নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্তঃপুরবাসিনীর অন্তর্দহন

২২ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:০৪

[[[”মানুষ তো কথা বলবেই। কিন্তু সৌন্দর্য আমাদের অধিকার।”]]]
[[[”বাবা, আমি ওই ছয় ফুট দুইকেই বিয়ে করে নেব। কিন্তু তিন বছর পর।.....................তবেই না হবে ইকুয়াল ইকুয়াল।”]]]
[[[”বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।”]]]

আটপৌড়ে জীবনে বহুল উচ্চারিত উপরের পংক্তিগুলো যেই মানব গোষ্ঠীকে নিয়ে রচীত, মানব সভ্যতার অন্যতম প্রধান নির্মাতা, অপাপবিদ্ধ রহস্যের ভান্ডার সেই নারীকে নিয়ে এই লেখাটি লিখবার সময়ে আমাকে বারবার ভাবতে হয়েছে, একজন পুরুষ হয়ে নারীর জীবন ও মানসজগত নিয়ে লেখাটা কতটা নির্মোহ ও বাস্তবধর্মী হবে। তদুপরি, নারী ও পুরুষ-উভয় ঘরানার পাঠকের ক্ষিপ্ত হয়ে অম্লমধুর বাক্যবানে আমাকে জর্জরিত করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ নামক এই ব-দ্বীপ তার হাজার বছরের সভ্যতা পার করে, ২২৪ বছরের পরাধীনতার গ্লানির অন্তিম লগ্নে ৩ লক্ষ নারীর বিরাঙ্গনার তিলক ধারনের অভিজ্ঞতা সত্বেও, অধুনা উন্নয়নশীল ও গর্জনশীল দেশের তকমা অর্জন করেও, বিগত তিন দশক ধরে একটানা নারীর নেতৃত্বে পরিচালিত হবার পরেও, এখানে এখনো নারী ও পুরুষের আত্মপরিচয় ও দ্বন্দ্বের অস্তিত্ব বিলীন তো হয়ই নি। বরং, বেড়েছে। নারীকে নিয়ে কিছু বললে, নারী পুরুষ-উভয়ের কাছেই গালি খেতে হবে। পুরুষেরা তাকে ’নারীবাদী’ নামে কটাক্ষ করবে। নারীরা তার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান হবে, আর অযাচিত উপদেশ বলে ছুড়ে ফেলবে-মোটামুটি এটাই এখনো আমাদের রীতি। তবু যে লিখছি, তার একটি কারন নিচে বলেছি।

আরেকটি হল, কথাগুলো আমার মাথায় ঘুরছে অনেকদিন ধরেই। আমার সহধর্মীনি নিটোলের সাথেও প্রায়ই নারীর চিন্তার জগত নিয়ে কথা হয়। তার কাছ থেকে আমি নারীর রহস্যময় সাইকোলজি সম্পর্কে পাঠ নিই। নারী আর পুরুষের পরস্পর পরস্পরকে নিয়ে কত যে অদ্ভুৎ ধারনা তার। তাকে কথা দিয়েছিলাম, একদিন লিখব পুরোটা টুকরো টুকরো ভাবনা। বড় বড় লেখার জন্য আমি কুখ্যাত। এই লেখাতেও সেই কুখ্যাতি ধরে রেখেছি। তবে কষ্ট করে পড়লে কিছুটা হলেও বস্তু এতে পাবেন। পড়তে গিয়ে কিছুটা একপেশে মনে হতে পারে। তবে ম্যাসকুলিনিজম ও ফ্যামিনিজম নিয়ে আমার আরো কয়েকটি লেখা যদি আপনি পড়েন, তবে সেই বায়বীয় ধারনা উবে যাবে আশা করি।

দিন কয়েক আগে, অনেক দিন পর একজন সুহৃদের সাথে কথা হচ্ছিল। এক পর্যায়ে ফোক ফেস্টের কথা উঠল। তিনি ফোক ফেস্টে (তার ভাষায়) মেয়েদের বিপুল মাত্রায় উগ্রভাবে সিগারেট ফোঁকার দৃশ্য নিয়ে তার আহতবোধের কথা বললেন। ’মেয়ে’ হয়ে প্রকাশ্যে সিগারেট ফোঁকাকে আমার ন্যায় বা অন্যায় কোনোটাই মনে হয় না। কিন্তু এখানে তা নিয়ে কথা বলার কারন ভিন্ন। কথায় কথা বাড়ল। আমরা দু’জন নানা বিষয়ে দ্বিমত করলেও একটি বিষয়ে দেখা গেল দু’জনের ভাবনাটি এক। তা হল, আমরা যতটা নিজের চাহিদা বা ভাল লাগা হতে নিজের ও সমাজের পশ্চিমাকরণ করছি, তার চেয়ে বেশি কারন হল, আমরা স্রেফ অনুকরণ করতে চেয়ে ইচ্ছা করে অনুকরণ করছি। ভাবনাটা সেজন্যই দানা বাঁধে।
পশ্চিমের চাকচিক্যময় বা আপাত আকর্ষনীয় দিকগুলো নিজেদের ভিতর নিচ্ছে ঠিকই, নিজেদের আধুনিক করে দেখাতে চেষ্টা করছি ঠিকই, কিন্তু পরক্ষণেই তার ফল যখন ফলছে, সেটা ’হাজার বছরের বাঙালী ঐতিহ্যে’ আটকাচ্ছে। তখন কিন্তু আমরা অকাতরে থানায় গিয়ে “বিয়ের মিথ্যে প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষন” এর মামলা করতে দ্বিধা করছি না। এ বড় বিষম বৈপরীত্য। যেন পশ্চিমাকরণের বাঙাল ভার্সন।

এই অনুকরণ ভাল না খারাপ, তার বিচারের আগে আরেকটি বিষয় ঠিক করা দরকার। তা হল, আমরা কেন অনুকরণ করছি? আমরা এই পশ্চিমাকরণ হতে কী চাই? ম্যাসকুলিনিজমের বিপরীতে ফ্যামিনিজমকে দাড় করানোর চেষ্টা নতুন কিছু নয়। ঠিক যেমন নতুন নয়, একটি ভারসাম্যপূর্ন, কিংবা আরো সঠিকভাবে বললে, একটি লৈঙ্গিক বৈষম্যহীন সভ্যতা হতে লৈঙ্গিক বৈষম্যের সভ্যতায় রুপান্তর হয়ে পড়ার অভিযাত্রায় আমাদের নারী ও পুরুষের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার দরকার হয়ে পড়ল কেন? মানব সভ্যতা যখন স্রেফ জীবন রক্ষার নামান্তরমাত্র ছিল, যখন ”মারো, না হয় মরো”-এমনটাই ছিল মানবের জৈব যাত্রার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান, তখন কি এই বিভেদ, বৈষম্য আর ভারসাম্য রক্ষার সংগ্রাম পৃথিবীতে ছিল? প্রশ্ন রইল।

আমি কোনো এনথ্রোপলজিস্ট নই। এথনিক অরিজিন নিয়ে আমার পড়াশোনা নিতান্তই শুন্য। এমনকি আমার একাডেমিক পাঠও একদমই অপ্রতুল। তাই আমার লেখার লিটারেচার ও একাডেমিক ভ্যালু কখনোই ছিল না। এখানেও পাবেন না। যেই থীমটি নিয়ে আজ কথা বলছি, সেটি আমার মাথায় সবসময়ই ঘুরত। না, আমি নারীবাদী বা পুরুষবাদী-কোনোটাই নই। আমি নারীর তথাকথিত মুক্তি কিংবা পুরুষ দিবসের মাহত্ম্য নিয়েও কাতর নই। আমার একজন নিয়মিত পাঠক আছেন। অপ্রাসঙ্গিকভাবে তিনি আমার কোনো একটি লেখায় নারীর আত্মপরিচয় ও নারীর প্রকৃত শত্রূকে নিয়ে লিখতে সনির্বন্ধ অনুরোধ করলেন। এমন বিষয়ভিত্তিক লেখার অনুরোধ এর আগেও করেছেন। আমি লিখেছি ওই বিষয়ে। যদিও আমি কখনো বিষয়ভিত্তিক লিখি না। গঠনমূলক ও উদ্দেশ্যমূলক তো নয়ই। কিন্তু এই ক্ষেত্রে এসে আমার চিন্তার জগত ও তার ফরমায়েশ এক হয়ে যাওয়ায় ভাবনাগুলোকে অক্ষরে ধরে রাখতে বসে গেলাম।
যদিও জানি না, বায়োলজিক্যালী একজন পুরুষ হয়ে নারীর আত্মপরিচয় ও ভাবনার জগতকে মাথায় নিয়ে তাদের কথাটি লেখা কতটা উচিত বা যৌক্তিক কাজ হবে। বলতে গেলে এই লেখাটি একটি পূর্নাঙ্গ পরিযায়ী লেখা। কারন অফিস যাওয়া ও আসার পথে গাড়িতে বসেই পুরোটা লেখা। মানে, লেখার শুরু মিরপুরে, মাঝপথে তেজগাঁও, বিকেলে লেখার লেজুড় আবার ফার্মগেট তো রাতে তা মিরপুর। যারা আগের মতোই হাত পা ছড়িয়ে বসে গোলাপি বলে টেস্ট দেখতে দেখতে ভাববেন, “ব্যাটা নিশ্চই অফিস ফাঁকি দিয়ে....................” তাদের জন্য এই ব্যখ্যাটা।

লেখার চিন্তাটির জন্ম কোনো এক শনিবারে। শনিবার, মানে একটু ব্যতিক্রমী দিনে সপ্তাহান্ত পাওয়ায় আমার দিনটিতে খুব অদ্ভূৎ কিছু অভিজ্ঞতা হয়। এমনই এক শনিবারে বারান্দায় গাছের যত্নের কাজ করছি নিটোল এবং আমি। ভ্যানে করে সিডি বিক্রি করছেন এক ফেরিওয়ালা। তার মাইকে বাজছে,
"সাবধানে থাকিও নারী পর্দার আড়ালে।"
আমার মাথায় তখন হতে একটি চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগল, জাতীয় বা বৈশ্বিক-সবখানেই কি নারী এক বিপন্ন প্রজাতি? যাকে এমনকি পর্দার আড়ালেও সাবধানে থাকতে হয়? তা না হলে তাকে সারাক্ষণ আগলে রাখার, সামলে থাকার এই ব্যকূলতা কেন?
কে যেন একবার বলেছিল, হরিণের সবচেয়ে বড় শত্রূ হল তার গায়ের মাংস। নারীর ক্ষেত্রে সেটি কী? সেটা কি নারীর রূপ, অসহায়ত্ব? নাকি পুরুষ? নাকি আরেকজন নারী? সহজেই অনুমেয়, যে, আপনি একজন পুরুষ হলে নারীকে নারীর প্রধান শত্রূ বানিয়ে দেবেন। আর নারী হলে পুরুষকে। আমি যদি বলি, নারীর শত্রূ আসলে একক কেউ না। খোদ প্রকৃতিও তাকে বানিয়েছে সবার চেয়ে আলাদা। কীভাবে? নারীর জন্ম আপাতঃ দৈহিক মোহময়তা নিয়ে। নারী আকর্ষক অথচ দুর্বল, স্পর্শকাতর, নাজুক ও স্বল্পগতি। হ্যা, সচেতন চেষ্টায় নিজেকে এর হতে বের করে নিয়ে যাওয়া নারী অনেক আছেন। তবে সেরকম একজন নাদিয়া কোমানিচি কিংবা ইসিনবায়েভা’র সংখ্যা নেহাতই হাতে গোনা। আমার অনেক সময়ই মনে হয়, এই ব্যতিক্রম বা পশ্চাৎপদতাই নারীর সব থেকে বড় বাস্তবতা আর শত্রূ। আর মানব সভ্যতা যতই বর্তমানের দিকে এগিয়েছে, ততই এই দুর্বলতাকে পূঁজি করে তাকে ক্রমাগত নানা প্রতিবন্ধকতায়, অবগুন্ঠনে, বিধি নিষেধের বেড়াজালে, কিংবা প্রলোভনের জালে বন্দী করেছে। আর তাইতেই দুটো অত্যন্ত আপত্তিকর নারীহিতৈষী সুর চলতে ফিরতে আমাদের কানে বাজে:
”সাবধানে থাকিও নারী পর্দার আড়ালে।” কিংবা, ”সৌন্দর্য আমাদের অধিকার।”

বাংলাদেশ ও ভারতের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর একটি বিশাল সংখ্যকই সিরিয়াল নামে এক ধরণের না নাটক, না সিনেমা, না প্রামাণ্য অনুষ্ঠান, না কমিকস টাইপের অনুষ্ঠান হিন্দী ও বাংলাতে প্রচার করে। আমাদের শৈশবে দেখে আসা টেলিভিশন প্রচারের ধারনার সাথে এই চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান ও আয়োজনের একদমই মিল নেই। অধুনা ব্রাত্য ও হাস্যকর হয়ে ওঠা বিটিভি (যদিও নামটি BDTV বা বাটেভি হবার কথা) আমাদের শৈশবে অত্যন্ত চমৎকার ও মানসম্পন্ন অনুষ্ঠানের জন্য জনপ্রিয় ছিল। তবে মানের চেয়ে আমার কাছে বৈচিত্রটি আজও মনে স্থান করে আছে। অসংখ্য ধরনের নাটক, খবর, ম্যাগাজিন, গান, নাচ, যন্ত্রসঙ্গীত, শিশুতোষ, প্রামাণ্যচিত্র, ধর্মীয়, বৈজ্ঞানিক, শিক্ষামূলক, সেবা, মেডিক্যাল-হাজার ধরনের বৈচিত্রময় অনুষ্ঠান ছিল। যা আজকের টেলিভিশনে অভাবনীয়। আজকের হাস্যকর বাটেভি তবুও কিছুটা সেই ধারা বহাল রেখেছে।

যাহোক, তো টেলিভিশনের সিরিয়াল নামক এই নতুন ধারায় আকন্ঠ মজে আছে বাংলাদেশ ও ভারতের একটি বিশাল সংখ্যক দর্শক। কোনো রকম জরিপ হয়তো হয়নি, তবে সাধারনভাবে ধারনা প্রকাশ করা হয়ে থাকে, এই সিরিয়ালগুলোর সিংহভাগ দর্শক নারীরা। এবং সামাজিক ও প্রথাগত প্রচার মাধ্যমে নির্বিচারভাবে প্রচার করা হয়ে থাকে, এই সিরিয়ালগুলো আমাদের নারী দর্শকদের বিপথে চালিত করার ও সাংস্কৃতিক অবনমনের জন্য ব্যপক হারে অবদান রাখছে। যাহোক, এই সিরিয়ালগুলোর কিছু কিছু অংশ দেখার ও জানার সুযোগ আমার হয়। সেই অভিজ্ঞতা যদি বলি, তবে বলব, শতভাগ নারী চরিত্র নির্ভর এইসব সিরিয়ালের একটি বড় অংশ জুড়েই থাকে নারী কর্তৃক নারীর হেনস্থা, ষড়যন্ত্র, অসম্মান, অবহেলা, অত্যাচার, ক্ষতি, দমন, পীড়ন এসবের নাট্যায়ন।
আমার পার্টনার, মানে গাটছড়া বাঁধা বন্ধু, মানে স্ত্রী মাঝে মধ্যে সেই নাট্য চরিত্রের নানা কাজের বিশ্লেষন নিয়ে আমার সাথে বিপুল উৎসাহে তর্ক করেন। আমি তাকে থামাই, “নিটোল, নিটোল, এটা নাটকের দৃশ্য। বাস্তব নয়।” তবে বলে ফেলে আবার নিজে ভাবি, নাটক তো জীবন, জগত হতেই নেয়া।

এই আঙ্গিকে যদি ভাবি, তবে এটা মনে করার যথেষ্ট কারন আছে, যে, আমাদের সমাজে নারীরা আসলে কোন শত্রূর দ্বারা, কোন প্রতিবন্ধকতা দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত, কার হাতে সবচেয়ে বেশি বিপন্ন? সেটি কি পুরুষ? নাকি নারী? নাকি অন্য কিছু? যদিও সাধারনভাবে প্রবলভাবেই প্রচার ও বিশ্বাস করা হয়ে থাকে, পৃথিবীতে নারীর বৃহত্তম শত্রূ ও সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হল পুরুষ। ক্রমবর্ধমান ম্যাসকুলিনিজম ও ফেমিনিজমের স্বাভাবিক দ্বান্দ্বিক পরিণতি হিসেবে নারী ও পুরুষ-উভয়ে উভয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী ও মুখোমুখি দুটি স্বত্ত্বা হিসেবে পরিণত হচ্ছে। পুরুষকে ক্রমাগত দায় চাপানো হচ্ছে নারীকে অবদমিত, নিগৃহিত, নিঃশেষিত করার জন্য।
হ্যা, পুরুষরাও নারীকে খুবই অযৌক্তিকভাবে মূর্তিমান উপদ্রব, সম্পত্তি ও অধিকারের বস্তু হিসেবে প্রতীয়মান করার চেষ্টা একই গতিতে চালিয়ে যাচ্ছে। এই দ্বন্দ্বটি প্রচ্ছন্ন, ও সমাজের নিয়মিত প্রবাহের সাথে লীন হয়ে সমান গতিতে চলমান। যদিও নারীর অধিকার ও মুক্তি নিয়ে বিশাল সংখ্যক পুরুষও সমানে সোচ্চার, উচ্চকিত। তবু সাধারনভাবে নারীর প্রধান চ্যালেঞ্জ সেই পুরুষই। এই লেখার লক্ষ্য যেহেতু ভিন্ন, তাই এ নিয়ে আর বিস্তারিত বলছি না।

নারীর কি বন্ধু আছে? তার শত্রূ আসলে কে? ওই যে বলেছিলাম না? হরিণের প্রধান শত্রূ তার গায়ের মাংস। নারীর শত্রূ খোঁজার আগে আসলে এটা ভেবে নিলে ভাল হবে, যে, নারীও একজন মানুষ এবং একজন মানুষের সবরকম বৈশিষ্টই তার ভিতরে দীপ্যমান। যাহোক, আসুন তো, নারীর চোখে দেখার চেষ্টা করি, নারী জনমের অধ্যায়টা আসলে কোন আঁধারের ব্লাকহোলে লুপ্তপ্রাণ।
এক: নারীরূপে সৃজিলেন ভগবান: এই দেহ মানে তার অঙ্গসৌষ্ঠবমাত্র নয়। তার সার্বিক বায়োলজিক্যাল বৈশিষ্ট। যুগ যুগ ধরে নারীকে আকর্ষনীয় এক মোহ হিসেবে প্রতিপন্ন করে তোলা হয়েছে। শিল্পীর তুলিতে, কবির কলমে, কুমারের হাতের ছোঁয়ায়। ফলাফল, নারী মাত্রই এক বায়োলজিক্যাল ও সেক্সূয়াল অবজেক্ট। বিশেষত বিকৃতমনা ও ধর্ষকাম পুরুষদের চোখে। তবে বিষয়টা এমন নয়, যে দৈহিকভাবে নারী কেবল পুরুষের জন্যই টার্গেট। শারিরীক সত্ত্বা নারী তার এই বৈশিষ্টের কারনে নারীদের কাছেও টার্গেট হয়। সমান্তরালভাবে আজকাল পুরুষ শরীর নিয়েও নানা আইটেম চারপাশে প্রচার পায়। পুরুষকে আকর্ষনীয় করে উপস্থাপনের নানা পদ পরিবেশিত হয় হরহামেশা। কিন্তু তার মাত্রা, সীমা ও লক্ষ্যভেদ এখনো ততটা নয়, যতটা নারীর। মিস্টার ইউনিভার্সের চেয়ে মিস ইউনিভার্স তাই অনেক ব্যাপক জনপ্রিয়। ফ্যাশন হাউস, বিউটি কনটেস্ট, বিউটিফিকেশনের বিজনেসে একচেটিয়াভাবে নারীরাই টোপ, নারীরাই কাস্টমার। তবে নির্মাতা বেশিরভাগই পুরুষ।

যুগ যুগ ধরেই নারীদেহকে কামনার, পূজার উপাচার হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কখনো শক্তিবলে, কখনো ছলে, কখনো কৌশলে। যেভাবেই সেটা হয়ে থাকুক, ফলাফল একই। সব মিলিয়ে ঘরে, বাইরে, রাস্তায়, বাজারে, অফিসে, মাঠে, ঘাটে নারী এক মহা আরাধ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। আর স্বাভাবিকভাবেই তাতে নারীর মানবিক পরিচয় উহ্য হয়ে তার বায়োলজিক্যাল বাজার চাহিদাই বেশি প্রতিভাত হয়েছে। সবার আকাঙ্খিত ও কাম্য বস্তুর টার্গেটেড হওয়াটা তাই খুব স্বাভাবিক। রোজ ওঠা সুর্যও যেমন স্বাভাবিক হয়ে যায়, তেমনি এই প্রশ্নসাপেক্ষ মুক্তির যাত্রাও এখন গা সওয়া, বরং এটাই হয়ে গেছে নারীমুক্তির ঝান্ডা। কতটা তা সত্যি, কতটা আরোপিত-জানি না। বিজ্ঞজনরা জানবেন।

**পর্ব-২ ও পর্ব-৩ এ সমাপ্য। [আমি আসলে পাঠকের জন্য লিখি না। আমার ভাবনাকে স্রেফ লেখায় ধরে রাখি। তাই লেখার কলেবর বিশাল হওয়ায় কিছু করার থাকে না। লেখায় প্রকাশিত আমার ভাবনার সাথে আপনার দ্বিমত থাকলে যৌক্তিকভাবে বলুন। তবে মন হতে বলছি, আমার লেখায় তাত্ত্বিক ভুল থাকতে পারে। তথ্যগত ভুল থাকতে পারে। বানান ভুলতো অবশ্যই। সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। সময় স্বল্পতায় ও আরো কিছু বাস্তবতায় আমার বিশ্বাসের বিপরীতে গিয়ে বাংলা ও ইংরেজির মিশেলে লিখতে বাধ্য হয়েছি। সেজন্য মানসিক পীড়ন থাকবে। পাবলিক লেখা শেয়ার করার জন্য কোনো অনুমতি দরকার নেই। তবে লিখিয়ের নামটি না লুকালে খুশি হব। লেখার উদ্দেশ্য মোটেই নারী মুক্তি বা নারীর অসহায়ত্ব’র প্রতি সমবেদনা জানানো নয়।
ভাতের স্বাদ বুঝতে যেমন লবন লাগে, তেমনি লেখাটি বুঝতে হলে আরো কিছু লেখা পড়া দরকার। সেই লেখাগুলোর লিংক দিলাম। সময় পেলে পড়বেন:
১. Click This Link
২. Click This Link
৩. Click This Link
৪. Click This Link
৫. Click This Link
৬. Click This Link

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: এত প্যাচানোর দরকার কি?
সোজা বলেই ফেলুন-
নারী আজও স্বাধীন নয় আমাদের দেশে।
নারী আজও পন্য। (টিভির বিজ্ঞাপন গুলো দেখলেই বুঝা যায়)
আজও একটা মাস্টার্স পাশ করা মেয়ে একা ইন্টারভিউ দিতে যেতে সাহস পায় না।

২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৪

বেচারা বলেছেন: রাজীব নুর: বিশ্লেনাত্মক লেখাকে যদি আপনার মনে হয় প্যাচানো, তবে বলব, আপনি আরেকটু জেনেবুঝে লেখালিখির জগতে আসুন। লেখা মানে যদি হয় প্যাচানো, তবে আর লিখবার দরকার কী?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.