নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভূত-বৈদ্য চিচিং ফাঁক

১৬ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৩৫


স্কুল থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম। দুপুরবেলা। পথের ধারে গাবগাছটির তলে আসতেই গা ছমছম করে উঠল। দেখি, গাছ থেকে লম্বা হয়ে একটি পা নেমে আসছে আমার নাক বরাবর। কালো লোমে ঢাকা আঁকাবাঁকা পা। পায়ের বুড়ো আঙুলে ছোট একটি মুখ। চামচিকার মুখের মতন। সেই মুখে আমার নাম ধরে ডাক দিল। পেছনে ফিরে তাকালাম। দেখি পায়ের মুখ থেকে আগুনের ফুলকি বেরোচ্ছে! আমি একনজর দেখেই কাঁপতে কাঁপতে পড়ে গেলাম মাটিতে।

ব্যাপার কী? ছেলেটা এভাবে পড়ে গেল কেন? এসব বলতে বলতে আশপাশ থেকে ছুটে এলো অনেক লোক।
আমি কোনোমতে দাঁড়িয়ে বললাম, একটু জায়গা দেন, আমি বাড়ি যাব।
বাড়ি যাবে মানে? লোকগুলো কপালে চোখ তুলে বলল, বৈদ্যের জন্য লোক পাঠিয়ে দিয়েছি। খাড়া থেকে ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেলা, এখনও টের পাওনি তোমার কী হয়েছে? তোমার সঙ্গে এখনও ভূতটা আছে। চুপ করে এখানে বোসো।
একজন বলল, এই যে বৈদ্য এসে গেছে। এখন দেখবা ভূতের পা ঝুলানির মজা!
শালু কাপড় পরা লম্বা চুল ও দাড়িওয়ালা একটা লোক এলো। মোছে ঢাকা ঠোঁট। তার আঙুল ভর্তি আংটি। কাঁধে ঝোলা। লোকটা কাঁধের ঝোলা থেকে একটা হাড় বের করে বলল, বল এটার রং কি?
সাদা।
‘সোঝা না বাঁকা?’
বাঁকা।
‘অল্পের জন্য রক্ষা। এই যে ভাই আপনারা সরে দাঁড়ান।’ বলেই লোকটা হাড় দিয়ে মাটিতে আমার চারপাশে বৃত্ত আঁকলেন। আর বললেন, ‘এই দাগের ভেতরে কেউ ঢুকবে না। ঢুকলে রোগীর বিরাট ক্ষতি হবে আর তোদের রক্তবমি হবে। এই রোগীর পক্ষের লোক কোথায়?
এক লোক বলল, ‘এখানে নেই। দাঁড়ান, আমি নিয়ে আসছি বলে লোকটি চলে গেল।’
ব্যস্ত হয়ে ছুটে এলেন বাবা। বৈদ্য চিৎকার করে বলে উঠল, আপনারা কোনকালে কোন পূণ্য করেছিলেন বোধ হয়। নইলে এতক্ষণে এই ছেলেকে জ্যান্ত পেতেন না। কপাল ভালো আমি সময় মতো এসে পড়েছি। এখন বলেন, ছেলের চিকিৎসা করাবেন, নাকি নিয়ে যাবেন, আপনার ইচ্ছা।
আমি চিৎকার করে বললাম, বাবা আমার কিছুই হয়নি। আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো।
বৈদ্য ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বাবাকে বলল, আপনি ভদ্রলোক মানুষ। আমাকে হাদিয়া স্বরূপ দুই হাজার এক টাকা পঞ্চাশ পয়সা দিলেই চলবে। এটা আমার ব্যবসা না; ছেলের জীবন-মরণ সমস্যা। যান, হাদিয়াটা নিয়ে আসেন। আমি শুরু করে দেই।
যাই ‘দুই হাজার এক টাকা পঞ্চাশ পয়সা’ নিয়ে আসি বলে বাবা ভিড় ঠেলে চলে গেলেন।

বৈদ্য আমার মাথায় লাল সুতা বেঁধে দিলেন। ঝোলা থেকে আধমরা একটা কাগলাস বের করে আমার মাথায় বসিয়ে দিলেন। তারপর বাবড়ি ঝাকিয়ে আকাশের দিকে মুখ বাড়িয়ে দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। দুই চোখ বন্ধ করলেন এবং প্রবল বেগে ভূত-পেতœী, জ্বিন-পরিকে গালাগাল করতে লাগলেন। কাগলাসটি ঠেলে ঠেলে আমার মাথায়ই হাঁটার চেষ্টা করছে। আমার শরীর শির শির করছে। চোখ বন্ধ করে রাখলাম। বৈদ্য একটু পর পর গাল ফুলিয়ে ফুঁ দিচ্ছে আমার মুখে। একজন বলল, বৈদ্যের তন্ত্র-মন্ত্রে মড়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে যায়। যার নাম দাংশু।’

হঠাৎ করে বৈদ্য উপরের দিকে তাকিয়ে কার সঙ্গে যেন কথা বলতে লাগলেন। তারপর তিনি বাঁকা হাঁড়টা আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত টেনে নিয়ে বলল, চোখ মেল ব্যাটা। আমি চোখ মেললাম। বৈদ্য হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ছেলে এখন সুস্থ। কই, ছেলের বাবা কই?
‘ওরে বাপরে, ছেলের বাবা আসতেছে’ বলেই লোকগুলি দৌড়ে পালাতে লাগল। বাবার সঙ্গে পুলিশের লোক।
পুলিশ এসেই বৈদ্যকে থাপ মেরে ধরে ফেলল আর বলল, ‘এই পাতানো খেলা আর কতদিন খেলবি, বলে পুলিশ তাকে নিয়ে চলে গেলো।
আমি বৃত্ত থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়ি চলে গেলাম।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সত্যি না গল্প। গল্পও হলে ভালো হয়েছে। আর সত্যি হলে এটা আপনার জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা।

১৭ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:০০

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: এটি একটি গল্প। ধন্যবাদ।

২| ১৬ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:২৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
স্কুল থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম। দুপুরবেলা। পথের ধারে গাবগাছটির তলে আসতেই গা ছমছম করে উঠল। দেখি, গাছ থেকে লম্বা হয়ে একটি পা নেমে আসছে আমার নাক বরাবর। কালো লোমে ঢাকা আঁকাবাঁকা পা। পায়ের বুড়ো আঙুলে ছোট একটি মুখ। চামচিকার মুখের মতন। সেই মুখে আমার নাম ধরে ডাক দিল। পেছনে ফিরে তাকালাম। দেখি পায়ের মুখ থেকে আগুনের ফুলকি বেরোচ্ছে! আমি একনজর দেখেই কাঁপতে কাঁপতে পড়ে গেলাম মাটিতে।

এই বর্ণনাটা কার ? আপনার নাকি আপনার গল্পের নায়কের?
যারই হোক তিনি তো সত্যই প্রত্যক্ষ করেছেন !! তা হলে বৈদ্যের
দোষ কোথায়? বিষদ ব্যখ্যা চাই।

১৭ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:০৭

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ভাই নূরু আপনার কেৌতূহল উদ্দীপক প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ।
আপনি যে প্রশ্ন করেছেন তার জবাব গল্পের মধ্যেই আছে।
গল্পের নায়ক ভয়কে প্রত্যক্ষ্য করলেও সে খানিক পরে সম্বিত ফিরে পেয়েছে এবং বাড়ি যেতে চেয়েছে।
গল্পের শেষে লক্ষ করেছেন যে, পুলিশম্যান বলেছে, এই পাতানো খেলা আর কতদিন খেলবি। সে এমনটি আগেও করেছে। অতপর সে ধরা খায়।
ওঝা-বৈদ্য্যেরা অনেক সময় ডাক্তারদের মতো দালাল পোষে। যারা রোগীর সন্ধান করে এবং ভাল মানুষকে রোগী বানিয়ে চিকিৎসার নামে টাকা কামাই করে। এখানে এমনই একটি বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

৩| ১৬ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৫২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: গল্প হোক আর বাস্তব হোক । মন ছুঁয়েছে লেখা

১৭ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:০৯

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: গল্পে কিছু ম্যাসেজ থাকে যা গল্পের শরীরের ভাঁজে লুকিয়ে থাকে।
আপনার হৃদয় ষ্পর্শ করেছে জেনে ভাল লাগছে। শুভ কামনা রইল।

৪| ১৭ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১২:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: দূর্দান্ত।

১৭ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:০৯

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.