নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পপুলার মেজরিটি আর আমাদের মন মানসে প্রাইভেসী

০৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:১৪

”তুমি কি রোজা”-এই প্রশ্নটি কেউ কি কাউকে করেন? কেন জিজ্ঞেস করছি সেটা একটু পরে বলছি। গণতান্ত্রিক আমাদের বাংলাদেশে হাটে, মাঠে, ঘাটে, টিভিতে, পত্রিকাতে, ফেসবুকে সর্বত্রই গণতন্ত্রের জন্য হাপিত্যেষ। গণতন্ত্র সবার প্রাণের দাবী। গণতন্ত্রের দাবীতে সবাই সোচ্চার। পরিবারে নারী এবং নিরবে হলেও এখনকার পরিবারে পুরুষরাও (স্বীকার করে না কেউই) নিজেদের ব্যক্তিগত অধিকার, নিজস্ব চিন্তার স্বাধীনতা, নিজের মতো চলার মুক্ত পরিবেশ, নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সবকিছু করা বা দেখার স্বাধীনতা নিয়ে সোচ্চার। এই গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে বুশ ইরাক বা লিবিয়ার মতো একটা ধনী দেশকে রাস্তার ফকিরে পরিণত করেছে। ব্যক্তির সামান্য স্বাধীনতায় হাত দিলেই গেল গেল রব।
বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য আমাদের সদাজাগ্রত বিবেকের বিপরীতে আমরা নিজেরা নিজেদের ঘরে বা জীবনে কতটা গণতন্ত্র চর্চা করি? পরমত সহিষ্ণুতা আমাদের কতটা আছে? সোস্যাল মিডিয়া বিশেষত ফেসবুক এমনকি প্রগতির ধজ্বাধারী হিসেবে পরিচীতি পাওয়া “ব্লগ” কিংবা টিভি টকশো? অত্যন্ত আতঙ্কজনক হারে বাংলাদেশে যে কটি দুবৃত্তায়ন আগ্রাসী গতিতে বাড়ছে তার একটা হল মাইনরিটি বিশ্বাসের উপর মেজরিটির নির্যাতন, পরমতের প্রতি অসহিষ্ণুতা আর পরচর্চা। টকশোতে ভদ্র বিতর্ক একপর্যায়ে মারামারিতে রূপ নেয়ার ঘটনাতো বেশ কটি ঘটে গেল এদেশে। অন্যের মত, দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবনাকে সহজ ও স্বাভাবিকভাবে সম্মান দেখানোর সংস্কৃতি ধীরে ধীরে এদেশ হতে উঠে যাচ্ছে। যেটা থাকছে সেটা হল হিংস্রভাবে নিজের মতামত উগ্রের মতো জাহির ও প্রতিষ্টা করার নগ্ন প্রচেষ্টা। একইসাথে আরেকটা দস্যুবৃত্তি এদেশে বাজার পাচ্ছে-মেজরিটি ফ্যাক্টর। সমাজের মেজরিটি পোরশন যেটা ভাবে, যেটা বিশ্বাস করে, যেটা মনে ধারন করে-সেটাকে অন্যদের বিশ্বাসের উপর চাপিয়ে দেয়া। মেজরিটি যেটাকে ঠিক মনে করবে সেটাই ঠিক, মেজরিটি ঠিক করে দেবে আপনি কী খাবেন, কী পড়বেন, কী সিনেমা দেখবেন, কী দেখবেন না। আপনি কোনটাকে সমর্থন করবেন, কোনটাকে ঘৃনা করবেন-সবই হতে হবে মেজরিটির মতের বা বিশ্বাসের সাথে মিল রেখে। তা না করলে আপনি সমাজহারা, সমাজবিরোধি কিংবা খ্যাত। মেজরিটির দৃষ্টিভঙ্গির সাথে না মিললেই সে আপনাকে চোখ রাঙাবে। মেজরিটি’র এই চাপ শুধু প্রকাশ্যে নয়। অদৃশ্য কিংবা ভার্চুয়াল প্রেশার দেয় মেজরিটি। কোথাও একজন মানুষ কোনো একটা (আপাতদৃষ্টিতে) অন্যায় কিছু করল। মেজরিটি যাকে ক্রিমিনাল বলবে আর যাকে তারা ভিকটিম মনে করবে-কোনো প্রশ্ন ছাড়াই আপনাকে প্রকাশ্য বা অদৃশ্য চাপ দেয়া হবে তাদেরকেই ক্রিমিনাল ও ভিকটিম হিসেবে বিশ্বাস করতে। পুলিশের একজন প্রাক্তন সুপার হিরোর স্ত্রীর খুনকে কেন্দ্র করে প্রথমে পপুলার মেজোরিটির চাপে উক্ত পুলিশ কর্তার হিরো ও দুস্থের তকমা পাওয়া আবার দু’দিন পরেই তারই আবার ভিলেন বনে যাওয়ার উদাহরন আছেই। মেজরিটি যদি মনে করে, ভাস্কর্য ভাঙা পাপ-আপনাকে সেটা নতশীরে মেনে নিতে হবে যে হ্যা পাপ। কিংবা মেজরিটি যদি ভাস্কর্য ভাঙাকে শুভকাজ মনে করে-আপনাকে বাধ্য হতে হবে সেটা স্বীকার করতে। ক্রীকেটার মুশফিকের বাবাকে কোনো একটা মামলায় আসামি করা হয়েছে। টিভি, মিডিয়াতে এই ঘটনাটির যেকোনো খবর পরিবেশিত হয় "মুশফিকের বাবা" এই ট্যাগলাইনে। তার বাবা যদি কিছু করে থাকেন সেটা তার নিজের পরিচয়ে। "মুশফিকের বাবা" এই ট্যাগলাইন দেয়া হয় ওই মেজরিটির সেন্টিমেন্ট ড্র করতে। আপনি মেজরিটির মতের বিরুদ্ধে কিছু বলেছেন কি মরেছেন। আপনাকে সোস্যাল মিডিয়াতে এমনকি কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তিগত ফোনে পর্যন্ত আপনাকে ধুয়ে দেবে এমনকি প্রাণের হুমকি পর্যন্ত পেতে পারেন। সংখ্যাগুরু “সমাজের” বিপরীতে চলতে চাইলেই খুন হয়ে যাবেন। আপনাকে অবশ্যই সমাজের বাধ্যগত, গুনমুগ্ধ হয়ে সবার মতো চলতে হবেই। নিজের মতো চলার কোনো অধিকার আপনার নেই। সমাজের খাবেন, সমাজের পরবেন আর থাকবেন নিজের মতো-তা কি হয়? ”সমাজের” একটা দায়ীত্ব আছে না? একদল মানুষ সমাজকে এক কাতারে দাড় করানো একটা ”মহান” দায়ীত্ব কাঁধে নিয়েছে। আমরা সবাই তাকে চাই বা না চাই তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। কিছু ব্যতিক্রমী ছাড়া আমাদের সমাজটা এমনই পঁচে গেছে। একটা শোনা গল্প, সত্য নাও হতে পারে। গ্যালিলিও যখন আবিষ্কার ও প্রচার করা শুরু করেন যে সূর্য স্থীর এবং পৃথিবী তার চারিদিকে ঘোরে তখন সমাজপতি ও যাজকরা নিজেদের কর্তৃত্ব হারানোর ভয়ে তাকে ধরে এনে প্রাণদন্ডের ভয় দেখিয়ে তাকে প্রকাশ্য জনসভায় বলতে বাধ্য করে যে,”না, আমি ভুল বলেছি। পৃথিবী স্থীর, সূর্য তার চারিদিকে ঘোরে।” তখনকার দিনে যাজক ও তাদের বশংবদ রাজা প্রচার করত যে পৃথিবী স্থীর, সূর্য তার চারিদিকে ঘোরে।তো গ্যালিলিও প্রাণ বাচানোর জন্য এটা ঘোষনা করলেও মুক্তি পেয়ে মাটিতে পা দিয়ে জোরে ৩বার পদাঘাত করে ফিসফিস করে বললেন, “তবুও আমি বলব, সূর্য স্থীর, পৃথিবী ঘোরে”।যদি গল্পটা মিথ্যাও হয়, তবু বিষয় হল-নতুন এবং আমাদের নিজেদের অজানা বিষয়কে আমরা সহজভাবে নিতে পারিনা। মেজরিটি মানে ধর্মীয় বা জনসংখ্যাগত মেজরিটি নয়। আমি মেজরিটি বোঝাচ্ছি সংখ্যাগুরু বিশ্বাসকে, দৃষ্টিভঙ্গিকে। বাঙালী চিরটাকালই জাজমেন্টাল ছিল। খুব সহজেই সে অন্যের সম্পর্কে নিজের এপ্রোচ বদলে ফেলে। মানুষকে মেপে ফেলে এক দেখাতেই। জানেন কিনা জানি না, এদেশে এটা রীতিমতো গর্বের কথা হল-“আমি মুখ দেখেই পেটের খবর বলে দিতে পারি” যেটা জাজমেন্টাল মেন্টালিটির চরম নিদর্শন। এমনিতেই আমাদের দেশের মানুষের পরচর্চা, পরনিন্দা আর পরের ঘরের চৌহদ্দিতে উঁকি মারার ঐতিহ্য বেশ পুরোনো। প্রাইভেসি কি-সেটা এখনো আমাদের পরিবারে এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ শিক্ষালয়েও চর্চা শুরু হয়নি। তো সমাজের প্রান্তিক গোষ্ঠির মন মানসে সেটার অস্তিত্ব খোঁজা নেহাত পাগলামি। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চিলের পেছনে ছোটার সংস্কৃতি। যেকোনো মিডিয়ামে একটা কথা কেউ বলল বিকৃত করে বা কিঞ্চিত মিথ্যা মিশিয়ে। ব্যাস, পুরো সোসাইটি সেটাকে মুহুর্তে নানান নিজস্ব রঙ মিশিয়ে ফলাও করবে। সত্যি মিথ্যের ধার কেউ ধারবে না। আমাদের এই পরচর্চার চাপা আগুনে আরো ঘী ঢেলেছে হাতের তালুতে চলে আসা মিডিয়া। পথ চলতে, বাসের জানালায় রাস্তা দেখতে দেখতে, বাজারে দরদাম করতে করতে মানুষ তার হাতের তালুতে ধরে রাখা ট্যাব বা মোবাইল সোয়াইপ করে যেকোনো পোষ্ট কিছু বুঝুক না বুঝুক শেয়ার করে দিচ্ছে। উৎস যাচাই নেই, সত্যাসত্য বিচার নেই, এমন একটা বিষয় আদৌ ঘটা সম্ভব কিনা, এমন একটা ইস্যু শেয়ার করা উচিৎ কিনা তার বিন্দুমাত্র বাছবিচার না করেই ছড়িয়ে দিচ্ছে নেটওয়ার্কে। মিডিয়াও এই চিলে কান নেয়ার বিদ্যাকে বাতাস দিচ্ছে-ভাইরাল নামক একটা চোস্ত নাম দিয়ে। কন্টেন্টের সত্যাসত্য কিংবা জিস্ট কিছু আছে কিনা-সেই বিচারের ধারে কাছে না গিয়েই কন্টেন্ট ভাইরাল হল কিনা-এটাই মিডিয়ার আলোচ্য বিষয়। কেউ একটা হাঁচি দিয়েছেন-সেটাও ভাইরাল হচ্ছে আবার ট্রাম্প ৪০ বছর আগে কোনো রমনীর হাত ধরেছিলেন তাও ভাইরাল। ভাইরাল মানেই মেজরিটি। মেজরিটিকে রিচ করতে পারলেই সাফল্য-এই মন্ত্র আষ্টেপৃষ্টে আমাদের গিলানো হচ্ছে অষ্টপ্রহর। দেশে যখন সবাই ক্লিন শেভ হত তখন কেউ হালকা দাড়ি রাখলে তাকে বলা হত খ্যাত। এখন আবার চাপ দাড়ি রাখা যখন মেজরিটির ফ্যাশন তখন আপনি ক্লিন শেভ হবেন-মেজরিটি আপনাকে ডাকবে মাকুন্দা। পপুলার মেজরিটি আমাদের খাওয়া, পড়া, পোশাক, চিন্তাকে আমাদের অজান্তেই নিয়ন্ত্রন করে। কোনো পোশাক কেনার সময় এমনকি আমরা চিন্তা করি-এখন কোনটা বাজারে চলছে। নিজস্বতাকে বিসর্জন দিয়ে মেজরিটির মনোসন্তুষ্টি আমাদের যাবতীয় জীবনাচরনের আরাধ্য হয়ে উঠেছে। আপনি যদি এখনো এই লম্বা লেখাটা পড়ে থাকেন তাহলে একটু শুরুর চর্বিত চর্বন করি। লেখার শুরুতে একটা কথা বলেছিলাম। ”তুমি কি রোজা আছ”-এই প্রশ্নটা আমরা রোজার দিনে এই প্রশ্নটা অবলীলায় করি। করার আগেও ভাবি না, পরেও ভাবিনা যে, এই প্রশ্নটি বা এইরকম প্রশ্ন একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনে উঁকি মারার শামিল। রোজার দিনে এই প্রশ্ন করলে অপ্রয়োজনীয়ভাবে একজন মানুষকে মিথ্যা বলায় প্ররোচিত করা হয়। কেন মিথ্যা বলা হবে? ওইযে, মেজরিটির চাপ। মেজরিটির অদৃশ্য চাপ ব্যক্তিকে মেজরিটির সাথে তাল মিলাতে বাধ্য করে।

(শেষ করার জন্য নিচের কথাগুলো ধার করলাম জনাব জব্বার হোসেন॥ লেখক : সদস্য, ফেমিনিস্ট ডটকম, যুক্তরাষ্ট্র; পরিচালক : বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভলপমেন্ট জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশন; সম্পাদক : সাপ্তাহিক কাগজ ও মিডিয়াওয়াচ এর লেখা হতে।)

”আমাদের মধ্যে আধুনিকতা নেই। চিন্তায় নেই, চর্চায় নেই, জীবন যাপনে নেই। উদারতা? সুদূর পরাহত। আমরা মুখে ‘মুক্ত চিন্তা’ বলি। কিন্তু ভেতরে ধারণ করি না। ধার করা শব্দগুলো বলতে ভালোবাসি আমরা। সংকীর্ণতা আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, শিরা উপশিরায়, মস্তিষ্কে, মজ্জায়। চিন্তার দৈন্যতা পিছু ছাড়ে না, যতই শহরে বাস করি। যে শহরেই যাই। আমরা তথাকথিত আধুনিক। পোশাকে স্যুট, টাই, কোট, ব্লেজার, সু। কেউ ফুলস্লিভ, স্লিভলেস কেউ। দামি সেলফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ। লেটেস্ট মডেলের গাড়ি, ক্যাপসুল লিফট, কন্ডোমিনিয়াম, সিমপ্লেক্স, ডুপ্লেক্স। আউটিং, ট্রাভেলিং। কিন্তু ভেতরের চিন্তা গান্ধা, রদ্দি। ভেতরে এক গুহা অন্ধকার নিয়ে বসবাস আমাদের। পোশাকে সভ্য হলেও আদতে অসভ্য। বিকৃত। আধুনিকতা তো কোনও এক্সটার্নাল বিষয় নয়, ইনটার্নাল। আধুনিকতা থাকে মস্তিষ্কে, মগজে, চিন্তায়। আমরা প্রগতিশীল বলে মনে করি নিজেদের, অথচ অমূলকভাবে অন্যকে হেয় করা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা, হয়রানি করা, অপদস্থ করা, বিব্রত করা, তামাশা করা, কী করে প্রগতিশীলতা হয়, বরং কখনোই তা প্রগতিশীলতা নয়। প্রগতি মানুষকে সম্মান করতে বলে, মানবিক হতে বলে, বলে না তুমি হেনস্থা কর অন্যকে।(ছবিটি ইন্টারনেট হতে সংগৃহিত)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ১১:১৮

দ্যা ফয়েজ ভাই বলেছেন: এ্যরিষ্টটল কি তাই গণতন্ত্র কে মুর্খের রাজনীতি বলেছিলেন।বিশাল পোষ্ট,পুরাটা মনোযোগ সহকারে পড়তে পারি নি। :(

০৬ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৮:৪৫

বেচারা বলেছেন: সময় নিয়ে আস্তে আস্তে পড়ুন। গণতন্ত্রকে আমি মুর্খতাই বলি। কোনোমতে ৫১% মানুষ যদি বলে সূর্য পশ্চিমে ওঠে তাহলেই এতবড় একটা চিরন্তন সত্য মুহূর্তে মিথ্যা হয়ে যাবে-এটাই গণতন্ত্রের নীতি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.