নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিল্লিরানি ধনেশ্বর

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:২৬


দুষ্টুমি ছাড়া আর কোনো কাজ নেই তার। সে ঘরেরটা খাবে না-পরেরটা খাবে। সমাদরে খাবে না-জোর করে খাবে।
সুযোগ পেলেই সে হাঁড়ি-পাতিল ওল্টায়। চুপি চুপি দুধ, মাছ, মাংস খেয়ে ফেলে। বারান্দায় গোল হয়ে ঘুমিয়ে থাকা কুকুরের উপর লাফিয়ে পড়ে। কুকুরটা রাগে আগুন হয়ে ঘেউ ঘেউ করে তার পিছু ছোটে। সে গায়ের লোম ফুলিয়ে ফোঁস ফাঁস করে ভয় দেখায়। তার ভয়ে উঠোনে একটা প্রাণিও আসতে পারে না। সে মুরগির বাচ্চা, হাঁসের বাচ্চা দেখলেই হা-করে ছোটে। ছাগলছানার কান কামড়ে দেবে, পিঠে চড়ে বসবে। এখন ওকে দেখলেই ম্যাঁ ম্যাঁ করে পালায় ছানাটি। শিশুরা শান্তিতে একটা কিছু খেতে পারে না। শিশুর হাত থেকে খাবার ছিনিয়ে নিয়ে দিবে ভোঁ দৌড়। তার দুষ্টুমিতে পাড়ার ছোট-বড়ো সবাই অস্থির। সে আর কেউ নয়; আমাদের পোষা বিড়াল, বিল্লি।

বিল্লির বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। আর কত সহ্য হয়!
দাদা খুব বিরক্ত হলেন তার উপর। নাহ্ তাকে আর পোষা যায় না। একদিন দাদা বিড়ালটাকে ব্যাগে পুরে বনে নিয়ে রেখে আসলেন। আসার সময় দাদা ব্যাগের মুখটা খুলে দিয়ে বললেন, তোমার ঘরের খাবার ভাল লাগে না, আদর ভাল লাগে না, সারাদিন দুষ্টুমি। এবার বনের ভেতরে তুমি দিদিগিরি করে খাওগে। বিল্লি দাদার কথা শুনে বলল, মিঁউ।

ইঁদুরের পাহারাদার হলো বিল্লি
বিল্লি অচেনা বনের ভেতরে ঘুরে বেড়ায়। ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে তার। পাখি দেখে ছোটে সে। পাখিরা উড়ে চলে যায়। ধরতে পারে না। খিদের চোটে একবার বিল্লি ফোঁস করে গিয়ে এক খট্টাসের উপর ঝাপিয়ে পড়ল। খট্টাসের গায়ের দুর্গন্ধে সে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে পালিয়ে গেল। পরে বিল্লি ঝোপের আড়ালে বসে জিহ্বা দিয়ে চেটে নিজের থাবা সাফ করতে লাগল।
হঠাৎ বিল্লির দেখতে পেল কয়েকটা ইঁদুর মুখে খাবার নিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে তো সে মহা খুশি। বিল্লি ভাবল, এবার পেট ভরে ইঁদুর খাওয়া যাবে।
ইঁদুরগুলো খুব চালাক। বিল্লিœকে দেখেই ওরা পটাপট গর্তে ঢুকে গেলো। বিল্লি গর্তের ওপর ওঁৎ পেতে বসে আছে। কিন্তু কোনো ইঁদুরের গর্ত থেকে বের হলো না। বিল্লি একটা বুদ্ধি আঁটলো। সে তার লেজ ইঁদুরের গর্তে ঢুকিয়ে দিল। ইঁদুরেরা লেজ কামড়ে ধরবে আর ওমনি সে টান মেরে বাইরে নিয়ে আসবে। তারপর ইঁদুর ধরে খাবে। কিন্তু তার বুদ্ধিটা কাজে লাগে নি। ইঁদুরেরা তার লেজ কামড়ে না ধরে লেজে সুঁড়সুঁড়ি দিতে লাগল। ক্ষুধার পেটে বিল্লি খলখল করে হেসে উঠল। সে ভাবল, নাহ, এভাবে আর বেশি দিন বেঁচে থাকা যাবে না। আমাকে ভাল কিছু করতে হবে।

বিল্লিœ গর্তের কাছে মুখ রেখে বলল, আমি তোমাদের কোনো ক্ষতি করব না। আমি তোমাদের উপকার করতে চাই। তোমরা আমাকে বিশ্বাস করতে পারো এবং বন্ধু মানতে পারো।
একটি বুড়ো ইঁদুর মুখ বের করে কাঁপতে কাঁপতে বলল, তোমাকে বন্ধু মানা তো খুবই বিপদের কথা। তুমি আমাদের কী উপকার করতে পারবে শুনি?
বিড়াল বলল, যেটা তোমাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি সেটাই করতে পারি আমি।
আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে খুব বিপদের মধ্যে আছি। আমাদের চারপাশে শক্রু আর শক্রু। আমরা খাবারের সন্ধানে বাইরে চলে যাই। আর দানবেরা আমাদের ছানাদের খেয়ে ফেলে।
বিল্লি বলল, দানবেরা মানে?
হ্যা বলছি শোনো। বলল, ইঁদুরটি। সাপ, পেঁচা, বাজ, ঈগল, কাক এরাই হলো এই বনের দানব। এরাই দানবের মতো উড়ে এসে ছোঁ মেরে নিয়ে যায় আদরের ছানাদের। প্রতিদিন আমরা বাইরে থেকে এসে ছানাদের হিসেব মেলাতে পারি না। প্রতিদিন দানবের পেটে চলে যায় আমাদের ছানারা। এটা কত বড়ো কষ্টের তা বুঝতে পারছ তুমি! আমরা কিছুতেই ওদের হাত থেকে ছানাদের রক্ষা করতে পারছি না। এটাই হলো আমাদের বড়ো সমস্যা।
বিড়াল বলল, এই কথা! এটা কোনো ব্যাপার না। মনে রেখো আমার থাবা থেকে ওদের কেউ রেহাই পাবে না।
বিড়ালের এই কথা শুনে ইঁদুরেরা একটু ভরসা পেলো।
বিড়াল বলল, তোমরা খাবারের খোঁজে বাইরে চলে যাবে আর আমি তোমাদের ছানাদের পাহারা দিয়ে রাখব। শুধু তাই নয়, তাদেরকে বেজায় আনন্দের মধ্যে রাখব আমি।
এমন সময় এক পেঁচা হামলে পড়ল ইঁদুরের মাঝে। ছোঁ মেরে একটি ছানা নিয়ে চলে যাচ্ছিল। বিল্লি প্রচণ্ড বেগে ঝাপিয়ে পড়ল পেঁচার উপর। তিনটা পাঁক খেল মাটিতে। পেঁচা ছানা ফেলে পড়ি মরি করে কোনো মতে ছুটে পালালো। আতঙ্কিত ইঁদুরেরা বিল্লির সাহস আর শক্তি দেখে খুব ভরসা পেলো। ইঁদুরেরা বলল, আমরা তোমার উপর বিশ্বাস রাখলাম। আশা করি তুমি আমাদের বিশ্বাসের মূল্য দিবে।

বন্নি হয়ে উঠলো বিল্লিরানি ধনেশ্বর
ইঁদুরেরা বাইরে গিয়ে খাবার জোগাড় করে আনে আর বিল্লি ইঁদুরছানাদের পাহারা দেয়। ইঁদুরছানারা বিল্লিকে পেয়ে খুব খুশি। কারণ বিল্লি ওদেরকে নিয়ে মজার খেলা করে। ছানারা দিনে দিনে খুব চটপটে আর তরতাজা হয়ে উঠেছে। ইঁদুরেরা বিল্লির উপর বেজায় খুশি।
ইঁদুরের গর্তের আশে পাশের গাছের ডালে এসে বসে থাকে শিকারী পাখিরা। এরা সুযোগ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে ইঁদুরের উপর। ছোঁ মেরে নিয়ে যেতে চায়। এখন বিল্লির জন্য তারা সুবিধা করতে পারছে না। শিকারী পাখিরা আশপাশে ঘোরাফেরা করে সুযোগের সন্ধান করে।
একদিন একটি বাজপাখি বিশাল পাখা মেলে দানবের মতো ছুটে এলো গর্তের দিকে। ইঁদুরছানারা ভয়ে চিঁ চিঁ করতে লাগল। বিল্লি তীরের বেগে লাফিয়ে গিয়ে কামড়ে ধরে বাজপাখিটাকে ফেলে দিল মাটিতে। কেউ কাউকে ছাড়ে না। বাজপাখি বিড়ালের কামড়ে আর ফোঁস ফাঁস শব্দে দিশেহারা হয়ে পড়ল। বাজপাখি ডানা মেলে উড়ে যেতে চায় কিন্তু বিল্লি তাকে ছাড়ছে না। বাজপাখির পাখার বাড়িতে বনের ধুলা পাকখেয়ে উপরের দিকে উঠছে।
ইঁদুরেরা বাইরে থেকে এসে দেখে বাজে-বিড়ালে মরণপণ লড়াই করছে। কেউ কাউকে ছাড়ছে না। কেউ হারে না, কেউ ভাগে না। বিল্লি গায়ের লোম ফুলিয়ে খামচিতে আর কামড়ে বাজ পাখিকে কাবু করে ফেলেছে। বনের অন্য পশুপাখিরা দূরে দাঁড়িয়ে এ ভয়ংকর দৃশ্য দেখছে। লড়াই করতে করতে বাজপাখি ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। শেষে আহত বাজপাখি পাখা ঝাপটিয়ে উড়ে চলে গেল।
বনের পশুপাখিরা বিল্রিœর খুব প্রশংসা করল। তারা হয়ে বলল, আমরা তোমার সততা, সাহস আর বীরত্ব দেখে মুগ্ধ। তুমি যতদিন এখানে থাকবে, আমরা তোমাকে রানির মর্যাদা দিয়ে রাখব।
তারা তাই করল। পশুপাখির দেওয়া ধনে-মানে বিল্লি দিনে দিনে হয়ে উঠলো বিল্লিরানি ধনেশ্বর।



মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৩৮

যারীন তাসনীম আরিশা বলেছেন: সুন্দর গল্প।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৩৯

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত।
আমার প্রীতি নিন।

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৫০

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: দেশে ভালো শিশু সাহিত্যের অভাব প্রকট। আপনার লেখা আমার ভালো লাগে। কিন্তু একটা প্রশ্ন প্রায়ই মাথায় আসে - ব্লগে আপনার শিশুতোষ লেখাগুলোর পটেনশিয়াল রিডার আছে বলে কি আপনার মনে হয়? শুভেচ্ছা জানবেন!

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:৫২

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: আমি মনে করি পটেনশিয়াল রিডাল আছে। কারণ আমরা বয়সে যতই বড়ো হই না কেনো আমাদের ভেতরে একটি শিশু বাস করে।
সময়- সুযোগ বা পরিবেশের কারণে সেই শিশুটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে না; তবে উৎপাত করে।
আপনি আমার লেখা পছন্দ করেন জেনে ভাল লাগল। শুভ কামনা।

৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার লেখার পাঠক অনেক আছে ব্লগে। এর মধ্যে আমি একজন।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৮

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: আপনি আমার প্রিয় পাঠক। আপনি আছেন এক নম্বরে।
শুভ কামনা।

৪| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:১২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: চলমান বাস্তবতা যথার্থ ও নিখুঁত প্রকাশ ।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৮

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: আমার শুভেচ্ছা নিন।

৫| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৩৮

রামিসা রোজা বলেছেন:
বিড়াল খুব শান্তশিষ্ট প্রাণী কিন্তু একদিন রাস্তা দিয়ে হেটে
যাচ্ছি কি বুঝে যেন একটা বিড়াল এসে আমার পায়ে
বিড়ালের পায়ের নখ দিয়ে আমার পায় আঘাত করে চলে
গেল এক মুহূর্তের মধ্যে সেই থেকে আমি বিড়াল প্রচন্ডভাবে
ভয় পাই। সুন্দর শিশুতোষ গল্প ++

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৯

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত।

আপনি বিড়ালকে আর ভয় পাবেন না।
বিড়াল অহেতুক খামচি মারে না।
শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.