নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঋষিলিপি

বাঙালী ঋষি

Cogito, Ergo Sum

বাঙালী ঋষি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প - স্বপ্নরা হিমাগারে

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৫

কার্তিকের শেষ। সুর্য্যটার যেন আর তর হয় না। আছরের আযান দিতে না দিতেই পশ্চিমাকাশে ঢুলতে ঢুলতে কেমন টুপ করে ডুবে যায়। আর সেই সাথে, বিকেল বেলাটা একেবারে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। কারন সন্ধ্যার আগেই সবার বাড়ী ফেরার তাড়া। ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা লোকাল ট্রেন বলাকা এক্সপ্রেস জয়দেবপুরে এসে দম নিচ্ছে। লোকজনের ভীড়ে একদম ঠাসা। ট্রেনের ভেতরে উপরে কোথাও একফোঁটা জায়গা নেই, সবাই এ ওর সাথে ঠেস দিয়ে কোন মতে দাঁড়িয়ে আছে অথবা বসে আছে। ট্রেন একটু ব্রেক করলেই কামরার ভেতরে ঢেউ খেলে যায়, দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর জন্য। এই অন্ধকার বদ্ধ কামরায় বাতাসও চলাচল করার মত ফাক খুজে পায় না। কেমন যেনো একটা গুমোট গরমে ছেয়ে আছে।

জানালার ধারে বসে থাকা, সুনয়নার মা সেই উত্তাপ খুব কমই টের পায়। দুইজন বসার মত বেঞ্চিতে ওরা দুইজন বসে আছে, সুনয়নার মা অজিফা আর দাদী। এদের মাঝে খুব অল্প একটু জায়গায় ঘুমিয়ে আছে সুনয়না। মাথাটা বিপদজনকভাবে বাকিয়ে ওর মায়ের হাটুর ওপরে রাখা। একটু চাপ খেলেই ভেঙ্গে যাবে ঘাড়টা। কিন্তু কিছু করার নেই, সেই অন্ধকার থাকতে মা-দাদীর সাথে ঘর থেকে বেরিয়ে সারাদিন ময়মনসিংহ শহরে ঘুরে ঘুরে চাল বিক্রি করা এতটুকুন বাচ্চার পক্ষে যথেষ্টই পরিশ্রমের। যে বয়সে বেনী দুলিয়ে স্কুলে যাবার কথা সেই বয়সে মানুষের বাড়ী বাড়ি চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। কারন খুব ছোটবেলা থেকেই জেনে আসছে, বেচে থাকতে হলে পেটে ভাত থাকা জরুরি। আর এই দুনিয়ায় বিনা পরিশ্রমে কেউ ভাত দেয় না। ট্রেনটা একটু দুলে ঊঠে চলতে শুরু করে। মানুষজনের মাঝে একটা খুশীর রোল পরে যায়। সবাই রেলপথের গুষ্টি উদ্ধারে ব্যাস্ত। আস্তে আস্তে ট্রেনটা গতি সঞ্চয় করতে থাকে। গতি বাড়ার সাথে সাথে সুনয়নার মা শাড়ী দিয়ে শরীরটাকে আরো ঢেকে নেয়, কার্তিকের হিমেল বাতাস শরীরটাকে একেবারে জুড়িয়ে দেয়। সিটের সাথে হেলান দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকারে চেয়ে থাকে।

ট্রেনের দুলুনিতে চোখটা বুজে আসে। কিছুক্ষনের জন্য ঘুমিয়েও পরে। আর ঘুমের মাঝেই ভেসে ওঠে মনের সবচেয়ে গভীরে লুকিয়ে থাকা স্বপ্নটা। যেটা সে দেখেছিল, অনেক বছর আগে। একটা রঙ্গীন জীবনের স্বপ্ন, যে জীবনে তাকে বাড়ী বাড়ী চাল বিক্রি করতে হয় না। আর সুনয়নাকেও অ আ এর বদলে ভাতের চিন্তা করতে হয় না। কিন্তু জীবনে তো আর স্বপ্নে চলে না। তাই এই স্বপ্নটাও অন্য সব স্বপ্নের মত আস্তে আস্তে জীবনের এক একটা কষ্টের তলায় চাপা যেতে যেতে প্রায় হারিয়েই যায়। ট্রেনটা হঠাত দুলে ওঠায় ঘুম ভেঙ্গে যায় অজিফার। এদিক ওদিক তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কোথায় আছে সে। সুনয়নার দাদী ডাকতেই বুঝতে পারে ট্রেন মধ্যে আছে। জানালা দিয়ে মাথা বের করে দেখে ট্রেনটা কোন এক স্টেশনের আউটারে দাঁড়িয়ে আছে। সে আচল দিয়ে মুখ মুছে মেয়ের দিকে তাকায়। ঘুমন্ত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আরেকটা দীর্ঘস্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ট্রেনের ভেতরের গুঞ্জনটা ভালো ভাবে বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু বুঝতে পারে না। আবার জানালা দিয়ে মাথা বের করে দেখার চেষ্টা করে, কিন্তু অন্ধকারে বেশী দূর দেখা যায় না।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৫৪

জনারণ্যে একজন বলেছেন: 'সুনয়না' - খুব সুন্দর নাম। আজকাল মনে হয়না এরকম নাম কারো রাখা হয়। ম্যাক্সিমামই ওই 'অজিফা' টাইপের নাম দেখি। বাংলা নাম রাখলে আবার বিশেষ একটা শ্রেণীভুক্ত করে দেয়া হবে; এই ভয়েই হয়তো।

যাই হোক, হরলাল রায়ের বাংলা ব্যাকরণ বই পড়েছেন কিনা জানি না। আমি ছোটবেলায় বেশ আগ্রহ নিয়েই পড়েছিলাম। একটা চ্যাপ্টার এখনো মনে আছে - "অসমাপ্ত গল্প সমাপ্তিকরণ"

ডিটেইলে গেলাম না। তবে মনে হলো আপনার এই গল্প সমাপ্তিকরণের দায়িত্ব মনে হয় অন্য কাউকে নিতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.