নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানুষ- ই থাকতে চাই - বিদ্যুৎ; কবি, লেখক, কলামিস্ট আর ব্লগিং তো করিই সব সময়।

বিদ্যুৎ

আমি মানুষ-ই থাকতে চাই - বিদ্যুৎ

বিদ্যুৎ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রেখেছ কাঙ্গালী করে, বাঙ্গালী করোনি, মানুষ হওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনি!

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩১

গত ৮ই অক্টোবার ছিল ভাষা মতিন এর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী। শুধু ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে রাষ্ট্র তো নয়ই তাঁর খুব কাছের মানুষরাও তেমন ঘটা করে এই মহান মানুষটির প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী পালন করেননি।আমরা সবাই আপনারে লয়ে ব্যস্ত, আমি নিজেও তো তাই, সেই জন্যেই তাঁকে নিয়ে দু কলম লিখতেও তো সময় হয়নি আমার। জীবন জীবিকার জন্য আজ নিজ পরিবার, আত্মীয়, পরিজন ছেড়ে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে শুধু দুমুঠো ভাত আর নিরাপদ বেঁচে থাকার তাগিদে আজ আমি যাদের গোলামী করছি সেই তারাই একসময় গোলামী করার জন্য বঙ্গভূমে গিয়েছিল, কায়দা করে ক্ষমতা লুট করে দু’শ বছর শাসন-শোষণ করেছে। তাই গোলামীর ব্যস্ততায় সময় মত দু এক কথা লিখতে পারিনি তা আমি দুর্ভাগ্যই মানি। ভাষা মতিন এর মত এমন গুণীজনদের নিয়ে দু কলম লেখাটাও তো ভীষণ কঠিন ব্যাপার, কারণ লেখার মত জ্ঞান গরিমা এমন কি সাহস কোনটায় যে আমার নেই কিন্তু মনের প্রাণে উপলব্ধি করি তাঁকে এবং তাঁর মত গুণীজনদের। যমুনা বিধৌত সুবিশাল নদীর মোহনায় এক শান্ত সুশীতল সবুজের সমারোহ এক জনপদের নাম সিরাজগঞ্জ। বছরে প্রায় অনেকটা সময় প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় এই সিরাজগঞ্জ অঞ্চল ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মখিন হয়। এমনকি যমুনার করাল গ্রাসে এই জনপদের বেশ বড় একটি অংশ নদী গর্ভে বিলীন। এই নদী ভাঙ্গনের কারণেই ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের বাবা আব্দুল জলিল কে ১৯৩০ সালে গ্রামের বাড়ী ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে ভারতের দার্জিলিং এ চলে যেতে হয়েছিল। সেখানে জালাপাহারের ক্যান্টনমেন্টে সুপারভাইস স্টাফ হিসেবে একটি চাকরি পেয়ে যান তাঁর বাবা আব্দুল জলিল। ১৯৩২ সালে আব্দুল মতিন শিশু শ্রেণীতে দার্জিলিং-এর বাংলা মিডিয়াম স্কুল মহারাণী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন এবং তখন সেখানেই তাঁর শিক্ষা জীবনের শুরু। যমুনার করাল গ্রাস এবং নিয়মিত বন্যা সিরাজগঞ্জ জনপদ কে ক্ষতবিক্ষত করলেও এখানকার মাটি খুবই উর্বর, শুধু ফসলের জন্য উর্বর তা নয় এখানে রয়েছে অদৃশ্যমান এক উর্বরতা যেখানে শুধু ক্ষণজন্মা গুণীজন জন্ম নেয়। বিধাতা নিজ হাতে এই অঞ্চলকে সাজিয়েছেন। তাই তো এক একজন গুণীজন মহা তারকা হয়ে শুধু অঞ্চল নয়, দেশ নয় সমগ্র পৃথিবীকে যেন আলোকিত করেছে। এই অঞ্চলে এত বেশি গুণীজন জন্ম হওয়ার কারণ হয়ত এই অঞ্চলের মানুষ হয়ত গুণীজনদের বেশি বেশি সম্মান এবং সমাদর বা কদর করতেন!মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, নজিবর রহমান সাহিত্য রত্ন, বিজ্ঞানী ড, আব্দুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন, ফজলে লোহানী, যাদব চন্দ্র চক্রবর্তী, রজনীকান্ত সেন, মকবুলা মঞ্জুর এবং মহা নায়িকা সুচিত্রা সেন সহ আরও অনেকে আছেন যা লিখতে গেলে অনেক লম্বা হবে।
শুধু নেতা নেত্রী নয়, আমরা প্রায় সবাই শুধু মাত্র মহান মুক্তিযুদ্ধ অর্থাৎ মোটকথা ১৯৭১’র মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি আর নানা সময় নানা বিতর্ক উস্কে দিয়ে রাজনৈতিক ভাবে আমাদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছি। কিন্তু এই ৭১’র পিছনের ঘটনা বারবার আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার কারণ খুব পরিষ্কার যে বা যারা এখন রাজনীতি করেন তাদের বেশির ভাগ লোকের যে পরিচিতি সংকট মারাত্মক। কেউ বাপের, কেউ স্বামীর, পরিচয়ে আবার কেউ কালো টাকা, পেশি শক্তি ইত্যাদি দিয়ে পরিচালিত তাদের তো কোন নিজস্বতা নেই।
৭১’র শুরু যে সেই ১৯৫২ সালে তা আমরা মানতে নারাজ! আবার আমরা কেউ কেউ মানলেও শুধু স্মৃতি হাতড়ায়। ১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলায় আব্দুল মতিনের অবদান অন্যতম। সেবছর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের ছাত্রসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন তিনি। শিক্ষার্থীদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়কও ছিলেন তিনি। তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই কলাভবনের জনসভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের। তাঁরই নেতৃত্বে একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সারা দেশে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলনের নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। মূলত ১৯৫২ সালে জারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা তারপর একে একে সালাম,বরকত, রফিক, জব্বর ও শফিকের শহীদ হওয়া ছিল ৭১’র ভিত্তি স্থাপন। ভাষা মতিনের নেতৃতে যদি ১৯৫২ সালে জারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা না হত তাহলে হয়ত আমরা ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এমন বীরত্ব প্রমান করার সাহস-ই পেতাম না।সান্ধ্য আইন ভেঙ্গে, শাসকের চোখ রাংগানিকে বিদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে কিভাবে নিজেদের অধিকার আদায় করা যায় সেই সাহস ও কৌশল ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন ই দেখিয়ে ছিলেন।
সমস্যা গুরুতর, আমরা গুণীজনদের আর আগের মত সম্মান করি না। কথায় আছে যেখানে গুণীর কদর নেই সেখানে গুণীজন জন্মায় না। কিছু দিন আগে শুনলাম সিরাজগঞ্জে শহরে বহু পুরনো একটি রাস্তা আছে যেটার নাম “ভাসানী রোড” আর এই রাস্তার সংযোগ স্থল কে “ভাসানী মোড়” বলা হত। এখন তা বদলে নাম করণ হয়েছে “সমাজ কল্যাণ রোড” আর “সমাজ কল্যাণ মোড়”। মনে হয় সেখানে কল্যাণের বন্যা হচ্ছে! আর পাঠ্য পুস্তকের পাতা থেকে তো অনেক আগেই মুছে ফেলা হয়েছে। ব্যাথিত হয়েছি এই জেনে যে, অন্তত ভাসানী সাহেবের জন্ম স্থান এবং এখানকার মানুষ নিজেদের গর্ব করার জন্য ক্ষণজন্মা মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর স্মৃতি বিজড়িত স্থান ও স্থাপনা সংরক্ষণ করবে। কিন্তু নাহ! আমরা তো গর্ব করতেও ভুলে গেছি!
ইন্টারনেট এর সুবাদে এখন বিভিন্ন কমিউনিটি পেইজ খোলা হচ্ছে। এই রকম একটি পেইজ এ একটি কুইজ দেওয়া হয়েছিল। একজন গুণীজনের একটি ছবি পোস্ট করে জানতে চাওয়া হয়েছিল এই মহান ব্যাক্তির নাম কি? তাঁর জন্মস্থান কোথায়? দুঃখজনক হল শতকরা প্রায় ৭০ শতাংশের মত মানুষ ভুল উত্তর করেছেন। এই হল আমাদের দুরাবস্থা! আমরা নিজেরা কি আমরা তাও জানি না।
ভাষা নিয়ে দেশে বিদেশে বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষের মধ্যে অনেক কথা হচ্ছে। আমাদের মধ্যে অনেক পণ্ডিতগণ বাংলা ভাষা নিয়ে অনেক মায়া কান্না করেন কিন্তু নিজেদের ছেলে-মেয়েদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াবে, ঘরে গিয়ে টেলিভিশনে হিন্দি সিরিয়ালে ডুব দিবে! আমার সবচেয়ে বড় অক্ষমতা হল আমি হিন্দি ভাষা বলতে পারিনা। বিভিন্ন ভাষা জানাটা ভাল, কিন্তু অহেতুক এক ভাষার মধ্যে অন্য ভাষা ব্যবহার করলে তা নিজেদের আত্ন পরিচয় সংকট প্রকাশ পায়। আর এই বিষয়টি বাঙ্গালী সমাজে ব্যাপক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
আমি একটু সুযোগ পেলেই আমার বিদেশী বন্ধুদের বলি পৃথিবীতে একমাত্র একটি দেশ আছে যারা ভাষার জন্য যুদ্ধ করে জীবন দিয়েছে আর সেটা হল বাংলাদেশ। তোমরা কি জানো বাংলাদেশ সম্পর্কে? “বিশ্ব আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস” আমরাই বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছি জানো? এভাবেই আমি আমাদের ভাষা আন্দোলন,সংগ্রাম তাদের কাছে বলি। তারা শুনে রীতিমত অবাক হয়।
যুক্তরাজ্যে গত নির্বাচনে বারকিং আসনের লেবার দলের বর্তমান এম পি মারগারেট হডজ তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছিলেন তাঁর দল ক্ষমতায় গেলে তাঁর আসনে সব বিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করবেন।বাঙ্গালী কমিউনিটিতে নতুন প্রজন্ম অনেকই বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারেনা। আবার কয়েকদিন আগের এক খবর নিউইয়র্ক শহরে সরকারী বিদ্যালয় গুলোতে বাংলা হল চতুর্থ নম্বর প্রধান ভাষা। বিদেশের মাটিতে বিদেশীদের নেওয়া পদক্ষেপে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা সম্প্রসারিত হচ্ছে জেনে খুব ভাল লাগচ্ছে। কিন্তু আমারা বাঙ্গালীরা কি করছি? অন্তত যুক্তরাজ্য বিশেষ করে লন্ডন এর কথা বলতে পারি, অনেক বাঙ্গালী অনর্গল হিন্দি বলে যাচ্ছে কিন্তু বাংলা বলতে অপমানিত বোধ করে! অথচ যেদেশে থাকেন সেই দেশের ভাষা ইংরেজি বলতে পারেনা তখন অনুবাদকের শরণাপন্ন হন।
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, রেখেছ বাঙ্গালী করে, মানুষ করোনি। সেই সময় হয়ত বাঙ্গালীর মানুষিকতা ও মানবিকতার কমতি দেখে আক্ষেপ করে বলেছিলেন। কিন্তু একদা আমরা যে মনে প্রাণে বাঙ্গালী ছিলাম রবীন্দ্রনাথের এই কথাটির মাধ্যমে তা পরিষ্কার বোঝা যায়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যদি এখন জীবিত থাকতেন তাহলে কি বলতেন?
আমার ধারণা তিনি হয়ত বলতেন ...
“রেখেছ কাঙ্গালী করে, বাঙ্গালী করোনি, মানুষ হওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনি!”

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২

আবু শাকিল বলেছেন: যারা জীবিত আছেন তাদের ই কেউ মনে রাখছে না।
ক্ষমতা !!!

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:০৮

বিদ্যুৎ বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য। আপনার কথা খুবই সত্য তবে ক্ষমতা সবকিছু হলেও ক্ষমতা সবসময় এক স্থানে বা একজনের হাতে থাকে না, এটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশে ক্ষমতা বদলায় কিন্তু এক লম্পট থেকে অন্য লম্পট এর হাতে তাই হয়ত আমাদের এই অবস্থা তবে একদিন নিশ্চয় সৎ লোকের হাতে ক্ষমতা যাবে আর সেইদিন সবকিছুই সুন্দর হবে।

২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:৫২

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: নূতন করে লেখা হোক "সফলদের" স্থানে "ব্যর্থদের কথা।।
এদের কারো মুখে শুনেছি,prostitution is batter then politics তাও আদর্শরূপী একজনের কাছ থেকে!!

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:১৯

বিদ্যুৎ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি কোন আদর্শরূপী একজনের কাছ থেকে উক্ত কথাটি শুনেছেন আমি জানি না। তবে যদি তিনি Dirty Politics এর সাথে তুলনা করে কথাটি বলে থাকেন তাহলে কথাটির বিশেষ গুরুত্ব আছে।

৩| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৩৫

সুপ্ত আগ্নেয়গিরি মাহি বলেছেন: অসাধারণ, ,,,,তবে মানবতা প্রতিনিয়ত ই ঢুকরে ঢুকরে কাদে,,,,,

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৪:৩০

বিদ্যুৎ বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য।

৪| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:

বিরাট জনসংখ্যার সব সুযোগ াল্প কয়েকজন দখল করে রেখেছে।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৮

বিদ্যুৎ বলেছেন: খুব সত্য কথা বলেছেন। এই অবস্থা আসলে পুরো বিশ্বেই এখন বিরাজমান। বিশ্বের মোট সম্পদের অর্ধেক হল ১% এরও কম লোকের হাতে। আর বাংলাদেশে তো ভয়ংকর অবস্থা। শুধু সম্পদ নয়, সব কিছুই এখন কতিপয় লোকের দখলে।

৫| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:

ইউরোপ ভালো থাকার পদ্ধতি বের করেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.