নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিশোর গল্প: ডাবচুরি

০২ রা আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:০২

‘এই, যাবি নাকি?’
‘কই?’
চৈতিদের বাড়ি।’
‘এত রাতে?’
‘ডাব খাবো। দেখিসনি, চৈতিদের ঘরের কোণে নারকেলগাছটায় কত ডাব? কাঁদিসুদ্ধ সাবাড় করে দেবো, চল্।’
‘চৈতিটা যা ডাকাত মেয়েরে বাবাÑটের পেলে আর উপায় থাকবে না।
‘এই যে কালো চাদরটা দেখছিস, এটা গায়ে প্যাঁচিয়ে ভয়ংকর ভূতের রূপ ধরে এমন ভয় দেখাবো না, চৈতি ঠাস্ করে পড়ে যাবে মাটিতে। তখন তার মুখে চিল্লাচিল্লি করার জোর থাকবে না, মুখ দিয়ে খালি লাল-নীল ফেনা বেরোবে; আর এই ফাঁকে তুই ডাব নিয়ে সোজা চলে যাবি পুকুরপাড়ে। চল্।’

গাছতলায় গিয়ে পিন্টু তার গায়ের সার্ট খুলে আমার হাতে দিল। গায়ে তার স্যান্ডু গেঞ্জিটা শুধু। আমি তার সার্টটা গলায় প্যাঁচালাম। সে কাঁপাস্বরে বলল, ‘বুকটা কেমন ডিব্ডিব্ করছে, দেখ।’
‘দুর, ভীরুদের মতো কথা বলিস না তো! যা, ওঠ্।’
পিন্টু কষে নেংটি দিল। সে হাতের তালুতে থুতু ঘষিয়ে গাছে উঠছে। আমি গায়ে কালো চাদর প্যাঁচিয়ে ভ’ত হয়ে নারকেলগাছের আড়ালে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

দুই.
ঘটাংঘট শব্দে দরজা খুলে গেলো। ভয়ে আমার বুক ধড়ফড়্ করছে আর কানে করছে শোঁ শোঁ শব্দ। চৈতি ঘর থেকে বেরিয়ে বেড়ালের মতো হেঁটে নারকেলগাছের তলায় গিয়ে উপরের দিকে তাকালো। আমি ধুম করে সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই চৈতি একটা চিৎকার করে আমাকে খাবলা মেরে ধরে ফেলল। হাত ছুটাই তো জামা টেনে ধরে, জামা ছুটাই তো খাবলা মেরে চাদর টেনে ধরে। ভারি বিপদ! আমি আমার গায়ের সব শক্তি ঢেলে কোনো মতে ফসকে গিয়ে দিলাম ভোঁ দৌড়। কিন্তু চাদরটা রয়ে গেলো চৈতির হাতে। চৈতি গাছের দিকে তাকিয়ে ‘ডাবচোর’ ‘ডাবচোর’ করে চিৎকার করছে। মানুষজন এসে পড়ল বলে। পিন্টু অর্ধেক গাছ নেমে ডাবসহ লাফিয়ে পড়ল নিচে। দুঃসাহসিনী ডাকাত চৈতি থাপ মেরে ধরে ফেলল পিন্টুকে। গাছের তলে চোরে, ডাবে আর চৈতিতে টানাটানি কা-। চৈতি ছাড়ে না ডাবচোরাকে।

এক পর্যায়ে পিন্টু গায়ের গেঞ্জি খুলে উর্দ্ধশ্বাসে দিল দৌড়। সে হাঁচোড়-পাঁছোড় করে বাংলাঘরে এসে বেদম হাঁপাতে লাগল। তার অর্ধেক শরীর ভেজা, নেংটি অর্ধেক খোলা, গায়ে ধুলোবালি আর খামচির দাগ। সমানে কাঁপছে। আমি বললাম, ‘চিনতে পারে নি তো আবার?’
সে কাঁপত কাঁপতে শুকনো মুখে ঢোক গিলে বলল, ‘চুপ, কোন কথা বলবি না তুই। আমাকে ফেলে চলে এলি। জীবন নিয়ে টানাটানি। অল্পের জন্য রক্ষা। পানি দে, পানি খাব।’
আমি তাকে কী বলে সান্ত¦না দিব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।

তিন.
সকালে আমাদের ডাক পড়ল চৈতিদের বাড়ি। গেলাম। উঠোন ভর্তি মানুষ। ডাবচুরির নালিশ বসেছে। আমাদের দেখে একটা গূঞ্জন শুরু হলো। আমি আর পিন্টু মাতবরের সামনে গিয়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ালাম। লজ্জায় আমাদের মাথা হেট হয়ে গেলো।

ঘর থেকে বিছার মতো লাফিয়ে এলো চৈতি। সে কালো চাদর আর ছেঁড়াফাঁড়া গেঞ্জিটা দেখিয়ে বলল, ‘আপনারা দেখেন, ডাবচুরির প্রমাণ দেখেন।’
মাতবর বড় ভাল মানুষ। তিনি সবকিছু শুনে আমাদের কাছে টেনে নিয়ে বললেন, ‘বাবারা, কাউকে না বলে ডাব খেতে গেলি কোন দুঃখে, চাইলে কি দিত না?’
‘চাইলেও দেয় না, না চাইলেও দেয় না। এদের মতো কিপটা মানুষ এই গাঁয়ে নাই। না বলে খাবো না তো কি।’ বলল পিন্টু।
তার কথা শুনে সবাই হোঃ হোঃ হিঃ হিঃ করে হেসে উঠল। চৈতি রাগে গজর গজর করে আমাদের দিকে এগিয়ে এলো। মাতবর বলল, ‘মা চৈতি দুই গ্লাস ডাবের পানি নিয়ে আয় তো দেখি।’

চৈতি দুই হাতে দুটি গ্লাস এনে মাতবরের হাতে দিলো। মাতবর আমাদের দিকে গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘নে খা।’ আমি মনে করেছি এটা বোধ হয় চুরির কোন শাস্তি। আমরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করে গ্লাস নিলাম হাতে। মুখটা তিতা খাওয়ার মতো করে ডাবের পানিটুকুু খেয়ে বাম হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে মুখ মুছলাম।
মাতবর আফসোস করে বললেন, ‘আহারে আমরা এ বয়সে কত কি করেছি। এসব নিয়ে নালিশ বসে নাই। পোলাপান মানুষ এরা, প্রকৃতির দান এই ডাব খেতে গিয়ে মেলা নাজেহাল হয়েছে। মাপ কইরা দে মা চৈতি। শোন বেটা, না বলে খাওয়াটা বড় অন্যায় কাজ। তোরা আর এমন কাজ করিস না বাপ, যাহ্।’

হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।
কিন্তু চলে আসার সময় চৈতি চোখ পাকিয়ে ‘ডাবচোর’ বলে আমাদের গায়ে গ্লাসের অবশিষ্ট পানি ছুড়ে মারল।
আমরা আর কোনো দিন এমন কাজ করিনি। তবে চৈতির দেওয়া সেই নাম এখনও আঁঠার মতো লেগে আছে আমাদের গায়ে!

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:২৭

মুজিব রহমান বলেছেন: আমাদের শৈশব! কত কত ঘটনা!

০৩ রা আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:৪১

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: সকলের জীবনেই আছে মজার শৈশব। ধন্যবাদ।

২| ০২ রা আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:২৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হা হা হা

বড় মধুর বিচার ;)
কিন্তু উপাধিটা বড্ড পীড়ার

০৩ রা আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:৪২

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: কিশোর বলে এত মধুর বিচার! উপাধীটা এনজয় করা ছাড়া আর উপা কী বলুন। ধন্যবাদ।

৩| ০২ রা আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৪৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

এটা আমাদের সময়ে সম্ভব
এখন হলে মামলা হয়ে যেতো।
পুলিশের বাড়ি মিস হতোনা।
মানুষ দিন দিন অমানবিক
হয়ে যাচ্ছে !!

০৩ রা আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:৪৩

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: এখন আমাদের মানবিকতা খুব সহনশীল নয়।
আগের দিনে এগুলোকে স্রেফ দুষ্টুমি বলেই মনে করা হতো।
ধন্যবাদ।

৪| ০২ রা আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৪৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


মোটামুটি অদক্ষ।

০৩ রা আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:৪৪

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ঠিক বলেছেন। অদক্ষ না হলে এভাবে ধরা খেত না।
ধন্যবাদ।

৫| ০২ রা আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: আমি কখনও কিছু চূরী করার সুযোগ পাই নি। সারা জীবণ থেকেছি ঢাকায়। তাই ডাব, আম, মূরগী ছাগল কিছুই চুরী করতে পারি নি। অনেকে মজা করে গ্রামের গল্প বলেন। আমার এই রকম গল্প নাই।

০৩ রা আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:৪৬

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: খুব ভাল করেছেন চুরী করেন নি। তবে নিশ্চই চুরি করেছেন।
শুভেচ্ছা রইল।

৬| ০৩ রা আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৩৩

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: এখন মানুষ খুবই অসহনশীল। আশির দশকে এগুলো মামুলি বিষয় ছিল। কেউ অতটা গায়ে মাখতোনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.