নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাতার জীবন

১৪ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:১০


গাছ থেকে একটি পাতা ঝরে পড়ল।
‘একশ উনিশ, একশ উনিশ, একশ উনিশ’ বলে গণতে লাগল পাশে পড়ে থাকা আরেকটি পাতা।
ঝরে পড়া পাতাটি বলল, কিছুই ত বুঝতে পারছি না? কী গণনা করছ এমন করে?’
‘তুমি ঝরে পড়া একশ উনিশতম পাতা। মানে তোমার আগে আরো একশ আঠারোটি পাতা এখানে পড়ে আছে। আর তোমার পরে যে পাতাটি পড়বে তার নম্বর হবে একশ কুড়ি। বুঝতে পেরেছ তুমি?’
‘এভাবে ঝরে পড়া পাতাদের গণে আর লাভ কী ভাই। আমাদের জীবনের কি কোন দাম আছে?’ কষ্টের নিঃশ্বাস ফেলে বলল পাতাটি।
‘আমার মনে হয় এখনও আমাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি।’
‘এতদিন আলো-বাতাস থেকে খাদ্য তৈরি করে দিয়েছি গাছকে। সেই গাছ প্রকৃতি ও মানুষের অনেক উপকার করে। আমাদের ছায়ায় কত পোকা-মাকড়, পশু-পাখি এমন কি মানুষেরাও বসে আরাম পেতো। এখন মাটিতে মিশে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কী উপায় আছে বলো! কারোর কোন উপকারে আসতে না পারলে জীবনের কোন মূল্য-মর্যাদা থাকে না। এ আমার অনেক বড় কষ্ট!’ লম্বা শ্বাস ফেলে বলল পাতাটি।
সংখ্যা গণনাকারী পাতাটি বলল, ‘আহা, আমরা কারো না কারো উপকারে আসতেও তো পারি।’
‘সেটা কীভাবে, একটু খোলাসা করে বলতো ভাই।’ আগ্রহ করে জানতে চাইল পাতাটি।

দুই.
‘শোনো, প্রতিদিন সকালে একটি ছোট্ট মেয়ে টুকরি আর ঝাড়– নিয়ে এখানে আসে। মেয়েটি গাছের তলে পড়ে থাকা পাতাগুলো টুকরিতে ভরে নিয়ে যায় বাড়ি। মেয়েটি আবার সকালে আসবে। তখন আমরা টুকরিতে চড়ে চলে যাব তার বাড়ি। আমরা তার কোনো না কোনো কাজে লাগব। দারুন মজা হবে তখন!’ খুশি হয়ে বলল পাতাটি।
‘আচ্ছা আমরা তার কী কাজে লাগতে পারি একটু বলো তো শুনি।’
‘মেয়েটি শুকনো পাতা নিয়ে চুলোয় দেয়। সেই আগুনে তাদের রান্নাবান্নার কাজ চলে। ছাইগুলো জমিতে ফেলে। তাতে ফসল ফলে ভাল। মানুষের কত বড় উপকার হয়, এটা কি কম কথা!’

‘তাইতো! নিজেকে পুড়ে অন্যের উপকার করা যাবে। বাহ খুব চমৎকার। তবে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, তাই না? উফ্ অপেক্ষা বড়ো বাজে জিনিস, সময়গুলো মোটেও কাটতে চায় না।’

একে একে শুকনো পাতারা ঝরে পড়ছে গাছের তলে। তারা নিজেদের মধ্যে এমনই অনেক কথা বলাবলি করছে। অন্যের উপকারে এসে নিজের জীবন ধন্য করতে চায় তারা।

সকালে ছোট্ট মেয়েটি এসে ঝাঁট দিয়ে গাছের পাতাগুলো টুকরিতে ভরে নিয়ে চলে গেল। কিন্তু সেই পাতাটি পড়ে রইল যে পাতাটি খুব আফসোস করছিল। সে চিৎকার করে বলছে, ‘আমাকে নিয়ে যাও। তোমরা আমাকে এভাবে ফেলে রেখে যেতে পারো না, নিয়ে যাও।’
কে শোনে কার কথা?
মন খারাপ করে পড়ে রইল পাতাটি।

তিন.
পাতাটি শুকিয়ে বাঁকা হয়ে আছে। তার মন ভাল নেই। গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আরো পাতা। সে কারোর সাথে কথা না বলে চুপচাপ বসে রইল।
সে ভাবছে, ‘আমি কি এভাবেই এখানে পড়ে থাকব, আমি কি কারও কোনো উপকারেই আসতে পারব না, ছিঃ এ আমার কেমন জীবন!’
এমন সময় এক কবি যাচ্ছিল এ পথ ধরে। কবির পায়ের তলে পড়ল সেই শুকনো পাতাটি। মরমর মচ্মচ্ শব্দ হলো। থমকে দাঁড়ালো কবি। তিনি পা সরিয়ে ধীরে ধীরে বসে পড়লেন পাতাটির কাছে। ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাওয়া পাতার টুকরোগুলো হাতে তুলে নিয়ে তাকিয়ে রইলেন কবি।
আর বলে উঠলেন-
‘শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি ভেঙ্গে দিল আমার ধ্যান
পাতা ভাঙ্গার শব্দের ভেতরে, পেয়েছি আনন্দ জ্ঞান।’

শুকনো পাতার টুকরোগুলি কবির হাতে আনন্দে লাফিয়ে উঠল। বলল হে কবি, ‘আমাকে বিচ‚র্ণ করে কী জ্ঞান আর আনন্দ লাভ করেছ তুমি?’
আমার মনে একটা দুখের স্মৃতি খেলা করছিল। মন থেকে কিছুতেই সরাতে পারছিলাম না। কিন্তু শুকনো পাতা ভাঙ্গার শব্দে সেই দুশ্চিন্তা উধাও হয়ে গেলো এবং আমি নতুন চিন্তার খোরাক পেয়ে গেলাম। আমি কবি, আমি শুকনোপাতার মর্মরধ্বনির ভেতরের সৌন্দর্য ও মর্মবেদনার কথা লেখায় প্রকাশ করে দেব। আর তুমি হয়ে যাবে অমর!

শুকনোপাতার টুকরোরা আনন্দে টগবগ করতে করতে বলল, অতঃপর তুমি সার্থক করেছ আমাদের জীবন। ধন্যবাদ, হে মহান কবি।






মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:২২

নেওয়াজ আলি বলেছেন:

দারুণভাবে লিখেছেন, ভালো লাগলো।

১৪ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৭

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: আমার শুভেচ্ছা রইল।
ভাল থাকবেন।

২| ১৪ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: শিশুদের জন্য কেউ লিখে না ব্লগে আপনি ছাড়া।

১৪ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৭

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: সবেধন মনি?
ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.