কওমী সনদের স্বীকৃতি: লাভ কি এবং ক্ষতি কী? (পর্ব: ০৫)
-আবছার তৈয়বী
ওহাবী-কওমীদের উল্লম্ফন ও মিথ্যাচার, সরকারের দায়সারা ভাব এবং সুন্নীদের প্রতি মিডিয়ার
অবমূল্যায়ন
বর্তমানে ওহাবী-কওমীদের নিয়ে বাঙালিদের মাঝে রচিত হচ্ছে- শত শত জোকস। এই জোকসগুলো ওহাবী কওমীদের কথা দিয়েই রচিত। আমার আইডির সাথে সংযুক্ত ওহাবী-কওমীদের সাথে বিভিন্ন সময়ের আলাপচারিতায় ওঠে এসেছে তেমন কিছু কথা। যেগুলোকে আপনারা 'জোকস' হিসেবে নিতে পারবেন। যেমন- কওমী মানে কী? কওমী মানে হচ্ছে 'জাতীয়'। কয়েকটি জাতীয় স্থাপনার নাম বলতো? যেমন- 'হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা'। সেই মাদ্রাসার নাম কী? 'আল জামেয়াতুল আহলিয়া'। আহলিয়া কেন? কারণ, 'সেখানে আমাদের আল্লামা শফি হুজুর পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন'। তো এটা জাতীয় মাদ্রাসা হলো কী করে? কারণ, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা এখানে পড়ে। কোন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানর পড়ে? রোহিঙ্গা জাতির। বাঙালি জাতির কী আছে? 'পুকুরে রুই-কাতলা মাছ আছে'। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় মাছ তো ইলিশ? হ্যাঁ, কিন্তু ইলিশকে জাতীয় মাছ করা ঠিক হয়নি। কেন? কারণ, 'ইলিশ পুকুরে চাষ করা যায় না'। তোমাদের মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা তোলা হয় না কেন? কারণ, 'ওই পতাকায় কলেমা নেই'। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়না কেন? কারণ, 'ওটা হিন্দু মালাউন রচনা করেছে'। তো কোন কবির সঙ্গীত গাইবে? 'জাতীয় কবির'। জাতীয় কবির একটি সঙ্গীত বলতো? 'দেশ নিয়ে জাতীয় কবির কোন সঙ্গীত নাই'। একজন জাতীয় নেতার নাম বলো? 'আল্লামা শফি হুজুর'। কীভাবে? কারণ, 'তাকে কাছে পেতে হাসিনা, খালেদা ও এরশাদ প্রতিযোগিতা করে'। সেখানে কোন মাদ্রাসার নেসাব পড়ানো হয়? 'দেওবন্দ মাদ্রাসার'। দেওবন্দ মাদ্রাসাটি কোথায়? 'ভারতের দিল্লিতে'! এই হলো জাতির 'শ্রেষ্ঠ সন্তানদের' কথা। যাদেরকে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাস্টার্সের মান দিতে যাচ্ছেন!

দিতে যাচ্ছেন কি- প্রজ্ঞাপন ঘোষণার সাথে সাথে ওহাবী-কওমীরা পরীক্ষার তারিখও ঘোষণা করেছে- আগামী ১৭ মে থেকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখে ঘোষণাটি শুনে তারা উল্লাসে উথলা হয়ে এতোই উল্লম্ফন করছে যে, যেন প্রতিটি ওহাবী-কওমী মাদ্রাসায় ঈদের চাঁদ উঠেছে। কিন্তু চাঁদটি দেখার জন্য আপনি চাইলেই ওদের মাদ্রাসার ভেতরে ঢুকতে পারবেন না। সাধারণ মানুষ দূরে থাক, সাংবাদিকরাও সেখানে সহজে ঢুকতে পারেন না। ঢুকলেও মাদ্রাসার চৌহদ্দী ঘুরে দেখতে পারেন না। সেই সত্যটি ওঠে এসেছে গতরাতের এটিএন বাংলার রিপোর্টে। নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে অনেক দূর থেকে ক্যামেরাকে জুম করে তাকে ছবি নিতে হয়েছে! কেন ওহাবী-কওমী মাদ্রাসাগুলো সাংবাদিকদেরকে ঘুরে দেখতে দেওয়া হয় না? কারণ, ওগুলো একেকটা দুর্গ। মানে মিনি ক্যান্টনমেন্ট! সেখানে লাঠি আছে, তলোয়ার আছে, অস্ত্র আছে এবং বোমাও আছে। প্রতিটি ওহাবী-কওমী মাদ্রাসাতেই নির্বাচিত ছাত্রদের এসবের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তো সেই ক্যান্টনমেন্টে সর্বসাধারণের প্রবেশ থাকবে- কোন যুক্তিতে? যেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোও অভিযান চালাতে ভয় পায়! কিন্তু এই ক্যান্টনম্যন্টগুলো যে দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না- তার গ্যারান্টি কী? দূর অতীতে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে কিন্তু এসব ক্যান্টনমেন্ট হানাদারদের সহযোগী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। আর নিকট অতীতেও এসব ক্যন্টনমেন্ট দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে বারবার ব্যবহৃত হয়েছে। বাংলাদেশের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো এসব ক্যান্টনমেন্টের ব্যাপারে ভালো করেই জানেন। সাংবাদিকরাও জানেন। আরো জানেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি ইউনিট।

আপনি দেখবেন- এই ক্যান্টনম্যন্টগুলো রাস্তাকে পেছেনে দিয়ে গড়া। মানে এদেশের জনমানুষকে 'পশ্চাৎদেশ দেখানো' আর কি! এর কারণ কী? কারণটি হলো- ক্যান্টনমেন্টরূপী এসব মাদ্রাসার ভেতর কী চলে- তা যেন কেউ জানতে না পারে। সব সময় 'ঢাক গুড়গুড়' অবস্থা। শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনভাবে গড়ে ওঠেনি। কোথায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচুর আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকবে, খেলার মাঠ থাকবে- তা না, বরং প্রতিটি ওহাবী-কওমী মাদ্রাসাতেই ঘোমট অন্ধকার! অার অন্ধকারে কী কী হয়- তা কী করে বলি? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের 'বিল্ডিং কোড' না মেনে এভাবে জানালাহীন উঁচু উঁচু বিল্ডিং করার মাঝে বড় একটা 'কিন্তু' আছে। সেই কিন্তুটি কী- তা আমি এখানে ব্যাখ্যা করতে পারবো না। তবে যেটা না বললেই নয়, তা হচ্ছে- এর মাধ্যমে কওমী শিক্ষার্থীদের মনোবৈকল্য করে দেযা হচ্ছে। আর সেই মনোবৈকল্যদের হাতেই সরকার তুলে দিচ্ছে 'অবৈধ সার্টিফিকেট'। ওহাবী-কওমীদেরকে এই অবৈধ সার্টিফিকেট তুলে দেয়ার মাধ্যমে সরকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও মনোবৈকল্য করে দিচ্ছে। কীভাবে? ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানবে- দাবি আদায় করতে হলে তাদের লাঠিধারী হতে হবে, অস্ত্রধারি হতে হবে, বোমাবাজ হতে হবে এবং জঙ্গি হতে হবে। গাড়িতে আগুন দিতে হবে, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে হবে, গাছ কেটে পরিবেশ নষ্ট করতে হবে, রেললাইন উপড়ে ফেলতে হবে, জঙ্গি মিছিল করতে হবে, গাড়ি ভাংচুর করতে হবে এবং থানায় আক্রমণ করতে হবে! তবেই তারা আলোচনায় আসবে এবং সরকার তাদের গুরুত্ব দেবে। সাংবাদিকরা ক্যামেরা নিয়ে তাদের পিছু পিছু ছুটবে। পক্ষান্তরে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানবে- শান্ত-শিষ্ট থাকলে, দেশের আইন-শৃঙ্খলার প্রতি অনুগত থাকলে, সরকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলে এবং সাধারণ নাগরিকের প্রতি মমত্ববোধ থাকলে, সে গুরুত্ব হারাবে। এভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মনোজগতে পরিবর্তন আসবে। যা দেশ ও জাতির জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। একটি সভ্যদেশে এটি হতে পারে না। 'দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের লালন' যে সমাজে হয় না- সে সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে বাধ্য। এই বিষয়গুলো সরকারকে বুঝতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

সরকার এবং সাংবাদিকরা এদেশে শান্তিপ্রিয় সুন্নী জনতাকে বারবার অবমূল্যায়ন করেছেন। ক্ষেত্র বিশেষে শান্তিপ্রিয় সুন্নী সমাজ অবিচারেরও শিকার হয়েছে। এজন্য সরকার এবং সাংবাদিকরা যতোটুকু দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী সুন্নীরা। তার প্রধান কারণ হলো- সুন্নীরা এখনো সরকারবান্ধব বা সাংবাদিকবান্ধব হতে পারেনি। কোন সরকারের ভেতরেই সুন্নীরা নিজেদের লোক সৃষ্টি করতে পারেনি। বর্তমান সরকারের ভেতর বাংলাদেশের সকল মতবাদের অনুরাগী লোক আছেন। কিন্তু সুন্নী অনুরাগী কোন লোক নেই। সুন্নীদের যারাই বিভিন্ন সময় সরকারের কাছাকাছি অবস্থানে ছিলেন এবং আছেন- তারা প্রত্যেকেই নিজেদের নিয়ে ভেবেছেন এবং নিজেদের লাভালাভ দেখেছেন, কিন্তু মাযহাব ও মিল্লাতের লাভালাভ দেখেননি। যার ফলে সুন্নীরা বরাবরই বঞ্চিত এবং গুরুত্বহীন হয়ে অবহেলিত থেকেছে। মিডিয়ার বেলায় সেটি আরো বড় সত্য। মিডিয়াতে সুন্নীদের কোন লোকই নেই। সুন্নীদের সাংবাদিক নেই, সম্পাদক নেই, লেখক নেই, কলামিস্ট নেই এবং কোন মিডিয়াও নেই। এমনকি মিডিয়াতে কথা বলার মতো উল্লেখযোগ্য লোকও নেই। সুন্নীদের উচিত- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবি, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক ও লেখক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সুন্নীদের হয়ে কথা বলার লোক সৃষ্টি করা। যারা হবেন- ইতিহাস-ঐতিহ্য সচেতন, বাতিল মতবাদ ও তাদের ঘৃণ্য ইতিহাস সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ ওয়াকিবহাল, সুন্নী আকিদার প্রতি ডেডিকেটেড এবং অবশ্যই প্রত্যুপন্নমতি ও মিষ্টভাষী। এককথায় তাঁরা হবেন- 'হরফুন মল্লা'।

সেখানে 'সবেধন নীলমণি' আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রিয় বখতেয়ার ভাই। তিনিও সবসময় চট্টগ্রামে অবস্থান করায় 'মিডিয়া মূল্যায়ন' পান না। গতরাতে এটিএন বাংলা নিউজের সাক্ষাৎকারে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাঁকে বিস্তারিত বলতে দেয়া হয়নি। সঞ্চালকের উচিত ছিল- ওহাবী-কওমী প্রতিনিধি ও সুন্নী প্রতিনিধিকে মুখোমুখি বসিয়ে দেয়া। তারপর উভয়ের কাছে ওহাবী-কওমীদের সনদের মান সংক্রান্ত যতো রকম প্রশ্ন আছে- তা করতে থাকা। কারণ, একপক্ষ অবৈধ বেনিফিশিয়ারী এবং অপরপক্ষ বৈষম্যের বৈধ প্রতিবাদকারী। কিন্তু এই একটি বিষয়ে বিভিন্ন চ্যানেলে যারাই আলোচনা করছেন- চূড়ান্ত পর্যায়ে তারা সুন্নী এবং ওহাবী-কওমী কারোরই কল্যাণকামী নয়। এমনকি তাদের ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ জানেনই না। তাই জাতির এই 'সর্বনাশের আয়োজনে' দুই পক্ষের মাঝে 'ককফাইট' না হয়ে ভাসাভাসা ও হাসাহাসা আলোচনা হচ্ছে! আমি সুন্নী নেতৃবৃন্দের কাছে সবিনয়ে অনুরোধ করবো- এই বিষয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দেশের সকল মাদ্রাসাকে সম্পৃক্ত করতে। সকল মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে। দেশের আপামর জনগণকে 'জাতির সর্বনাশের' এই আয়োজনের বিরুদ্ধে সজাগ করে তুলতে। পাশাপাশি বখতেয়ার ভাই যেন একসপ্তাহের জন্য হলেও ঢাকায় অবস্থান করেন এবং তার আগে এ ব্যাপারে আলোচনায় ডাকার জন্য প্রতিটি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ও টকশো সঞ্চালকদের যেন চিঠি দেন। সবচেয়ে বড় কথা যেটা, সেটা হলো- অনতিবিলম্বে 'অতি অবশ্যই' যেন একজন সিনিয়র আইনজীবিকে দিয়ে 'ওহাবী-কওমীদের দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান দেয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না' মর্মে হাইকোর্টে রীট পিটিশন দায়ের করেন। সুন্নী লেখকদের দায়িত্ব হলো- অন্য সব বিষয় বাদ দিয়ে শুধু এই বিষয়টিকে নিয়ে পত্রিকায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করা। সুন্নী জনসাধারণের দায়িত্ব হলো- সেই সব লেখাগুলোকে বেশি বেশি লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করা এবং কপি-পেইস্ট করে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া। কিন্তু ক্ষুদ্র এই লেখকের কথা সুন্নী সমাজ শুনবে কী- মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন বটে!

তারিখ: ১৭ এপ্রিল, ২০১৭ খৃ.
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.