নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কর্কশ গল্পটির একটি শিরোনাম খুঁজছি আর ধর্ষণের অন্য কোনো কোমল প্রতিশব্দ

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:১৫

প্রথম পর্বের পর..................

আমার খুব দমবন্ধ লাগে যখন দেখি এইরকম বাস্তবতার মুখেও আমাদের চারপাশের মানুষদের (নারী ও পুরুষ উভয়) মধ্যে অনেকেই মনে করেন, ধর্ষিত হবার পেছনে ধর্ষকের চেয়ে ধর্ষিতের দায় বেশি।

কেন কেউ রেপড হন-আমার কাছে এই প্রশ্নটি একটি অন্যায় প্রশ্ন মনে হয়।
আমি কেন ধর্ষিত হলাম-সেই উত্তরও যদি আমাকে দিতে হয় তাহলে সেই সমাজের মুখে থুথু মারা উচিত। আমি তাই প্রশ্নটি করব-ধর্ষক জানোয়াররা কেন ধর্ষণ করে? আমার কাছে এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই। আমি শুধু প্রশ্নটার উত্তরে সামাজিক মনমানসে ঘুরে বেড়ানো উত্তরগুলোই বলছি:

১.উপরে বলেছি, পুরুষদের একটা বিরাট অংশ মনে করেন, ধর্ষণ করার অধিকার তাদের আছে। আচ্ছা, তাহলে এই অধিকার কে আমাকে দিল?
আর যদি কেউ দেয়ই, তাহলে আমার খানদানের মেয়েদের ধর্ষণের অধিকারওতো সমাজের অন্য পুরুষদের আছে। তো আমরা তাহলে ধর্ষণ ও পাল্টা ধর্ষণের মতো পাকিস্তানী সমাজে পরিণত হই?

২.মেয়েদের উত্তেজক সাঁজ/পোষাক তাদের প্ররোচিত করে। আচ্ছা, তো তনু কেন ধর্ষিত হল?

৩.রাতবিরাতে বাইরে চলাচল, হোটেলে পার্টি করে বেড়ালে তো ধর্ষকরা সুযোগ নেবেই।
আচ্ছা, আপনি কি তাহলে কখনো পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, হোটেলগুলোতে রাতবিরাতে পার্টি কেন হয়? আর আপনি রাতের পার্টিতে আপনার পার্টনারকে কখনো নিয়ে যান না? ধর্ষকদের ভয়ে তাহলে মেয়েদের সূর্যাস্ত আইন মানতে হবে। আচ্ছা, মনে করুন, হঠাৎ করে একটি পরিবারের পুরুষ সদস্যটি বিছানায় পড়ে গেলেন। তো তার নারী সদস্যটি তখন কী করবেন? এমন কাজ খুঁজবেন যেটাতে সূর্যাস্ত হবার আগে ঘরে ফেরার গ্যারান্টি আছে?

৪.পুরুষ ছাড়া নারী রাতে একা কোথাও কেন যাবে? গেলে তার পরিণতিতো ভুগতেই হবে।

তো আপনি কি মনে করেন, বাংলাদেশের সব নারীরই বাইরে যাবার মতো একজন পুরুষ সঙ্গী সবসময়ই আছে? আর বুকে হাত দিয়ে বলতে পারেন, কোনো নারী রাতে তার কোনো পুরুষ প্রতিবেশিকে নিয়ে ইমার্জেন্সীতে বাইরে গেলে ওই পুরুষ প্রতিবেশির হাতেও তিনি নিরাপদ?

বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, আপনার মেয়েকে দূর শহরে হোস্টেলে যাবার জন্য রাতের গাড়িতে তুলে দিতে
আপনি একদম নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন? যেমনটা পারেননি হ্যাপির মা।

৫.টিভি/মিডিয়া/ইন্টারনেট আমাদের ধর্ষকদের চারিত্রিক অধঃপতন ঘটিয়ে, সমাজের চিরকালের সংস্কারে ভাঙন ধরিয়ে ধর্ষণকামী সমাজ বানাচ্ছে। আচ্ছা, তো আপনি বলুন, ওগুলোকে বন্ধ করে কি দেশ চালাতে পারবেন? আর ওগুলোর সবই তো সুইডেনে, সুইজারল্যান্ডে, সৌদি আরবেও আছে। ওখানে বছরে কয়টা রেপ হয়? মিডিয়া আর ইন্টারনেট আমাদের মধ্যে রেপের বীজ বোনেনি। ওর বীজ আমাদের রক্তে আগে থেকেই ছিল। সস্তা ইন্টারনেট শুধু সেই সুপ্ত বীজকে জাগিয়েছে।

৬.ধর্মীয় অনুশাসন না থাকায় রেপের মাত্রা বাড়ছে। আচ্ছা, তো রেপ রোধ করতে হলে দেশকে ভ্যাটিকান হতে হবে? কি মনে হয়? সেটা সম্ভব?
আর সিরিয়াসলি বলুন তো, ধর্মীয় অনুশাসন কিভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব? অটোম্যান সম্রাজ্যের পতনের পর বিগত হাজার বছরে ওইরকম কোনো সম্ভবনা তৈরী হয়েছে কোথাও? দয়া করে আফগানিস্তানের উদাহরন দেবেন না। আর কখনো কি ভেবেছেন, আমাদের সমাজ হতে ধর্মবিশ্বাস দিনে দিনে কেন আলগা হয়ে যাচ্ছে?

শুধু জুমার দিনে রাস্তা উপচে পড়া কিংবা পুজায় চোখ ধাঁধানো আয়োজন মানেই ধর্মের প্রতি ভক্তি বাড়ছে-এমনটা নিশ্চই ভাবেন না?

৭.কঠোর সাজা না হওয়ায় ধর্ষণ বাড়ছে। আচ্ছা, তো ধর্ষকরা সব অপেক্ষায় আছে কঠিন একটা আইন ও বিচারব্যবস্থা তৈরির। ওটা হলে তারপর তারা থামবে? বগুড়াতে মেয়েকে ধর্ষণ করে যখন মা ও মেয়েকে ন্যাড়া করে অত্যাচার করা হয় তখন দেখেছেন, ধর্ষকের বউ, বোন, পরিবার তাকে কেমন দারুন সমর্থন দিয়েছে? গোটা সমাজ যখন পঁচে যায়, তখন আইন কী করতে পারবে?

৮.পুরুষ মানুষতো একটু আধটু অমন করবেই..............................আমার মতে আমাদের আপামর জনগোষ্ঠি (নারী-পুরুষ উভয়ের) মধ্যে এই কু-বিশ্বাসটিই হচ্ছে ধর্ষণের মূল ও একমাত্র কারন। আজ যে মা তার কন্যাটি ধর্ষিত হলে খোদার নামে বিচার দেন, সেই মা বা তার মতো অসংখ্য মা আবার তার পূত্র সন্তানটি ধর্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে ‘পুরুষ মানুষ তো’-বলে ধর্ষিতার নামে বিষোদগার আর সন্তানের জেলমুক্তির যাবতীয় চেষ্টাচরিত্র করেন।

আমরা যদি আরেকটা কাজ করতে পারতাম তবে হয়তো ধর্ষণের মাত্রা কমতো না কিন্তু ধর্ষণের শিকার মানুষটি তার জীবনভর বয়ে চলা নারকীয় যন্ত্রণা হতে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতেন। সেটা হল, ধর্ষিত হওয়াটাকে কলঙ্কিত না ভেবে ধর্ষণ ও ধর্ষককে কলঙ্কিত ভাবার সামাজিক মানস তৈরী করা।

আমাদের সমাজে একটি ধর্ষণকান্ড ঘটলে উপরে উপরে ধর্ষিতার জন্য সহানুভুতি আর ধর্ষকের ব্যাপারে ঘৃণা দেখানো হলেও আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, ওসবের পাশেই ধর্ষিতার প্রতি একটি সুপ্ত ক্রোধ ও ঘৃণা আর ধর্ষকের জন্য মৃদু প্রশ্রয়ের একটা চোরা স্রোত প্রবহমান থাকেই।

কিন্তু আমরা একটি গোটা সমাজ

যদি ধর্ষিত বা ধর্ষিতাকে সম্মিলিতভাবে, আবেগ ও অনুরাগের সাথে, সহমর্মিতা ও একাত্মবোধের সাথে আপন করে নিতে পারতাম,

যদি ‘একদা ধর্ষিত’ পাত্রীর সাথে নিজের সন্তানের বিয়ে দেবার ব্যাপারে কুসংস্কারমুক্ত হতে পারতাম,

যদি ধর্ষককে আজীবনের জন্য সামাজিকভাবে বয়কট করতে পারতাম,

যদি দেশের সমস্ত মেয়েরা কোনো ধর্ষককে বিয়ে করতে অস্বীকার করতে পারত,
যদি প্রতিটি ধর্ষণকান্ডের ১ মাসের মধ্যে তার বিচার শেষ করতে পারতাম,
যদি রেপ হওয়া মানেই জীবন শেষ হয়ে গেল বা রেপ হলাম মানেই আমি কলঙ্কিত হয়ে গেলাম-এই হাস্যকর মানসিক দৈন্য হতে বের হবার মতো যথেষ্ট সাহসী ও বেপরোয়া আমাদের ভিকটিমরা হতে পারত,

যদি ‘ভার্জিনিটি’ নামক হাস্যকর ও অবমাননাকর একটি কনসেপ্ট আমাদের বিয়ে নামক সামাজিক প্রথার সাথে জড়িয়ে না থাকত,
যদি ‘একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ব্যতিত সন্তান কেউ দিতে পারেন না’-এই সত্যটা মেনে নেবার মাধ্যমে সন্তানের আশায় ভন্ড দরবেশদের ছোবল নারী ও তাদের পুরুষরা স্বেচ্ছায় না নিত,

যদি বিয়ে পূর্ব প্রেমিক-প্রেমিকার শারিরীক সম্পর্ক করার প্রেমময় দুঃসাহসটি হঠাৎ পুরুষটির বিয়ে করতে না চাওয়ার পরও সেই আগের মতোই বহাল থাকত,
যদি আমাদের বিবাহিত নর ও নারী বিয়ের মাধ্যমে একটি রক্ত মাংসের বেড-পার্টনার পাবার আশায় বিয়ে না করত,
যদি আমাদের মিডিয়াগুলো ও তাদের নির্মাণগুলো ধর্ষণ ইস্যুটাকে পুরুষের জন্য বীরত্বপূর্ণভাবে উপস্থাপন না করে ওই নারকীয় অপরাধটিকে কুৎসিততম কাজ হিসেবে উপস্থাপন করতে শিখত,

যদি একদল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেধাবী ছাত্র তাদের আরেকজন সহপাঠীর ধর্ষণের সেঞ্চুরী উদযাপনে শামিল হবার মতো কুৎসিত মানসিকতা ধারন না করত,
যদি কেউ ধর্ষিত হয়েছেন এমন সংবাদ আমাদের ফিসফিস করে কানাকানি করে আলাপ করবার মতো ট্যাবুতে আটতে না থাকতে হত,

যদি ধর্ষণকে অন্যান্য চুরি ছ্যাচরামীর মতো শুধুমাত্র একটি ফৌজদারী অপরাধ হিসেবেই বিবেচনা করা হত,

যদি আমাদের তাবৎ সমাজ কেউ ধর্ষিত হলে তাকে ‘ওতো নষ্ট হইয়া গেছে’

এই অন্যায় অভিধায় ততোধিক বিদ্ধ না করত,
যদি ধর্ষিত হবার পর ভিকটিমকেই তার ওপর ঘটা নারকীয় অপমানের প্রমাণ নিজেকে আরেকবার বা বহুবার অশ্লীল ও অপমানজনক মধ্যযুগীয় পন্থায় না দিতে হত,


যদি ভিকটিমের সাথে সাথে আসামীরও একই বা ততোধিক অপমানজনক পন্থায় ডাক্তারী পরীক্ষা করা হত,

যদি সিনেমাগুলোতে ধর্ষিত হবার পর ‘পোড়ামুখি তোর মরণ হয় না কেন’-এমন আমানবিক ও অন্যায্য ডায়লগ ধর্ষিতার মায়ের মুখে পরিচালক না তুলে দিতেন,

যদি ধর্ষিত মানে অবশ্যম্ভাবিভাবে শুধু একজন নারীকে না বোঝানো হত কিংবা নারীর ধর্ষিত হবার মতো পুরুষ/ছেলেশিশুর ধর্ষিত হওয়াটাকেও সমহারে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হত, ‍

যদি এদেশের অধিকাংশ পরিবারে ছোট ছোট বাচ্চারা তাদের বাবা (বেশিরভাগক্ষেত্রে) কিংবা মা’কে (কিছু কিছু ক্ষেত্রে) তাদের পার্টনারের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত কর্তৃত্বপূর্ণতায় খবরদারি করার সংস্কৃতির মধ্যে বড় না হত,

যদি সামাজিক ট্যাবু হতে বেরিয়ে এসে ধর্ষণের জঘন্যতা ও তার প্রতিকার নিয়ে খোলাখুলি কথা বলার সামাজিক মনন আমাদের হত, যদি যৌতুক কিংবা পণ-দু’টোর মতো অসভ্য কুপ্রথার বলি হয়ে আমাদের তরুণ বা তরুণীদের বিয়ের বয়স আইবুড়োতে ঠেকবার মহামারিতে না পৌঁছাতো, ----------------------------------------------------------------------যদি আমাদের উঠতি প্রজন্ম প্রিম্যাচিওরড বয়সেই অতি আধুনিক হবার দুরাশায় পশ্চিমা হবার ভ্রান্তিতে না পড়ত, যদি আমাদের পরিবার প্রথায় মায়েরা তাদের কমবয়সি সন্তানদের ব্যাপারে কিংবা স্বামী-স্ত্রীরা তাদের পার্টনারকে তাদের অন্যান্য আত্মীয়বান্ধব হতে অবাধে বিশ্বাসের বদলে আরেকটু আগলে রাখতেন,

যদি

’ধর্ষিতা’

এই শব্দটি বাংলা অভিধান ও যাবতীয় প্রকাশনার পাতা হতে বিলুপ্ত হয়ে শুধু “ধর্ষক’ শব্দটিই বেঁচে থাকত,

যদি আমরা আমাদের কন্যাদিগকে শোকেসে সাজানো পুতুলের মতো জড়ভরত না করে রেখে আরেকটু মারদাঙ্গা করে বড় করার মতো সাহস সঞ্চার করতে পারতাম,
যদি একজন ধর্ষকের যেকোনো নোংরা প্রাথমিক এপ্রোচের মুখেই ভিকটিমকে লুকিয়ে না রেখে খোলাখুলি তখনি ধর্ষককে সামাজিক ধোলাই দেবার ব্যবস্থা হত,

যদি আমাদের সার্বিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার পরতে পরতে ধর্ষণকে প্রকারান্তরে নানাভাবে ধর্ষিত/ধর্ষিতার ব্যক্তিগত দায় হিসেবে চাপিয়ে না দেবার মতো ব্যবস্থা না থাকত,

যদি.............................আমাদের দেশমাতার প্রসবযন্ত্রণায় যে ২-৪ লক্ষ নারী নিজেদের সম্ভ্রমের আত্মদান করতে বাধ্য হয়েছেন-তাদের সম্ভ্রমহানিকারীদের বিচার হত আর এই অকৃতজ্ঞ দেশ যুদ্ধের পরে সেই বীরাঙ্গনা মায়েদের/বোনেদের সমস্ত মহিমা ভুলে তাদের ছেঁড়া কাগজের মতো ছুড়ে ফেলবার মতো অকৃতজ্ঞ না হত,

যদি
এদেশের সমস্ত বীরাঙ্গনার সম্মিলিত স্মৃতিতে একটি কালো সৌধ এই নিমকহারাম দেশ অন্তত নির্মাণ করত!!!

তবে,

তবেই আমার মতো দুর্বল চিত্তের মানুষগুলোকে আর কখনোই টিভি বা পত্রিকার সামনে বসে একজন ধর্ষিত/ধর্ষিতার ধর্ষণ পরবর্তি হাজারবার সম্ভ্রমহানি দেখতে হত না, একজন মা বা বোনের হৃদয়বিদারক অপমান পর্দায় দেখে অবোধ যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যেতে হত না, নিজেকে একজন মানুষ হিসেবে ভাবতে কখনোই আর কুঞ্চিত হতে হত না। যদি তা হত, তবে আর কখনোই একজন পূর্ণিমার মাকে উচ্চারন করতে হত না শতাব্দীর সেই কলঙ্কজনক বাক্যসমষ্টি, ”বাবারা, আমার মেয়েটা ছোট...........................................”।

ছিঃ ছিঃ ছি


(প্রথম পর্বের লিঙ্ক: Click This Link)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.