নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মঞ্জিলা ও লিয়ন

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৪

দোর্দণ্ড প্রতাপশালী রাজার একমাত্র ছেলে বিয়ে করবেন।
পাত্রী মিলছে না। চারিদিকে লোক চলে গেলো। হন্তদন্ত করে পাত্রীর সন্ধান চলছে।

এবার একটা বিহিত না হলেই নয়। রাজা চিন্তিত মনে বসে আছেন।

পাত্রীর সন্ধানকারীরা একে একে ফিরে এলো। তারা ভয়ে তটস্থ। এবার কী জবাব দেবে রাজাকে।

রাজা জিজ্ঞেস করলেন, “পাত্রীর খবর বলো।”

একজন বার কয়েক ঢোক গিলে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “হুজুর, অনেক সন্ধান করে এক পাত্রীর সন্ধান পেয়েছি; আমাদের রাজপুত্র ঠিক যেমনটি চায় ঠিক তেমন পাত্রী। রাজ্যে এমন সুন্দরী পাত্রী আর আছে কিনা সন্দেহ। কিন্তু পাত্রী খুবই গরিব ঘরের মেয়ে হুজুর।”

“চলবে” রাজা বললেন।
“কিন্তু পাত্রীর মনের খবর নিতে পারিনি হুজুর।”
রাজা হুংকার ছেড়ে বললেন, “আমার ছেলের জন্য রাজ্যের সবচেয়ে সুন্দরী পাত্রী চেয়েছি-আমি তো পাত্রীর মনের খবর নিতে বলিনি?”

সবাই মাথা ঝাকিয়ে বলল, “জ্বী হুজুর, জ্বী হুজুর। পাত্রী মিলেছে, মনের খবর লওয়ার দরকার কী।”

বিয়ের আয়োজন চলছে। রাজ্যজুড়ে আনন্দ উথলিয়ে উঠছে। রাজার ছেলের বিয়ে!

পাত্রীর নাম মঞ্জিলা। গরিব ঘরের এক পাহাড়ী মেয়ে সে। পাহাড়বেষ্টিত একটা গ্রামে অনেক কষ্ট করে সে বড় হচ্ছে। সে পাশের ওই পাহাড়ের গরিব ঘরের ছেলে লিয়নকে ভালবাসে। সে অনেক যত্নে গভীর ভাবে ভালবাসা লালন করে আসছে। তার সব কথা, সব আনন্দ, সব কষ্ট, সব স্বপ্ন প্রতিদিন একটু একটু করে তার সাথে ভাগাভাগি করে নেয়। প্রতিদিন ঝর্ণার স্বচ্ছ জলে আনন্দে ছুটোছুটি আর হাসি-তামাশায় মেতে ওঠে তারা। সে ভালবাসার মানুষটিকে নানাভাবে মনের ভেতরে বীজের মতো রোপন করেছে। সেই বীজ অংকুরিত হয়ে চারাগাছে রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন চারাগাছ থেকে অসংখ্য শেকড়-বাকড় চারদিকে হাত পা মেলে পাহাড়ের শক্ত মাটি শক্ত ভাবে আকড়ে ধরেছে।

মঞ্জিলা ও লিয়নের স্বপ্ন একই রকমের, সাদামাটা। তারা স্বপ্ন দেখে ঐ পাহাড়ের গায়ে ছোট একটা ঘর হবে। ছোট একটা সাদা উঠোনের পরেই থাকবে পাহাড় থেকে প্রবহমান সরু ঝরণা। সেই ঝরণাধারা সব দুঃখ কষ্ট ধুয়ে মুছে নিয়ে যাবে আর ঝরণার স্বচ্ছ পানির মতই আজীবন বয়ে চলবে তাদের প্রেম আর ভালবাসা, সুখ আর আনন্দ।

দুই.
কিন্তু রাজার ছেলের পাত্রী হিসেবে রাজার লোকেদের নজর পড়েছে মঞ্জিলার ওপর। আজই তার বিয়ে সম্পন্ন হবে। পাহাড়কোলের গরিব ঘরের মঞ্জিলার নরম বুকখানি হুহু করে উঠলো। সে হা-পিত্তেস করে, চোখের জল ফেলে, চিৎকার-চেঁচামেচি করে বহুবার বহুভাবে অনিচ্ছা প্রকাশ করছে। তথাপি বিয়ের বাজনা বেজে উঠলো। তার চিৎকারের শব্দ বাঁশি, ভেঁপু আর ঢোল-কাঁড়ার উচ্চৈশব্দের নির্মম শিকার হয়ে আনন্দযজ্ঞের বিশেষ সুরে পরিণত হলো।

লিয়ন যথারীতি ঝর্ণার ধারে এসে মঞ্জিলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। আজ মঞ্জিলা আসছে না। সে একটু এগিয়ে গেলো। লোকমুখে সে রাজার ছেলের সঙ্গে মঞ্জিলার বিয়ের কথা শুনে পাগলপ্রায় হয়ে মঞ্জিলাদের বাড়ির দিকে ছুটে চলল। উসকুখুসকু চুল, লুঙ্গিপরা সুঠাম ও অশিক্ষিত লিয়নকে রাজার লোকেরা মঞ্জিলাদের বাড়িতে ঢুকতে দিল না। সে তীব্র চিৎকার করে গায়ের জোরে বাড়িতে ঢুকার চেষ্টা করল। একটা হাঙ্গামার মতো হয়ে গেলো। প্রায় অচেতন লিয়নকে নিয়ে গেল রাজদরবারে। তাকে বন্দী করে রাখা হলো।

মহানন্দে বিয়ের কাজ এগিয়ে চলছে। কাজী তিনজন সাক্ষী নিয়ে মঞ্জিলার ঘরে ঢুকল। সেখানে মঞ্জিলা নেই।
রাজার নির্দেশে চারদিকে লোক চলে গেলো। রাজার সৈন্যসামন্ত ও লোকেরা পাহাড় পর্বত, সবুজ বনবনানী তন্ন তন্ন করে খুঁজছে মঞ্জিলাকে।

মঞ্জিলা বাড়ির অদূরে ঘণ জঙ্গলের লতাপাতার কুণ্ডলী সরিয়ে এক গর্তে আশ্রয় নিল।
মঞ্জিলা হাতে খেজুরকাঁটা নিল। সে চোখ বড় করে খেজুরকাঁটাগুলো দেখল। তারপর চোখ বন্ধ করে তার মুখমণ্ডলে হাতে পায়ে সারা শরীর খেজুরকাঁটায় জর্জরিত করে ফেলল আর বলল, ``হে আমার প্রাণপ্রিয় লিয়ন, আজ আমি নিজ হাতে তোমার মঞ্জিলার সব রূপ-লাবণ্য খেজুরকাঁটায় রক্তাক্ত ও নষ্ট করে দিলাম। সে শুধু তোমারই জন্য। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।”
কতক্ষণ পরে অসাধারণ রূপবতী মঞ্জিলার রক্তাক্ত মুখ ও শরীর ফুলে ফেঁপে আহত বিদঘুটে মহিলায় পরিণত হলো।

তিন.
এ রকম একটি অপমানজনক ঘটনায় প্রতাপশালী রাজা রাগে গজ গজ করছেন আর পায়চারি করছেন।
এমন সময় এক লোক রাজার দরবারে গিয়ে বললেন, “রাজামশাই, এক মহিলা আপনার সাথে দেখা করতে চায়।”
“মলিন মুখে রাজা বললেন, “পাঠিয়ে দাও।”
মহিলাটি রাজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
“কে তুমি, কী চাও, পরিচয় দিয়ে বলো।” বললেন রাজা।
“মহারাজ, আমিই মঞ্জিলা।”
“মঞ্জিলা?” রাজার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। রাজা চোখ ছোট করে তাকালেন মঞ্জিলার দিকে। বললেন, “তাহলে তুমিই আমাদের ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গিয়ে আমার গোটা রাজ্যকে অপমানিত করেছ? তুমিই সেই মঞ্জিলা? রাজার ছেলের সাথে তোমার বিয়ে হবে, সে তোমার বড়ো ভাগ্য।”
“জ্বী মহারাজ। এই জগত সংসারে যা কিছু আছে তার কোন কিছুর প্রতি আমার লোভ নেই। আমি লিয়নকে ভালবাসি। রাজার ছেলেকে পেয়ে আমি আমার লিয়নের ভালবাসার অপমান করতে পারি না। তাকে পেলেই আমি খুশি। আমি আর কিছু চাই না মহারাজ।”
রাজা স্থির ভাবে মঞ্জিলার দিকে তাকিয়ে রইলেন। এবং হঠাৎ করে বললেন, “তোমার বিয়ে হবে আমার ছেলের সাথে, অই কে আছিস, ওকে অন্দরমহলে নিয়ে যা।”
মঞ্জিলা চিৎকার করে বলতে লাগল, “আমার জীবন গেলেও না। আমাকে মাটিতে পুঁতে ফেললেও না। আমি লিয়নকে চাই আর কিচ্ছু চাই না। তাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। কিন্তু তার কোন কথাই রাজার কানে পেৌঁছল না।

বেজে উঠলো ডাক-ঢোল। বিয়ের আনন্দ আয়োজনে সারা রাজ্য কেঁপে উঠলো।

দোর্দণ্ড প্রতাপশালী রাজা সামান্য কুঁড়েঘরে বেড়ে ওঠা মঞ্জিলার ও লিয়নের দুর্বিনীত ভালবাসার কাছে পরাজিত হয়ে নিজেকে গেৌরাবান্বিত মনে করছেন।
রাজার ইশারায় আনন্দের মহাযজ্ঞ শুরু হয়ে গেল।

রাজা মঞ্জিলাকে লিয়নের সাথে বিয়ে দিয়ে তাদের দুঃসাহসী ও অদম্য ভালবাসার স্বীকৃতি দিয়ে দিলেন।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৭

কাবিল বলেছেন: লিয়নের ভালবাসা বাঁচিয়ে রাখতে মঞ্জিলা নিজের রুপ বিসর্জন দিয়েছে। অনন্ত প্রেম।
রাজার বিচারটাও ভাল লাগলো।

চমৎকার হয়েছে, ভাল লাগলো।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪১

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৯

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


প্রেমের সুখময় পরিসমাপ্তি।
ভাল লাগলো।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪১

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: শুভেচ্ছা নিন।

৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: রুপকথার গল্প মনে হল| ভাল লেগেছে| রুপকথা না আপনার লেখা?

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৬

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: আমার লেখা। ধন্যবাদ।

৪| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৪

নীল আকাশ বলেছেন: বাংলা ছিনেমার গল্প গল্প লাগছে । ফাটাফাটি কিছু গান ঢুকিয়ে দিলেই হবে। আমার ডাক নামটা (লিয়ন) ব্যবহার করে তো আমাকে নায়ক বানিয়ে দিলেন। হা হা হা ।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৪

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: নামে মিলে গেলেই নায়ক হওয়া যায় না; একটা নায়িকারও যোগাড়যন্ত থাকতে হয়।
আশা করি সেটা আপনি পারবেন। হাহ্ হাহ্ হাঃ

ভালো থাকুন।

৫| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৩

নেক্সাস বলেছেন: আহ চিরায়ত প্রেম কাহিনী। ভাল লাগলো

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৫

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: আনন্দিত হলাম। ধন্যবাদ।

৬| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৬

সাহসী সন্তান বলেছেন: মনে হচ্ছে এই পোস্টটাতে আগেই মন্তব্য করেছি? তবে মন্তব্য লিস্টে দেখলাম নাম নেই!



যাহোক, গল্পটা আগেই পড়েছি! চমৎকার একটি রুপকথার মত গল্প! অনেক ভাল লাগছে ভাই!


শুভ কামনা জানবেন!

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৭

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: না ভাই, আমি আপনার মন্তব্য ইরেজ করিনি।
আপনার ভালোলাগায় আমি উৎসাহিত হলাম। ধন্যবাদ।

৭| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫০

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: প্রেমের সফল পরিণতি। যদিও পথে অনেক বাঁধা এসেছে। বাঁধা না এলে প্রেমের মজাও থাকেনা।

রাজার ভূমিকাটাও ভাল লেগেছে।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৭

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: খুশি হলাম। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

৮| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৯

উল্টা দূরবীন বলেছেন: গল্প খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ এবং সেই সআতআথে আমার ব্লগে ঘুরে আসার আমন্ত্রণ।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৩৮

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৯| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৮

সুলতানা রহমান বলেছেন: অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল। ………

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৩৯

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ইয়েস!!

১০| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৬

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: পুরোপুরি রূপকথার গল্পই মনে হল। ভালোই ছিল। কয়েকদিন আগে চাইনীজ প্রেমের রূপকথা পড়ায় এখন আর এই ধরণের গল্পে আনন্দ পাই না। ঘুরে ফিরে একই জিনিস তো।

তবে লেখাটা আরেকটু গোছাতে পারতেন। প্যারাগুলো সুন্দর করে দিলে দেখতে ও পড়তে আরাম হত। :) +

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৪১

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: সুন্দর পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.