নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী-পুরুষের প্রেমের রসায়ন: চিরবৈরিতার মাঝে বন্ধূতা

০৮ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩০

[রিপোস্ট]
পৃথিবীতে একটা জিনিস নেই সবাই জানে কিন্তু সবাই এই অস্তিত্বহীন জিনিসটিকে ভয় পায়। সেটা কী বলতে পারেন? ভূত। আপনি যাকেই জিজ্ঞেস করবেন, সে বলবে ভূত বলে কিছু নেই। আবার তাকেই বলেন, ভূত ভয় পান? তিনি বলবেন, পাই। যদি বলে পাই না, তবে তাকে একা একা ভুতের বাড়িতে রাত কাটাতে বলুন, পারবে না।

যাহোক ভূতের কাহিনী আমার টার্গেট না।

এটা দিয়ে শুরু করলাম কারন মূল বিষয়টিও এমনি এক সত্যকে নিয়ে। আপনি যদি যেকোনো পুরুষ মানুষ বা নারীকে নারী-পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব, সোস্যাল ক্লাস, সুপিরিয়রিটি, ডোমিনেশন পাওয়ার, অধিকার, স্বাধীনতা, কর্তৃত্ব, নারী/পুরুষ নির্যাতন এসব নিয়ে প্রশ্ন করেন তবে কমোন উত্তর পাবেন দুই রকম:-

হয় বলবে, না, তিনি এসবের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না। সবাই সমান। অথবা বলবেন, তিনি মনে করেন, তিনি নিজে ওগুলোর সবকটার ক্ষেত্রে ইনফেরিয়র মানে অত্যাচারিত বা শোষিত।

কিন্তু ওই ভূতের অস্তিত্বের মতোই, তার বিপরীত পক্ষ বলবে,নাহ, বরং তিনি নিজে অত্যাচারিত। নারী-পুরূষের শ্রেষ্ঠত্ব আর শোষক/শোষিত বিতর্ক বোধহয় জগতের সবচেয়ে দীর্ঘ ও একঘেয়ে বিতর্কের অন্যতম যা সবচেয়ে পুরোনো অসমাপ্ত বিতর্কও বটে। একদল নারীপুরুষকে সবসময় দেখবেন, ফেসবুকে, ব্লগে, সমাজে, মিডিয়ায়, পরিবারে, রাস্তায়, আড্ডায় যখনি কথা বলেন, তার বিপরীত লিঙ্গের মানুষটির প্রতি ক্ষোভ, হতাশা আর অনুযোগ ঝেড়ে থাকেন। বিবাহিত জীবন নিয়ে প্রচুর হাপিত্যেষ করেন।

পুরুষ হলে তার অভিযোগ: বউ ডোমিনেট করে,
স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে,
ব্যাক্তিত্ব বলে কিছু থাকে না,
বেশি বেশি অপচয় করে, মা-বাপকে দেখে না,
কারো সাথে মিশতে দেয় না, বন্ধুদের কাছে ঘেষতে দেয়না,
মেয়েদের সাথে মেশার ব্যাপারে চিল দৃষ্টি রাখে, সারাক্ষন ঘ্যান ঘ্যান করে,
প্রচুর বকবক করে, সন্দেহপ্রবন, শাড়িচুড়ি সর্বস্ব,
সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি।

আবার স্ত্রী হলে তার বিপরীত অভিযোগ:
সময় দেয়না, বাজে আড্ডা দেয়, শপিং এ যায়না, নির্যাতন করে,
গায়ে হাত তোলে, যৌতুক চায়, বন্ধুদের সাথে মিশতে দেয়না, সন্দেহপ্রবন,
অগোছালো, সিগারেট খায়, মায়ের কথামতো চলে,
নারী লোভী, বাসায় সময় দেয়না, সারাক্ষন মোবাইল নিয়ে থাকে ইত্যাদি ইত্যাদি।

তো এত অভিযোগের পরেও একটা জিনিস ওই ভূতের গপ্পের মতোই কমোন-তা হল, পরষ্পরের বিরুদ্ধে এত অভিযোগের পরও নারী ও পুরুষ কিন্তু বিয়ে করে সংসার পাতার কাজটি হতে বিরত নেই। তাহলে এই অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের কারন কী? ফ্রাস্ট্রেশন, আশাভঙ্গ, এবসেন্স অব র‌্যাশনাল থট ও নন-কম্প্রোমাইজিং এটিচুড হল এই মনোঃস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের প্রধান উৎস। একা থাকার জীবন ও দোকা হবার জীবনের মধ্যে কোনো পার্থক্য টানতে না পারাটাও এই বিরোধের অন্যতম কারন।

কিছু পুরুষ বা মহিলা গর্বের সাথে এটা ভাবতে পছন্দ করেন যে, ”আমি এমনই”। নো, আপনি হয়তো “এমনই” কিন্তু আপনার পার্টনার তো ”এমনই” না।
আর আপনি যদি বিয়ের পরও “এমনই” থাকতে চান, তবে কেন অযথা আরেকজন “এমনই”র সাথে জীবন জড়ালেন? একা থেকে এই “এমনই”টাকে কেন এনজয় করলেন না?
প্রশ্ন করবেন, “তো কী করব, ব্যক্তিত্ব বলে কিছু থাকবেনা? সব ওর মন মতো করব?” না, “এমনই’ নামক ইগোর বিপরীত শব্দ ব্যক্তিত্বহীনতা নয়। ব্যক্তিত্বহীনতা কোনো সমাধান নয়। আবার ইগোও কোনো ভাল কথা নয়।

তাহলে কী করবেন?

“কম্প্রোমাইজ”। কম্প্রোমাইজ মানে হেরে যাওয়া নয়, আত্মসম্মান বিসর্জন দেয়া নয়। কম্প্রোমাইজ মানে প্রবলেম/ডিসপিউট মিনিমাইজ করা, মিউচুয়াল বা সমঝোতা করা। আমার সাদা চোখে যেটা মনে হয়, স্বামী ও স্ত্রী যেহেতু নিজেদের কঠোর ব্যক্তিস্বাধীনতাকে তুচ্ছ করে বিবাহিত যৌথ জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েই দাম্পত্যে প্রবেশ করেন, সেহেতু বিয়ের আগের সেই অমোঘ ব্যক্তিত্ব’র বাঁধন একটু আলগা করে সেটাকে সমঝোতা আর অন্যজনকে বোঝার মেন্টালিটি নিয়ে ডিল করলে সমস্যা ৯৯% কমে যায়।

সমস্যা হল, আমরা ওটা করতে চাই না। পুরুষ মনে করে, আমি স্ত্রীর কাছে ছোট হব না। “আমি পুরুষ না?” স্ত্রী মনে করে, “আমিই বা কম কিসে? পদে পদে ওর কাছে ছোট হব কেন?” স্বামী বা স্ত্রীর কাছে বড় হওয়া বা ছোট হওয়ার কোনো অস্তিত্বই তো আমি দেখি না। স্বামী বা স্ত্রী হলেন আপনার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘতম সময়ের স্থায়ী সঙ্গী। তার সাথে জীবন চালাতে গিয়ে যদি এটা ভাবতে হয়, বড় হলাম, না ছোট, লাভ হল না ক্ষতি-তো তাহলে সমস্যার গোড়াটা অন্যস্থানে। আপনি তাহলে জীবনসঙ্গীর জন্য বিয়ে করেননি।
করেছেন ”অন্য” কোনো স্বার্থে।
হতে পারে সেটা শরীর, হতে পারে অর্থ, হতে পারে বাধ্য হওয়া কিংবা এই বিয়ের কারন হতে পারে ফেঁসে যাওয়া। বিধায় এই অস্থিরতা। ইদানিং অনলাইনে আইপি ক্যামেরা নামক একটা অদ্ভূৎ স্পাই ক্যামেরার বিজ্ঞাপন দেখি যেটা দিয়ে আপনি অফিসে বসেই আপনার বউয়ের উপর খবরদারি করতে পারবেন যাতে সে কই যায়, কোথায় যায়, কে আসে না আসে-সব বাইরে বসে আপনি নজর রাখতে পারেন। আবার স্ত্রীরাও চাইলে স্বামীর অফিস ডেস্কের সামনে একটা লাগিয়ে রাখতে পারেন তাকে নজরে রাখতে।

একবার অফিসে আছি। বউ ফোন করেছে, “বাসায় চলে আসো, একা একা ভাল লাগছে না, সময় কাটছে না, বোর হচ্ছি। কী করব?” আমি বললাম, তোমার বন্ধুদের কাছে যাও, আড্ডা দিয়ে এসো কতক্ষণ। বউ আমাকে বলে, তুমি কেমন মানুষ, নিজে যেঁচে বউকে বল তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। আমি বললাম, কেন সমস্যা কী? তুমি কি তোমার বন্ধুদের সাথে (ছেলে বা মেয়ে যাই হোক) আড্ডা দিতে পারো না?
ও বলল, তোমার ইর্ষা হবে না? ভয় হবে না? আমি যদি বিপথে যাই? এই পর্যন্ত পড়ে যদি মনে করেন নিজের গুণকীর্তন করতে বসেছি তাহলে ভুল ভাববেন।
আমি বউকে বললাম, তুমি যদি তাদের সাথে আড্ডা দিতে থাকার পরও আমার সঙ্গেই আনন্দে থাক, তবে তো আমার দুঃশ্চিন্তিত হবার দরকারই নেই। আর যদি তাদের সাথে মিশে আমাকে ছেড়ে যাবার কুমতলব কখনো মনে চলে আসে (এত ভালবাসা আমার কাছে পেয়েও) তবে তো বুঝতে হবে তুমি আমার ছিলেই না কখনো। তো তুমি যদি আমারই না হও, তো তোমাকে ধরে রাখব কেন?
কেউ কেউ এই পর্যন্ত পড়ে আবার ভাবতে পারেন, ব্যাটা ন-পুরুষ, কাপুরুষ, স্ত্রৈণ ইত্যাদি। না ভাইসব, ওর কোনোটাই নই। আমি বিশ্বাস করি, যে চলে যাবার সে যাবেই। বুঝতে হবে সে আপনার ছিলই না। যে থাকার সে থাকবেই। শত তুফানেও সে আপনার কাছেই থাকবে। তাকে ধরে রাখার দরকার পড়বে না।

তাই নিজের মানুষকে তালাবদ্ধ করে বা শিকল দিয়ে ধরে রাখার চেষ্টার দরকার দেখি না। বিশ্বাস, ভালবাসা, ভরসা, সমঝোতা-এই ৪টি মন্ত্রই হল আলাদীনের চেরাগ। কাছে থাকার জন্য, ভাল থাকার জন্য, সাথে থাকতে, থাকাতে। নারী ও পুরুষের আজন্ম লালিত দু’টি সাইকী-নারী ভাবে “পুরুষ মানুষকে টাইট না রাখলে হাতছাড়া হয়ে যায়” আর পুরুষ ভাবে “বিড়াল প্রথম রাতেই মারতে হবে”।
আমাদের দেশে যেমন ছেলেরা বিয়েতে যৌতুক নেয়-এই কমোন অভিযোগ আছে, যৌতুকের প্রতি সার্বজনীন মেজরিটির ঘৃনা আছে (যদিও আবার মনে মনে ভাবি দিলে ক্ষতি কী), যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতনের ভুুড়ি ভুড়ি অভিযোগ আছে তেমনি এর একটি বিপরীত ছবিও আছে।
সেটা হল, দেনমোহর (যদিও সেটা মাত্র একটি বিশেষ ধর্ম গোষ্ঠীর)। আচ্ছা, আপনি যদি যৌতুককে না বলেন, তবে দেনমোহরকে কেন হ্যা বলছেন? দেনমোহরকে কি আপনার একরকম যৌতুক মনে হয় না? এই পর্যন্ত হয়তো আপনি আমাকে নারীবাদি ভেবে এসেছেন। এইমাত্র হয়তো সেটাতে চিড় ধরল। আপনি নারী হলে আমাকে বদলোক ভাবা শুরু করলেন। পুরুষ হলে আরো আনন্দ নিয়ে লেখাটা পড়া ধরলেন।

না ভাই/বোন, আরেকটু পড়ুন, তারপর আমার বিষয়ে ভাবুন।

১.যদি বলেন, দেনমোহর ধর্মীয় ও পারিবারিক আইনমতে স্ত্রীর পাওনা: ও আচ্ছা। তো আপনি আর কোন কোন ধর্মীয় আইন সুন্দরমতো মানেন যে এটার প্রতি এত বাধ্যগত হলেন?
২.যদি বলেন, নারীর নিরাপত্তার কবচ এই মোহর তবে বলব, স্বামী কি তার নিরাপত্তার জন্য কোনো কবচ চেয়েছেন আপনার কাছ হতে? আর যদি লাভ ম্যারেজ হয়, তবে দীর্ঘকাল যার সাথে ভালবাসাবাসি করলেন, তার সাথে বিলীন হলেন, তার হাতে সবকিছু সঁপে দিলেন, যখন কোনো সামাজিক স্বীকৃতিও ছিলনা, তাকে এই ১২ বছর প্রেমের পর যেই বিয়ে করবেন তখনি নিরাপত্তা দরকার হল? যেদিন বিয়ে ব্যতিত তাকে শরীর সঁপে দিয়েছিলেন সেই প্রথম শিহরনের দিনেও নিরাপত্তা লাগেনি, লাগল আজ সেই সম্পর্ক আনুষ্ঠানিক রূপ আর সামাজিক স্বীকৃতি পাবার পরে? স্টূপিডিটি মনে হচ্ছে না?
৩.যদি বলেন, দেনমোহর সামাজিক সংস্কৃতি, এটা যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে, এমন করেই বিয়ে হয়, তবে আমি বলব, ভাই/বোন, সামাজিক রীতিকেই যদি আপনি এত সমর্থন করেন, তবে সেই সমাজেই যদি আবার যৌতুক যুগ যুগ ধরে চলে এসে থাকে তবে সেটাও তো আপনার সম্মান করতে হবে তাই না?
৪.যদি বলেন, নবীজি দেনমোহর দিয়েছেন, সেজন্য আপনিও সেটা মানেন: আমি ধর্মে গভীরভাবে বিশ্বাস করি। নবীজি কত মোহর দিয়েছেন সেটাও ফলো করুন। সেটার বেশি নয়। ১০ লক্ষ/৫০ লক্ষ/১ কোটিতো অবশ্যই নয়। আপনি জানেন কিনা জানিনা, নবীজির কোনো এক বিবাহের মোহর ছিল সামান্য কয়েকমুঠো খেজুর বা কয়েকটা ভেড়া বা একটা জামা (রূপক অর্থে বললাম। বুজুর্গরা ঠিকঠাক বলতে পারবেন)। যারা ঘনঘন নবীজি (সাঃ)এর কাজকে রেফারেন্স হিসেবে হাজির করেন, তারা দয়া করে তার পুরো জীবনের সব অভ্যাসকে হুবহু মানুন। সুবিধা মতো শুধু নিজের স্বার্থে যা লাগবে সেগুলো করবেন-সেটা ভন্ডামী।
৫.যদি বলেন স্বামীদের চাপে রাখার জন্য যাতে বেয়ারা না হয় বা তালাকের কথা না ভাবে তাই মোহর: তবে তো বেহেনজী আপনি বিয়ের আগেই জামাইকে ব্লাকমেইলের ধান্দা করছেন। বিয়েটাতো আপনার কাছে তাহলে একটা স্রেফ ডিল। তবে হ্যা, স্বামীদের বলব, আপনি যদি পুরুষ মানুষ হন আর তারপরও শশুরের পয়সায় নিজের ঘরের আসবাবপত্র কিনতে চান, তবে বাদ দিন বিয়ে। একটা ম্যানিকিন কিনে ঘরে রেখে দিন। পারলে নিজের পয়সায় সব করুন। আর না পারলে শূন্য ঘরে, সাদাসিদাভাবে নিজের জীবনসঙ্গিকে নিয়ে স্বর্গের নীড় রচনা করুন। মনে প্রেম আনুন। তাতে বাকি সব অভাব, অপূর্ণতা পূরন হয়ে যাবে।

স্ত্রীগণ: যদি স্বামী পাবার জন্য বিয়ে করেন, যদি সামাজিক জীব হবার জন্য বিয়ে করেন, যদি জীবনসঙ্গী পেতেই বিয়ে করেন, তবে দেন মোহরের মতো বিষয়ের পিছনে পড়ার দরকার নেই। শুধু স্বামীকেই বিয়ে করুন। তার টাকা, তার প্রতিপত্তি, তার বাধ্যতা, তার নিরুপায় অবস্থাকে না।

আবার এর বিপরীতে মেয়েদের বাস্তবতাটাকে দেখুন। অনেক পুরুষ অভিযোগ করেন, বউ সারাক্ষন বাসায় ফেরানোর জন্য ঘ্যানর ঘ্যানর করে। বন্ধূদের সাথে আড্ডা দেব সেই উপায় নেই। কেন, আমার বন্ধুবান্ধবকে কি বউয়ের জন্য ছাড়ব? বিষয়টাকে এভাবে না দেখে অন্যভাবে দেখুন না। ভাইজান, বিয়ের আগে তো বছর দশেক বন্ধুবান্ধব নিয়ে থাকলেন। তারা থাকা স্বত্বেও তো বিয়ে করে একজন নতুন বন্ধুকে ঘরে আনলেন। এবার পুরোনো বন্ধুদের সময় হতে ঘরের বন্ধুকে একটু সময় বরাদ্দ করুন না। আর ঘরের আপনিও বিষয়টাকে ভাগ করে নিন না? ভাবুনতো, আপনি যখন ছিলেন না, তখন এই বন্ধুরাইতো আপনার পতিকে সঙ্গ দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন বছরের পর বছর। আপনার অনুপস্থিতিতে তারাইতো আপনার আজকের স্বামীধনকে বিপদে আপদে আগলেছে। আজ যেই আপনি এলেন অমনি সবাইকে ছেড়ে যদি সে বিদায় নেয়, তবে তাকে সমাজে যে ”বউয়ের চাকর” বলে পঁচানো হবে সেটাকি তিনি সহজে মানতে পারবেন?

সবচেয়ে ভাল হয় কি জানেন? দু’জনেই ওদের বন্ধু হয়ে যান। এরপর সপ্তাহের কিছুদিন নিজেদের নিয়ে থাকুন। কয়েকটা দিন দু’জনেই একত্রে ওদের আড্ডায় যান। ওদের ফেসবুক গ্রূপের মেম্বার হোন। হ্যা, এখানে বাকি বন্ধু সার্কেলকে একটা ভাল কাজ করতে হবে। আপনাদের সব আড্ডা, সব ফোরামকে একজন গৃহলক্ষী নারীর জন্য পরিচ্ছন্ন ও ভদ্রোচীত রাখতে হবে যাতে একজন নারী সেটাতে বিচরন করতে লজ্জায় না পড়েন, তার স্বামীও তার স্ত্রীকে সেটাতে আনতে সংকোচ বা চোরামী বোধ না করেন। বউ প্রচুর শপিং করে-এমন তুচ্ছ বিষয় নিয়েও স্বামীদের স্বপক্ষে যত্রতত্র ফালতু ট্রল, কৌতুক কম নেই। তো ভাই, আপনি একজন নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করেছেন, রোবটকেতো না। আপনি কি চান তিনি একটা জড় পদার্থের মতো আপনার নিজস্ব পুরুষালী এপ্রোচের ফলোয়ার হবেন? আপনি কেনাকাটার মতো ফালতু কাজে খরচ করতে না চাইলেও নারীকে বিধাতা আপনার বিপরীত করে বানিয়েছেন। তাহলে একজন নারীকে কেন বিয়ে করলেন? পুরুষকেই করতেন?

আপনি একজন নারীকে বিয়ে করবেন অথচ তার কাছে পুরুষের মতো দৃষ্টিভঙ্গি আর সাইকোলজিক্যাল ট্রেইট আশা করবেন-সেটাতো ঠিক না। জানেন কি? বৈদিক যুগের বিজ্ঞরা নারীকে সুখী রাখার জন্য পুরুষকে ৩টি বস্তুর ব্যবহার করতে বলেছেন-অর্থ, শাসন আর সোহাগ। তিনটির সুষম মিশেল ওনাদের ভাল রাখবে। আপনাকেও। বাট কোনোটা মাত্রাছাড়া বাড়ালে ক্ষতিই বাড়াবেন। ঘনঘন বাপের বাড়ি যায়-কোনো কোনো পুরুষকে এমন অভিযোগও করতে শুনি। তো ভাই, আপনি যদি আপনার বাবা-মা’র সাথে জীবনের ৩০টি বছর কাটানোর পরেও বিয়ের পর তাদের সাথেই থাকেন আর স্ত্রী তার ৩০ বছরের বাবা-মাকে ছেড়ে আপনার সাথে থাকেন, তবে কি তার ঘনঘন বাবা-মাকে দেখতে যাওয়া উচিৎ না? সারাক্ষন সন্দেহ করে-এটাও একটা কমোন অভিযোগ ছেলেদের।

এটাকে কি অস্বীকার করার উপায় আছে, আমাদের দেশে দাম্পত্যে বিশ্বাসঘাতকতার ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে বিশ্বাসঘাতক হয় ছেলেটি? তো তাতে আপনার স্ত্রীরও কি ভয় থাকবার কথা না? আর ভাই, আপনার তো খুশি হবার কথা যদি ভাবেন, আমার স্ত্রী সারাক্ষন আমাকে হারাবার ভয়ে থাকে যার মানে হল তিনি আপনাকে যারপরনাই ভালবাসেন। আর সেজন্যই আপনাকে আগলে রাখতে চান। লিখে রাখতে পারেন, আপনার স্ত্রী যদি আপনাকে বাসায় দেরীতে আসার জন্য না বকেন, জামায় ঝোল লাগানোর জন্য না বকেন, জামায় কাল্পনিক চুলের অস্তিত্বের জন্য মেকি গোস্বা না করেন, শপিংয়ে নিয়ে যেতে বায়না/ঘ্যানঘ্যান না করেন, বন্ধুদের আড্ডা কমিয়ে ঘরে সময় দিতে জোর না করেন, এটাসেটা না খাবার বায়না না করেন, শাড়ি কিনে আলমারিতে জমাতে না চান, যেখানে সেখানে কাপড় ছড়িয়ে রাখার জন্য ঝারি না দেন, শশুরবাড়িতে টাকা পয়সা না দেন-মানে খুব ঠান্ডা মাথার শান্ত শিষ্ট বেকুব দাবিবিহীন বউ হন, যা আপনি চান, সেটাতে আপনিই দুঃখে ভাসবেন। কেন? ওরকম ঠান্ডা মাথার মেয়েমানুষ খোদাই বানান নাই। আর যাকে বানিয়েছেন সে সত্যিকার অর্থে ন্যাচারাল নারী (নারীর সবরকম ছটফটানী, চপলতা, বুনো সৌন্দর্য বিশিষ্ট) নন। ওরকম ম্যান্তা নারী বা বউ আপনার দু’দিন যেতেই আর ভাল লাগবে না। আপনার মন ভরবে না। বউকে বোরিং আর চার্মলেস মনে হবে। কুল ব্রেইনের বউকে আপনার কাছে “COOL DUDE" লাগবে না।

আর দুলাভাইয়েরা: নারী তার সবরকম ভাল ও (আপেক্ষিক মন্দগুনসহই) নারী। ওর হতে বেঁছে বেঁছে আপনার অপছন্দের বিষয়গুলো বাদ দিয়ে তাকে বানাতে গেলে সে আর নারী থাকেনা। মনে রাখবেন, বুনো সৌন্দর্যই নারীকে বেশি মানায়। পোষমানা বাঘও বিড়ালের মতো লাগে ।আর হ্যা নারীকে পোষ মানানোর বৈদিক মন্ত্র তো বললামই, অর্থ, শাসন আর সোহাগ। মন্ত্রকে যথাযথ কাজে লাগান। পুরুষের মতোই থাকুন। নারীকেও নারীর মতো রাখুন।হ্যা,ভাবিজানেরা, সর্বপদে শান্তশিষ্ট জামাইকেও আপনি "MY HUBBY" স্ট্যাটাসে ট্যাগাতে পারবেন না। জামাইকে পুরুষের মতোই থাকতে দিন। তাকে পোষ মানানোর দরকার নেই। রমনী যদি আশা করেন, স্বামী হবেন ইমাম সাহেবের মতো পবিত্র, টম ক্রূজের মতো ম্যানলি, ব্র্যাড পিটের মতো সহ্যশীল (৪জন পালক নেয়াটা সহ্য করার মতো। আমি ওদের দু’জনকে খুব শ্রদ্ধা করি ওই কাজটির জন্য), বিল গেটসের মতো ধনী, জাকারবার্গের মতো সাদাসিধা (সারাক্ষন টি শার্ট), বিরাট কোহলীর মতো মেজাজী, ড. .....ফুজের মতো বউ ন্যাওটা, শাহরুখের মতো পুতুপুতু লাভার কিংবা, স্বামী যদি কামনা করেন, কারিনার মতো চপল, কাজলের মতো মায়াময়, জোলির মতো মাসলওয়ালা, ঐশ্বরিয়ার মতো বিশ্বসুন্দরী, কপিলার মতো মোহ/রহস্যময়ী, বোরকা পড়া, ধনবান, সাত চড়ে রা কাড়েনা-এমন আজব কিসিমের স্ত্রী তবে দুই পক্ষই দয়া করে মানব ও মানবীকে বিয়ে করা বন্ধ করুন।

ওরকম মনের মতো সবরকম কাঙ্খিত ফিচারসহ একখানা রোবট অর্ডার দিয়ে বানিয়ে বিয়ে করুন। দুনিয়াতে রক্তমাংসের মানুষকে বিয়ে করতে হলে, তাকে নিয়ে সুখী হতে হলে সে যেমন তেমনটাকেই মেজেঘষে নিজের মতো করে নিন আর নিজেকেও কামারের দোকানে নিয়ে পিটিয়ে তার মনের মতো করে নিন। প্লাস্টিকের চামড়ার জুতা না খুঁজে, হয় প্লাস্টিক অথবা চামড়া যেকোনো মাধ্যম বাছুন। দ্বিচারী কামনা বন্ধ করুন। আমার একজন পরিচিত মহা পরাক্রমশালী পুরুষ আছেন। তিনি প্রায়শই তার স্ত্রীকে কিভাবে চাপে রাখেন, কিভাবে ভয়ে রাখেন, কিভাবে সারাক্ষণ দৌড়ের উপর রাখেন তার গল্প বলেন তাড়িয়ে তাড়িয়ে। আর স্ত্রীকে শাসনে রেখে তিনি কিভাবে ”পুরূষ” হলেন তার রসালো গল্প বলে বিমল আনন্দ উপভোগ করেন। আমাকে উপদেশ দেন, “বউকে, বুঝলেন, সবসময় টাইটে রাখবেন। ”মেয়ে মানুষ” টাইট দিলে ভাল থাকে।” তো সেই পরাক্রমশালী ”পুরুষ” তার পুরুষালি কর্তৃত্বে মহাখুশি। পৌরুষত্ব বজায় রাখতে পেরে তিনি খুবই গর্বিত। তার পরাক্রমশালী পৌরুষত্ব দেখে আমিও মাঝে মাঝে ইর্ষায় পুড়ি। মুশকিল হয়েছে অন্যখানে। ঘটনাক্রমে একদিন জানা গেছে, সেই পরাক্রমশালী ”পুরুষ” সাহেবের টাইটে থাকা স্ত্রী তার অফিস যাবার ও আসার মাঝের সময়টায় নিজের ”মেয়ে” মানুষত্ব বেশ ভালভাবে নানাভাবে নানাস্থানে উপভোগ করেন। মানে? ওই যে, ওই আরকি?

একদিন আমার গিন্নিকে নিয়ে শীতের সকালে গেছি নদীর পাড়ের এক বাজারে। শীতে দু’জনেই জবুথবু হয়ে জিনিসপত্র দেখছি। আসলে বউ সদায়পাতি করছে আর আমি নদীর ছবি তুলছি। পাশেই একজন “পুরুষ” বিছানার চাদর গায়ে জড়ানো অবস্থায় এক দোকানীর কাছ হতে ঢেঁরশ কিনছে। একটা একটা ঢেঁড়শ টিপে টিপে কচি কিনা তা পরখ করে তিনি আধাকিলো ঢেঁড়শ কিনে গৃহে প্রত্যাগমন করলেন। আমার স্ত্রী আমায় নিয়ে পড়লেন। “তুমি এমন করে ”পুরুষের” মতো বাজার করতে পার না? তুমি দেখে বুঝে কিনতে পারলে তো আমার কষ্টটা কমত।” তো আমি আমার বউরে বললাম, দেখ যেসব ”পুরুষ” মানুষ একটা একটা ঢেঁড়শের বোটা টিপে, লেজা চিপে কচি ঢেঁড়শ কিনতে পারে তারা পুরুষ হিসেবে খুবই কাবেল কোনো সন্দেহ নেই তবে মানুষ হিসেবে তারা অত্যন্ত কুচুটে টাইপের হয়। তো তুমি যদি অমন ঢেঁড়শ এক্সপার্ট ”পুরুষ” স্বামী চাও তাহলে কুচুটে স্বামীও মেনে নিতে হবে।” আমার স্ত্রী আমাকে তাড়া লাগায় “রিক্সা ডাকো”।

বেশি বেশি ”পুরুষ” হতে চাইলে হতে পারেন। তবে আপনি ”পুরুষ” হতে চাইলে মহিলাও তো ”মেয়ে” হতে চাইবেন তাই না? বিয়ে করা পার্টনারকে বউ বলে। বিয়ে না করা বউকে পার্টনার বলে। ওইযে ছোট ছোট গরুকে বাছুর বলে আর বড় বড় বাছুরকে গরু বলে। লাইফ পার্টনার সে বিয়ে করা বা না করা-উভয়ই বউ। কে স্বামী আর কে বউ-সেটা জেন্ডার দ্বারা নির্ধারিত হওয়াটা প্রিমিটিভ যুগে ছিল না। মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত সমাজব্যবস্থা যেদিন আসছে সেদিন হতে স্বামী ও স্ত্রীর আলাদা জেন্ডারবেসড সংজ্ঞা আসছে। স্বামীও মানুষ, স্ত্রীও মানুষ। মানুষ মাত্রই ভুল আছে, ত্রূটি আছে। তাকে মেনে নিয়েই জীবন চালাতে হয়। ভুল হয়না একমাত্র শয়তানের।

তো আপনি তো আর শয়তানের সাথে সংসার করবেন না।রি
পৃথিবীতে একটা জিনিস নেই সবাই জানে কিন্তু সবাই এই অস্তিত্বহীন জিনিসটিকে ভয় পায়। সেটা কী বলতে পারেন? ভূত। আপনি যাকেই জিজ্ঞেস করবেন, সে বলবে ভূত বলে কিছু নেই। আবার তাকেই বলেন, ভূত ভয় পান? তিনি বলবেন, পাই। যদি বলে পাই না, তবে তাকে একা একা ভুতের বাড়িতে রাত কাটাতে বলুন, পারবে না।

যাহোক ভূতের কাহিনী আমার টার্গেট না।

এটা দিয়ে শুরু করলাম কারন মূল বিষয়টিও এমনি এক সত্যকে নিয়ে। আপনি যদি যেকোনো পুরুষ মানুষ বা নারীকে নারী-পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব, সোস্যাল ক্লাস, সুপিরিয়রিটি, ডোমিনেশন পাওয়ার, অধিকার, স্বাধীনতা, কর্তৃত্ব, নারী/পুরুষ নির্যাতন এসব নিয়ে প্রশ্ন করেন তবে কমোন উত্তর পাবেন দুই রকম:-

হয় বলবে, না, তিনি এসবের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না। সবাই সমান। অথবা বলবেন, তিনি মনে করেন, তিনি নিজে ওগুলোর সবকটার ক্ষেত্রে ইনফেরিয়র মানে অত্যাচারিত বা শোষিত।

কিন্তু ওই ভূতের অস্তিত্বের মতোই, তার বিপরীত পক্ষ বলবে,নাহ, বরং তিনি নিজে অত্যাচারিত। নারী-পুরূষের শ্রেষ্ঠত্ব আর শোষক/শোষিত বিতর্ক বোধহয় জগতের সবচেয়ে দীর্ঘ ও একঘেয়ে বিতর্কের অন্যতম যা সবচেয়ে পুরোনো অসমাপ্ত বিতর্কও বটে। একদল নারীপুরুষকে সবসময় দেখবেন, ফেসবুকে, ব্লগে, সমাজে, মিডিয়ায়, পরিবারে, রাস্তায়, আড্ডায় যখনি কথা বলেন, তার বিপরীত লিঙ্গের মানুষটির প্রতি ক্ষোভ, হতাশা আর অনুযোগ ঝেড়ে থাকেন। বিবাহিত জীবন নিয়ে প্রচুর হাপিত্যেষ করেন।

পুরুষ হলে তার অভিযোগ: বউ ডোমিনেট করে,
স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে,
ব্যাক্তিত্ব বলে কিছু থাকে না,
বেশি বেশি অপচয় করে, মা-বাপকে দেখে না,
কারো সাথে মিশতে দেয় না, বন্ধুদের কাছে ঘেষতে দেয়না,
মেয়েদের সাথে মেশার ব্যাপারে চিল দৃষ্টি রাখে, সারাক্ষন ঘ্যান ঘ্যান করে,
প্রচুর বকবক করে, সন্দেহপ্রবন, শাড়িচুড়ি সর্বস্ব,
সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি।

আবার স্ত্রী হলে তার বিপরীত অভিযোগ:
সময় দেয়না, বাজে আড্ডা দেয়, শপিং এ যায়না, নির্যাতন করে,
গায়ে হাত তোলে, যৌতুক চায়, বন্ধুদের সাথে মিশতে দেয়না, সন্দেহপ্রবন,
অগোছালো, সিগারেট খায়, মায়ের কথামতো চলে,
নারী লোভী, বাসায় সময় দেয়না, সারাক্ষন মোবাইল নিয়ে থাকে ইত্যাদি ইত্যাদি।

তো এত অভিযোগের পরেও একটা জিনিস ওই ভূতের গপ্পের মতোই কমোন-তা হল, পরষ্পরের বিরুদ্ধে এত অভিযোগের পরও নারী ও পুরুষ কিন্তু বিয়ে করে সংসার পাতার কাজটি হতে বিরত নেই। তাহলে এই অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের কারন কী? ফ্রাস্ট্রেশন, আশাভঙ্গ, এবসেন্স অব র‌্যাশনাল থট ও নন-কম্প্রোমাইজিং এটিচুড হল এই মনোঃস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের প্রধান উৎস। একা থাকার জীবন ও দোকা হবার জীবনের মধ্যে কোনো পার্থক্য টানতে না পারাটাও এই বিরোধের অন্যতম কারন।

কিছু পুরুষ বা মহিলা গর্বের সাথে এটা ভাবতে পছন্দ করেন যে, ”আমি এমনই”। নো, আপনি হয়তো “এমনই” কিন্তু আপনার পার্টনার তো ”এমনই” না।
আর আপনি যদি বিয়ের পরও “এমনই” থাকতে চান, তবে কেন অযথা আরেকজন “এমনই”র সাথে জীবন জড়ালেন? একা থেকে এই “এমনই”টাকে কেন এনজয় করলেন না?
প্রশ্ন করবেন, “তো কী করব, ব্যক্তিত্ব বলে কিছু থাকবেনা? সব ওর মন মতো করব?” না, “এমনই’ নামক ইগোর বিপরীত শব্দ ব্যক্তিত্বহীনতা নয়। ব্যক্তিত্বহীনতা কোনো সমাধান নয়। আবার ইগোও কোনো ভাল কথা নয়।

তাহলে কী করবেন?

“কম্প্রোমাইজ”। কম্প্রোমাইজ মানে হেরে যাওয়া নয়, আত্মসম্মান বিসর্জন দেয়া নয়। কম্প্রোমাইজ মানে প্রবলেম/ডিসপিউট মিনিমাইজ করা, মিউচুয়াল বা সমঝোতা করা। আমার সাদা চোখে যেটা মনে হয়, স্বামী ও স্ত্রী যেহেতু নিজেদের কঠোর ব্যক্তিস্বাধীনতাকে তুচ্ছ করে বিবাহিত যৌথ জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েই দাম্পত্যে প্রবেশ করেন, সেহেতু বিয়ের আগের সেই অমোঘ ব্যক্তিত্ব’র বাঁধন একটু আলগা করে সেটাকে সমঝোতা আর অন্যজনকে বোঝার মেন্টালিটি নিয়ে ডিল করলে সমস্যা ৯৯% কমে যায়।

সমস্যা হল, আমরা ওটা করতে চাই না। পুরুষ মনে করে, আমি স্ত্রীর কাছে ছোট হব না। “আমি পুরুষ না?” স্ত্রী মনে করে, “আমিই বা কম কিসে? পদে পদে ওর কাছে ছোট হব কেন?” স্বামী বা স্ত্রীর কাছে বড় হওয়া বা ছোট হওয়ার কোনো অস্তিত্বই তো আমি দেখি না। স্বামী বা স্ত্রী হলেন আপনার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘতম সময়ের স্থায়ী সঙ্গী। তার সাথে জীবন চালাতে গিয়ে যদি এটা ভাবতে হয়, বড় হলাম, না ছোট, লাভ হল না ক্ষতি-তো তাহলে সমস্যার গোড়াটা অন্যস্থানে। আপনি তাহলে জীবনসঙ্গীর জন্য বিয়ে করেননি।
করেছেন ”অন্য” কোনো স্বার্থে।
হতে পারে সেটা শরীর, হতে পারে অর্থ, হতে পারে বাধ্য হওয়া কিংবা এই বিয়ের কারন হতে পারে ফেঁসে যাওয়া। বিধায় এই অস্থিরতা। ইদানিং অনলাইনে আইপি ক্যামেরা নামক একটা অদ্ভূৎ স্পাই ক্যামেরার বিজ্ঞাপন দেখি যেটা দিয়ে আপনি অফিসে বসেই আপনার বউয়ের উপর খবরদারি করতে পারবেন যাতে সে কই যায়, কোথায় যায়, কে আসে না আসে-সব বাইরে বসে আপনি নজর রাখতে পারেন। আবার স্ত্রীরাও চাইলে স্বামীর অফিস ডেস্কের সামনে একটা লাগিয়ে রাখতে পারেন তাকে নজরে রাখতে।

একবার অফিসে আছি। বউ ফোন করেছে, “বাসায় চলে আসো, একা একা ভাল লাগছে না, সময় কাটছে না, বোর হচ্ছি। কী করব?” আমি বললাম, তোমার বন্ধুদের কাছে যাও, আড্ডা দিয়ে এসো কতক্ষণ। বউ আমাকে বলে, তুমি কেমন মানুষ, নিজে যেঁচে বউকে বল তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। আমি বললাম, কেন সমস্যা কী? তুমি কি তোমার বন্ধুদের সাথে (ছেলে বা মেয়ে যাই হোক) আড্ডা দিতে পারো না?
ও বলল, তোমার ইর্ষা হবে না? ভয় হবে না? আমি যদি বিপথে যাই? এই পর্যন্ত পড়ে যদি মনে করেন নিজের গুণকীর্তন করতে বসেছি তাহলে ভুল ভাববেন।
আমি বউকে বললাম, তুমি যদি তাদের সাথে আড্ডা দিতে থাকার পরও আমার সঙ্গেই আনন্দে থাক, তবে তো আমার দুঃশ্চিন্তিত হবার দরকারই নেই। আর যদি তাদের সাথে মিশে আমাকে ছেড়ে যাবার কুমতলব কখনো মনে চলে আসে (এত ভালবাসা আমার কাছে পেয়েও) তবে তো বুঝতে হবে তুমি আমার ছিলেই না কখনো। তো তুমি যদি আমারই না হও, তো তোমাকে ধরে রাখব কেন?
কেউ কেউ এই পর্যন্ত পড়ে আবার ভাবতে পারেন, ব্যাটা ন-পুরুষ, কাপুরুষ, স্ত্রৈণ ইত্যাদি। না ভাইসব, ওর কোনোটাই নই। আমি বিশ্বাস করি, যে চলে যাবার সে যাবেই। বুঝতে হবে সে আপনার ছিলই না। যে থাকার সে থাকবেই। শত তুফানেও সে আপনার কাছেই থাকবে। তাকে ধরে রাখার দরকার পড়বে না।

তাই নিজের মানুষকে তালাবদ্ধ করে বা শিকল দিয়ে ধরে রাখার চেষ্টার দরকার দেখি না। বিশ্বাস, ভালবাসা, ভরসা, সমঝোতা-এই ৪টি মন্ত্রই হল আলাদীনের চেরাগ। কাছে থাকার জন্য, ভাল থাকার জন্য, সাথে থাকতে, থাকাতে। নারী ও পুরুষের আজন্ম লালিত দু’টি সাইকী-নারী ভাবে “পুরুষ মানুষকে টাইট না রাখলে হাতছাড়া হয়ে যায়” আর পুরুষ ভাবে “বিড়াল প্রথম রাতেই মারতে হবে”।
আমাদের দেশে যেমন ছেলেরা বিয়েতে যৌতুক নেয়-এই কমোন অভিযোগ আছে, যৌতুকের প্রতি সার্বজনীন মেজরিটির ঘৃনা আছে (যদিও আবার মনে মনে ভাবি দিলে ক্ষতি কী), যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতনের ভুুড়ি ভুড়ি অভিযোগ আছে তেমনি এর একটি বিপরীত ছবিও আছে।
সেটা হল, দেনমোহর (যদিও সেটা মাত্র একটি বিশেষ ধর্ম গোষ্ঠীর)। আচ্ছা, আপনি যদি যৌতুককে না বলেন, তবে দেনমোহরকে কেন হ্যা বলছেন? দেনমোহরকে কি আপনার একরকম যৌতুক মনে হয় না? এই পর্যন্ত হয়তো আপনি আমাকে নারীবাদি ভেবে এসেছেন। এইমাত্র হয়তো সেটাতে চিড় ধরল। আপনি নারী হলে আমাকে বদলোক ভাবা শুরু করলেন। পুরুষ হলে আরো আনন্দ নিয়ে লেখাটা পড়া ধরলেন।

না ভাই/বোন, আরেকটু পড়ুন, তারপর আমার বিষয়ে ভাবুন।

১.যদি বলেন, দেনমোহর ধর্মীয় ও পারিবারিক আইনমতে স্ত্রীর পাওনা: ও আচ্ছা। তো আপনি আর কোন কোন ধর্মীয় আইন সুন্দরমতো মানেন যে এটার প্রতি এত বাধ্যগত হলেন?
২.যদি বলেন, নারীর নিরাপত্তার কবচ এই মোহর তবে বলব, স্বামী কি তার নিরাপত্তার জন্য কোনো কবচ চেয়েছেন আপনার কাছ হতে? আর যদি লাভ ম্যারেজ হয়, তবে দীর্ঘকাল যার সাথে ভালবাসাবাসি করলেন, তার সাথে বিলীন হলেন, তার হাতে সবকিছু সঁপে দিলেন, যখন কোনো সামাজিক স্বীকৃতিও ছিলনা, তাকে এই ১২ বছর প্রেমের পর যেই বিয়ে করবেন তখনি নিরাপত্তা দরকার হল? যেদিন বিয়ে ব্যতিত তাকে শরীর সঁপে দিয়েছিলেন সেই প্রথম শিহরনের দিনেও নিরাপত্তা লাগেনি, লাগল আজ সেই সম্পর্ক আনুষ্ঠানিক রূপ আর সামাজিক স্বীকৃতি পাবার পরে? স্টূপিডিটি মনে হচ্ছে না?
৩.যদি বলেন, দেনমোহর সামাজিক সংস্কৃতি, এটা যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে, এমন করেই বিয়ে হয়, তবে আমি বলব, ভাই/বোন, সামাজিক রীতিকেই যদি আপনি এত সমর্থন করেন, তবে সেই সমাজেই যদি আবার যৌতুক যুগ যুগ ধরে চলে এসে থাকে তবে সেটাও তো আপনার সম্মান করতে হবে তাই না?
৪.যদি বলেন, নবীজি দেনমোহর দিয়েছেন, সেজন্য আপনিও সেটা মানেন: আমি ধর্মে গভীরভাবে বিশ্বাস করি। নবীজি কত মোহর দিয়েছেন সেটাও ফলো করুন। সেটার বেশি নয়। ১০ লক্ষ/৫০ লক্ষ/১ কোটিতো অবশ্যই নয়। আপনি জানেন কিনা জানিনা, নবীজির কোনো এক বিবাহের মোহর ছিল সামান্য কয়েকমুঠো খেজুর বা কয়েকটা ভেড়া বা একটা জামা (রূপক অর্থে বললাম। বুজুর্গরা ঠিকঠাক বলতে পারবেন)। যারা ঘনঘন নবীজি (সাঃ)এর কাজকে রেফারেন্স হিসেবে হাজির করেন, তারা দয়া করে তার পুরো জীবনের সব অভ্যাসকে হুবহু মানুন। সুবিধা মতো শুধু নিজের স্বার্থে যা লাগবে সেগুলো করবেন-সেটা ভন্ডামী।
৫.যদি বলেন স্বামীদের চাপে রাখার জন্য যাতে বেয়ারা না হয় বা তালাকের কথা না ভাবে তাই মোহর: তবে তো বেহেনজী আপনি বিয়ের আগেই জামাইকে ব্লাকমেইলের ধান্দা করছেন। বিয়েটাতো আপনার কাছে তাহলে একটা স্রেফ ডিল। তবে হ্যা, স্বামীদের বলব, আপনি যদি পুরুষ মানুষ হন আর তারপরও শশুরের পয়সায় নিজের ঘরের আসবাবপত্র কিনতে চান, তবে বাদ দিন বিয়ে। একটা ম্যানিকিন কিনে ঘরে রেখে দিন। পারলে নিজের পয়সায় সব করুন। আর না পারলে শূন্য ঘরে, সাদাসিদাভাবে নিজের জীবনসঙ্গিকে নিয়ে স্বর্গের নীড় রচনা করুন। মনে প্রেম আনুন। তাতে বাকি সব অভাব, অপূর্ণতা পূরন হয়ে যাবে।

স্ত্রীগণ: যদি স্বামী পাবার জন্য বিয়ে করেন, যদি সামাজিক জীব হবার জন্য বিয়ে করেন, যদি জীবনসঙ্গী পেতেই বিয়ে করেন, তবে দেন মোহরের মতো বিষয়ের পিছনে পড়ার দরকার নেই। শুধু স্বামীকেই বিয়ে করুন। তার টাকা, তার প্রতিপত্তি, তার বাধ্যতা, তার নিরুপায় অবস্থাকে না।

আবার এর বিপরীতে মেয়েদের বাস্তবতাটাকে দেখুন। অনেক পুরুষ অভিযোগ করেন, বউ সারাক্ষন বাসায় ফেরানোর জন্য ঘ্যানর ঘ্যানর করে। বন্ধূদের সাথে আড্ডা দেব সেই উপায় নেই। কেন, আমার বন্ধুবান্ধবকে কি বউয়ের জন্য ছাড়ব? বিষয়টাকে এভাবে না দেখে অন্যভাবে দেখুন না। ভাইজান, বিয়ের আগে তো বছর দশেক বন্ধুবান্ধব নিয়ে থাকলেন। তারা থাকা স্বত্বেও তো বিয়ে করে একজন নতুন বন্ধুকে ঘরে আনলেন। এবার পুরোনো বন্ধুদের সময় হতে ঘরের বন্ধুকে একটু সময় বরাদ্দ করুন না। আর ঘরের আপনিও বিষয়টাকে ভাগ করে নিন না? ভাবুনতো, আপনি যখন ছিলেন না, তখন এই বন্ধুরাইতো আপনার পতিকে সঙ্গ দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন বছরের পর বছর। আপনার অনুপস্থিতিতে তারাইতো আপনার আজকের স্বামীধনকে বিপদে আপদে আগলেছে। আজ যেই আপনি এলেন অমনি সবাইকে ছেড়ে যদি সে বিদায় নেয়, তবে তাকে সমাজে যে ”বউয়ের চাকর” বলে পঁচানো হবে সেটাকি তিনি সহজে মানতে পারবেন?

সবচেয়ে ভাল হয় কি জানেন? দু’জনেই ওদের বন্ধু হয়ে যান। এরপর সপ্তাহের কিছুদিন নিজেদের নিয়ে থাকুন। কয়েকটা দিন দু’জনেই একত্রে ওদের আড্ডায় যান। ওদের ফেসবুক গ্রূপের মেম্বার হোন। হ্যা, এখানে বাকি বন্ধু সার্কেলকে একটা ভাল কাজ করতে হবে। আপনাদের সব আড্ডা, সব ফোরামকে একজন গৃহলক্ষী নারীর জন্য পরিচ্ছন্ন ও ভদ্রোচীত রাখতে হবে যাতে একজন নারী সেটাতে বিচরন করতে লজ্জায় না পড়েন, তার স্বামীও তার স্ত্রীকে সেটাতে আনতে সংকোচ বা চোরামী বোধ না করেন। বউ প্রচুর শপিং করে-এমন তুচ্ছ বিষয় নিয়েও স্বামীদের স্বপক্ষে যত্রতত্র ফালতু ট্রল, কৌতুক কম নেই। তো ভাই, আপনি একজন নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করেছেন, রোবটকেতো না। আপনি কি চান তিনি একটা জড় পদার্থের মতো আপনার নিজস্ব পুরুষালী এপ্রোচের ফলোয়ার হবেন? আপনি কেনাকাটার মতো ফালতু কাজে খরচ করতে না চাইলেও নারীকে বিধাতা আপনার বিপরীত করে বানিয়েছেন। তাহলে একজন নারীকে কেন বিয়ে করলেন? পুরুষকেই করতেন?

আপনি একজন নারীকে বিয়ে করবেন অথচ তার কাছে পুরুষের মতো দৃষ্টিভঙ্গি আর সাইকোলজিক্যাল ট্রেইট আশা করবেন-সেটাতো ঠিক না। জানেন কি? বৈদিক যুগের বিজ্ঞরা নারীকে সুখী রাখার জন্য পুরুষকে ৩টি বস্তুর ব্যবহার করতে বলেছেন-অর্থ, শাসন আর সোহাগ। তিনটির সুষম মিশেল ওনাদের ভাল রাখবে। আপনাকেও। বাট কোনোটা মাত্রাছাড়া বাড়ালে ক্ষতিই বাড়াবেন। ঘনঘন বাপের বাড়ি যায়-কোনো কোনো পুরুষকে এমন অভিযোগও করতে শুনি। তো ভাই, আপনি যদি আপনার বাবা-মা’র সাথে জীবনের ৩০টি বছর কাটানোর পরেও বিয়ের পর তাদের সাথেই থাকেন আর স্ত্রী তার ৩০ বছরের বাবা-মাকে ছেড়ে আপনার সাথে থাকেন, তবে কি তার ঘনঘন বাবা-মাকে দেখতে যাওয়া উচিৎ না? সারাক্ষন সন্দেহ করে-এটাও একটা কমোন অভিযোগ ছেলেদের।

এটাকে কি অস্বীকার করার উপায় আছে, আমাদের দেশে দাম্পত্যে বিশ্বাসঘাতকতার ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে বিশ্বাসঘাতক হয় ছেলেটি? তো তাতে আপনার স্ত্রীরও কি ভয় থাকবার কথা না? আর ভাই, আপনার তো খুশি হবার কথা যদি ভাবেন, আমার স্ত্রী সারাক্ষন আমাকে হারাবার ভয়ে থাকে যার মানে হল তিনি আপনাকে যারপরনাই ভালবাসেন। আর সেজন্যই আপনাকে আগলে রাখতে চান। লিখে রাখতে পারেন, আপনার স্ত্রী যদি আপনাকে বাসায় দেরীতে আসার জন্য না বকেন, জামায় ঝোল লাগানোর জন্য না বকেন, জামায় কাল্পনিক চুলের অস্তিত্বের জন্য মেকি গোস্বা না করেন, শপিংয়ে নিয়ে যেতে বায়না/ঘ্যানঘ্যান না করেন, বন্ধুদের আড্ডা কমিয়ে ঘরে সময় দিতে জোর না করেন, এটাসেটা না খাবার বায়না না করেন, শাড়ি কিনে আলমারিতে জমাতে না চান, যেখানে সেখানে কাপড় ছড়িয়ে রাখার জন্য ঝারি না দেন, শশুরবাড়িতে টাকা পয়সা না দেন-মানে খুব ঠান্ডা মাথার শান্ত শিষ্ট বেকুব দাবিবিহীন বউ হন, যা আপনি চান, সেটাতে আপনিই দুঃখে ভাসবেন। কেন? ওরকম ঠান্ডা মাথার মেয়েমানুষ খোদাই বানান নাই। আর যাকে বানিয়েছেন সে সত্যিকার অর্থে ন্যাচারাল নারী (নারীর সবরকম ছটফটানী, চপলতা, বুনো সৌন্দর্য বিশিষ্ট) নন। ওরকম ম্যান্তা নারী বা বউ আপনার দু’দিন যেতেই আর ভাল লাগবে না। আপনার মন ভরবে না। বউকে বোরিং আর চার্মলেস মনে হবে। কুল ব্রেইনের বউকে আপনার কাছে “COOL DUDE" লাগবে না।

আর দুলাভাইয়েরা: নারী তার সবরকম ভাল ও (আপেক্ষিক মন্দগুনসহই) নারী। ওর হতে বেঁছে বেঁছে আপনার অপছন্দের বিষয়গুলো বাদ দিয়ে তাকে বানাতে গেলে সে আর নারী থাকেনা। মনে রাখবেন, বুনো সৌন্দর্যই নারীকে বেশি মানায়। পোষমানা বাঘও বিড়ালের মতো লাগে ।আর হ্যা নারীকে পোষ মানানোর বৈদিক মন্ত্র তো বললামই, অর্থ, শাসন আর সোহাগ। মন্ত্রকে যথাযথ কাজে লাগান। পুরুষের মতোই থাকুন। নারীকেও নারীর মতো রাখুন।হ্যা,ভাবিজানেরা, সর্বপদে শান্তশিষ্ট জামাইকেও আপনি "MY HUBBY" স্ট্যাটাসে ট্যাগাতে পারবেন না। জামাইকে পুরুষের মতোই থাকতে দিন। তাকে পোষ মানানোর দরকার নেই। রমনী যদি আশা করেন, স্বামী হবেন ইমাম সাহেবের মতো পবিত্র, টম ক্রূজের মতো ম্যানলি, ব্র্যাড পিটের মতো সহ্যশীল (৪জন পালক নেয়াটা সহ্য করার মতো। আমি ওদের দু’জনকে খুব শ্রদ্ধা করি ওই কাজটির জন্য), বিল গেটসের মতো ধনী, জাকারবার্গের মতো সাদাসিধা (সারাক্ষন টি শার্ট), বিরাট কোহলীর মতো মেজাজী, ড. .....ফুজের মতো বউ ন্যাওটা, শাহরুখের মতো পুতুপুতু লাভার কিংবা, স্বামী যদি কামনা করেন, কারিনার মতো চপল, কাজলের মতো মায়াময়, জোলির মতো মাসলওয়ালা, ঐশ্বরিয়ার মতো বিশ্বসুন্দরী, কপিলার মতো মোহ/রহস্যময়ী, বোরকা পড়া, ধনবান, সাত চড়ে রা কাড়েনা-এমন আজব কিসিমের স্ত্রী তবে দুই পক্ষই দয়া করে মানব ও মানবীকে বিয়ে করা বন্ধ করুন।

ওরকম মনের মতো সবরকম কাঙ্খিত ফিচারসহ একখানা রোবট অর্ডার দিয়ে বানিয়ে বিয়ে করুন। দুনিয়াতে রক্তমাংসের মানুষকে বিয়ে করতে হলে, তাকে নিয়ে সুখী হতে হলে সে যেমন তেমনটাকেই মেজেঘষে নিজের মতো করে নিন আর নিজেকেও কামারের দোকানে নিয়ে পিটিয়ে তার মনের মতো করে নিন। প্লাস্টিকের চামড়ার জুতা না খুঁজে, হয় প্লাস্টিক অথবা চামড়া যেকোনো মাধ্যম বাছুন। দ্বিচারী কামনা বন্ধ করুন। আমার একজন পরিচিত মহা পরাক্রমশালী পুরুষ আছেন। তিনি প্রায়শই তার স্ত্রীকে কিভাবে চাপে রাখেন, কিভাবে ভয়ে রাখেন, কিভাবে সারাক্ষণ দৌড়ের উপর রাখেন তার গল্প বলেন তাড়িয়ে তাড়িয়ে। আর স্ত্রীকে শাসনে রেখে তিনি কিভাবে ”পুরূষ” হলেন তার রসালো গল্প বলে বিমল আনন্দ উপভোগ করেন। আমাকে উপদেশ দেন, “বউকে, বুঝলেন, সবসময় টাইটে রাখবেন। ”মেয়ে মানুষ” টাইট দিলে ভাল থাকে।” তো সেই পরাক্রমশালী ”পুরুষ” তার পুরুষালি কর্তৃত্বে মহাখুশি। পৌরুষত্ব বজায় রাখতে পেরে তিনি খুবই গর্বিত। তার পরাক্রমশালী পৌরুষত্ব দেখে আমিও মাঝে মাঝে ইর্ষায় পুড়ি। মুশকিল হয়েছে অন্যখানে। ঘটনাক্রমে একদিন জানা গেছে, সেই পরাক্রমশালী ”পুরুষ” সাহেবের টাইটে থাকা স্ত্রী তার অফিস যাবার ও আসার মাঝের সময়টায় নিজের ”মেয়ে” মানুষত্ব বেশ ভালভাবে নানাভাবে নানাস্থানে উপভোগ করেন। মানে? ওই যে, ওই আরকি?

একদিন আমার গিন্নিকে নিয়ে শীতের সকালে গেছি নদীর পাড়ের এক বাজারে। শীতে দু’জনেই জবুথবু হয়ে জিনিসপত্র দেখছি। আসলে বউ সদায়পাতি করছে আর আমি নদীর ছবি তুলছি। পাশেই একজন “পুরুষ” বিছানার চাদর গায়ে জড়ানো অবস্থায় এক দোকানীর কাছ হতে ঢেঁরশ কিনছে। একটা একটা ঢেঁড়শ টিপে টিপে কচি কিনা তা পরখ করে তিনি আধাকিলো ঢেঁড়শ কিনে গৃহে প্রত্যাগমন করলেন। আমার স্ত্রী আমায় নিয়ে পড়লেন। “তুমি এমন করে ”পুরুষের” মতো বাজার করতে পার না? তুমি দেখে বুঝে কিনতে পারলে তো আমার কষ্টটা কমত।” তো আমি আমার বউরে বললাম, দেখ যেসব ”পুরুষ” মানুষ একটা একটা ঢেঁড়শের বোটা টিপে, লেজা চিপে কচি ঢেঁড়শ কিনতে পারে তারা পুরুষ হিসেবে খুবই কাবেল কোনো সন্দেহ নেই তবে মানুষ হিসেবে তারা অত্যন্ত কুচুটে টাইপের হয়। তো তুমি যদি অমন ঢেঁড়শ এক্সপার্ট ”পুরুষ” স্বামী চাও তাহলে কুচুটে স্বামীও মেনে নিতে হবে।” আমার স্ত্রী আমাকে তাড়া লাগায় “রিক্সা ডাকো”।

বেশি বেশি ”পুরুষ” হতে চাইলে হতে পারেন। তবে আপনি ”পুরুষ” হতে চাইলে মহিলাও তো ”মেয়ে” হতে চাইবেন তাই না? বিয়ে করা পার্টনারকে বউ বলে। বিয়ে না করা বউকে পার্টনার বলে। ওইযে ছোট ছোট গরুকে বাছুর বলে আর বড় বড় বাছুরকে গরু বলে। লাইফ পার্টনার সে বিয়ে করা বা না করা-উভয়ই বউ। কে স্বামী আর কে বউ-সেটা জেন্ডার দ্বারা নির্ধারিত হওয়াটা প্রিমিটিভ যুগে ছিল না। মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত সমাজব্যবস্থা যেদিন আসছে সেদিন হতে স্বামী ও স্ত্রীর আলাদা জেন্ডারবেসড সংজ্ঞা আসছে। স্বামীও মানুষ, স্ত্রীও মানুষ। মানুষ মাত্রই ভুল আছে, ত্রূটি আছে। তাকে মেনে নিয়েই জীবন চালাতে হয়। ভুল হয়না একমাত্র শয়তানের।

তো আপনি তো আর শয়তানের সাথে সংসার করবেন না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.