নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিঁপড়ে ও অহংকারী রাজা

০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:১৮


রাজা মশাই আমরা অতি ছোট্ট প্রাণী। এ বনে আমরা আমাদের মতো করে চলাফেরা করি। কিন্তু আপনি এ বনে এসে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি করছেন। আমরা কী অপরাধ করেছি রাজা মশাই? রাজাকে বলল এক পিঁপড়া।
রাজা নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন, কে? কে কথা বলে?
পিঁপড়া মাথা উচু করে বলল, রাজামশাই আমি পিঁপড়া কথা বলছি।
রাজা বললেন, কী ক্ষতি করছি আমি, শুনি?
পিঁপড়া বলল, আপনি যখন এ বনে পশুপাখি শিকার করতে আসেন, তখন আপনার ও আপনার সাথীদের পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে অসংখ্য পিঁপড়া মারা যায়। এভাবে আমরা বাঁচব কিভাবে রাজামশাই?

রাজা ধমক দিয়ে বললেন, আমি হলাম রাজা। শিকার করা আমার শখ। তোর মতো ছোট পিঁপড়ার জন্যে কি আমি শিকার করা বন্ধ করে দেব?

পিঁপড়া বলল, আমরা ছোট্ট বলে এতো অবহেলা করবেন না রাজামশাই। আমরা তো আপনার কোনো উপকারেও আসতে পারি।
একথা শুনে রাজা হাঃ হাঃ হোঃ হোঃ করে হাসতে হাসতে বললেন, তোরা করবি আমাদের উপকার? হাঃ হাঃ হাঃ।

পিঁপড়া বলল, তাহলে আপনার এত বড় রাজ্যে কি আমাদের একটুও মূল্য মর্যাদা নেই?

তোদের আবার কীসের মূল্য-মর্যাদা। তোরা এমনই এক অকেজো আর কমজোর প্রাণী যে, তোরা কোনো উপকার করতে পারবি তো দূরের কথা কোনো ক্ষতি করার ক্ষমতাও নেই তোদের। তোরা পায়ের নিচে পড়ে মরলে আমাদের কী এমন আসে যায়, বল। অহংকার করে বললেন রাজা।

পিঁপড়া বলল, আমরা উপকার না করতে পারলেও অপকার করতে পারি? এ কথা বলে পিঁপড়াটি পটাপট রাজার পায়ে কুট্টুস করে বসিয়ে দিল একটা কামড়। রাজা ব্যথায় লাফিয়ে উঠে বললেন, এতো বড় সাহস তোর। আমার পায়ে কামড় বসিয়ে দিলি? আমি কোন শক্রুকে বাঁচিয়ে রাখি না। এই ল তোর পুরস্কার। রাজা তাঁর পায়ে পিষে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেললেন পিঁপড়াটিকে।

দুই.

এ পিঁপড়াটির মৃত্যুতে বনের অন্য পিঁপড়ারা খুব কষ্ট পেল। তারা বসে পরামর্শ করতে লাগল, এখন কী করা যায়।

তারা গেল পিঁপড়ারানির কাছে। সব কথা খুলে বলল পিপড়াটি।
রানি বললেন, আমরা কারও কোনো ক্ষতিও করি না আর উপকারও করি না বলে আমাদের কোনো দাম নেই। এখন আমাদের একটা কিছু করে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, এই জগতে আমরা এমনি এমনি আসি নি। আমাদেরও জোর আছে, বুদ্ধিও আছে আর দুনিয়াতে আছে আমাদের প্রয়োজন। ইচ্ছা করলে কিছু একটা করে দেখাতে পারি আমরা।

অন্য পিঁপড়ারা বলল, তাহলে আমরা এখন কী করতে পারি রানি মা?
রানি বললেন, আগে আমাদের এ পিঁপড়াকে মারার প্রতিশোধ নিতে হবে।

যেই কথা সেই কাজ।
দলবেধে পিঁপড়ারা চলল রাজপ্রাসাদের দিকে। অসংখ্য পিঁপড়া দীর্ঘ লাইন ধরে হেঁটে চলেছে।

তিন.

গভীর রাত। রাজপ্রাসাদে রাজা আর রানি ঘুমিয়ে আছেন। রাজা ধড়ফড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে হাতে-পায়ে চুলকাতে লাগলেন। অসহ্য হয়ে রাজা বাতি জ্বাললেন। দেখেন, পিঁপড়ারা দলবেধে তাঁর হাতে পায়ে আক্রমণ করছে। সারা শরীরে পিল পিল করে হাঁটছে আর কামড়াচ্ছে। রাজা সহ্য না করতে পেরে চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলেন। রানি লাফিয়ে উঠে বললেন, কী হয়েছে আপনার, এই গভীর রাতে এমন করছেন কেন, কী হয়েছে আপনার?

রাজা তাঁর গায়ে ছোটাছুটি করা পিঁপড়াদের দেখিয়ে বললেন, দেখো, দেখো ছোট ছোট পিঁপড়া কত ভয়ংকর ভাবে কামড়াচ্ছে আমাকে। উফ, কী যন্ত্রণারে বাবা। আমাকে বাঁচাও। রানি দুহাতে সমানে পিঁপড়া সরাতে লাগলেন। একটা সরান তো তো দশটা এসে কুট্টুস করে কামড়ায়। রাজার সাথে সাথে রানিও লাফালাফি শুরু করে দিলেন। তারপর ডাকতে লাগলেন পাইক পেয়াদা আর চাকরদের। দৌড়ে এলো সবাই। এসে দেখে রাজা নেচে নেচে সমস্ত শরীরে চুলকাচ্ছেন। রানি ভয়ে পালঙ্কে পা তুলে বসে আছেন।

পাইক-পেয়াদা আর চাকরেরা ছুটে এসে বলল, রাজামশাই আমরা এখন আপনার জন্য কী করতে পারি।
রাজা বললেন, আমার সমস্ত শরীরে পিঁপড়েরা,ছোটাছুটি করছে আর সমানে কামড়াচ্ছে। কুট কুট কুট। জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে শরীর। উফ্, আহ্।

তারা রাজার পিঠ-পেট চুলকিয়ে দিতে লাগলেন। কিন্তু রাজা আর থামে না। রাজা নাচতে নাচতে তাঁর পোশাক খুলে ফেললেন। চাকররা তাঁর শরীর ডলতে লাগল। পিঁপড়ার কামড়ে সমস্ত শরীর লাল হয়ে গেছে। রাজা হঠাৎ হঠাৎ লাফিয়ে উঠেন আর বলেন, সহ্য হচ্ছে না আমার, এতো জ্বালা, এতো যন্ত্রণা। ওরে, আমাকে বাঁচা। আমাকে খেয়ে ফেলল।

পরেরদিন রাজদরবারে বসলেন রাজা। বৈঠকে কথা বলছেন। হঠাৎ করে তিনি লাফিয়ে উঠলেন।
ব্যাপার কি? রাজা মুখ বাঁকিয়ে, পিঠ বাঁকিয়ে, এঁকেবেঁকে চুলকাতে লাগলেন সারা গায়ে। কোনো আলাপই করতে পারছেন না। পিঁপড়ারা রাজার পকেটে, হাতের চিপায়, পায়ের চিপায়, বগলতলা, কানের চিপায়, জুতোর ভেতরে ছোটাছুটি করে এমনভাবে কামড়াতে লাগল যে আর বসে থাকার যো নেই। চুলকাতে চুলকাতে রাজা বেহুঁশ হয়ে দৌড়ে গিয়ে পড়লেন সামনের এক দীঘির জলে।

পিঁপড়ারা খালি রাজাকেই কামড়ায় আর কাউকে কামড়ায় না। রাজার এ বিপদ দেখে ডাকা হলো কবিরাজ আর বৈদ্যকে।
তারা বলল, রাজার পোশাক পুড়ে ফেলতে হবে। পুড়ে ফেলল পোশাক। নতুন পোশাক এলো। কিন্তু এ পোশাক পরেও শান্তি নেই। অসংখ্য পিঁপড়া বসে আছে পোশাকের ওরতে-পোরতে। পোশাক পরলেই কামড়ায় কুটুর কুটুর কুট।

কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। অবশেষে মন্ত্রীদের পরামর্শে রাজপ্রাসাদে আগুন লাগিয়ে দেয়া হলো। পিঁপড়ার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে পুড়ে ফেলা হলো রাজপ্রাসাদ।

হাফ ছেড়ে বাঁচলেন রাজা। আর ঠোঁট বাঁকিয়ে বললেন, পিঁপড়া মশাইরা এবার কামড়াবে কিভাবে? সব তো পুড়ে ছাই করে দিলাম। রাজার সাথে মশকরা!

চার.
পিঁপড়ারা বলল, আমাদের কয়েক হাজার সৈন্য মারা গেছে। এতে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের সংগ্রাম চলবেই। রাজা নতুন বাড়ি বানিয়েছে। যেভাবেই হোক সেই বাড়িতে ঢুকে উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে রাজাকে।
পাঁচ.
রাজা নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে আছেন নতুন রাজপ্রাসাদে।
এমন সময় পিঁপড়ারা হামলা শুরু করে দিল।
রাজা পিঁপড়ার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে কাপড়-জুতো খুলে পাগলের মতো ছোটাছুটি করতে লাগলেন। রাজ্যে প্রচার হয়ে গেল, রাজা পাগল হয়ে গেছেন, রাজা উদোম হয়ে পথে-ঘাটে ছোটাছুটি করছেন। এ পাগলরাজা দিয়ে রাজ্য চলবে না।

রাজা বললেন, সামান্য পিঁপড়ার জন্য আমার এতো বড় বদনাম? রাজাগিরি চলে যাবে আমার, আমি পাগল? তা হতে দেব না। তিনি আদেশ করলেন, বনে আগুন ধরিয়ে দাও। পিঁপড়ার বংশ-করে দেবো ধ্বংস।

রাজকর্মচারিরা বনে আগুন ধরিয়ে দিল। বন পুড়ে ছাই। কিছু মারা গেল আর সকল পশু-পাখি, পিঁপড়া বন থেকে পালিয়ে চলে এলো লোকালয়ে। হিংস্র পশু-পাখিদের দেখে রাজ্যের মানুষ ভয়ে ছোটাছুটি করতে লাগল। রাজার পাগলামী দেখে সবাই বলল, এবার নিশ্চিত, রাজা পাগল হয়ে গেছেন। রাজ্য বাঁচাতে হলে পাগলারাজাকে নির্বাসনে পাঠানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

ছয়.
সকলেই বলল, হ্যাঁ ঠিকইতো। রাজা আজ বন পুড়েছে কাল পুড়বে রাজ্য। এই পাগল রাজাকে আর সুযোগ দেয়া যাবে না।
রাজাকে এক বনে নির্বাসন দেওয়া হলো।
রাজা রাজ্যক্ষমতা হারিয়ে কাঁদে আর মনের দুঃখে বনে বনে ঘুরে বেড়ায়।
রাজার পেটে খাবার নেই। তাঁর মন বেজায় খারাপ হয়ে আছে। তিনি একটা গাছের শিঁকড়ে বসে আছেন। এমন সময় দেখতে পেলেন, তাঁর সামনে দিয়ে পিঁপড়ারা লাইন ধরে হেঁটে যাচ্ছে। ওদের মুখে খাবার। রাজা পিঁপড়া দেখে ভয়ে পা তুলে বসলেন। আর বললেন, হে ভয়ংকর পিঁপড়া, তোরা আমাকে রাজা থেকে পথের ভিখারী করেছিস। আর কী চাস তোরা এখানে?

পিঁপড়ারা মুখ তুলে বলল, আমরা তো বনেই থাকি। আপনি কি সেই রাজা, যে পিঁপড়াকে ছোট বলে অবহেলা করতো আর বিনা কারণে পায়ে পিষে মেরে আনন্দ করতো? তারপর বনে আগুন ধরিয়ে সবাইকে শেষ করতে চেয়েছিল?
রাজা চুপ করে রইলেন।

পিঁপড়ারা বলল, আমরা তো আপনার অনেক বড় ক্ষতি করেছি রাজামশাই। এবার করব উপকার।
তোমরা আমার কী উপকার করবে পিঁপড়া ভাই। রাজা অবাক হয়ে বললেন।
পিঁপড়ারা গাছ থেকে টাটকা ফল এনে দিল রাজার হাতে। ক্ষুধার্ত রাজা ফল খেলেন। আর লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বললেন, দুনিয়াতে কেউই খালি খালি আসেনি, ছোট বলে কাউকে অবহেলা করা ঠিক নয়। জগতে প্রয়োজন আছে সবার।
রাজা তাঁর ভুল বুঝতে পেরে আফসোস করতে লাগলেন।


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: রাজার ডায়লগ গুলো ভালো লাগলো।

০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:৫২

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: অনেক শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।

২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:১২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

ছোট বলে কাউকে অবহেলা করা ঠিক নয়।
সিংহ বিপদে পড়লে ইদুরও তার সহায় হতে
পারে।

০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:৫২

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ঠিক বলেছেন আপনি। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.