![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'সারাক্ষণ ফেসবুক ফেসবুক। কি মধু আছে এই ফেসবুকে? বন্ধুদের সাথে তো সারাক্ষণ ই দেখা হচ্ছে, তো এই ফেসবুকে আবার কিসের এতো রসের আলাপ? আর কোনো কথা থাকলে ফোন করে কথা বল। চোখের সামনে এই জাদুর বাক্স নিয়ে বসে থাকতে থাকতে তো চোখটা যাবে একদিন.......... আই...... তুই কি আমার কথা শুনতেসিশ?'
-উফফ মা, Disturb কইরো না তো। তুমি এইসব ফেসবুক টেসবুকের মানে বুঝবানা'
'তো মানে বুঝায় দিলেই তো হোয়। দে একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে, আমিও চ্যাট করি, দেখি তোরা কি এমন মজা পাস এইসব করে'
-'তোমাকে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে কি হবে?তুমি কার সাথে চ্যাট করবা? তোমার ঐ লেতরা বান্ধুবী গুলার সাথে? যারা কিনা তোমাকে একটা কল ও দেয়না? আর কে আসে তোমার পরিচিত বন্ধু শুনি?'
সেইদিন আম্মু আর কিছু বলল না। আমিও আমার Virtual best friends দের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। ভাবলাম, আম্মুর মত আমার এমন অবস্থা কখনো হবে না। আমি সব সময় আমার friends দের সাথে যোগাযোগ রাখবো। বিয়ে করে ফেললেও যোগাযোগ রাখবো।
(অথচ স্কুল- কলেজ লাইফের যেই জানের চেয়েও প্রিয় বান্ধুবীটা তার ছিলো, তার সাথে কলেজ শেষ হওয়ার পরদিন থেকেই যে যোগাযোগ নেই, সেই খবর রাইমাকে খুব একটা বিচলিত করে না,কেনোনা তার মতে, এমন তো হতেই পারে, এটা তেমন কোনো বড় ব্যাপার না)
মাস খানেক পর রাইমার মা আবারও মেয়ের কাছে হাজির হল সেই একি আবদার নিয়ে। তাকে এখন ফেসবুক খুলে দিতেই হবে।
-'আম্মু, এর আগের বার যখন তোমাকে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে দিসিলাম, তুমি তো তখন ফিরেও তাকাও নাই। তুমি ব্যবহার করনাই দেখে ঐ অ্যাকাউন্ট একেবারে বন্ধই করে দিসি। আমার তো মনেও নাই ঐ অ্যাকাউন্ট এর details'
'আরে দে না একটা নতুন আইডি খুলে,কি ই বা আর এমন হবে? এইবার অবশ্যই শিখবো। আমার কলেজ লাইফের বন্ধুদের খুজবো। ওদের সাথে চ্যাট করবো। দে না রাই একটা নতুন আইডি খুলে।'
-'আচ্ছা আচ্ছা বাবা দিচ্ছি দাড়াও।'
অতঃপর আমার আম্মুকে ফেসবুকে একটা নতুন আইডি খুলে দেয়া হল। এবং শুরু হয়ে গেলো তাকে ফেসবুকের বিষয়ে ট্রেইনিং দেয়া। প্রতিদিন এক এক জন বন্ধু- বান্ধুবীদের আম্মু খুঁজে খুঁজে বের করে আর সেই খুশিতে লাফায়। আমি অবশ্য এতোটা তোওয়াক্কা করতাম না। কারণ আমি তো আবার আমার নিজের বন্ধু- বান্ধুবীদের নিয়েই ব্যাস্ত ছিলাম।
একদিন আম্মু ডেকে বললো, ' রাই দেখে যা, আমার friends রা এক এক জন কোথায় চলে গেসে আর আমি কই পরে রইলাম।'
প্রথমে আমার আম্মুর সেই so-called established (আমি যা ধারনা করেছিলাম আরকি) বন্ধুদের একদমই দেখতে ইচ্ছা করছিলো না। কিন্তু যখন দেখা শুরু করলাম, আমি তো পুরাই হতবাক হয়ে গেলাম। বলতে গেলে প্রত্যেকেই সমাজের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব। কেও ডাক্তার, কেও ইন্জিনিয়ার, কেও অনেক বড় ব্যাংকার, আর আমার মা? নিজের সংসার-সন্তানদের গড়ে তুলতে যেয়ে নিজেই যেন কোথাও হারিয়ে গিয়েছে।
এসব দেখে আম্মুর সাথে সাথে আমারও মনটা ইক্টু খারাপ হয়ে গেলো।
পরদিন আম্মু তার এক বান্ধুবীকে রাতের বেলায় মেসেজ পাঠায়। মেসেজে তার ফোন নাম্বার চায়। ওপার থেকে সাথে সাথে রিপ্লাই ও চলে আসে( ওয়াহ!!) যাইহোক, বান্ধুবীর সাথে দীর্ঘ অনেক বছর পর কথা বলতে পারবে দেখে সেই উত্তেজনায় রাত ১১;৩০টার দিকেই আম্মু তাকে ফোন দিয়ে দিলো। আমি তো ভাবলাম এত রাতে ফোন দেয়াটা আম্মুর ঠিক হলনা। ওমা!!! সে কি? ঐ আন্টি ই দেখি ফোন রাখার কোনো নাম ই নেয় না। দুই বান্ধুবী মিলে অনেকক্ষণ গল্প করলো। আমি লক্ষ করেছিলাম, আম্মু যখন উনাকে হেলো বলল, তখন আম্মুর নিঃশ্বাস বেড়ে যায় আর অতি সুখে কাতর হয়ে আম্মুর প্রায় কান্নাই চলে আসে।
ফোন রাখার পর যা বুঝলাম, তারা সবাই ই এতদিন আম্মুকে খোঁজার চেষ্টা করেছে, কিন্তু কারোর কাছেই আম্মুর সাথে যোগাযোগ করার কোনো ঠিকানাই ছিলো না। তাই কারর সাথেই আম্মুর কোনো যোগাযোগ হতে পারেনাই।
এতদিন পর বান্ধুবীকে ফিরে পেয়ে আম্মু যেমন উত্তেজিত, ওপড় পাশের আন্টও ঠিক তেমনি উত্তেজিত। এরা এতই উত্তেজিত হয়ে গিয়েছে যে, পরের দিন ই এরা সবাই দেখা করার প্ল্যানও করে ফেলেছে।
আজ সকাল থেকে তাই আম্মু অনেক খুশি। খুবই সতঃস্ফুর্ত ভাবে সব কাজ করছে।আর দুপুর বেলা খেয়ে দেয়ে আম্মু অবশেষে তার বান্ধুবীদের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়।
অনেকদিন পর আজকে আম্মুকে এত খুশি হতে দেখলাম।
খাঁচায় বন্দি এক পাখি তার সাথীদের খোঁজ পেলে যেমন ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, আম্মু ঠিক ওমনটাই করছিলো। অবশেষে আম্মু বুঝলো ফেসবুকের মূল্য।
আর এতদিনপর আম্মুর মনে এই উদ্দীপনা এনে দেয়ার জন্য আমি ফেসবুক কে ধন্যবাদ জানাই।
Thank You Facebook
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:০০
অজ্ঞাত অন্বেষা বলেছেন: আপনি তো এমনেতেও হ্যাপী :p
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:১৩
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আপনার খুশীতে, আমিও খুশী।।