নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের সম্পর্কে আর কি লিখবো, অন্যেরা যা ভাবছে তা-ই শেয়ার করবো...
৫ জানুয়ারি ২০১৪। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার জন্য দশম সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এ নির্বাচনে আমার মত কয়েক হাজার প্রিজাইডিং আফিসারকে কেন্দ্রে ভোট পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। আমার দায়িত্ব পড়েছিল লালবাগ সরকারি ২ নং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। লালবাগ কেল্লার ঠিক পেছনে টেম্পু স্ট্যান্ড সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড়ে স্কুলটি। নীচতলায় ১৭ নং কেন্দ্র। একই স্কুলের দোতলায় ১৮ নং কেন্দ্র। উপরে আমারই আরেক সহকর্মী ১৮ নং কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার। দু'জন একই স্কুল বিল্ডিংয়ে পড়েছি, তাই বিপদ-আপদে কিছুটা নিরাপত্তা বোধ করলাম।
৪ জানুয়ারি দুপুরেই নির্বাচনি মালামাল, পুলিশ ফোর্স এবং আনসার দল নিয়ে চলে গেলাম কেন্দ্রে। জীর্ণদশা প্রাইমারী স্কুলটি দেখে প্রথমেই একটা ধাক্কা খেলাম। কোনো রুমেই তালা নেই। দরজা ভেঙে যায় যায় অবস্থা। দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখি এক হাঁটু ধুলা। ধুলা বালির রাজ্যে কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এগুলো সাফ সুতরো করার জন্য আনসার বাহিনীর সহায়তা দরকার। স্কুলের হেড মাস্টার স্কুলেই আছেন। ওনার রুম দোতলায়। ছাদ থেকে চুনাবালির আস্তর খসে খসে পড়ছে। হেড স্যারের সাথে স্কুল নিয়ে একটু আলোচনা করলাম। প্রায় ১৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে পরিচালিত এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের সহকারী কেউ নেই!
একটি সরকারি অফিসে প্রধান কর্মকর্তার পিয়ন-আর্দালি-চাপরাশি-আয়া-বুয়া কতজন থাকেন কেউ ভেবে দেখেছেন? পিয়ন-ড্রাইভার-মালি-চাকর বাকর তো অগুণতি। আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষকের ফাইলটা এগিয়ে দেবে এরকম পিয়ন নাই। ধুলাবালি মুছে টেবিলটা পরিস্কার করে দেবে এরকম একজন আয়া নাই। স্কুলে এরকম কোনো পদও নেই। প্রধান শিক্ষককেই সবকিছু করতে হয়। দুই হাজার টাকা দিয়ে একজন আয়া রেখেছেন বেসরকারী ভাবে। নিজের পকেট থেকেই তার বেতন দিতে হয়।
প্রাথমিক স্তরের এই সরকারি স্কুলগুলো অবর্ণনীয় দুর্দশায় আছে। স্কুলের জীর্ণদশা দেখার কেউ নেই। প্রধান শিক্ষক আর কত করবেন? শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা একটু ভেবে দেখবেন কি প্রাইমারী স্কুলের একজন প্রধান শিক্ষকের কাজের চেয়ে আপনার কাজ কত কম? আপনিও একদিন এরকম কোনো এক প্রাইমারী স্কুল থেকে পড়াশুনা করে এসেছেন। এখন পিয়ন-আর্দালি-চাপরাশি পরিবেষ্টিত হয়ে অফিস করছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও একজন প্রশাসক। পুরো স্কুলের প্রশাসনের দায়িত্ব তাঁর হাতে। সুতরাং তারও একজন দু'জন সহায়তাকারী আবশ্যক। ফাইলটা এগিয়ে দেওয়ার জন্য, চিঠিগুলো পোস্টঅফিসে পাঠানোর জন্য তারও পিয়ন দরকার। অফিসের চেয়ার টেবিল, স্কুলের মেঝে, বেঞ্চ এগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তারও একজন আয়া দরকার।
লালবাগ ২ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা দেখে আমার একটি কথাই মনে হয়েছে- এই স্কুলের জীর্ণদশার মতই আমাদের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে রাখার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করা হচ্ছে এই স্কুলটির মত করেই।
০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৪৮
আজমান আন্দালিব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ 'একজন সৈকত'।
২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:১৯
হাসান মাহবুব বলেছেন: আপনার অভিজ্ঞতালদ্ধ লেখা ভালো লাগলো।
০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৪৯
আজমান আন্দালিব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ হামা ভাই। শুভকামনা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:০৬
একজন সৈকত বলেছেন:
" এই স্কুলের জীর্ণদশার মতই আমাদের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে রাখার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করা হচ্ছে এই স্কুলটির মত করেই।" - এটিই বাস্তব। রাজধানী ঢাকার মাঝে থাকা প্রাইমারী স্কুলের অবস্থাই এরকম- তাহলে সুদূর পল্লীগ্রামের প্রাইমারী স্কুল আর তাদের প্রধান শিক্ষক আর উনার অন্যসব সহকর্মীদের অবস্থা চিন্তা করুন। কি গ্লানিময় জীবনই তাদের যাপন করতে হচ্ছে এই চররম বৈষম্যমূলক সমাজে। বৃটিশরা চলে গেছে কত আগে কিন্ত সৈয়দ মুজতবা আলীর ' গল্পের সেই 'পন্ডিত মশাই'দের অবসঠার তেমন পরিবর্তন হয় নি আদপে।
অনেক ধন্যবাদ এমন একটি বিষয় তুলে ধরার জন্য।