নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভূত ধরা

২৩ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:৪৩


একটা ভূত ধরতে গিয়ে আমরা বড় ধরনের ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম। ভূত ধরা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু ধরতে হলো। একটা ভূত শিশুদের ভয় দেখানো শুরু করে দিয়েছে। ইস্কুলে যাওয়া আসার পথে ভূতটা গাছের ডালে বসে ভুম্ ভুম্ করে ভয় দেখায়। তারপর ভূতটা লেজ লম্বা করে নিচে নামিয়ে শিশুদের নাকে শুড়শুড়ি দেয়। কুচকুচে কালো লেজ। রশির মতো দেখতে। এই দেখে তো শিশুদের কলজে জুড়ে পানি নেই।
ভয়ে শিশুরা ছোটাছুটি করে বাড়ি এসে কান্নাকাটি করে। তাদের কান্না শুনে পাড়ার ছেলেরা বলল, আর তো বসে থাকা যায় না। পাড়ার সাহসী ছেলে গালিব আঙুল খাঁড়া করে বলল, আর কোনো কথা নেই। ভূতটাকে গাছ থেকে নামাব। তারপর পিটিয়ে ছাতু বানিয়ে ফেলব। চল।
নিস্তব্দ দুপুর। ভূত ধরার তেজ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ওরা তিন জন।
পেয়ে গেছি, বলে লাফিয়ে উঠল গালিব। তারপর সে আঙুলে ইশারা করে সবাইকে চুপ থাকতে বলল। সেই ভুম ভুম ভূত। লেজটা মাটি ছোঁয় ছোঁয় তার। গাছের ডালে বসে মাথার লম্বা চুল ছেড়ে দিয়ে আরাম করছিলেন তিনি!
আরাম করা বের করতেছি রাখ, চুন্নূ বলল।
পেছন থেকে রবিন ছুটে এসে বলল, কই, কই, দেখি!
গালিব বলল, ওই দেখ শেওড়া গাছের মোটা ডালে কেমন গোল হয়ে বসে আছে।
চুন্নূ আঙুল দিয়ে দেখাবার আগেই রবিন চুপি দিয়ে বলল, দেখেছি, দেখেছি। কুচকুচে কালা শিম্পাঞ্জির মতো। আমার ভীষণ ভয় করছে ভাই। আমি চলে গেলাম।
গালিব থাপ মেরে তার হাতে ধরে বলল, যাবি মানে। দাঁড়া এখানে। এত ভয় পাস কেন? লেজসুদ্ধ ভূতটাকে টেনে নিচে নামাব এখন।
রবিন শুকনা মুখে বলল, কী কস তুই! আমরা তিন জনে এই পেট মোটা ভূতটার সঙ্গে পারব, ক? দেখ ভূতের হাত, পা কেমন লম্বা আর কালা, দেখ।
‘পারতেই হবে’ বলল চুন্নু। ভুম ভুম করার মজা দেখাব।
গালিব বলল, চুপ, চুপ। আগে রেডি হয়ে নিই। ভূতের লেজ ধরলে যাতে ফসকে যেতে না পারে, হাতে বালু লাগা।
রবিন ফ্যাকাসে মুখে বলল, কী করতে চাস তোরা?
লেজ ধরে টেনে ভূতটাকে মাটিতে নামিয়ে পেটাবো। তারপর ওই ডোবার কাদায় নিয়ে আস্ত পুঁতে ফেলব।
তিন জনেই হাতে বালু মেখে নিল। তারপর বিড়ালের মতো সাবধানে হেঁটে গাছের তলে গিয়ে দাঁড়াল ওরা।
কে আগে লেজটা টেনে ধরবে? চোখ চাওয়া চাওয়ি করছে। লেজ দেখে রবিনের গা শির শির করছে। গালিব ধুম করে ধরে ফেলল লেজটা। অমনি চুন্নু আর রবিন লেজ ধরে একেবারে ঝুলে পড়ল।
লেজ টানতে টানতে ওরা কাহিল গয়ে গেল। ওদের সামনে লেজের স্তূপ পড়ে গেল। কিন্তু ভূতটা তো পড়ছে না।
রবিন হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ঘটনা কি রে। খালি লেজ নেমে আসে; ভূত কই? চুন্নূ চুপি দিয়ে বলে, ওই যে দাঁত বের করে ডালা ধরে বসে আছে। ধর, এমন টান দেব, ডালসুদ্ধ নিচে নামাব ভূতটাকে। দে টান।
এমন সময় ভুম করে একটা আওয়াজ হলো। আর গাছটা নড়ে উঠল। লেজে টান পড়েছে। ভূতটা উপরের ডালে গিয়ে বসল।
তিন জনে লেজ ধরে ঝুলে পড়ল। ওরা টানতে টানতে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়েছে। ধুম করে এসে পড়ল ভূতটা। রবিনের মুখের উপর ভূতের মুখ। সে একটা চিৎকার মেরে সমানে থুতু ফেলতে লাগল। সে বারবার মুখ মুছতে লাগল।
চুন্নূ ওয়াক থুঃ থাঃ করে বলল, ছাড়িস না, ধর ধর। ভূতের যেখানেই ধরে সেখানেই গল গল করে। গরুর ভূড়ির মতো শরীর। একদিকে ধরলে আরেক দিক ফুলে ওঠে। ভূতটা হাত পা ছুঁড়ে কোস্তাকুস্তি করছে। ভূতটা তিন জনের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছে না।
হঠাৎ ভূতটা বিকট শব্দে একটা ভেংচি মারল; মনে হলো বাজ পড়েছে। চারদিকে অন্ধকার দেখতে লাগল তারা। এই সুযোগে ভূতটা দৌড়ে জঙ্গলের দিকে চলে যাচ্ছে। ওরা তিন জনে লেজ ধরে পেছনের দিকে কাৎ হয়ে আছে। লেজে টান পড়তেই ভূতটা গোত্তাখেয়ে পড়ে গেল।
গালিব চুন্নু আর রবিন দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল ভূতের উপর। শুরু হলো ভূতের সঙ্গে লড়াই। ধুন্ধুমাধুম কিলাকিলি।
হঠাৎ ভূতটা মুখ ভর্তি ফেনা ছুড়ে মারল ওদের গায়ে। পিচ্ছিল ফেনা যেখানে পড়েছে সেখানেই চুলকানি শুরু হয়ে গেছে। যা ধরে তা-ই পিছলে যায়। এই সুযোগে ভূতটা বাইন মাছের মতো মোচড়াতে মোচড়াতে হাত থেকে ফসকে গেল।
গালিব বলল, লাঠি ল তোফা বাড়ি লাগাই। ওরা গাছের ডালা ভেঙে ভূতকে বাড়ি দিতেই প্রচণ্ড শব্দে আগুন জ্বলে উঠল। সেই আগুন থেকে বেরিয়ে এলো হাজার হাজার ভূত। পাখা মেলে পাখির মতো চারপাশে উড়তে লাগল ওরা। একেকটা দেখতে একেক রকমের। ওদের গায়ের রং আলাদা, গলার স্বরও আলাদা। নানা রকম শব্দ করে ওড়াউড়ি করছে আর ভয়ানক শব্দ করে ভয় দেখাচ্ছে ওরা।
ওরা তিন জনে অবাক হয়ে দেখছে আকাশে উড়ন্ত হাজার রকমের ভূত।
তারপর ঘটল আজব ঘটনাটি। আকাশে উড়ন্ত ভূতগুলি হঠাৎ বাজির মতো ফট ফট শব্দে ফেটে গিয়ে কাক হয়ে গেল। সেই কাকেরা কা কা করে চোখের পলকে উধাও হয়ে গেল।
কত অল্প সময়ের মধ্যে চোখের সামনে ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটে গেল! ওরা তিন জন থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
গালিব চুন্নূ আর রবিনের পিঠ চাপড়ে বলল, আর ভয় নেই। ভূতের খেল খতম। চল এবার বাড়ি যাই।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:৩০

ফুয়াদের বাপ বলেছেন: বাচ্চাদের জন্য অনেক মজার হবে এই গল্পটা। ভালো লিখেছেন।

২| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: রবিন, গালিব আর চুন্নুকে জাতীয় বীর ঘোষনা করা যেতে পারে।

৩| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:২০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো । অসাধারণ ।

৪| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:৪১

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সুন্দর হয়েছে তবে ভূতের গল্প বাচ্চারা বেশি পছন্দ করে।

৫| ২৪ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১:১৮

মা.হাসান বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.