নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন সংসারঅজ্ঞ মধ্যবিত্তের হঠাৎ উত্থান।

১৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৫

তারিখ: ১৩ মে ২০১৬
স্থান: মিরপুর-১ নং বাজার
অকুস্থল: মুরগার দোকান
দর্শক: গুটিকয় মধ্যবিত্ত
খেলোয়াড়: ৫ জন

আমার পত্নী নিটোলের ধারনা আমি বড্ড আলাভোলা টাইপের সংসারঅজ্ঞ পুরুষ মানুষ যিনি দোকানদার পাঙ্গাস মাছকে বোয়াল বলে চালিয়ে দিলেও খুশি মনে বগলদাবা করে বাসায় ফিরবে। তো শুক্রবার নিটোলের সাথে গেলাম জরুরী বাজারঘাট করতে। মুরগার দোকানে যেতেই রাজকীয় খাতির। আসেন আপা, সাথে কে ভাইয়া! তারা ১নম্বর বাজারের রীতির বিরুদ্ধে গিয়ে আমাকে একটা চেয়ার দিলেন বসতে। চা খাব কিনা তা সাধলেন। আমি মুগ্ধ। ৪টা মুরগী কেনা হল। ৭ কেজি ৮শত গ্রাম ১৫০ টাকা করে ১১৭০ টাকা। কিনে তা হাতে প্রসেস করতে পিছনে পাঠালো। আমি বসে লোকজনের বাজার কেনার (আসলে বাজার করা) ধুম দেখতে লাগলাম। আমার সামনে একলোক গোটা দশেক দেশি মুরগী, ৪ ব্যাগ মাছ সাথে এক হালি ইলিশ এক মিন্তির ঝুড়িতে তুলে দিয়ে ঘর্মাক্ত মুখে গর্ভের (গর্বের) হাসি দিয়ে চলে গেল।
প্রসেস শেষে মুরগী একটা পলিথিনে করে মাংস দিয়ে গেল। হাতে নিয়ে হঠাৎ কী মনে হল বললাম, আরেকবার মাপুন তো। মুরগা বিক্রেতা তো আসমান হতে পড়ল। প্রসেস করা মাংস কি কেউ মাপে? আমি বোধহয় সেই আতেল যে এটা করল। মেপে দেখা গেল ৭.৮ কেজি হতে আছে ৫.৬ কেজি মানে ২.২ কেজি ওয়েস্টেজ। আমার তখনো কিছু মনে হয়নি। মাছ কিনতে গিয়ে সেখানকার একটা মিটারে তুলে দিলাম। দেখি হয়ে গেছে ৪.৬ কেজি মানে ৩.২ কেজি নাই। দ্বিতীয় মাপের চেয়েও ১ কেজি কম। আমার সন্দেহ আগেই হয়েছিল। মাছওলার সাথে কথা বলে শিওর হলাম। আমি যতটা জানি প্রতিটা ১.৫ কেজি স্ট্যান্ডার্ড সাইজ মুরগীতে ২২৫ গ্রামের ওয়েস্টেজ হল মোটামুটি স্ট্যান্ডারড। আমি পুরো মুরগা নিয়ে আবার ব্যাক টু ভাইয়ার দোকান। আমাকে দেখেই তো ভাইয়ারা বুঝে ফেলছে কাহিনী। তবু বলল কী হয়েছে? মুরগী আবার মাপালাম। এবার ৪.৮। আমি গলাটা যথাসম্ভব মধুর কিন্তু পুরুষালি গম্ভির করে বললাম, মুরগীতে চুরি করেছেন তা নাহলে আপনার এখানে প্রসেসের আগে ৭.৮, প্রসেসের পরে ৫.৬ আর অন্য দোকানে ৪.৬ আর আবার আপনার এখানে ৪.৮। আমার প্রতিটা মুরগীতে ৮০০ গ্রাম ওয়েস্টেজ কেমন করে? ওরা বুঝে ফেলছে আমি ওদের কারসাজি বুঝেছি। তাড়াতাড়ি বলল না ভাইয়া প্রথমে তো ৭.৮ না, ৬.৮ ছিল। আমি বললাম তাহলে ৭.৮ কেজির দাম ১৫০ করে ১১৭০ কেন রাখলেন? তাড়াতাড়ি হিসাব করে বলল, স্যরি, ১ কেজি বেশি রাখছি ভুলে। ১৫০ টাকা ফেরত দিতে ব্যকুল হয়ে গেল। আমি বললাম, না, আমি নিজে দেখলাম পাল্লায় ৭.৮ দেখাল। আপনি নিজে ক্যালকুলেটর টিপে ১১৭০ দাম চাইলেন। সুতরাং এটা ভুলে হয়নি। চুরি হয়েছে। ইত্যাদি ইত্যাদি...........। চারপাশে ভীড় জমে যাচ্ছে। তারা নানারকম প্রশ্ন করতে লাগল। দেখে তারা একটা রফা করতে ব্যাকুল হল। বলল কী চান? আমি মাংসটা হাতে দিয়ে বললাম, ১১৭০ টাকা ফেরত দিন। মুরগা নিব না। চোর ভাইয়ারা এই সুযোগটা লুফে নিল। তাড়াতাড়ি আমার টাকা ফেরত দিল। আমি সহধর্মিনীকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম। আমার ধারনা, তারা মুরগী প্রসেস করার সময় চেঞ্জ করে ছোট প্রসেস করা মুরগী দিয়ে দেয়। কেউতো আর দ্বিতীয়বার মাপে না। তাছাড়া মিটারেতো কারসাজি আছেই। আমার শ্বশুরের পুরো ফ্যামেলি ওদের থেকে মুরগা কেনে। আমি ভাবতে লাগলাম এ পর্যন্ত সবার কাছ হতে কী পরিমাণ চুরি করেছে। একই কান্ড আমি নিজে পেয়েছি চালের দোকানে, তেলের বোতলে, চিনির প্যাকেটে, কাপড়ের দোকানে। যাহোক, আমার পত্নির আমার সম্পর্কে ধারনা কতটা বদলেছে তা না হয় নাই ভাবলাম, আমি যে মোটামুটি পোংটা টাইপ মানুষ সেটা নতুন করে উপলব্ধি করলাম।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:১৬

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আশা করি এই ঘটনার পর আপনার স্ত্রী আপনার বাজার করার দক্ষতা সম্পর্কে দ্বিতীয়বার কোন প্রশ্ন তুলবে না। B-)

যাইহোক, এই ধরনের চুরি চামারি মুরগীর দোকানে প্রায় করে। অনেকে আবার মুরগীর পেটে পানি ঢুকায়। এই সকল ছোট খাটো চুরি আমাদেরকে শেখায় এই দেশে আইনের শাসনের প্রতি মানুষের বিন্দু মাত্র ভয় নেই, আস্থা নেই। পাশাপাশি, তৃনমূল পর্যায়ে মানুষের নীতি নৈতিকতা ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত। এইভাবে চলতে থাকলে সামনে খুব ভয়াবহ দিন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

২| ১৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:২৭

ক্লাউড বলেছেন: এইদিক থেকে চেইনস্টোরগুলা ভালো। সেইখানেও চুরি হয়, তবে মাত্রা সামান্য। নিজে ব্যবসা করলে টিকে থাকতে কি করতাম সেটাও ভাবি। ভালো থাকা একটু কঠিন ব্যাপার এইদেশে।

১৯ শে মে, ২০১৬ সকাল ১০:০৭

বেচারা বলেছেন: মেঘ দাদা, চেইন স্টোরেও একই কাহিনী। ১৫০ টাকার লিপস্টিকের গায়ে লাগিয়ে রাখে ২৫০ টাকার বারকোড ট্যাগ। কাষ্টমারতো আর অত ভাবে না। সেলসম্যান শাই করে বারকোড স্ক্যান করে আর মেমো ধরিয়ে দেয়। আমি একাধিক লোককে এটা নিয়ে লিখতে দেখেছি।

৩| ১৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪২

বাংলার জামিনদার বলেছেন: আপনি ভালো লোক, এবং সাহসী।

৪| ১৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৪

ব্যাক ট্রেইল বলেছেন: কিন্তু এটাতে আপনার একটু লস হয়ে গেলো। কিভাবে বলি। ধরেন, আপনি আগে বাজার করতেন না। আপনার স্ত্রী নিটোল নিজেই এসব কাজ করতো। কিন্তু এখন তো তার ধারণা বদলাবে। এই কাজগুলো এখন আপনাকেই করতে হবে।


নিটোল, নামটা খুব সুন্দর!

৫| ১৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৫:০২

বেচারা বলেছেন: আমার একটা বাত্তিক আছে। মাঝে মধ্যে অগ্যস্ত হাটতে বের হই। তো একদিন হাটতে গিয়ে দেখলাম, কবুতরের বাচ্চাকে তেল ঢালার কোন মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে তার মধ্যে দিয়ে কাদা মিশ্রিত পানি খাওয়াচ্ছে জোর করে। ওজন বাড়াতে এবং হৃষ্টপুষ্ট দেখাতে। দারুন না।

৬| ১৮ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩২

স্বশিক্ষিত উন্মাদ বলেছেন: তাজা মুরগী হাত পা বেঁধে নিয়া আসবেন। ব্যস কোনো চুরি চামারির ভয় নাই! তাছাড়া ওরা কিভাবে জবাই করে সেটা নিয়েও সন্ধেহ আছে.... :/

৭| ১৮ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:১৭

সুমন কর বলেছেন: এসব চুরি প্রতিনিয়তই হচ্ছে !!

আপনি যা করেছেন, ভালো করেছেন।

৮| ১৯ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:৪৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: চুরি অনেক ধরনেরই আছে।। কেউ কেউ তো কথা তথা শপথ বেচেও জীবিকা অর্জন করছে।।

৯| ১৯ শে মে, ২০১৬ সকাল ১১:৩৩

শামছুল ইসলাম বলেছেন: // যাহোক, আমার পত্নির আমার সম্পর্কে ধারনা কতটা বদলেছে তা না হয় নাই ভাবলাম, আমি যে মোটামুটি পোংটা টাইপ মানুষ সেটা নতুন করে উপলব্ধি করলাম।// -- ভাই আপনি শুধু পোংটা না, মহা পোংটা !!!!
---হা..হা..হা...।

অপনার আরো মজার লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

ভাল থাকুন। সবসময়।

১০| ১৯ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:৫১

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: অনেকে আবার ডিজিটাল মেশিনেও কারসাজি করে রাখে। কত্ত যে উপায় আছে মানুষ ঠকানোর!

১১| ২০ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:৫৫

মোবারক আলী আফতাব বলেছেন: Awareness is needed .

১২| ২০ শে মে, ২০১৬ রাত ২:২২

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: মুরগিওলারা সবার সাথেই এমন করে। আমার সাথেও করে, কিছুই বলার নেই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.