নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পা (তরুণগল্প)

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০৮


এক যে আযব দেশ। সেই দেশে সময়-সুযোগ মতো সত্য আর মিথ্যা হাত ধরাধরি করে চলে। একের সাথে অন্যের বেজায় খাতির। যেখানে সত্য সেখানে মিথ্যা। আবার মাঝে-মধ্যে শক্রুতাও হয়। সত্য মাথা উচু করে দাঁড়াতে চাইলে মিথ্যা সেখানে গিয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাধায়।
সত্য-মিথ্যার সাথে খাতির হয়ে গেলে রাজ্যে আর শান্তিও থাকে না; স্বস্তিও থাকে না। সত্য সত্যের মতো করে চলতে-বলতে পারে না। আবার মিথ্যাও মিথ্যার মত করে চলতে-বলতে পারে না। মিথ্যা কোথাও গিয়ে যদি বেশাতি করতে চায় সত্য সেখানে গিয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এক অদ্ভুত অবস্থা। কিন্তু এভাবেই চলছে একটা রাজ্য।”

এ রাজ্যে লেবু মিয়া নামে এক গরিব লোক চিৎকার করে বলতে লাগল তার একটা পা খোয়া গেছে। কে বা কারা তার দেহ থেকে পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। তাকে হাসপাতালে নেয়া হলো। রক্তে নদানদী। রাজ্যময় পড়ে গেল হাহাকার। বলে কি, পা আবার খোয়া যায় ক্যামনে! পা নিল কে?

লোকজন এলো ছুটে। লেবু মিয়া বলে, দেখেন, দেখেন আমার অবস্থা। পা একটা নেই। কষ্টে আমার কলজে ফেটে যাচ্ছে। কয়েকজন চুপি দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে ভাল করে চেয়ে দেখল, সত্যিই লেবু মিয়ার একখান পা নেই।

কষ্টের সীমা নেই লেবুর। গরিব ঘরের ছেলে লেবু মিয়া পঙ্গু হয়ে গেল চিরদিনের জন্য। তার কান্না দেখে লোকেরাও কাঁদে। তার হতদরিদ্র মা-বাবা বুক চাপড়ে কান্নাকাটি করে আর বলে আমার এ নিরীহ সন্তানের কী এমন অপরাধ ছিল, কেন কেড়ে নিল তার পা। এখন কী হবে গো আমাদের। কীভাবে চলবে-ফিরবে ছেলে, কীভাবে চলবে কষ্টের সংসার। সবাই খালি দেখে। কেউ তার জবাব দিতে পারে না।

কয়েকজন বলল¬, কে এভাবে তোর পা-টা নিয়ে চিরদিনের জন্য পঙ্গু করে দিল রে লেবু। লেবু সব কথা খুলে বলল। কিন্তু লোকেরা শুনলেই কি আর বিশ্বাস করলেই বা কি। রাজার লোকেদের তো শুনতে হবে, দেখতে হবে, তারপর বিশ্বাস করতে হবে। তারপরেই না বিচার আচার।
লেবু মিয়া পঙ্গু হয়ে হাসপাতালে পড়ে কাৎরায়।

লেবু মিয়ার পা খোয়া যাওয়ার ঘটনাটি ছড়িয়ে গেল রাজ্যময়। সবাই হা হা করে উঠল। যারা এই নিষ্ঠুর কাজ করেছে তাদের হতে হবে বিচার। বিচার গেল রাজার কাছে।

সবাই আশায় বুক বেধে আছে, এ সংবাদ রাজার কানে যাওয়ামাত্র ছুটে আসবেন রাজা। সহানুভূতি জানাবেন, সুষ্ঠু চিকিৎসা করাবেন, ক্ষতিপূরণ দিবেন। দোষীদের সাজা দিবেন। লেবু মিয়ার সীমাহীন কষ্ট একটু হলেও লাঘব হবে।

রাজা বললেন, তোমরা মুখে বললেই তো হবে না। আমার লোক লস্কর দিয়া এটা তদন্ত-ফদন্ত করে দেখতে হবে আগে, তোমাদের গল্পটা আসলেই সত্য না মিথ্যা।

রাজার লোকজন এল ছুটে। তারা লেবু মিয়াকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখল। তারা এসব দেখেটেখে কাগজে লিখল। আশেপাশের মানুষের নাম ঠিকানা আর স্বাক্ষী নিল। সবাই বলল, লেবু মিয়ার পা খোয়া গেছে। এর সঠিক বিচার যেন হয় মশাই।

সবকিছু ঠিকঠাক। সত্য মনে মনে খুশি হয়ে বলে যাক, এবার জয় হবে সত্যের।
না কিছুইতো হচ্ছে না। ব্যাপার কি?

সমস্যা হলো, তদন্তে খালি রাজার লোকেদের নাম আসে। যে তদন্তে রাজার লোকেদের নাম এসে যায়, সেটা বিশ্বাস করা কি এত সোজা!

সত্যমিথ্যা রাজ্যে সত্যকে টেনে বের করা সহজ কাজ না। তদন্ত আরো করতে হবে। কঠিন তদন্ত।
বারবার তদন্ত হয়। অনেক কাগজপত্র খরচ হয়। কিন্তু লেবু মিয়ার হয় না কিছুই। দিনে দিনে বেড়ে চলেছে লেবুর কষ্ট।

তারপর এল এক পাওয়ারফুল তদন্ত কমিটি। লেবু মিয়ার দুর্গতি দেখে এক তদন্তকর্তা ঠিক থাকতে পারলেন না, ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন।
তদন্ত গেল রাজার কাছে। সেখানে মিথ্যা গিয়ে হাজির হলো। রাজাকে নয় ছয় বুঝায়।
রাজা বললেন, এখানে রাজার লোকেদের নাম দেখছি কেন? তদন্ত ঠিক হয়নি।

সত্য উকি মেরে বলে, কী বলেন রাজামশাই এগুলি। সবকিছু দেখেটেখে, লোকজনের সামনে সত্যটাই তো লিখে নিয়ে এলাম। এটা আবার মিথ্যা হয় কীভাবে।
রাজা ধমক মেরে বললেন, তাহলে তুমি বলতে চাচ্ছ, আমার রাজ্যে মিথ্যাও এখন মিথ্যা বলা শিখেছে, তাই না?
মিথ্যাতো জীবনেও সত্য বলে না রাজামশাই। সে তো আমার পেছনে লেগেই আছে। তার কথা বিশ্বাস করবেন না দয়া করে।
তোমার এত বড় সাহস, মিথ্যার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছ? তুমি কতটা সত্য তাতে সন্দেহ থাকতে পারে কিন্তু মিথ্যার ওপর আমার ষোলোআনা ভরসা আছে। যাও। পরে দেখব এর আসল কাহিনীটা কি।

সত্য মন খারাপ করে চলে এল। কিন্তু মিথ্যা খুশিমনে রাজার পাশাপাশি থেকে সত্যটাকে বলছে মিথ্যা। রাজা তার কথাই বিশ্বাস করলেন।

লেবুমিয়ার অবস্থা খুব খারাপ। তার ভাল চিকিৎসা নেই। পেটে খাবার নেই। গরিব পিতামাতা জওয়ান পুত্রের পঙ্গুত্ব দেখে বুক চাপড়ে কান্না করে সারাদিন।

কয়েকটা সত্য এসে লেবু মিয়াকে শান্ত্বনা দেয়। বলে, দুঃখ করিসনারে লেবু। সত্যের জয় একদিন হবেই। কিন্তু যন্ত্রণাকাতর লেবুর আর সহ্য হয় না। চারিদিকে হাহাকার। প্রচণ্ড কষ্টে কেঁকিয়ে উঠে লেবু।

এতদিনে এত এত লোক এতকিছু করেও রাজাকে বিশ্বাস করাতে পারল না যে, লেবু মিয়া সত্যিই পঙ্গু। বিশ্বাস করাতে পারলে তার কিছু সুবিধা হতো। যারা পা নিয়ে গেল তাদের বিচার আচার হতো। কিন্তু সত্য যে মিথ্যার সাথে পেরে উঠছে না।
এ নিয়ে সত্য-মিথ্যার বিরাট গণ্ডগোল।
তারা ঝগড়া করতে করতে আলাদা হয়ে গেল। এখন রাজ্যের কিছু লোকের সাথে সত্য বসবাস করে। আর মিথ্যাকে রাজা আর তার লোকেদের আশপাশে। সত্য মিথ্যার রশি টানাটানি।

এসব টানাটানিতে লেবু মিয়ার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সত্যেরা নানা ভাবে, নানা কর্মসুচি দিয়ে রাজাকে বুঝাতে চাইছে যে, লেবু মিয়ার একটা পা সত্য সত্যই খোয়া গেছে।

রাজা ও তার লোকেরা এটা বিশ্বাস করে না। বরং লেবু মিয়া এমন মিথ্যা পা-হারানোর গল্প ফেঁদে রাজার অনুগ্রহ আদায় করার চেস্টা করছে। সে রাজার ও তাঁর লোকেদের মানসম্মান হানি করছে। তাই তার বিরুদ্ধে হয়ে গেল মোটা মোটা কয়েকটা মামলা। লেবু মিয়া আদৌ ভাল লোক না। সে একটা পয়মাল। সে সন্ত্রাসী, চোর, ডাকাত, ভয়ংকর প্রজা। এ মিথ্যাটাকে সত্য বলে চালিয়ে দেওয়া হলো। লেবু মিয়ার দুঃসহ জীবনে যোগ হয়ে গেল আরো কতগুলো যন্ত্রণা, নির্মম যন্ত্রণা। হাসপাতাল থেকে আদালতে, কোর্টে, থানায় ছুটে চলেছে ক্রাচে ভর করে পঙ্গু লেবু মিয়া। মিথ্যারা লেবু মিয়াকে চিপে লেবুর মতো শরীরের সমস্ত রস-কস নিংড়ে বের করে ছোবড়া বানিয়ে ফেলছে। আর বেঁচে থাকতে চায় না লেবু। সে এখন চায় মৃত্যুর আয়োজন।

লেবু মিয়াকে নিয়ে কিছু সত্য তোলপাড় করছে। মিটিং মিছিল, মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর, লেখালেখি ইত্যাদি করে রাজাকে বোঝাতে চাইছে, লেবু মিয়ার পা খোয়া গেছে। সারা রাজ্যের মানুষ এটা বিশ্বাস করলেও রাজা ও তার লোকেরা বিশ্বাস করছে না। মিথ্যার এত জোর!

শেষে সত্যেরা বিশাল জনসভার আয়োজন করছে লেবু মিয়ার পক্ষে। সমব্যথী মানুষের ঢল নেমেছে জনসভায়। বিশাল জনসভা। মঞ্চে দাঁড়িয়ে মাইকে গলা ফাটিয়ে বক্তারা বলছে, লেবু মিয়ার পা হারানোর দুঃসহ কষ্টের কথা। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের কথা। তারা এর প্রতিকার চাইছে।

হঠাৎ লেবু মিয়া স্ক্রাচে ভর করে তাওড়াতে তাওড়াতে গিয়ে সেখানে উপস্থিত হলো। সে কাঁপতে কাঁপতে মঞ্চে গিয়ে উঠল। তার যবুথবু মরমর চেহারাটা দেখেই বোজা যায় সে কত বড় দানবের সাথে লড়াই করতে করতে প্রায় শেষ হয়ে গেছে। লেবু মিয়া এগিয়ে গিয়ে বক্তার মুখ থেকে টান মেরে মাউথপিচটা হাতে নিয়ে নিল। তার কোটরাগত চোখ দিয়ে সামনের অসংখ্য মানুষের দিকে একবার তাকাল। এবং বলল, ভাইসব আমার জন্য আপনারা বহুত কষ্ট করছেন। আর করা লাগবে না। এতদিন আমি যা বলেছি, তার সব মিথ্যা, আমার পা খোয়া যায়নি।

সামনের অসংখ্য জনতার চোখ বিষ্ফারিত হয়ে গেল। তারা চিৎকার করে বলল, কি কইতাছ লেবু মিয়া। আমরাতো দুই চোখ দিয়া দেখতাছি, তোমার একখান পা নেই। কী হইল তোমার এখন হঠাৎ করে মিথ্যা কথা বলতেছ?

আমি মিথ্যা বলছি না, মিথ্যা বলছেন আপনারা। আমি একদম ভাল আছি, একদম ভাল। আমার পা খোয়া যায় নি। এখন আমার তিনটা পা বলেই সে হাসতে হাসতে, কাঁদতে কাঁদতে অগণ্য মানুষের মধ্যে হারিয়ে গেল!





মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৪৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দেকো দিকি কি কান্ড!

অমন করে সত্য কইতে নেই!
নইলে যে তিনপা নিয়ে চলা আমজনতার ভীরে আরো একটা নাম যোগ হবে :((

দারুণ শক্তিশালী লেখনিতে
++++++++

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১৪

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ।
আপনি গল্পের থিম অনুভব করতে পেরেছেন।

২| ০১ লা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:০৭

অধীতি বলেছেন: বাহ রূপক গল্প।বেশ লাগল।

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৪

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত।
শুভেচ্ছা নিন।

৩| ০১ লা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের পাশের বাসায় লেবু নামে সত্যি একজন থাকেন। অবশ্য উনি আমেরিকা চলে গেছেন।

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৪

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: সত্যি বলছেন যে!

৪| ০১ লা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: গল্পটা পছন্দ হয়েছে।

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৪

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: যাক বাঁচা গেল তাহলে!!

৫| ০১ লা নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৪

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: জজমিয়াকে নিয়ে আসলেই সব সমস্যার সমাধান হয়। বরিশালে এমন একটা ঘটনা ঘটে ছিল।শেষ পর্যন্ত কি হয়েছিল জানি না।

৬| ০১ লা নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সার্থক রূপক অর্থে। ভালো লাগলো লেখা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.