নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পথের বাপই বাপরে মনা, পথের মা ই মা

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৯

আমি মানুষটা দ্বিচারী বলতে পারেন। দুনিয়াদারী দেখতে মন চায়। আবার রাস্তায় নামলে দশ পা পেছাই। ঘরের কোণে নরম বিছানার আরামও মিস করতে মন চায় না।

ঘুরতে পছন্দ করি। কিন্তু সেটা প্রথাবদ্ধ টুরিষ্ট স্পটগুলোতে না।
আমার ভাল লাগে অগ্যস্ত ঘুরতে। যেখানে কেউ যায় না, যেটার সেলফী মূল্য নেই সেখানে যেতে। জানেন, আমি আমার বাসার আশপাশের গলিগুলো দেখতেও মাঝে মধ্যে বের হই? বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে ভূতের গলি সত্যিই আছে কিনা, দেখতে সেন্ট্রাল রোডে ঘুরে বেরিয়েছি। ঢাকার রাস্তায় অগ্যস্ত হাঁটতে আমার প্রচন্ড ভাল লাগে। আমার ব্যস্ত চাকরী জীবনের পরেও ছুটির দিনে রোদের মধ্যে টো টো করে ঘুরি। কোনো লক্ষ্য ছাড়া। মানুষ দেখতে, দোকানপাট, মানুষের ব্যস্ততা, জীবন জগত, হাসি, অভাব, প্রণয়, রাস্তাঘাট, পার্কের বেঞ্চ-এসব দেখতে ভাল লাগে। পাগলামীও বলতে পারেন। আমার সহধর্মীনি আমাকে পাগলই বলে।

একবার কী হয়েছে বলি। টিউশনি শেষ করে দুপুর ১১ টা। হঠাৎ রাস্তায় নেমে নিয়ত করলাম, হাঁটব। যেই ভাবা, সেই কাজ। আসাদ গেট হতে হাঁটা শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে চলে গিয়েছি সাভার হেমায়েতপুর। কানে ওয়াকম্যান। রাস্তার মানুষ আমাকে নির্ঘাত পাগল ঠাউরেছিল। দুপুর তিনটা বা চারটা নাগাদ রাস্তার পাশের আক্ষরিকভাবেই এক টঙে কড়া ঝালের ট্যাংরা মাছ, প্রচন্ড রকম মরিচ পোড়া দিয়ে বানানো আলু ভর্তা আর কড়কড়ে মোটা চালের ভাত দিয়ে সারলাম দুপুরের খানা। ওই ট্যাংরার ঝোলের স্বাদ আমি জীবনেও ভুলব না।

এটাকে কি ট্রাভেল বলা চলে? বা পর্যটন? হা হা হা।

ট্যুরিজম নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা ভাল না। সাধারন যা হয়, রিভিউ দেখে, বিভিন্ন সাইটে একটা স্থানের বর্ননা শুনে সেখানে বহু কষ্টে সময় জোগাড় করে যাই। গিয়ে দেখা যায়, ছবিতে ও বর্ননায় দেয়া স্থানের সাথে তার মিল সামান্যই। তার সাথে আছে রাস্তা ও রূটের বর্ননাসহ যাতায়াত ও আবাসনের বর্ননার অমিল। বাংলাদেশের যেকোনো মানুষকে আপনি কোনো স্থানের হদিস জানতে চাইবেন, সে বিনা দ্বিধায় বলে দেবে, “ওই তো, দেখা যায়।” অথচ স্থানটা হয়তো আরো ১০ মাইল দূরে। হাসবেন না। এবার চালনা যেতে গিয়ে ওই “ওই তো ওই দেখা যায়” শুনে শুনে ৮ মাইল হেঁটেছিলাম। তাছাড়া গ্রামের মানুষের কাছে ২/৩ মাইল স্থানকে মোড়ের দোকানে গিয়ে বিড়ি কেনার মতো সহজ মনে হয়। আবার দেখা যাবে, কাউক জিজ্ঞেস করলেন, “অমুক রাস্তা বা ঠিকানাটা কোথায়?” তিনি না চিনলেও বলবেন, “সামনে গিয়ে ডানে ঘুরবেন। তারপর কিছুদূর গিয়ে বামে, তারপর ডানে, তারপর সোজা গিয়ে একটা বড় দোকান, তারও পরে.....................................” অথচ গিয়ে দেখব, যেখানে শুরুতে ছিলাম, সেখানেই আছি। তখন নিজের চুল ছিড়ি। আবার সদ্য চালু হওয়া গুগল ম্যাপের সাহায্য নেবেন? একবার একটা অফিসে যাব। সাভারে। চোখ বুজে ম্যাপে লোকেশন দেখে সেইমতো ড্রাইভারকে যেতে বললাম। ম্যাপে ট্রাক করছি। ঠিকমতোই এগোচ্ছি। যেতে যেতে প্রায় পৌছে গিয়েছি। শেষতক ম্যাপে যেখানে দেখালো, এখানেই স্পট, সেখানে নেমে দেখি একটা ধু ধু করা মাঠ। কোনো অফিস নেই। শেষতক মানুষজনকে জিজ্ঞেস করে তবে বাঁচোয়া। তবে ভ্রমনে আমি আজও একচেটিয়া বা অন্ধের মতো করে গুগল ম্যাপের ওপর ভরসা করি না। কারন জিনিসটা বাংলাদেশে একশোভাগ প্রূভেন না। তাই ম্যাপের সাথে সাথে মানব ম্যাপেরও সাহায্য নিই।

ভ্রমনে গেলে আমার সবচেয়ে কষ্ট হয় যেই বিষয়টাতে, তা হল আমাদের অধিকাংশ ভ্রমনপিয়াসুদের দায়ীত্বজ্ঞানহীন কর্মকান্ড। তারা নিজেদের অবিবেচনাপ্রসূত কাজ দ্বারা নিজেদের হয়তো তৃপ্ত করেন ঠিকই, কিন্তু অন্যের জন্য স্থান ও ট্রিপটাকে নরকে পরিণত করতে ওস্তাদ।

পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশের কথা নাই বললাম। যার জন্য প্লাস্টিক বোতল, কনডম, চিপস, মায় স্যানিটারী প্যাডও মেলে টুরিষ্ট স্পটে।

সেরের ওপর সোয়া সের, প্রায়ই দলবেঁধে যাওয়া টুরিষ্টরা চিৎকার, চেচামেচি, হৈ হৈ চিৎকার, স্পিকারে গান বাজনা, বাচ্চাকাচ্চার হাগুমুতু অস্থানে অবনমনসহ, একটা সুন্দর স্পটকে গাজিপুরের গতানুগতিক একটা পিকনিক স্পটে রূপ দেন। ভাবুন তো, আপনি গেলেন হয়তো সুনামগঞ্জের শিমুল বাগানে। সেখানে দিয়ে যদি দেখেন, ডেকসেটে ”ধুম মাচা লে” বাজছে, কেমন লাগবে?

আমার কাছে মনে হয়, আমাদের টুরিস্ট স্পটগুলোর বাসিন্দারাও সবাই আজও পুরোপুরিভাবে নিজেদের টুরিজমের নাগরিক হিসেবে রুপান্তরিত করে উঠতে পারেননি। কীভাবে টুরিস্টদের বিনোদন ও আনন্দ দেবার ফাঁকে ফাঁকে নিজ সংস্কৃতি, এলাকা ও স্পটটিকে হাইলাইট করে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা করা যায়-সেদিকে আমাদের নজর কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এদেশে ‍টুুরিস্টকে মুরগী হিসেবে দেখার প্রবণতা বেশি দেখি।

হ্যা, আমি জেনারেলাইজ করব না। সবাই অবশ্যই একরকম না। মন্দ যেমন আছে, ভালও আছে। এই সবকিছুর মাঝে আমি মিস করি সেই ক্যাম্পাস জীবনে ঢাকার নিরিবিলি রাস্তাগুলোতে দিনময় অগ্যস্ত হেঁটে হেঁটে আরবান টুরিজমের স্বাদ। এখন আর ঢাকার রাস্তায় হাঁটা যায় না। ঢাকা এখন পদচারীর না। ঢাকা এখন নাগরিকের না। ঢাকা শুধুই ভবঘুরের আর দামী গাড়ির নগর। সাহস করে একদিন রাতে ঘুরব ভাবছি। যদি ঘরের বউ পাবনা হেমায়েতপুরে পাঠানোর ‍হুমকী না দেয়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০১

ভুয়া মফিজ বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। একেবারে আমার মনের কথাগুলোই।
রিভিউ দেখবেন শুধু আইডিয়ার জন্য......তাহলে আর হতাশ হতে হবে না।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৪৫

বেচারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আসল মফিজ ভাই। হা হা হা। মনে রাখব।

২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০২

রাজীব নুর বলেছেন: যখন কোথাও ভ্রমনে যাবেন একা যাবেন না। বন্ধুবান্ধব মিলে দল বেঁধে যাবেন। দেখবেন খুব ভালো লাগবে।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৪৫

বেচারা বলেছেন: এটা ভাল বলেছেন। মনে রাখব। তাছাড়া নিরাপত্তার জন্যও এটা দরকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.