নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন চাকরীজীবির আটপৌড়ে দিনকাল

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৩

বহু বহুকাল পরে কর্ম হতে ছুটি নিয়েছি। সন্ধ্যাবেলায় আধশোয়া হয়ে তারাপদ রায়ের ’দারিদ্র রেখা’ আবৃত্তি শুনছি কামরুল হাসান মঞ্জুর ভরাট কন্ঠে। দারিদ্র নিয়ে কী অমানুষিক আবেগের ছন্দগাঁথা আর আবৃত্তি।
দারিদ্র রেখা-তারাপদ রায়
হঠাৎ করে মনে পড়ল নিজেরই কথা। মনে পড়ল অসমাপ্ত একটা গল্প শেষ করার কথা। আজ ৪ বছর পরে সমাপ্ত করার আহবান জাগলো মনে।

-----------------ছোটবেলায় একটা কবিতা আমরা নিজেরা মুখে মুখে আউড়াতাম-

আছে ফল গাছে নাই,
খাই ফল দেশে নাই।

এমনই এক ফেনোমেনা-চাকরীজীবির জীবন।

”নিজেকে অনেকবার প্রশ্ন করেছি-আমি কেন কোনো চাকুরী করি?

অনেকের অনেক কারন থাকতে পারে। আমার একটাই কারন। জীবিকা নির্বাহ অর্থাৎ জীবনকে চালিয়ে নেয়া। এই জীবনকে চালিয়ে নিতে সারাদিনের ১০-১৩ ঘন্টা সময় ব্যায় হয়। এরপর বাসায় ফেরা। বাসায় এলেও অফিসে আসা ও যাওয়ার প্রস্তুতিতে আরো অন্তত ২-৩ ঘন্টা ব্যয় হয়। ঘুমানোর জন্য ৫-৬ ঘন্টা, খাওয়া, ইউটিলিটি, সংসারের কাজ, সামাজিকতা এসবে সময় যায়।

আমি মাঝে মাঝে ভাবি আমার সময়টুকু কই? ’আমাদের নয়, আমার’?

আমরা যারা টোনাটুনির সংসার (এক্কা-দোক্কাও বলতে পারেন) তাদের জন্য একটা চরম সমস্যা হল সঙ্গ। স্বামী বেচারা সারাদিন অফিসে। বউ এরা সারাদিন অপেক্ষায় থাকা স্বামীর ফেরার অপেক্ষায়। আমার বউ সারাদিন চাতকের মতো থাকে, কখন বাসায় ফিরব। বেচারীকে সময় দিতে পারি না। ওইযে বলছিলাম জীবনকে চালিয়ে নেয়া”-এর পিছনে এতটা সময় যায় যে, জীবনকে দেয়ার মতো সময় আর পাচ্ছিনা। লেখাটা আরো গুছিয়ে লিখব-কোনো একদিন............”

--------উপরের ভাবনাটুকু আজ হতে ৪ বছর আগের যখন লেখালেখিটা মোটামুটি নেশায় দাড়িয়েছে। ৪ বছর আগে বলেছিলাম, সময় হলে একদিন বিস্তারিত লিখব। আজ ৪ বছর পরে হল সেই সময়।

আপনি যদি জানেন যে আপনি একটা অজানা জীবনকে যাপন করছেন এবং অজানা লক্ষ্য’র দিকে জীবনকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাহলে কেমন কাটবে আপনার দৈনন্দিন জীবন?

আমরা মানুষেরা লক্ষ্য বলতে কি বোঝাই?
একটা বাড়ি?
২ কামরার খুপড়ি ফ্ল্যাট?
১টি ছেলে ১টি মেয়ে সন্তান, তাদের নাম করা স্কুলে পড়াশোনা, গোল্ডেন জি পি এ?
জমানো এক গাদা অসুখী টাকা যা দিয়ে শেষ বয়সে উপভোগ অযোগ্য কিংবা জোরপূর্বক উপভোগ্য প্রকৃতি ভ্রমন?

সারাটি জীবনে আমরা কি নিজেকে কখনো একটু উঁকি মেরে দেখার সুযোগ পাই? অন্তত ”আমি কী চাই” তার খোজ নেবার সময়টুকু কি পাঁচ ছয় দশকের জীবনে পাই?

অনেক দিন ধরেই একটা প্রশ্নের পোঁকা চিন্তাকে ব্যস্ত রাখছে-” আমি কি চাই”? আমি আমার জীবনকে কেমন দেখতে চাই?

আমার ছোটবেলায় বিটিভিতে অয়োময় নামে হুমায়ুন আহমেদের একটা নাটক হত। মির্জা আসাদুজ্জামান নূর) নামে প্রবল প্রতাপশালী জমিদার নায়ক। তার স্ত্রী ছিলেন এলাচি (সারা জাকের)। মির্জা ছোট বেগম এলাচিকে খুব ভালবাসতেন। তো এলাচি একবার মির্জাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
“আপনি আমাকে একটা সত্যি কথা বলবেন?”
মির্জার অভয় পেয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “সত্যি করে বলুনতো, আপনার যিনি পাখা টানেন মতি, ও কি আপনার আপন ভাই?”

মির্জা অনেকক্ষণ গুম হয়ে থাকলেন। তারপর বললেন,

“আমার বাপের আমলে মির্জাদের অনেক স্ত্রী থাকত। পাশাপাশি তাদের বান্দি থাকত যাদের তারা স্ত্রীর মতো ব্যবহার করতেন। কিন্তু তারা বেগমের মর্যাদা পেতেন না। বাঁদি পরিচয়ে থাকতেন। বেগমদের ঔরসে সন্তান হলে তাদের বলা হত হেরেম তরফের সন্তান। তারাই পরে যুবরাজ, মন্ত্রী ইত্যাদি হতেন। আর বাঁদীদের গর্ভে সন্তান হলে তাদের বলা হত বান্দি তরফের সন্তান। তারা হত নিচু জাত। জমিদারের সন্তান হলেও তাদের মর্যাদা হত বাঁদীর সন্তানের মতো। তারা কখনো উঁচু কাজ/পদ পেতনা। মতি আমার ভাই, তবে বান্দি তরফের ভাই।”

গাঁও গেরাম হতে শহরে এসে কোনোমতে হাঁচড়ে পাঁচড়ে আমরা কিছু বঙ্গ সন্তান ঢাকার বুকে একটু মাথাগুজে ঢাকাইয়া হয়েছি ঠিকই তবে আমাদের অবস্থা আজও সেই বান্দি তরফের সন্তানের মতোই। আমরা মির্জা সন্তান তবে বান্দি তরফের। দুবেলা দু’মুঠো ভাত আর মোটা কাপড়ের জামা, সাথে একজোড়া লুঙ্গি জোগাড়ের জন্য যুঝি নিজের সাথে নিজে। মাঝে মধ্যে খুব জীর্ন লাগে।

চাকরীজীবিদের জীবনে উন্নতি হল ইয়াজুজ মাজুজের দেয়াল চাটার মতো। বুজুর্গদের কাছে শুনেছি ইয়াজুজ মাজুজ নামে দুই ভাই ও দুষ্ট দৈত্যাকার প্রাণীকে জূলকারনাইন নামক একজন পূন্যবান ও বীর ব্যক্তি একটি লৌহ নির্মিত ঘরে বন্দী করে রাখেন যাতে তারা মানুষের ক্ষতি করতে না পারে। ওই দুই ভাই সারাদিন ধরে ওই ঘরের দেয়ার চেঁটে পাতলা করে ফেলে। সন্ধ্যা নাগাদ দেয়াল প্রায় পাতলা হয়ে ফোঁকড় হয়ে যায় যায়। ওরা তখন ভাবে, দেয়াল তো প্রায় ভেঙে ফেললাম। কাল সকালে উঠে বাকিটা চেটে খেয়ে বেড়িয়ে যাব বন্দীদশা হতে।

তো তারা ঘুমায়। সকালে উঠে দেখে দেয়াল আবার আগের জায়গায় ফিরে গেছে। এমনি করে শত শত বছর ওরা ওই কাজই রিপীট করে যাচ্ছে। আমাদের ভাগ্যোন্নয়নের অবস্থাও ওইরকম।

সারাবছর একটার পর একটা পিছুটান লেগেই থাকে। একটা এলে ভাবি, এবার হাঁচড়ে পাঁচড়ে উঠে পড়ব। এরপর বোধহয় ভাগ্য খুলবে। কিন্তু পরিণতি ওই ইয়াজুজ মাজুজের মতো।

কাকে যেন একবার বলেছিলাম, জব ও কর্পোরেট আপনাকে এমন একটা ইনকাম লেভেলে রাখবে যেটা দিয়ে আপনি মোটামুটি একটা আরামদায়ক ও নিশ্চিন্ত জীবনের মতো যাপন করতে পারবেন। যেটার লোভ উপেক্ষা করে আপনি জব ছেড়ে সাহসী কিছু করার কথা ভাববার সাহস করে উঠতে পারবেন না। আবার আপনাকে এতটা বেশিও দেবে না, যেটা দিয়ে আপনি পয়সা জমিয়ে কিছুদিন পরে ওই জব ছেড়ে নিশ্চিন্তে জীবন কাটাতে পারবেন।

বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টরে একটা মীথ প্রচলিত আছে। তা হল-

’চাকরী কচুপাতার পানি,
বিয়ানে মধু, বিয়ালে হানি (পানি)।’

”দারিদ্র রেখা”-তারাপদ রায়। শুনবেন সময় করে।

ছবিয়াল: নিজে হস্তে, সস্তা মোবাইল ক্যামেরায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.