নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন কর্পোরেট দাসের জীবনচক্র:

০৯ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩২

ছোটবেলায় সায়েন্স বইয়ে আমরা মশার জীবনচক্র সম্পর্কে পড়তাম। আজ আমরা একজন কর্পোরেট দাসের জীবনচক্র সম্পর্কে জানব।
কর্পোরেট দাস একপ্রকার মেট্রোপলিটন জীব যারা সাধারনত শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত এলাকায় বাস করে। এরা মুলত শহরের জীব নয়। এদের সিংহভাগ তরুণ বয়সে গ্রাম হতে শহরে জীবিকার সন্ধানে আসে কিন্তু আর তাদের জন্মস্থানে ফেরত যেতে পারে না, এখানেই আটকে জীবনচক্র অতিবাহিত করে। তবে শহরেও এরা জন্ম নেয়। এরা সাধারনত চকচকে লেবাসধারী বাবুয়ানা বিশিষ্ট। উহারা শান্ত শিষ্ট, লেজবিশিষ্ট (তবে লেজটি গলায় ঝোলে ”টাই” নামে)। উহারা নিরীহ, নির্বিবাদী, একঘেয়ে জীবনপ্রিয়, অন্ধকার কোণজীবি, সুবিধাবাদী, কঠোর পরিশ্রমী, পরোপকারী (কারন অন্যের টাকা বাড়ানোর মিশনে সারাজীবন ব্যয় করে)। সুখের নাটকে এরা চমৎকার অভিনয় করতে পাারে। এদের চামড়া গন্ডারের চেয়েও মোটা হলেও ব্যপক ইলাস্টিসিটি থাকায় এদের গায়ে শীত, গরম, গালি, চড়, অপমান সহজে দাঁত বসাতে পারে না। এরা কষ্টসহিষ্ঞু। কখনো মুড়ির টিনে, কখনো এসি কারে, কখনো ভাগের সিএনজিতে এরা চলাচল করতে পারে। এরা সাধারনত লাল রঙের ঠান্ডা রক্তবিশিষ্ট জীব তবে কিছু বিরল প্রজাতির নীল রক্তের কর্পোরেট দাসও আছে। তারা উচ্চপদে লোকাল কিংবা আন্তর্জাতিক কর্পোরেট (কারাগারে) হাউসে আনাগোনা করেন।
এদের জীবনের কয়েকটি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম ধাপে বিদ্যার্জন ও পরবর্তী ধাপসমুহে টিকে থাকার পাঠ গ্রহনে বিভিন্ন কর্পোরেট দাস নির্মাতা (শিক্ষা!) প্রতিষ্ঠানে যায়। সেখানকার (কু)শিক্ষা শেষ হলে কর্পোরেট লাইফে ঢোকার প্রানান্ত প্রচেষ্টায় নামে। এই সময়ে এদের বিভিন্ন কর্পোরেট পুনর্বাসন বা পালনকারি প্রতিষ্ঠানে একটি ডকুমেন্ট ফাইল সহকারে ঘুরঘুর করতে দেখা যায়। এরপর তারা নানান কায়দা কানুন করে শিক্ষানবিস কর্পোরেট হিসেবে একটি কর্পোরেট হাউসে তাদের মুল জীবনচক্রের সুত্রপাত করে। পরবর্তী অনেক বছর তারা এরকম কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ভাত-পানি, জল-হাওয়া (তার সাথে আরো অনেক কিছু) খেয়ে সময়ের পরিক্রমায় একজন পুর্নাঙ্গ কর্পোরেট দাসে পরিণত হয়।
জীবনচক্রের এর পরের পর্যায়ে এরা পরবর্তী কর্পোরেট প্রজন্মের আগমন নিশ্চিত করতে বিয়ে নামক আরেকটি বিশেষ ধরনের কর্পোরেট সম্পর্কের সুত্রপাত করে। কিছু কিছু (কু)বুদ্ধিমান কর্পোরেট দাস আবার ”কর্পোরেট দাসী”দের জীবনসঙ্গি হিসেবে বেছে নেন। কিছু চাল্লু কর্পোরেট দাস চিকনা বুদ্ধির কল্যানে একটি ফ্ল্যাট নামক মুরগীর খোপ কিনে ফেলতে সক্ষম হন। তবে অধিকাংশই সে পর্যায় পর্যন্ত যেতে পারে না। তারা কোনোমতে পরের প্রজন্মের কর্পোরেটের ধরাগমন (জন্ম আর কি), লালনপালন, (কু)শিক্ষায় শিক্ষিত করা, কর্পোরেট হবার দৌড়ে পৌছে দিয়ে তারা পরপারে যাবার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। এদের জীবন কাল মোটামুুটি ৪৫ থেকে ৫৫ বছর তবে কিছু কিছু নীল রক্তের ভাগ্যবান অবশ্য তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কর্পোরেট বংশধরের দয়ায় তার অতিকষ্টে অর্জিত যৎসামান্য কর্পোরেট মুদ্রায় কিছুকাল জীবন টেনে নেবার সুযোগ পান। কর্পোরেট দাসদের জীবন অবসান হলে অন্য একদল কর্পোরেট দ্রুত তার সৎকার করে তাকে মাটির নীচে বা জলে ভাসানোর বন্দবস্ত করেন। শেষকৃত্যের প্রস্তুতিকালে তারা নিজের বাসায় বাচ্চা ঘুমালো কিনা তার খোজ নেন, পরের দিন যে ডেলিভারীগুলো আছে তার ফলো-আপ করেন, গলার মাফলার না দেয়ায় তার ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে-বাসার বউকে এজন্য ফোনে ধমকান, ফেসবুকে প্রয়াত কর্পোরেটের মৃত্যুর স্ট্যাটাস দেন, ফাঁকে ফাঁকে মৃত কর্পোরেটের জন্য নিয়ম করে আহা উহু করেন, একফাঁকে আবার অনেক দিন পরে দেখা হওয়া কোনো কর্পোরেটের সাথে হেসে হেসে কুশল বিনিময় করেন, কে কোথায় (মুরগীর খোপ)ফ্ল্যাট কিনলেন তার খোজ নেন, জোর করে ভিজা ভিজা চোখ করে মৃতের বউকে সান্তনা দেন, আবার “এই না না না! দরকার নেই! এই সময়ে! আমি পারব না” বলতে বলতে হালকা নাস্তা পানিও করে নেন। (এইটা আমি দেখেছি আমার আব্বাজানের মৃত্যুর পর। আমার আত্মীয়রা জর্দা দিয়ে পান খাচ্ছিলেন আর আব্বার জন্য হা পিত্যেষ করছিলেন) । একপর্যায়ে সদ্যমৃত কর্পোরেটকে জানাজা দিয়ে তাকে সমাহিত করা হয় আর শেষ হয় একজন কর্পোরেট দাস নামক সস্তা জীব এর জীবনচক্র।
ভাল কথা! আপনি যদি একজন ওল্ড ”কমরেড “ স্যরি ”কর্পোরেট” হন বা অন্য গোত্রের প্রাণী হন এবং যদি আপনার সন্তানকে চিড়িয়াখানার একঘেয়ে পশুপাখি দেখিয়ে আর তাদের আনন্দ না দিতে পারেন তাহলে তাদের নতুনত্বের স্বাদ দিতে কোনো এক অফিস ডে’তে ”কর্পোরেট দাস” দেখাতে তাদের কর্পোরেট সাফারিতে নিয়ে যেতে পারেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ আজকাল বড় বড় কর্পোরেট শহরের ব্যস্ত অফিস পাড়াতে গড়ে ওঠা কর্পোরেট সাফারি পার্কগুলোতে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। আপনার পয়সা উসুল হবার গ্যারান্টি দিচ্ছি। তবে মনে রাখবেন, অফিস ডে ছাড়া এদের দেখতে চাইলৈও তা সম্ভব তবে একটু কষ্ট করতে হবে। ছুটির দিনগুলোতে আপনি সকালের দিকে কর্পোরেট দাসদেরকে দেখতে পাবেন বিভিন্ন (কিচেন মার্কেটে) খাস বাংলায় তরকারীর বাজারে হাটু পর্যন্ত প্যান্ট গুটিয়ে, বাজারের ব্যাগ ডানহাতে আর দুইটা দেশী মুরগী বামহাতে নিয়ে কাদা জল মাড়িয়ে পরিবারের ঘানি টানতে বাজার করছে। তবে ওইযে বললাম কষ্ট করতে হবে তাদের দেখতে তার কারণ হল ওই সময় তাদের চিনে নিতে একটু কষ্ট করতে হয় কারণ এরকম স্থানে তাদের সাথে ”বাবুসাহেব”রাও মিলেমিশে একাকার হয়ে বাজার করেন বলে তাদের আলাদা করা একটিু কঠিন হয়। তবে আপনি এক্সপার্ট হলে তেমন কষ্ট করতে হবে না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.