নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইচ্ছেপূরণ মামা

০১ লা অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:০০

আট ভাই-বোনের মধ্যে মজনু মামা সবার ছোট। ছোট মামা বড়ো কিছু হবেন-এমন আশা পোষণ করতেন পরিবারের সবাই।
মামা বহু কষ্ট-সাধনা করে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন তিনবার। ফেল করেছেনও তিনবার। প্রতিবারই তিনি ভালভাবে পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিতে গিয়েছেন। যাওয়ার আগে যথারীতি মুরুব্বীদের সেলাম-তোয়াজ করে পায়ের ধুলি মাথায় মেখেছেন। পরীক্ষার খাতায় লিখেছেনও মেলা। অন্ততঃ এদিক থেকে তিনি পরিষ্কার।
মামা চতুর্থবার পরীক্ষা দিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতেন, ‘এবার দেখা যাবে, পরীক্ষক বাছাধনেরা আমাকে ফেল করায় কীভাবে। প্রশ্ন সব কমোন। ডান-বাম তাকাবার ফুরসত ছিল না। খাতা না হারালে আর শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত না হলে ফার্ষ্ট ডিভিশনের নিচে আশা করি না।’

যথাসময়ে পরীক্ষার ফল বেরোলো।
বহু তত্ব-তালাশ করে রেজাল্টতালিকায় মামার রুল নম্বরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেল না। এ অবস্থায় সবাই যখন চিন্তায় অস্থির, মামা তখন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘বুঝেছি ওই একই অবস্থা হয়েছে এবারও। পরীক্ষকদের সততা আর প্রদত্ত নম্বরের কোনো অডিট হয় না বলে আমি তাঁদের স্বেচছাচারীতার নির্মম শিকারে পরিণত হয়েছি। মহান প্রভু হয়তো আফসোস করে বলছেন, ‘হে মজনু, কেউ জানুক আর না জানুক, আমি তো জানি তুমি ষোলোআনা কর্তব্য পালন করিয়াছ, কিন্তু কেহই তোমার উপযুক্ত মূল্যায়ন করে নাই। হতাশ হইও না। আমি তোমাকে এর তুল্য-মূল্য দান করিব।’
অতএব মামা বেশ আছেন।

মজনু মামা এখন নির্জলা-নিষ্ফলা-নিরঙ্কুশ বেকার। বেকার বলে তার কাজের কোনো অভাব নেই। পরীক্ষায় ফেল করার পর মামার ওপর কাজের চাপ ও তাপ অনেক বেড়ে গেছে। চঞ্চল মজনু মামা বারবার পরীক্ষায় ফেল করে, পরিবারের সকলের কটুকাটুব্যে ভোঁতা হয়ে গেছেন। হালের বলদ কাদায় পড়ে গেলে গৃহস্থের লাঠির অব্যাহত ঘা-গুঁতো খেয়েও যেমন নীরব থাকে, মজনু মামার অবস্থাও হয়েছে তেমন। মামা ব্যর্থতা ও লাঞ্ছনার মূর্ত প্রতীকরুপে পরিবারের অনাবশ্যক ভার হয়ে কোনোমতে টিকে আছেন। মামা বুঝতে পেরেছেন, বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়া এর থেকে নিষ্কৃতি নেই।

দুই.
মামা বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেলেন।
পরিবারের সকলেই বেকার ছেলেটির ব্যাপারে বললেন, বেচারি যাবে কোথায়; ফিরে না এসে তার উপায় কি?
মামা ফিরে এলেন না। নানা-নানুর পীড়াপীড়িতে মামা খালারা আতœীয়, বন্ধূ-বান্ধব ও সম্ভাব্য জাগায় খোঁজাখুঁজি করলেন। না, কোথাও মামার সন্ধান পাওয়া গেল না।
মামা অনুভব করলেন, বিদ্যা-বুদ্ধি ছাড়া মানুষের মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার কোনো বিকল্প পথ নেই। কষ্ট না থাকলে চেতনা জাগে না। মামা একটা চ্যালেঞ্জ করে বসলেন। তিনি নিজ উদ্যোগ-আয়োজনে লেখাপড়া শুরু করে দিলেন। অতঃপর মামা সফল হলেন।
এদিকে মজনু মামা জীবিত আছেন না মরে গেছেন এ আশঙ্কা বুকে বেধে নানুর বিলাপে ও নানার প্রলাপে সবাই অস্থির। অগত্যা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হলো, “মজনু, তুমি যেখানেই থাকো না কেনো তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসো। তোমার চিন্তায় তোমার মা-বাবা শয্যাশায়ী।”
তিনদিন পর একটি চিঠি এলো বাড়িতে। ‘শ্রদ্ধেয় মা ও বাবা, আমি লেখাপড়া শেষ করে একটা ব্যবসায় করছি এবং বেশ আছি। চিন্তা করো না। আগামী শুক্রবার বিকেলে বাড়ি আসছি ইতি, মজনু।’
মুহূর্তের মধ্যে সংবাদটি সকল আত্মীয়-স্বজনের কাছে পৌঁছে গেল। সবাই ছুটে এলো। বাড়ি ভর্তি মানুষ। আনন্দ আর ধরে না।

আমরা সমবয়সী ছেলেমেয়েরা চট করে একটা বুদ্ধি আবিষ্কার করে ফেললাম। বাড়ির প্রবেশ পথে কলাগাছ দিয়ে একটা তোরণ নির্মাণ করে লাল ফিতা বেঁধে দিলাম। আমরা হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে মামার আগমন অপেক্ষায় ছটফট করতে লাগলাম। পাড়ার সবাই কৌতূহল নিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন। উৎসব উৎসব ভাব।
একটা টেক্সি দ্রুতবেগে এসে গেটের সামনে থামল। মাঝারি সাইজের একটা ভারী ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে মজনু মামা টেক্সি থেকে নামলেন। গেটের সামনে এসে লাল ফিতায় আটকে গেলেন মামা। বাড়ির প্রবেশপথে গেট আর উৎসব-আয়োজনের সমারোহ দেখে অবাক হয়ে গেলেন মামা। থতমত খেয়ে গলা বাড়িয়ে আস্তে করে বললেন, ‘ঘটনা কিরে? তোরা আছিস কেমন? কথা বলছিস না যে! ‘আমরা পূর্ব পরিকল্পনামত গেটপাশের আগে মুখে কুলুপ এঁটে নির্দয়ভাবে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

সবাই মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ মামার চোখ পড়ল গেটের গায়ে লেখার ওপর। ‘মজনু মামার আগমন, শুভেচ্ছা-স্বাগতম। গেটপাশ- বেকার হলে ফ্রি, রোজগারি হলে পাঁচ শ’ টাকা।’ গেটের এ লেখা পড়ে ‘কোন ব্যাপার না।’ বলেই মামা চটপট মানিব্যাগ থেকে পাঁচ শ টাকার কড়কড়ে নোট বের করে আমার হাতে দিলেন। ওম্নি প্রচন্ড করতালিতে ফুলের মালা-তোড়া আর হাসি দিয়ে মামাকে বরণ করে নিলাম। মজনু মামার আগমনে নানা-নানুর প্রলাপ-বিলাপে ভারাক্রান্ত বাড়িটি মুহূর্তের মধ্যে আনন্দালোকে চঞ্চল হয়ে উঠলো।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৩৩

আমি সাজিদ বলেছেন: আগেও পড়েছিলাম আপনার মজনু মামার গল্প। বেশ চমৎকার।

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: এরকম একজন মামা থাকলে আমার খুব ভালো হতো।

৩| ০১ লা অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৪১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আমারও মামা ছিলো তবে্
তারা ছিলো গুরুগম্বীর।
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান
ভা্বই আলাদা!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.