নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃহন্নলার অবগুন্ঠন

১১ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:০০

জানেন কী? যে অল্প সংখ্যক স্ত্রীবাচক শব্দের পুঙ লিঙ্গ নেই তার একটা হল ......তিতা বা ...........শ্যা? যদিও ‘..........শ্যা’ কোনো ক্লীবলিঙ্গ নয়, তবু তার পুং লিঙ্গ নেই। কারন কোনো নেতিবাচক ঘৃণিত পদের পুরূষ ভার্সন হয়না। পুরূষদের গায়ে কোনো কলুষের কালি লাগেনা। আপনি হয়তো এটাও জানেন না, পৃথিবীর আদীমতম পেশাগুলোর মধ্যে একটা হল এই বেবুশ্যেবৃত্তি যাকে টিকিয়ে রেখেছে (খুব অস্বাভাবিকভাবে) এই পেশার বিক্রেতারা নয়, গ্রাহকরা-যেটা সবখানের নিয়ন্ত্রক বিক্রেতারা হয়ে থাকে।
অফিস ফেরত আমি সনি টিভিতে একজন পতিতালয়ে বিক্রি হয়ে যাওয়া মেয়ের উদ্ধারের সত্যি ঘটনার চলচিত্রায়ন দেখছিলাম। কিভাবে একজন রূপের খরিদ্দার তার ব্যক্তিগত বদনামের ঝুকি নিয়ে, কর্জ করে, পুলিশী ঝামেলা মাথায় নিয়ে একজন রূপ বিকোনোর শিল্পীকে তার নরকবাস হতে উদ্ধার করেন কোনো স্বার্থ ছাড়া-সেটা দেখে নিজেকে বড্ড স্বার্থপর আর জীবনটাকে খুব অর্থহীন মনে হল। নাটকটি পুরোনো একটা স্মৃতি মনে করিয়ে দিল। আজ হতে ১২ বছর আগে। তখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ছি। মফস্বলের দরিদ্র বাবার সন্তান হিসেবে আমিও দু’টো চারটা টিউশনি আর নানান ধান্দা করে নিজের (কিঞ্চিত পরিবারেরও) ভার বহন করি। রোজ রাতে ১০ টার দিকে সবশেষ টিউশনিটা শেষ করে ছাত্রের বাসায় দেয়া দু’টো নোনতা বিস্কিট আর এককাপ বিনা পয়সার লাল চা’য়ে উদর ঠান্ডা করে ভয়ানক ক্লান্ত আমি নয়াপল্টনের মোড়ে দাড়াতাম বাসের অপেক্ষায়। প্রতিদিন আমার অপেক্ষার সময়টায় আমার পাশেই একটা অন্ধকার মতো স্থানে বেশ কয়েকটা মেয়ে অত্যন্ত উগ্র ধরনের সাজে আর ততোধিক উগ্র কড়া গন্ধের সস্তা পারফিউমে নিজেদের চর্চিত করে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করে নিজেদের মধ্যে গল্প করত, ঝগড়া করত, আধো আওয়াজে নোংরা জোক বলত। আশপাশে আরো যেসব ভদ্দরনোকরা দাড়ানো থাকতেন তারা ওদের দিকে তাকিয়ে ওদের মাপার চেষ্টা করত। হয়তো কিছুটা আকর্ষনও অনুভব করত। প্রায়ই কেউ কেউ কুৎসিত গালিও দিয়ে বসত। মেয়েগুলো হয়তো কখনো তেড়ে উঠত কখনো বাজে করে প্রশ্রয়ের হাসি দিত। কোনো কোনো মন খারাপের রাতে আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওদের জীবনের সাথে নিজের অবস্থা মিলানোর অযথা চেষ্টা করতাম। বাস আসত, আমার চিন্তায় আপাত ছেদ পড়ত। পরের রাতেই আবার দেখতাম নতুন কেউ কেউ। লোকে ডাকত ’নিশীকন্যা’। বাহ! বেশ কাব্যিক নাম। তাই না?
সেই আমার প্রথম নিশীকন্যাদের দর্শন। আজ রাতে আপনি যখন বিছানায় আয়েশ করে অর্ধশোয়া হয়ে সুলতান সুলেমান আর তার অভিজাত দুঃশ্চরিত্র শাহজাদাদের কৃতদাসীদের সাথে নির্বিচার যৌবন উপভোগের সিনেমাটিক নির্মানশৈলীর প্রশংসায় মত্ত আছেন, তখুনি বাংলাদেশের একপ্রান্তে কুসুম, কাজল কিংবা বৃহন্নলা নামের একজন স্মার্টফোনযুগের কৃতদাসীর কাছ থেকে তার দিনের ১৭ তম গ্রাহক তার ‍গাঁটের পয়সার বিপরীতে প্রাপ্য কাঙ্খিত শরীরী সুখ নির্লজ্জভাবে শুষে নিচ্ছে। আমি ভাবছিলাম, বৃহন্নলারা কি আমাদের মতো সুলতান সুলেমান দেখে? তারা কি তাদের স্বজাতি সেই টার্কিশ হাতুনদের পারফর্ম্যান্স ও ভাগ্য নিয়ে ভাববার মতো অবসর পায়? ওঁরা কি ঈদের সময় আমাদের মতোই নতুন জামাকাপড় কেনে? কাজলদের সন্তানেরা কি তাদের মায়েদের কাছে আমাদের মতোই একটি লাল পিড়ানের জন্য আঁচল ধরে ঘোরে? আচ্ছা, কুসুমদের সন্তানরা তাদের মা’কে (বা বাবাকে) কী চোখে দেখে? সম্মানের? সমীহের? ঘৃনার নাকি করুনার? কুসুমের সন্তানরা তাদের বাবা’র জন্য কখনো পথ চেয়ে থাকে কি? আমি আমার বন্ধু বাদশা’র একটি গল্প পড়েছিলাম যেখানে একজন ছেলে তার ”সুখের ফেরিওলা” মায়ের প্রতি তার জীবনবোধ নিয়ে প্রবল মানসিক দ্বন্দ্বে ভোগে, না পারে তাকে পুরো মনের মন্দীরে বসাতে, না পারে বিসর্জিত বিগ্রহের মতো ছুড়ে ফেলতে। এ এক অসহ্য দ্বন্দ্ব।
নিজেকে একজন কাজলের স্থানে বসিয়ে একটা কাল্পনিক প্লট নিয়ে ভাবুন তো। আপনি একজন ”সুখের ফেরিওলা” যা আপনার একটি ছেলে আর একটি মেয়ে জানে না। আপনার কোনো অভিভাবক নেই বা থেকেও নেই। সন্তান দু’টিকে স্কুলে পাঠিয়ে আপনি আপনার কর্মস্থল ‘বিউটি গার্ডেনে’ চলে যান। প্রতিদিন ছেলেটি আর মেয়েটি পর্যাপ্ত পকেট মানি পায়, সুন্দর ড্রেস পায়। বাসায় সবরকম কমফোর্ট পায়। ঈদে চমৎকার পোষাক পড়ে ওরা খুশিতে আটখানা হয়ে মা’কে নিয়ে নানান আদুরে আদিখ্যেতাও করে। এভাবেই দিন যেতে যেতে ওরা বড় হয়। মেয়ের বিয়ের বয়স হয়। ছেলেটির জীবনে একটি জানের জান গার্লফ্রেন্ড আসে। এমন সময় যদি তারা দু’জন কোনক্রমে জানতে পারে তাদের মায়ের পেশা, তখন তাদের মনোজগতে মায়ের প্রতি তাদের সেই আজন্ম লালিত ভালবাসা আর শ্রদ্ধা অটুট থাকবে তো? তারা তাদের নতুন সঙ্গির সাথে অবলিলায় তাদের মায়ের প্রতি তাদের জীবনবোধ ও মায়ের পুরোটা জীবন নিঃসঙ্কোচে শেয়ার করতে পারবে? আরো বোল্ডলী বললে, তারা কি তাদের মা’কে নিয়ে তারপরও জীবনটা একসাথে কাটানোর কথা ভাবতে পারবে?
আজকাল যদিও শুধু ”হাতুন“ই নয়, পুরুষরাও নেমেছে এই পেশায় তবে সার্বিকভাবে এই পেশাটি এখনো মেয়েদের বিধায় এই লেখায় মুলত তাদের ফোকাস বেশি থাকলেও আমি দু’টি সম্প্রদায়কেই মীন করছি আমার লেখায়। তবে আমার ভয় হল, আমাদের দেশের মানুষ খুব জাজমেন্টাল। অনেকেই লেখাটি পড়ে আমার উপর নাখোশ হতে পারেন এই ভেবে যে, আমি এই ’গর্হিত’ ও ’সমাজবিরোধি’ পেশাটিকে প্রমোট করছি কিনা বা পেশাটির পক্ষে সাফাই গাইছি কিনা। না পাঠক, আমি এই পেশাটিকে অত্যন্ত নিচ, ঘৃণিত, গর্হিত আর পরিত্যাজ্য মনে করি। বিশেষত যারা তাদের কাস্টমার তাদেরতো মনেপ্রাণে শাপশাপান্ত করি। আসলে মুল ঘৃনাতো তাদের প্রতিই হওয়া উচিৎ যারা তাদের বাধ্য করেছে এই পেশা বেঁছে নিতে, যারা তাদের চাকরী বা লোভনীয় আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শহরে এনে বেঁচে দিয়েছে, যারা তাদের কিডন্যাপ করে চালান করেছে ব্রোথেলে, যারা তাদের প্রিয়জনদের প্রতারনা করে এনে ফেলেছে এখানে, যারা তাদের কাছে পয়সার বিনিময়ে শরীরি সুখ খোঁজে, যারা তাদের এই অমানবিক কামাই হতে কমিশন পায়। এমনকি অদূর ভবিষ্যতে সরকার বাহাদুর যদি ব্রোথেলের আয় আর ব্যায়ের ওপর ভ্যাট বসান তবে গোটা বাংলাদেশের তামাম ১৭ কোটি মানুষ এই অন্যায়ের ভাগিদার হয়ে ঘৃনিত হবার যোগ্য হব। আমি শুধু এই পেশায় জড়িত নারী ও পুরুষদের মনোজগত, তাদের প্রতি সমাজের কুচ্ছিৎ অযৌক্তিক ঘৃনা (সেই সমাজ যে তাকে মানুষের সমাজে স্থান করে দেবার ব্যবস্থা করে না,শুধু ঘৃনাই করে), তাদের মানুষ হয়েও ক্লীবজগতের মতো সামান্য কীটপতঙ্গের মতো মৃ্ত্যু, আজীবন আঁধারের জীব হয়ে কাটানোর গ্লানি (যে জীবন সে নিজে বেঁছে নেয়নি)-্এগুলোর সার্বিক যৌক্তিকতা আর সমাজের ভয়াবহ নিস্পৃহ ভূমিকার তীব্র প্রতিবাদ করছি।
বাড়িতে যাবার পথে দৌলতদিয়া নামে একটা ঘাট আছে। দৌলতদিয়াকে সারাদেশের মানুষ ফেরীর জ্যামের জন্য চিনলেও তার আরেকটা পরিচয় আছে। এই দেশের সবচেয়ে বড় ”মানবিকতা বিক্রীর” মার্কেটটি এই দৌলতদিয়াতে। আশ্চর্যের বিষয় হল আমাদের দেশের মানুষের একটা বড় অংশকে আমি দেখেছি (বিশেষত মেয়েদের যেটা খুব অাশ্চর্যজনক) বিশেষ পেশার এই মেয়েদের প্রতি তীব্র একটা বিদ্বেষপূর্ণ ও ঘৃনার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে। মজার ব্যাপার হল ”সুখের ফেরিওলা” এই মেয়েদের স্বার্থ, নিরাপত্তা, পুনর্বাসন, মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন (আমার নমস্যঃ তারা), তারাও কিন্তু কখনো তাদের সাথে নিজেদের সন্তানদের বিয়েশাদি দিয়েছেন বা নিজেরা বিয়ে করেছেন তার খবর পাওয়া যায়না (যদি কেউ করে থাকেন তারা গোস্তাকী মাফ করবেন)। কারন ওই একটাই-আমাদের আজন্ম লালিত সংস্কার আর অত্যন্ত বায়াজড সামাজিক শিক্ষা ব্যবস্থা যা আমাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধির চেয়ে অপরাধের শিকার মানুষটিকে নিপীড়ন করতে বেশি শিখায়। যে কারনেই ধর্ষককে নয়, ধর্ষিতাকে পর্দার আড়ালে চলাফেরা করতে হয়। ধর্ষণ করেছে-তাকে লুকিয়ে রাখতে হয় না, ধর্ষিত যে হয়েছে তাকে সঙ্গোপনে রাখতে হয়। অস্বীকার করব না, জীবনের একটা সময় পর্যন্ত (বিশেষত শৈশবে) আমিও ”সুখের ফেরিওলা” মেয়েদের প্রতি তীব্র একটা শ্লেষ ও কিলবিলে ঘৃণা মনে মনে পোষণ করতাম ঠিক যেমন মানুষ নর্দমার কেঁচোকে করে।
জানেন কিনা জানি না, এদেশে ও সকল দেশেই কাউকে কুৎসিত অপমানসূচক গালি দিতে আজও ব্যবহার হয় একটি শব্দ ”বে......”। বড় হয়ে বুঝতে শিখি সেই অপরিসীম যুক্তিহীন ঘৃনার অন্যতম জেনেটিক কারন ছিল পরিপার্শ্বের বায়াজড ও অব্যাখ্যাত নেতিবাচক প্রচার আর সমাজের চোরাগলিতে এই মেয়েদের মতোই সুবিধাভোগি অথচ অন্দরে সযত্নে লালিত “বহুগামী নারী ও পুরুষ”দের যাদের কাজ পরকীয়া বলে ঘৃণিত তাদের সাথে এই ”সুখের ফেরিওলা”দের অবচেতনে গুলিয়ে ফেলা। মানব সভ্যতা কোনোকালেই দ্বিচারিতা বা পরকীয়া প্রেম (আসলে চরিত্রহীনতা)কে মেনে নেয়নি। এই দুশ্চরিত্র কুকর্মটির প্রতি সহজাত ঘৃনা অবচেতনভাবে ”সুখের ফেরিওলা”দের কাজের প্রতিও মানুষের বিতৃষ্ণা ও ঘৃনাকে সংযুক্ত করেছে। কিন্তু ‍বুঝ হবার পরে যখন বুঝতে শিখি, এই নারকীয় অমানবিকতায় তারা কেউ স্বেচ্ছায় আসেননি, বরং আমাদের স্বার্থপর, অত্যন্ত বায়াজড, একচোখা ও সুবিধাবাদী সমাজব্যবস্থা তাদের ঠেলে দিয়েছে এই পেশাটিতে যেটি একমাত্র পেশা যেখানে যব ডিস্যাটিসফ্যাকশন ১০০% নিশ্চিৎ। তখন হতে তাদের প্রতি ঘৃনা নয়, তাদের কাস্টমারদের ঘৃনা করেছি। এটিই একমাত্র পেশা যার সকল সদস্যই নিজ পেশাকে ঘৃণা করে। জবস্যাটিসফ্যাকশনের কোনো ন্যুনতম প্রশ্নই নেই। যদিও অস্ট্রেলিয়া, ইতালী, থাইল্যান্ডসহ কিছু কিছু দেশে এই পেশার কিছু কর্মী স্বেচ্ছায় স্বাধীনভাবে বেছে নিয়েছেন এই বৃত্তি। অস্ট্রেলিয়ার একজন ”সুখের ফেরিওলা”র স্টোরি দেখছিলাম ন্যাট জিওতে যার মাসিক আয় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মাসিক বেতনের থেকে বেশি। তার কর্মস্থল আবার একটি ফাইভ স্টার রেটেড ব্রোথেল। তাদের কথা ভিন্ন।
তবে এই পেশাটি কি জব নাকি ব্যবসা সেটি বিতর্কের বিষয় হতে পারে। কারন হল, কাগজে কেতাবে পেশাটিকে “দেহ ব্যবসা” নামে আখ্যায়িত করা হয়। অথচ বাস্তবতা হল, ব্যবসাটির যারা মূল সওদাগর তারা কেউ নিজের মতো করে ব্যবসাটি করতে পারেন না। তারা প্রত্যেকেই আধুনিক দাসীদের মতো শুধু বেতনভূক কর্মী। তাদের শ্রমের ও অবমাননাসূচক বিকিকিনির মূল সওদাটির সুবিধা নেন তথাকথিত দালাল/ম্যাডাম/আপা/আম্মারা যারা আবার বেশিরভাগই এককালে এই কর্মীদেরই স্বজাতি ছিলেন। আবার এই নরকগুলোতে কর্মীর যোগানের একটা বড় অংশই আসে এখানকার পুরোনো কর্মীদের সন্তান হবার পথ ধরে। এই বঙ্গদেশে এখনো যখন মেয়ে সন্তান হলে পরিবার অখুশি হয় অথচ তার বিপরীতে এই ‘বিউটি গার্ডেনে’ মেয়ে সন্তান বয়ে আনে সুখের সুবাতাস। কারন একটি মেয়ে সন্তান তার ‘অশুচি’ মায়ের ভবিষ্যত দুর্দিনে সহায় হবার সুযোগ ও সম্ভাবনা সবথেকে বেশি। আর এখানে একটি মেয়ে সন্তান মানেই বিনাচেষ্টায় মালকীনের আরেকজন কর্মী। ভাবতে পারেন, এই বিংশ শতাব্দীতেও মানুষ বেঁচাকেনা হয়? হ্যা, ব্রোথেল, যাকে আমি এই লেখায় ‘বিউটি গার্ডেন’ বলছি, সেখানে প্রায় সবাইই বিভিন্ন হাত ঘুরে বিক্রি হয়ে আসেন। গরু ছাগলের মতোই তাদের সামনেই দরদাম করেন তাদের প্রথম ক্রেতা তথাকথিত মাসি/দালাল/ম্যাডাম/আম্মারা। আর একবার বিক্রি হলেই এরপর সারাজীবন (যতদিন রূপ থাকে) তারা তাদের মাসীর হয়ে নিজেকে নিজেরা দরদাম করে বিক্রি করে।
শুনেছি, ”সুখের ফেরিওলা”রা মারা গেলে তাদের দাফন, দাহ, জানাজা ও শ্রাদ্ধ (যার যার ধর্মবিশ্বাস মতে) হয়না। আমার জানামতে এই বিসর্জনের পেছনে ধর্মীয় কোনো বিশ্বাসের চেয়ে একজন ‘সুখের ফেরিওলা’র জীবিত বা মৃত জীবনের সাথে কোনোভাবে স্পর্শিত হবার যে সামাজিক ট্যাবুর ভয়, সেটাই আমাদের বাঁধা দেয় তাদের অন্তিম সৎকারে শামিল হতে। ফলাফল দরিয়ার পানিতে তাদের অন্তিম ভাসান। কারন নদী কোনো মৃত আদম সন্তানের জাত, পাত, ধর্ম, গোত্র, ক্লাস, বিশ্বাস, স্ট্যাটাস নিয়ে ভাবিত নয়। সে সকল মাটির আদমদেহকে সস্নেহে মায়ের মতো বুকে টেনে নেয়। কুসুমরা মরে গেলে স্বর্গে কিংবা নরকে যাবে-সেই বিচারের ভার সৃষ্টিকর্তার হাতে। তবে পৃথিবীতে যেই নরকে তারা জীবনের অনেকগুলো বছর কাটিয়েছে তার ক্লেদ কি তারা মরণের সাথে বয়ে নিয়ে যায়? যারা তাদের উপহার দিয়েছে এই কুচ্ছিৎ ন-মানুষ জীবন, তারা কি কখনো কখনো একা বসে একবার হলেও ভাবে তাদের কৃতকর্মের পরিনাম? কিছু কিছু পুরূষবাদী আবার আমার লেখা পড়ে বিরুদ্ধাচরন করে বলবেন, শহরের মোড়ে মোড়ে, অভিজাত পাড়ায় যে চকচকে বালামখানাগুলোতে নয়া নামের, নয়া রূপের, ধরাছোঁয়ার বাইরের (বিশেষ করে আমাদের বেবুশ্যে আধুনিক জীবনে সাদরে গৃহিত) যে ‘বিউটি গার্ডেন’গুলো আছে তাদের নিয়ে আমার মতামত কী? হে পাঠক, এতক্ষণ যদি আমার এই কলুষিত বিতর্কিত লেখাটি পড়েই থাকেন তবে অনুরোধ করব, আমি যে ‘বিউটি গার্ডেন’ ও তার ”সুখের ফেরিওলা”দের গল্প এতক্ষন করলাম তাদের সাথে ওদের তুলনা করে ওদেরকে আরেকবার অপমান না করলেই কি নয়?
(বৃহন্নলা নামটি আমার প্রিয় লেখক হুমায়ুনের কাছ থেকে ধার করা।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৫

গরল বলেছেন: পতিতার পূলীঙ্গ হল পতিত

১১ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১১

বেচারা বলেছেন: হা হা হা। গড়ল: বড্ড সরল হয়ে গেল।

২| ১১ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:৪১

অসিত কর্মকার সুজন বলেছেন: অনেক সত্য কে একসাথে গুছিয়ে লিখেছেন । এভাবেই চলছে চলবে এক্ব কিছু বলবে না , শুধু রাস্তার মোড়ে মোড়ে বৃহন্নলাদের ভীর বাড়বেই ।

১২ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:৫৮

বেচারা বলেছেন: আফসোস আর আক্ষেপ।

৩| ১১ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:৪২

অসিত কর্মকার সুজন বলেছেন: বলেছেন: অনেক সত্য কে একসাথে গুছিয়ে লিখেছেন । এভাবেই চলছে চলবে এক্ব কিছু বলবে না , শুধু রাস্তার মোড়ে মোড়ে বৃহন্নলাদের ভীড় বাড়বেই ।

৪| ১২ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:০৭

লায়ন ইন দ্য ডার্ক উডস্‌ বলেছেন: এক কথায় অসাধারন।

১২ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৫

বেচারা বলেছেন: ধন্যবাদ লায়ন।

৫| ১২ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:১২

ইমরুল ফারুক রাতুল বলেছেন: শুধুমাত্র এই তথাকথিত নিগৃহীত বেশ্যা আছে বিধায় আমাদের মা-বোনেদের ওপর সমাজের লালাসক্ত কুকুর গুলোর নজর পড়ে না।
কুকুরেরা বছর পর তার সঙ্গিকে কাছে পাই।মানুষের এরুপ অবস্থা হলে ভেবে দেখেন তো কতটা হিংস্র মানুষ হত!
সম্মান তাই এদের যারা পেটের তায়ে নিজেকে বিকিয়ে সমাজকে সচল রাখছে।
এরাই বে***, এরাই নিকৃষ্ট মানুষ। আফসোস, যারাই খাই তারাই, এদের সমাজ থেকে খেদায়।

১২ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৬

বেচারা বলেছেন: ধন্যবাদ কড়া কিন্তু সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.