নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কর্কশ গল্পটির একটি শিরোনাম খুঁজছি আর ধর্ষণের অন্য কোনো কোমল প্রতিশব্দ

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৩২

আচ্ছা, তনু নামের মেয়েটার বয়স কত ছিল কেউ কি জানেন?
শাজনীন কি বেপর্দা চলাচল করত?
রূপা নামের মেয়েটাকে রেপ করে ঘাড় মটকে মেরে ফেলেছে কিছু বীর পুঙ্গব-কেন শুধু ধর্ষণ করে ক্ষান্ত হল না জানেন?
রিশার কি কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিল?
গাজীপুরের যে মেয়েটি ধর্ষণের বিচার না পেয়ে বাবাকেসহ রেলে আত্মাহুতি দিল, ওর নামটা মনে পড়ছে কি?
বনানীর মেয়েদুটো কি ধর্ষকদের পাওয়ার অব এটর্নি দিয়েছিল ’রাতবিরাতে’ পার্টিতে যাবার অপরাধের বিচার করার?
একবছর বয়সের যে বাচ্চাটি রেপড ও কিলড হয়েছে ও কি উত্তেজক পোষাক পড়ে ধর্ষককে প্ররোচিত করত?
পূর্ণিমাকে মনে পড়ে? ওর মা যখন ওকে জন্মদান করেন, তখন কি ভেবেছিলেন, কোন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিচয়ে ওকে বড় করলে একদিন অপরিণত বয়সে ওকে একদল হায়েনার মুখের গ্রাস হতে হবে না?
ধর্ষিতা ও নির্যাতিতা ইয়াসমিনকে যখন ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তার দু’পায়ে কি আলতার লেপটে থাকা দাগ সারাপথের সব পুরুষকে প্ররোচিত করছিল?
সাভারে যে গার্মেন্টস কর্মী মেয়েটা বাসে ধর্ষিত হয়েছিল ও কি বুঝতে পেরেছিল দিল্লীর অভয়ার মতো ওর নারী জন্মটাও ছিল একটা পাপ?

কিছু কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলতে কিংবা কিছু লিখতে গেলেও হীনমন্যতাবোধ হয়। কেন যেন মনে হয়, খুব হিপোক্রেসী করছি। আমাদের নানারকম হিপোক্রেসী করার বা সুশীল চর্চা করার সুযোগ করে দিতেই বোধহয় রূপারা ধর্ষিত হয় কিংবা তাদের ধর্ষকরা ধর্ষণ করে। আমি আজকাল লিখতে বসে প্রায়ই ভাবি, আমি কি আমার নিজের জন্য লিখছি? আমি কি রাইটার সেলিব্রেটি হতে চেয়ে লিখছি? আমি কি সমাজ উদ্ধারের নামে হিপোক্রেসী করছি?

খুব ছোটবেলায় মাঝে মধ্যেই আমাদের পাড়াগাঁয়ে হঠাৎ রৈ রৈ পড়ে যেত। আমরা মানুষের ভীড়ের মধ্যে মাথা গলিয়ে ঘটনা জানার চেষ্টা করতাম। সবাই ফিসফিস করত, ‘ছেড়িটারে নষ্ট করল’, ‘মাগিরও (দুঃখিত) দোষ আছিল’, ‘ক্যাডায় বিয়া করব’, ‘ঢ্যামনা বেটি, যেমন গেছে তেমনি......” ইত্যাদি ফিসফাস। নাবালক আমরা বুঝতাম না। মা’কে কিংবা নানীকে জিজ্ঞেস করলেও ধমক খেতাম। একসময় আমাদের কোনো ইঁচড়ে পাকা সহপাঠীর মাধ্যমে শুনতাম, ‘অমুক বাড়ির একটা মেয়েকে মাস্তানরা নষ্ট করেছে’ যদিও বুঝতাম না মানুষ আবার নষ্ট হয় কী করে। আপনারা কেউ কি বলতে পারবেন, ধর্ষিত হলে কেন কেউ নষ্ট হয়ে যায়? আচ্ছা, কেন কেউ ধর্ষিত হন কিংবা, বিপরীত দিক হতে বললে, কেন কেউ ধর্ষণ করে?

আমি একজন খুব সাধারন বাঙাল যে কিনা মাঝে মধ্যে টুকটাক লেখালেখি করি। আমি নিজেও কোনোদিন ভাবিনি, ধর্ষণের মতো একটি ইস্যুতে লম্বা প্রবন্ধ ফেঁদে বসবার মতো অবস্থা আমাদের বাংলাদেশে আসবে। কিন্তু খুব অবিশ্বাস্যভাবে,
বাংলাদেশের মতো একটি দেশ যেখানে অত্যন্ত বিরল ঘটনাক্রমে সরকার প্রধান ও বিরোধী দলীয় প্রধান হলেন নারী,
যেদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষেরা বিশ্বে তাদের রাজধানীকে পরিচীত করেছেন মসজিদের নগরী হিসেবে,
যে দেশে বিশ্ব ইজতেমার মতো বিশ্বস্বীকৃত জমায়েত হয়,
যেদেশ বয়ে বেড়াচ্ছে ২-৪ লক্ষ বীরাঙ্গনার সম্ভ্রম হারানোর বিচার না হবার গ্লানি,
যে দেশ এখন হতে দুই যুগ আগেই রীমার হত্যায় খুকু নামক একজন নারীকেও ছাড় দেয়নি,
যে দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী,
যেদেশে বিশ্বের খুব অল্প দেশের মধ্যে অন্যতম নারী আর্মি রয়েছে,
যে দেশ সিডো সনদে সাক্ষর করেছে কোনো রকম দ্বিধা না করে
সেই দেশে প্রতিদিন গড়ে ৩ জন নারীর উপর রেপিষ্ট আক্রমণ হয় এবং তা নিয়ে প্রতিবারই একটা মৃদু নড়াচড়া সৃষ্টি হয়ে আবার মিইয়ে যায়-এটা খুবই বিপরীতধর্মী। খুব ঠান্ডা মাথায় একটু চিন্তা করলে বুঝতে পারা যায়, বাংলাদেশে নিরব কিন্তু ধারাবাহিকভাবে ধর্ষণ একটি স্বীকৃত সামাজিক ব্যাধির রূপ নিচ্ছে যা একসময় ছিল একটি বা দুটি বিচ্ছিন্ন সামাজিক অপরাধ। একটা সময় ছিল যখন এই দেশে সিঁদেল চোর নামক একটি বিশেষ শ্রেনীর মানুষই শুধু গ্রামেগঞ্জে চুরি করত। মানুষ তাদের কারনে তটস্থ থাকত। তবে ধরা পড়লে মৃদু মারধোর করে ছেড়ে দিত। আপনি কি কখনো অনুভব করেছেন, ধর্ষণও এখন আমাদের শহর ও গ্রাম-উভয় সমাজে সিঁদেল ‍চুরির মতো ডালভাত অপরাধে পরিণত হয়েছে?

আপনি যদি সংখ্যাতত্ত্বে বিশ্বাসী হন তবে জেনে রাখুন, বাংলাদেশে প্রতিদিন (নথিভূক্ত) ধর্ষনের ঘটনা ঘটে ৩ টি যা মাসে ৯০টি, বছরে ১০৮০ (সংখ্যাটি কমবেশি হতে পারে।) মানে হল প্রতিবছর এই দেশের ১০৮০ জন নারী তার আজীবনের সুরক্ষিত সম্ভ্রম আক্রান্ত হবার নারকীয় যন্ত্রনায় বিদ্ধ হন এবং বাকি জীবনের জন্য সাইকোলজিক্যালী পঙ্গু হয়ে যাবার উপক্রম হন। মুশকীল হল আমরা সবাই ‘তনুর ভাই’ বনে গেলেও বিয়ের পাত্রী যদি শুনি ধর্ষিত হয়েছিলেন তবে তাকে বিয়ে করার কোনো প্রশ্নই ওঠেনা। আরেকদল ধান্দাবাজ আবার বিপন্ন রোহিঙ্গাদের মানবতা উদ্ধারের নামে তাদের তরুনীদের বিয়ের অনলাইন আহবান জানাচ্ছে যার আড়ালে আছে ওই একই দুরহ ভোগ লালসা।

বিভিন্ন দেশকে নিয়ে জাতিসংঘের করা পুরুষ ও সহিংসতা সংক্রান্ত একটি গবেষণায় বাংলাদেশের গ্রাম ও নগর এলাকায় জরিপের আওতাভুক্ত পুরুষদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তারা তাদের জীবনের কোনো সময়ে কোনো মহিলার সাথে বলপূর্বক শারিরীক সম্পর্ক করেছেন কিনা। বাংলার গ্রামাঞ্চলের ১৪.১% এবং শহরের ৯.৫% পুরুষ বলেছেন ’হ্যা’। গ্রামের ২.৭% এবং শহরের ০.৫% পুরুষ বলেছেন তারা গত ১ বছরের মধ্যে রেপ করেছেন। গ্রামের ৪৭.৪% পুরুষ বলেছেন তারা একাধিকবার এটেম্প নিয়েছেন, ৩.৭% বলেছেন তাদের হাতে ৪ বা তার বেশি মানুষ ধর্ষিত হয়েছেন, ৪০% প্রথম রেপ করে যখন সে টিনএজার, ৮২% গ্রাম্য পুরুষ এবং ৭৯% শহুুরে পুরুষেরা মনে করেন, ধর্ষণ করা তাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে, ৬১.২% শহুরে পুরুষ রেপ করার জন্য কোনোরকম গ্লানিবোধ করেন না, ৯৫.১% রেপের জন্য কোনোরকম আইনগত শাস্তির মুখোমুখি হননি, ৩.৭% গ্রাম্য পুরুষ অন্যকোনো পুরুষকে রেপ করেছে, ৮৯.২% শহুরে পুরুষ সিরিয়াসলি বিশ্বাস করেন ‘রেপ করবার সময় যদি ভিকটিম শক্ত প্রতিরোধ না করেন’ সেটি কোনো রেপই নয় (সূত্র: Click This Link)।

সংখ্যাতত্ত্ব বাদ দিন। ধর্ষিতর সংখ্যা, ফ্রিকোয়েন্সি-ওগুলো স্রেফ কয়েকটা অঙ্ক। ধর্ষণের ফলে একজন মানুষ ঠিক কিভাবে বারে বারে তিলে তিলে প্রতিদিন মরে তার তীব্রতা ওই সংখ্যাতত্ত্ব বোঝাতে পারবে না। তবে জেনে খুশি হবেন, এখনকার রেপিস্টরা অবশ্য ধর্ষিতকে আর তিলে তিলে মরার কষ্ট না দিয়ে তাকে সোজা ঘাড় মটকে মেরে ফেলে মুক্তি দেবার মতো দয়াটুকু দেখানো শুরু করেছে। আমরা যখনি রেপ নিয়ে কিছু বলি সেটাকে অবচেতনভাবেই মনে করা হয় একজন পুরুষ কর্তৃক মহিলার রেপ। কিন্তু বাস্তবতা হল, এই দেশে প্রতিটি দিন, বছরে যেসব রেপ এটাক হয় তার ভিকটিম ছেলে ও মেয়ে-উভয়ই। ধর্ষিত হবার পরে ধর্ষিতকেই প্রমান করতে হয় যে তিনি ধর্ষিত হয়েছেন। আমার একটা প্রশ্ন জাগে মনে। একজন ছেলে বা পুরুষ যখন ধর্ষিত হবেন, তখন তার প্রমানের জন্য কোনো ডাক্তারী পরীক্ষা আছে কিনা যেমনটা মেয়েদের জন্য আছে? বাংলাদেশে পুরুষ (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে) ধর্ষিত হলে তার জন্য কোনো মামলা ফাইল হবার নজির কি আছে? আমি উভয়শ্রেনীর মানুষের ধর্ষিত হওয়াটাকেই বোঝাচ্ছি। হাসবেন না, অবস্থা এখন উড়িয়ে দেবার মতো সংখ্যায় নেই।

পিংক মুভিটা দেখেছেন? শেষদিকের ট্রায়ালের ডায়লগগুলো একটু মন দিয়ে শুনবেন..........একজন মহিলা একজন পুরুষের দিকে তাকিয়ে হাসলেন, তার মানে এই নয় যে তিনি এভেইলেবল। আমার কাছে রেপের একটাই সংজ্ঞা-এমনকি বিবাহিত স্ত্রীও যদি বলেন ‘না’ তার মানে হল ‘না’। আমি জানি এই বাক্যটা পড়ার পরে আমার পুরুষ পাঠকরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করবেন। স্ত্রীকে রেপ? জ্বি, স্ত্রীও যদি বলেন ‘না’ তারপরও যদি আপনি এগোন, তবে ওটা রেপ। বাদবাকি আর বোধহয় বলা লাগে না। তবু বলছি-বনানীতে ধর্ষিত দু’জন তরুনীকে (ব্যতিক্রমীভাবে) অনেক পুরুষ (ও অনেক মহিলাও) বলেছেন, ‘রাত বিরাতে হোটেলে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে গেলে তো তাদের................ই..............উচিৎ।” না, কখনোই না। আপনার গার্লফ্রেন্ড (বা বয়ফ্রেন্ড) যদি গতকাল আপনার সাথে বিছানায় গিয়ে থাকেন হৃদয়ের আবেগে-সেটা রোমান্স। আজ রাতে যদি তিনি শেষ মুহূর্তেও বলেন ‘না’ তবে সেটা ‘না’। এরপরও যদি আপনি জবরদস্তি করেন তো ওটা রেপ। বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে নাইট আউট বা রুমডেটের ভাল বা মন্দ-কোনোটা নিয়েই আমি কথা বলছি না। আমি কোনো বৈধ বিচারক নই নৈতিকতার মানদন্ড নির্ধারনের। আমি শুধু বলতে চাই, বয়ফ্রেন্ডের সাথে হোটেলে যাওয়াটা একজন নারীর ধর্ষিত হবার যৌক্তিক দাবি তৈরী করে না।............................(চলবে)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:১৬

বেচারা বলেছেন: শেষপর্বের লিঙ্ক: Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.