নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আক্রার বাজারে মধ্যবিত্তের সার্ভাইভাল ক্যারিকেচার

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫১

সারাবছর ক্যারিয়ার আর প্রোফেশন লইয়া নানাপ্রকারের তাবিজ তদবীর আর টিপস প্রদান করিতে করিতে অদ্য মনে হইল, চলমান অত্যন্ত ’সস্তা মূল্যদরের’ বাজারে টিকিয়া থাকিবার নিমিত্তে আমাদিগের মতো কতিপয় নিম্ন-মধ্যবিত্ত’র জন্য কতিপয় সারভাইভাল টিপস প্রদান করি।

আমার মতো যাহারা বাজার মূল্যের পাগলা ঘোড়াকে লাগাম পড়াইতে পারিতেছেন না, সংসারে ভদ্রোচীত প্রকারে টিকিয়া থাকিতে হিম ও শিম খাইতেছেন উহারা আমার সাথে নিম্নোক্ত কর্মকান্ডের মধ্য দিয়া কিছুকাল অন্তত নিজের ও নিজ নিজ ইশতিরি, কাচ্চা-বাচ্চার প্রাণ বাচাইবার চেষ্টা করিতে পারেন।

কারন জীবন যাত্রা (!)’র মান নামাইতে নামাইতে আর নামাইলে লজ্জাস্থান বাহির হইয়া পড়িবে, বিধায় ওই রাস্তায় হাঁটিবার আর গতি নাই। তাই বিকল্প ধান্দায় না নামিলে খাদ্য হিসেবে রাস্তার ট্যাপের পানি, বস্ত্র হিসাবে পলিথিন আর মাথার ছাদ হিসাবে ওয়াসার পাইপ অচিরেই আপন করিয়া লইতে হইবে।

যাই হউক, যাহা করিয়া বাঁচিবার চেষ্টা করিতে পারেন আমার মতো:

১.এই মঘাসিটির (আগে যাহা মেগাসিটি ছিল) আঁধো আলো আঁধো আধার গলির ল্যাম্পপোষ্টের নিচে ঠোটে লিপোস্টিক মাখিয়া সন্ধ্যার পর সলজ্জ পায়চারি করিতে থাকুন। অর্থ দিয়া (লইয়া) যাইবার মতো প্রচুর দাতা হাতেম তাঈ পাইবেন।

যদি লিপোস্টিক খরিদ করিবার পয়সাও বাঁচাইতে চান তবে ৫ টাকা দিয়া বাকিতে একখানা পান চিবান ওষ্ঠ রঞ্জিত করিতে। খরিদ্দার পাইলে উহার হইতে ৫ টাকা আগাম লইয়া পানের দাম পরিশোধ করিতে ভুলিবেন না। কারন উনিও হয়তো সদ্যই চাকরীর পয়সায় কুলাইতে না পারিয়া আপনারই মতো পার্টটাইম পানের দোকানদার হইয়াছেন।

২. ঝাল মুড়ি খুব বিকাইতেছে শহরে। নিজের ছোডো পোলারে (স্কুল ছাড়াইয়া) হেলপার বানাইয়া সন্ধ্যার পর পার্টটাইম বেঁচিতে পারেন।

৩.এত কষ্টের মধ্যেও বাদর নাচ দেখিবার মতো প্রচুর আলগা টাকাওয়ালা দর্শক ঢাকা ও সিলেটে আছে।

(এই ভয়ানক দুর্মূল্যের বাজারে বিপিএল বিলাসিতা তো বাঁদর নাচই, তাই না?)। তাই বেটা-বেটি শুক্রবারে বাঁদর নাচের শো করিতে পারেন। আমাকে ডুগডুগী বাজাইতে সহকারী লইতে পারেন। মধ্যিখান হইতে আমারও কিঞ্চিৎ অন্নবস্ত্রের সংস্থান হইল।

৪.এত টিপস দরকার নাই। বাসায় নিদেনপক্ষে একটা কাপড়ের ঝোলা তো রহিয়াছেই। উহাকে আরেকটু ছিড়িয়া খুড়িয়া লইয়া জুম্মাবারে মসজিদের গেটে বসিলেই হইবে। ‘আত্মমর্যাদা’ নামক বুলশীট যদি কিঞ্চিৎ পিড়ন করিতে চাহে তবে মুখে খানিক কালিঝুলি মাখিয়া লউন।

মিনসেরা! ঢাকায় তো আবার চুলার কালি নাই। তাই রাস্তায় থালা হাতে দুইচারবার গড়াগড়ি দিলে কালির ঝামেলায়ও যাইতে হইবে না।

৫.বাসায় গিন্নীর তরকারী কাটিবার ছুড়ি নিশ্চই একখানা রহিয়াছে? ওখানা রান্নাঘর হইতে লইয়া রাত্রি কিছুটা ঘন হইলে চোরাগলির আঁধারে দাড়াইয়া থাকুন। আপনারই মতো বহু নয়া ধান্দাবাজই রাত করিয়া ওই পথে গামছায় বাঁধিয়া পরিবারের ক্ষুধার অন্ন লইয়া ফিরিবে। ‍উহাকে অকুন্ঠ চিত্তে লুটিয়া লউন।

বিবেকবোধের কথা কহিলেন? হাহ! বাঁচিয়া থাকা একটা যুদ্ধ এখন। যুদ্ধে কোনোকিছুই নাকি হারাম না।

৬.বাজারের পয়সা বাঁচাইতে রাত গভীরে কারওয়ান বাজারে আসিয়া পড়ুন। পাইকারদের গোলদারী দোকানের সওদা উঠানামা করিবার ছলে নিত্য লেবাররা আনাজ তরকারী নানাপ্রকারে রাস্তায় ফেলিয়া দেয়। উহাকে সস্নেহে ছোট ছোট অর্বাচীন বালকদের হাত হইতে কাড়িয়া লউন যাহারা ওই একই উদ্দেশ্যে ওখানে গমন করিয়াছেন।

৭.বাস ভাড়া বাঁচাইতে গন্তব্যে (হয়তো মিরপুর) রওনা হইয়া পরের দুই’এক স্টপেজ আসিলেই ”এই বাস উত্তরা যাইবে না?”
শশব্যাস্তে এই ভান করিতে করিতে হেলপারকে বকিতে বকিতে নামিয়া পড়ুুুন। আবার একটু পরে একইভাবে বাস বদল করুন। মোটামুটি ৩/৪খানা বাস বদল করিয়া বাসায় ফিরিতে পারিবেনই।

৮.মোবাইল বিল বাঁচাইতে ঘন ঘন মোবাইলের চার্জ ফুরাইয়া যাইতে দিন ও অন্যের মোবাইলে জরুরী কল করিতে শিখুন।

৯.তরকারীর খোসা, চাল ধোয়া পানি, ভাতের মাড়, পণ্যের মোড়ক, দোকানে সিঙারার সাথে দেয়া সস, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ কিছুই ফেলিবেন না। বগলদাবা করিয়া লইয়া আসুন। ম্যাচের কাঠি বাঁচাইতে চাহিলে ‘বাজার’ কথাটি লিখিয়া চুলার মধ্যে ধরুন। বাজারের উত্তাপে চুলা জ্বলিয়া উঠিবে। সবকিছু হইতে পয়সা বাঁচাইতে শিখুন।

১০.সামান্য ১০-১৫ হাজার টাকা মাহিনাতে এই যুগেও মানুষ হইয়া বাঁচিতে পারে-এমন বিদ্যাবান ‘মানব চিড়িয়া’কে দেখিতে ভীড় আশা করা যায়। তাই শুককুর বারে নিজেকে একখানা খাঁচায় আবদ্ধ করিয়া দর্শনীর বিনিময়ে প্রদর্শন করিয়া অর্থ হাতাইতে পারেন।

১১.বহুকাল দেখা হয়না এমন আত্মীয়স্বজনকে বেশি বেশি দেখিতে যান। দীর্ঘক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করিয়া লাঞ্চ বা ডিনারটা সারিয়া আসুন। তবে বেশি ভদ্রতা প্রদর্শন করিতে গিয়া আবার হাতে করিয়া কিছু লইয়া যাইবেন না।

১২.বন্ধুবান্ধবের সহিত রাস্তায় দেখা হইলে “বন্ধু একটা জরুরী কাজ আছে” বলিয়া কাটিয়া পড়ুন। ভুলেও চা অফার করিবেন না।

১৩.বাসার ডিসের লাইন ছাড়িয়া ৩০০ টাকা বাঁচান। রাস্তার টিভির দোকানের সামনে দাড়াইয়া টিভি দেখিয়া লউন। বউকেও দেখাইয়া আনুন।

১৪.বাচ্চাকে ভাল স্কুল ছাড়াইয়া ফ্রি নৈশ স্কুলে পড়ান। পয়সাও বাঁচিবে মাসকাবারী ১০ হাজার টাকা। পাশাপাশি উহাদের সাম্যবাদেরও শিক্ষা হইবে।

১৫.শীতের সবজি কিনিতে বেশি মন চাহিলে আমাদের উত্তরা এক্সটেনশনে সপ্তাহে একবার আসুন। কাঁশবন ও বেড়িবাধের দুইধারে প্রচুর বুনো ধুন্দল হইয়া পঁচিতেছে। বস্তায় ভরিয়া নিয়া যান। আত্মীয় বন্ধুদেরও দিন।

১৬.সিনেমা হলে প্রচুর ছারপোকা। কেন যাইবেন? ২৫০ টাকা করিয়া পরিবারের ৪ জনের ১ হাজার টাকা বাঁচান। অফিসের ফ্রি ওয়াইফাই হইতে মুভির পাইরেট কপি ডাউনলোড করিয়া আনুন। বাসায় বসিয়া আরাম করিয়া দেখুন। তবে ভুলে আবার ঘরের লাইট জ্বালাইয়া দেখিবেন না। বিদ্যুৎ বিল কিন্তু প্রচুর।

১৭.আক্রার বাজারে যাতে পরিবারের জনসংখ্যা ভুলেও বাড়িতে না পারে তার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
বিবিজানের যদি আক্ষেপ থাকে কিংবা আপনার ব্যাবা-ম্যা, ওঁয়া ওঁয়া ডাক শুনিতে খুব মন চাহে তবে মিয়া বিবি মিলিয়া দু’জনে দু’জনকে অভিনেতা বানাইয়া পালাক্রমে বাচ্চার ভূমিকায় অভিনয় করুন।

বিনোদনও মিলিবে, আক্ষেপও কমিবে।

তাহার পরও যদি রাত বিরাতে যৌবন বাঁধ মানিতে না চাহে তবে তখনি একবার চক্ষু মুদিয়া “ডায়াপারের প্যাকেট ১৫০০ টাকা” ভাবুন। হঠাৎ গরমের পরিবর্তে ঠান্ডা লাগিতে শুরু করিবে।

১৮.অর্থকষ্টে বহুকাল আগেই হয়তো রিক্সার পরিবর্তে লোকাল বাসে অফিস গমন করিতেছেন। আপনি কী মূর্খ?
আজ হইতে ট্যাক্সির পিছন পিছন দৌড়িতে দৌড়িতে অফিস যান।

প্রায় ৩০০+৩০০ টাকা রোজ বাঁচিবে।

১৯.একটু বেশি রাত করিয়া অফিস হইতে ফিরিলে সন্ধার পরে যে নাস্তা অফিস দিবে উহা খাইয়া বা ব্যাগে লইয়া বাসায় ফিরিলে একজন বা দেড়জনের ডিনারের খরচ বাঁচাইতে পারিবেন।

২০.সবচেয়ে মোক্ষম একটা উপায় বলি।
মোবাইলে ব্লু হোয়েল গেম ইনস্টল করিয়া খেলিতে থাকুন। যাহা করিবার, তিনিই করিয়া দিবেন।

(পুনশ্চ: কে বা কাহাদের বিপক্ষে বা সপক্ষে নহে। আমি অক্ষমের মনে মনে সাজানো সারভাইভাল প্ল্যান শেয়ার করিলাম। পৃথিবীর কাহারো বিরুদ্ধে আমার বিন্দুমাত্র অনুযোগ বা ক্ষোভ নাই।

যাহা ক্ষোভ সব বিধাতার চরনে। তিনি পেটখানা যদি দিয়া থাকেন তবে কেন তাহা যথেষ্ট প্রকারে ভরিবার মতো সংস্থান করিয়া দেন না আমার মতো হতভাগাকে?

প্রাণে বাঁচিয়া থাকিবার খরচ যোগাইতে হিম ও শীম খাইয়া ইদানীং সত্যিই ইচ্ছা করিতেছে,
হঠাৎ একদিন অফিসে যাইবার নাম করিয়া হারাইয়া যাই।
শুধু সাথের বৈষ্ণবীটার লাগিয়া পারি না।

কিন্তু আরতো চালাইতেও পারিতেছি না।)

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


বেশী লম্বা হয়ে গেছে, সনক্ষিপ্ত করুন

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৪

বেচারা বলেছেন: হুম। তা একটু হয়েছে।

২| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২০

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: বাঁচিয়া থাকা একটা যুদ্ধ এখন। যুদ্ধে কোনোকিছুই নাকি হারাম না। কথা সইত্য।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৫

বেচারা বলেছেন: বেঁচে থাকা শুধু যুদ্ধ না, বেঁচে থাকা একটা মিরাকলও।

৩| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৫

সুমন কর বলেছেন: মজা করে লিখলেও, কথাগুলো নির্মম !!
+।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৫

বেচারা বলেছেন: কতটা নির্মম সেটা লেখায় না ফুটলেও বাস্তবে তার ঝাঁঝ ঠিকই টের পাওয়া যায়।

৪| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫৫

ধুরন্ধর বলেছেন: :P =p~ =p~

৫| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩১

আহমেদ জী এস বলেছেন: বেচারা ,




আহ..হারেএএএএএ ........... আপনে বেচারার জইন্যো কসটো হইতাছে । এত্তোগুলা ক্যারিকেচার কইর্রা আপনেরে বাঁচতে হইতেছে !!!!!! :( ২০ টা ক্যারিকেচার দেহাইছেন ! এহোন ১টা ক্যারিকেচারে বাজী মাৎ করেন ---- রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরে গিয়া নাম রেজিষ্ট্রি করেন । বৈষ্ণবী তো আছেই লগে । রেজিষ্ট্রিতে ঝামেলা হইবেনা । ;) জিন্দেগী ভর সার্ভাইভাল কনফার্ম ..... :)

( স্যাটায়ার হলেও এই বাজারের যে হালচাল তুলে ধরলেন তা বাস্তবেরই নিঠুর ছবি । )

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৬

বেচারা বলেছেন: রোহিঙ্গা দলেও তো নিবে না। নাক বোঁচা না যে!

৬| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:১৮

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: মজা পেয়েছি পড়ে কিন্তু যা লিখছেন ঘটনা সত্য।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৭

বেচারা বলেছেন: ঘটনা সত্য না শুধু। কঠিন সত্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.