নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা কিছু ভালো, সত্য ও সুন্দর; তার সাথে।

বরতমআন

সাগর কবির

বরতমআন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবিতা ও গানে বাঙালির মাতৃ ভাষা বাংলা

১১ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:১২



ভাষা আন্দোলন শুরুর আগেও অবরুদ্ধ ভাষা নিয়ে কবি আবদুল হাকিম রচিত ‘যে সব বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/ সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি’ মাতৃভাষা আগ্রাসনের ওপর লিখিত একটি সার্থক কবিতা। আন্দোলন চলাকালে ২২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বসে ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে কলম ধরলেন মাহবুবুল আলম চৌধুরী। তিনি লিখলেনÑ ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি।’ মাহবুবুল আলম চৌধুরী লিখিত এই দীর্ঘ কবিতাটি একুশে ফেব্র“য়ারিতে ভাষার জন্য আত্মত্যাগকারী শহীদদের স্মরণে প্রথম এবং ভাষিক আগ্রাসনের ওপর লিখিত দ্বিতীয় কবিতা হিসেবে ধরা হয়।

‘যে শিশু আর কোনোদিন তার পিতার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ার সুযোগ পাবে না

যে গৃহবধূ আর কোনোদিন তার স্বামীর প্রতীক্ষায় আঁচলে প্রদীপ ঢেকে দুয়ারে আর দাঁড়িয়ে থাকবে না

যে জননী খোকা এেেসছে বলে উদ্দাম আনন্দে সন্তানকে আর জড়িয়ে ধরতে পারবে না

যে তরুণ মাটিতে লুটিয়ে পড়ার আগে বার বার একটি প্রিয়তমার ছবি চোখে আনতে চেষ্টা করেছিল

তাদের সবার নামে আমি শাস্তি দাবী করতে এসেছি।’

(কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি/ মাহবুবুল আলম চৌধুরী)

এরপর আন্দোলনকালীন সময়ে আলাউদ্দিন আল আজাদ রচিত ‘ইটের মিনার ভেঙেছে, ভাঙুক/ একটি মিনার গড়েছি আমরা টারকোটি কারিগর/ বেহালার সুরে, রাঙা হৃদয়ের বর্ণলেখায়।’ কবিতাটিকে দ্বিতীয় এবং ২৬ ফেব্র“য়ারি শহীদ মিনার ভাঙার দিনে লুতফুর রহমান জুলফিকার রচিত ৬৩ পঙ্ক্তির দীর্ঘ কবিতাকে তৃতীয় কবিতা হিসেবে ধরা হয়।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, তৎকালীন আর্য সভ্যতায় বসবাস করেও আর্য ভাষার বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ করেন মহামতি গৌতম বুদ্ধ। তিনি অহিংসনীতি অনুসরণ করে স্থানীয় মুখের ভাষা ‘পালি’তে ‘ত্রিপিটক’ রচনা করে বিদ্রোহের জবাব দেন। ভাষিক বিদ্রোহের এ ধারা আমাদের বাংলা ভাষা রক্ষার ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে বলেও অনেক ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। যে মৌল ভিত্তির ওপর আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য দাঁড়িয়ে আছে তা আমাদের প্রাণের ভাষা, বাংলা ভাষা। দেশব্যাপী ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে কাব্যযোদ্ধারাও লিখতে থাকেন তাদের অমর পঙ্ক্তিমালাÑ

‘ফাগুন এলেই পাখি ডাকে

থেকে থেকেই ডাকে

তাকে তোমরা কোকিল বলবে? বলো।

আমি যে তার নাম রেখেছি আশা

নাম দিয়েছি ভাষা, কতো নামেই ‘তাকে’ ডাকি

মেটে না পিপাসা।

(আসাদ চৌধুরী)

বস্তুত ইংরেজ শাসনামল থেকেই বাঙালি জাতি পরাধীনতার জিঞ্জিরে বন্দি হয়ে পড়ে। বাঙালির আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থা পরনির্ভরশীলতার ফাঁদে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় গোটা উপমহাদেশ জুড়ে ‘ব্রিটিশ খেদাও’ আন্দোলন তীব্রতর হয়। এদেশ থেকে ইংরেজ বিতাড়নের পর বলতে গেলে মানচিত্রে পেন্সিলের রেখা টেনে ভারত ভাগ হয়। তখন সে অলীক রাষ্ট্রে পূর্ববঙ্গ নামের বাংলাদেশকে একটি পরমুখাপেক্ষী অঞ্চলে পরিণত করা হয়। সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয় গণতন্ত্রের মূলভিত্তিকে। উপরন্তু বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি। ফলে ঐতিহাসিক ২১ ফেব্র“য়ারি বাঙালির মানসলোকে সবল, স্বতঃস্ফূর্ততা ও সত্য নিয়ে সামনে দাঁড়ায়। আর এই ভাষিক আন্দোলনে গণমানুষকে উজ্জীবিত করাÑ সাহসী করার শুদ্ধ উচ্চারণ এভাবেই উঠে আসে কবিতার পঙ্ক্তিতে পঙ্ক্তিতেÑ

‘ওরা আমার মুখের কথা

কাইরা নিতে চায়।

ওরা, কথায় কথায় শিকল পরায়

আমার হাতে পায় ॥’

(আবদুল লতিফ)

দেশব্যাপী ছাত্র-শিক্ষক-জনতাকে ভাষিক আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতে লিখিত হতে থাকে গান। গান একটি শ্র“তি মাধ্যম। গান দিয়ে অতি সহজে মানুষের মননের কোষে ঝংকার তোলা যায়Ñ চেতনা জাগানো সম্ভব হয়। যে কারণে বাঙালির ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন নিয়েও রচিত হয়েছে অনেক গান। গানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে বাঙালি জাতির মুক্তির বারতা। যশোরের কবি শামসুদ্দিন আহমদ রচিত ‘ভুলব না ভুলব না, ভুলব না আর একুশে ফেব্র“য়ারি ভুলব না’ গানটি ভাষার জন্য আত্মদানকারী শহীদদের ওপর প্রথম রচিত গান। তবে আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত গানটিই বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে।

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র“য়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি

ছেলেহারা শত মায়ের অশ্র“-গড়া এ ফেব্র“য়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি

আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো ফেব্র“য়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি ॥’

(আবদুল গাফফার চৌধুরী)

মাতৃভাষা আর রাষ্ট্রভাষার মধ্যে রয়েছে বিস্তর ব্যবধান। অঞ্চলভেদে মাতৃভাষার পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু রাষ্ট্রভাষার পরিবর্তন হয় না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.