নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুড়িখেলা

৩০ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:২৫


খবরটা শুনেই পাচুর শরীরে আনন্দের ঢেউ খেলে গেলো। “ঘুড়িখেলা প্রতিযোগিতা” হবে। সমুদ্রসৈকতের খোলা আকাশে উড়ন্ত ঘুড়ির খেলা প্রতিযোগিতা। চলছে ঘুড়ির বৈচিত্র্যময় খেলার চমৎকার আয়োজন।

তিন বছর বয়স থেকে ঘুড়ির পেছনে আঁঠার মতো লেগে আছে পাচু। এখন তার বয়স এগারো বছর। হতদরিদ্র বিধবা মায়ের একমাত্র ছেলে পাচু বাড়ির পাশের মাঠে ঘুড়ি নিয়ে খেলা করছিল। ঘুড়িখেলা প্রতিযোগিতার কথাটা শোনার পর খবরটা মাকে বলার জন্য লাটাই-ঘুড়ি নিয়ে বাড়ির দিকে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে চলেছে পাচু। চলার পথে তার চঞ্চল পায়ের আঘাতে পথের ঢেলা, ধুলো আর শুকনো গোবর চারদিকে ব্যঙের মতো লাফিয়ে পালাতে লাগলো।

পাচু নিজেই ঘুড়ি বানিয়ে আকাশে উড়ায়। অসংখ্যবার সে ঘুড়ি বানায় আবার অসংখ্যবার ছিড়েও ফেলে। ঘুড়ি তার মনমতো না হলে, তার কথা না শুনলে সে অবাধ্য ঘুড়িকে আর ঘরে এনে রাখে না; টুকরো টুকরো করে ছুড়ে ফেলে দিয়ে আবার তৈরি করে নতুন ঘুড়ি। পাচুর আকাশে ঘুড়ির খেলা আর ঘুড়ি উড়ানোর নানা কৌশল দেখে এলাকার লোকেরা বলাবলি করে, “পাচুর ঘুড়ি যাদু জানে।”

এগারো বছরের কিশোর পাচু “ঘুড়িবাজ পাচু” নামে এলাকায় বিস্তর পরিচিত।

আজ প্রতিযোগিতার দিন। পাচু এক হাতে ঘুড়ি আরেক হাতে লাটাই নিয়ে ছুটে চলে এসেছে সমুদ্র সৈকতে। মনে হচ্ছে অসংখ্য রঙধনুর রঙ মেখে সমুদ্র সৈকত সাজানো হয়েছে। বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান “ঘুড়িখেলা ” প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। দেখলে মনে হবে এটা একটা স্বপ্নপুরী। দেশ-বিদেশের অসংখ্য নামি-দামী মানুষের পদচারণায় মুখরিত সমুদ্র সৈকত। আকাশে উড়ছে ঘুড়ি। মনে হচ্ছে রঙের খেলা চলছে আকাশে। সমুদ্রসৈকতের চিকচিক বালিতে রঙ-বেরঙের পোশাক পরা ঘুড়িবাজদের আনন্দ হই চই। আর আকাশে অসংখ্য ঘুড়ির উত্তাল আনন্দমেলা।

সমুদ্রপাড়ে এসে পাচুর আনন্দ যেন উবে গেলো। নামি-দামী মানুষ আর নানা রঙের ঝালর লাগানো ঘুড়ি দেখে পাচু থ’ হয়ে গেলো। আকাশে নানা রঙের মানুষঘুড়ি, পশু-পাখি, চেনা-অচেনা মাছ উড়ছে, খেলা করছে। পাচু তার দুই টাকার রঙিন কাগজে বানানো ঘুড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এই প্রতিযোগিতায় কি সে তার ঘুড়ি উড়াতে পারবে, দেবে কি অনুমতি, সে দেখাতে পারবে কি তার ঘুড়িখেলা! সে অসহায়ভাবে বারবার তার ঘুড়িটার দিকে তাকায়।

পাচু তার ঘুড়িটা নিয়ে এক কোনে বসে আছে। সে মনে মনে বলছে, “এহ্, এগুলো কোনো ঘুড়িখেলা হলো? এই খেলা দেখেই তারা এতো লাফালাফি করছে? আর আমার ঘুড়িখেলা দেখলে না পাগল হয়ে যাবে তারা!”

খেলা প্রায় শেষের দিকে। পাচু তার ঘুড়িটা হাতের চিপায় ধরে আরেক হাতে লাটাই নিয়ে সোজা চলে গেলো আয়োজকদের কাছে। সে গিয়ে বলল, “স্যার আমি ঘুড়িখেলা দেখাবো।” আয়োজকদের একজন ময়লা জামা পরা পাচুর আপাদমস্তক দেখে একটু অবহেলা করেই বলল, “তুমি দেখাবে ঘুড়িখেলা? হাঃ হাঃ হাঃ”
পাচু দমলো না। সে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলল, “জ্বী স্যার। আমার ঘুড়ি অনেক খেলা জানে। দেখলেই বুঝতে পারবেন। আমার নামটা লেখুন না স্যার।”
একজন মাথা ঝাকিয়ে বলল, “তোমার ঘুড়ি আবার কী খেলা দেখাবে বাপু।”
“আমার ঘুড়িখেলা দেখে আপনাদের তাজ্জব লেগে যাবে। অনুমতি দেন। আমি এখনই খেলা দেখাই।”
আয়োজকরা প্রতিযোগী হিসেবে পাচুর নাম খাতায় তুলল এবং বলল, “দেখাও দিখি তোমার খেলা।”

পাচু তার দক্ষ হাতে ঘুড়িটা সামনে ছুড়ে মেরেই হাতের লাটাইটা মেসিনের মতো খলখল শব্দে ঘোরাতে লাগলো। দেখতে দেখতে তার ঘুড়িটা এঁকেবেঁকে উপরে উঠে গেলো। সমুদ্রসৈকতের বালিতে পাচুর ছোট ছোট দুটি পা ঘুড়ির সাথে তোলপাড় করছে। আকাশের ঘুড়িটা পাচুর লাটাইয়ের খলখল শব্দের সাথে খেলা দেখাচ্ছে।
পাচু মুখে শিশ মেরেই কি যেন একটা ইঙ্গিত করতেই তার ঘুড়িটা উপর থেকে গোত্তা খেয়ে খেয়ে চলে আসে নিচে ঠিক মাটির কাছাকাছি। আবার পাক খেতে খেতে উঠে যায় উপরে। পাচু শিশ দিতে দিতে কি যেন একটা ইঙ্গিত করতেই তার ঘুড়িটা ডানে-বামে চঞ্চল বেগে ছোটাছুটি করতে থাকে। তারপর একটু ডানে কাত হয় পাচু। তার সাথে ঘুড়িটাও কাত হয়। বামে কাত হয় পাচু। তার সাথে ঘুড়িটাও। হঠাৎ করে ঘুড়িটা বাজপাখির মতো শোঁ শোঁ করে নিচে নেমে আসে আবার তীরবেগে ছুটে চলে উপরের দিকে। পাচুর লাটাই চালানোর কারুকার্য দেখে সবাই অবাক। আকাশে পাচুর ঘুড়ি আর মাটিতে পাচু ও তার লাটাইয়ের নৃত্য একসুতায় গ্রন্থিত হয়ে এমন এক নাচ আর ছন্দ-তাল তুলল যে সৈকতের শত শত মানুষের চোখ পড়ল গিয়ে পাচুর ঘুড়িখেলার দিকে।

চারদিকে হই হই রব উঠলো। পাচুর অদ্ভুত ঘুড়িখেলা দেখতে ভিড় জমে গেলো।
অসংখ্য মানুষের করতালি আর আনন্দ হই চইয়ের মধ্যে আয়োজকরা হাসিমুখে গর্বিত ভঙ্গিতে এসে পাচুর পাশে এসে দাঁড়ালো। তাদের ভাবটা এরকম যে, এই অদ্ভুত ও অভূতপুর্ব ঘুড়ি খেলোয়াড়কে আমরাই জোগাড় করে প্রতিযোগিতায় আনতে পেরেছি।
সবশেষে আয়োজকরা বলল, “ঘুড়িটা সোজা উপরে তুলে সোজা পথে নামাতে পারবে পাচু?”
“এইটা কোনো ব্যাপারই না স্যার, দেখেন ক্যামনে নামাই।” লাটাই ঘোরাতে ঘোরাতে বলল পাচু।

সে অদ্ভুত ভঙ্গিতে লাটাই চালাতে লাগলো। চোখের পলকে তার ঘুড়িটা পনপন করে একদম উপরে উঠে গেলো। একেবারে সোজা উপরে। আয়োজকরা উপরের দিকে হা-করে তাকিয়ে দেখে বলছে, “ওয়াও!”
পাচু লাটাইটা এমনভাবে ঘোরাতে লাগলো যে, তার ঘুড়িটা ঠিক হেলিকপ্টারের মতো উপর থেকে সোজা নিচে নেমে এলো। একদম তার হাতে। আনন্দে লাফিয়ে উঠলো আয়োজকরা ও দর্শকেরা। সবাই বলছে, “এমন ঘুড়িখেলা আমরা জীবনেও দেখিনি!”
আয়োজকেরা পাচুকে ধরে টেনে নিয়ে গেলো মঞ্চে। সবার মাঝখানে বসালো তাকে।
পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠান শুরু হলো।
আয়োজক দলের প্রধান অত্যন্ত আনন্দের সাথে পাচুর অদ্ভুত ও অপূর্ব ঘুড়িখেলার প্রসঙ্গ নিয়ে অনেক কথা বললেন আর প্রশংসা করলেন। এবং পাচুকে শ্রেষ্ঠ ঘুড়িখেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা দিলেন। ঘুড়িখেলায় শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার পেলো পাচু। পুরষ্কার হিসেবে তার হাতে তুলে দেওয়া হলো সনদপত্র, মেডেল, নগদ দুই লক্ষ টাকা ও অনেক উপহার। ছোট্ট ঘুড়িবাজ পাচুকে কাঁধে নিয়ে হই চই করল সৈকতে।
অবশেষে আনন্দমিছিল নিয়ে হতদরিদ্র দুষ্টু পাচু বীরের মর্যাদায় প্রবেশ করলো গ্রামে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: পাচু নামটা সুন্দর না।

২| ৩০ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১০

চাঁদগাজী বলেছেন:



যাক পাচু জয়ী হলো, সেটাই ভালো লাগলো।

৩| ৩০ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৫১

মা.হাসান বলেছেন: নির্মল নির্দোষ আনন্দ। সরকারি ইদানিঙ ঘুড়ি ওড়ানোতেও কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এই অজুহাতে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.