নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিল্লাল হোসাইন

বিল্লাল হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিবেক ....

১৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:১১



জিইসি মোড়, দুপুর ২ টা বাজে। জামিল সাহেব জিইসি মোড়ে দাঁড়িয়ে বার বার হাত ঘড়িটা দেখছনে। স্নিগ্ধাকে আজকে স্কুল থেকে তার বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু অলরেডী ৩০ মিনিট লেট। আর এদিকে রাস্তাও পার হতে ও তার দেরী হচ্ছে। একটার পর একটা গাড়ি আসতেছেই। তার মেজাজ যথেষ্ট বিগড়ে গেছে। এমন সময়ই তার পাশে ইউসুফ আর বাদশাহ এসে বলতে লাগলো… স্যার, একটা পত্রিকা নেন, মাত্র ২ টাকা… মাত্র ২ টাকা। জামিল সাহবে বললো … যা ভাগ!!!

ঠিক তখনই উলটা দিক থেকে গাড়ি আসা বন্ধ হল। রাস্তা পার হওয়ার জন্য জামিল সাহেব রাস্তায় পা বাড়ালেন। তার ঠিক পাশে পাশেই ইউসুফ ও বাদশাহ ও পা বাড়ালো আর বললো… স্যার নেন নাহ!! হাটতে হাটতেই তারা রাস্তার ডিভাইডারের কাছে চলে আসলো। দুইজনের মধ্যে ইউসুফ, জামিল সাহেবের একেবারে কাছে কাছে হাটছিল আর বলতেছিল… মাত্র ২ টাকাই তো, নেন নাহ স্যার একটা পত্রিকা। এবার আর জামিল সাহেব নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে নাই। বিরক্ত হয়ে ইউসুফকে ডান হাত দিয়ে একটা ঠেলা মেরে বলে … যা ভাগ!!!এরপর জামিল সাহেব খুব দ্রুত রাস্তা পার হয়ে চলে যায়। আর ইউসুফ ঢাক্কা খেয়ে পড়ে যায় একেবারে ডিভাইডারের উপড়ে। তখন ইউসুফকে বাদশাহ ডিভাইডারের উপড় থেকে টেনে তুলে রাস্তা পার করে অপর পাশে নিয়ে আসে।

ঠিক ২০ মিনিট পর। এবার ইউসুফ আর বাদশাহ পত্রিকা ফেরি করে খুলশী থেকে জিইসি আসার রাস্তার মুখে। লাল সিগন্যালে সব গাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। তারা প্রতিটা গাড়ির জানালায় গিয়ে নক করে… রিকশার সামনে গিয়ে চিল্লায় … পত্রিকা নেন … পত্রিকা মাত্র ২ টাকা। ঠিক তখনি একটা রিকশার সামনে গিয়ে ইউসুফ বলে আফা পত্রিকা নিবেন?


রিকশা থেকে খুব সুন্দর করে স্নিগ্ধা বলে- দাও, একটা পত্রিকা দাও বলেই স্নিগ্ধা ইউসুফের দিকে তাকায়। তাকিয়েই আতকে উঠে বলে… কি ব্যাপার বাবু, তোমার ঠোট থেকে রক্ত পড়ছে কেন?
ইউসুফ বলে… আফা, এক স্যারকে বলছিলাম পত্রিকা কিনতে, স্যারে বিরক্ত হইয়া আমারে ঢাক্কা দিছে আর আমি রাস্তার ডিভাইডারের লগে বাড়ি খাইয়া ঠোট কাটি ফেলছি। এ কথা শুনে স্নিগ্ধা তার বাবা জামিল সাহবেকে বলে… বাবা, দেখো মানুষ কত নির্দয়!!! এত ছোট বাচ্চার গায়ে হাত তুলে!!! ছি… ছি… আর স্নিগ্ধার মুখে এই কথা শুনে জামিল সাহেব ফ্যাল ফ্যাল করে তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।

এ কথা বলতে বলতেই স্নিগ্ধা ওর স্কুল ব্যাগ থেকে একটা ১০০ টাকার নোট বের করে ইউসুফকে দিয়ে বলে … এটা নাও। ফার্মেসী থেকে মলম কিনে ঠোটে লাগাবা আর দুইজনে আইসক্রীম খেও। তখন ইউসুফ এক হাতে টাকাটা নেয় আরেক হাতে মেয়েটাকে একটা পত্রিকা দিয়ে রিকশার সামনে থেকে চলে আসে। আর ঠিক তখনি ইউসুফের সাথে থাকা বাদশাহ বলে… কিরে তুই আফাডারে বললি নাহ কেন যে হের বাপেই তোরে ঢাক্কা মাইরা ঠোট কাডি দিছে?তখন ইউসুফ বলে… কি দরকার, এইডা হুনলে আফডায় হের বাপেরে খারাপ মনে করবে, আর বাদশা আমি খুব ভালা কইরাই জানি এই স্যারে জীবনে ও আর আমাগো গায়ে হাত তুলবো নাহ, আমি স্যারের দুই চোখে শরম দেখতে পাইছি। এই কথা বলেই তারা আবার পত্রিকা ফেরি করতে থাকে … … …


উপড়ের এই ঘটনাটাকে আপনি খুব সহজেই গল্প ভাবতে পারেন। কিন্তু এটা গল্প নাহ। গরীবুল্লাহ শাহ মাজার এর সামনের রাস্তার একটা টং দোকানে ইউসুফের সাথে আমার প্রায়ই কথা হয়। আর এখানেই ইউসুফ আমাকে উপড়ের ঘটনাটা বলে। আমি শুধু কাল্পনিক নামগুলো ব্যবহার করে এটা লিখেছি। এমনি একদিন ইউসুফকে নিয়ে টং দোকানটাতে বসে আছি অনেক কথার পর ও হটাত করে আমাকে বলে … বিল্লাল মামা, আমার বাপ আমার মারে রাইখ্যা আরেকটা বিয়া কইরা চইলা গেছে। মায় মাইনষ্যের বাসাত কাম করে তাও খাওনের টাকা হয় না। আর তাই আমি পত্রিকা বিক্রি করি। আর মাইনষে আমাগো খালি মারে… ঝারি দেয়… দৌড়ানি দেয়। মামা, শহরের এই মানুষগুলা নাহ অফিসে চাকুরী করে, তারা নাহ অনেক পড়ালেখা করছে, তাইলে তারা কি এইডা বুঝে নাহ যে আমাগো দুইবেলা খাওনের লাইগা পকেটে টাকা নাই??? ঘরে ডেক্সিতে (হাড়িতে) চাউল নাই, আমরা কোন আউশে (শখে) পত্রিকা বেচি নাহ?? তারপর ও হেরা আমাগো মারে কেন???

আর তখনই আমাকে মাথা নিচু করে বসে চা খেতে হয়… মাথা তুলারও কোন সাহস হয় নাহ, আর মাথা তুলেই বা কি উত্তর দিবো, কারন আমার কাছে যে এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। আমি এমবিএ পাশ করলেও কোন বইতেই এই প্রশ্নের উত্তর পাই নি। আজ এক ৭/৮ বছরের ইউসুফ নামের এক বালকের প্রশ্ন শুনে আমার সমস্ত পড়ালেখা, এমবিএ ডিগ্রী … সার্টিফিকেট … সমস্ত কিছুকে বৃথা আর মূল্যহীন মনে হচ্ছে …

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.