নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানুষ- ই থাকতে চাই - বিদ্যুৎ; কবি, লেখক, কলামিস্ট আর ব্লগিং তো করিই সব সময়।

বিদ্যুৎ

আমি মানুষ-ই থাকতে চাই - বিদ্যুৎ

বিদ্যুৎ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর ৩৯তম প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:৩৬

মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (ডিসেম্বর ১২, ১৮৮০-নভেম্বর ১৭, ১৯৭৬) বিংশশতকী ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের নায়ক, যিনি জীবদ্দশায় ১৯৪৭-এ সৃষ্ট পাকিস্তান ও ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের মানুষের কাছে 'মজলুম জননেতা' হিসাবে সমধিক পরিচিত। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে অন্যতম। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। গত ৮ই অক্টোবার ছিল ভাষা মতিন এর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী। শুধু ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে রাষ্ট্র তো নয়ই তাঁর খুব কাছের মানুষরাও তেমন ঘটা করে এই মহান মানুষটির প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী পালন করেননি।আমরা সবাই আপনারে লয়ে ব্যস্ত, আমি নিজেও তো তাই, সেই জন্যেই তাঁকে নিয়ে দু কলম লিখতেও তো সময় হয়নি আমার। জীবন জীবিকার জন্য আজ নিজ পরিবার, আত্মীয়, পরিজন ছেড়ে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে শুধু দুমুঠো ভাত আর নিরাপদ বেঁচে থাকার তাগিদে আজ আমি যাদের গোলামী করছি সেই তারাই একসময় গোলামী করার জন্য বঙ্গভূমে গিয়েছিল, কায়দা করে ক্ষমতা লুট করে দু’শ বছর শাসন-শোষণ করেছে। তাই গোলামীর ব্যস্ততায় সময় মত দু এক কথা লিখতে পারিনি তা আমি দুর্ভাগ্যই মানি। আজ ১৭ই নভেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা সিরাজগঞ্জের আরেক কৃতি সন্তান মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৩৯তম মৃত্যু বার্ষিকী। জানি রাষ্ট্র, সরকার তাঁর মৃত্যু দিবস সেই ভাবে পালন করবে না যে ভাবে করলে তাঁর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়, আমরা তো করবো না কারণ আমরা অকৃতজ্ঞ! আমাদের মন মানসিকতা নিচু তার প্রমাণ প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছি। একটু দেরিতে হলেও ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন এর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী এবং সিরাজগঞ্জের আরেক কৃতি সন্তান মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৩৯তম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি। মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং ভাষা মতিন এর মত এমন গুণীজনদের নিয়ে দু কলম লেখাটাও তো ভীষণ কঠিন ব্যাপার, কারণ লেখার মত জ্ঞান গরিমা এমন কি সাহস কোনটায় যে আমার নেই কিন্তু মনের প্রাণে উপলব্ধি করি তাঁদের এবং তাঁদের মত গুণীজনদের। যমুনা বিধৌত সুবিশাল নদীর মোহনায় এক শান্ত সুশীতল সবুজের সমারোহ এক জনপদের নাম সিরাজগঞ্জ। বছরে প্রায় অনেকটা সময় প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় এই সিরাজগঞ্জ অঞ্চল ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মখিন হয়।
যমুনার করাল গ্রাস এবং নিয়মিত বন্যা সিরাজগঞ্জ জনপদ কে ক্ষতবিক্ষত করলেও এখানকার মাটি খুবই উর্বর, শুধু ফসলের জন্য উর্বর তা নয় এখানে রয়েছে অদৃশ্যমান এক উর্বরতা যেখানে শুধু ক্ষণজন্মা গুণীজন জন্ম নেয়। বিধাতা নিজ হাতে এই অঞ্চলকে সাজিয়েছেন। তাই তো এক একজন গুণীজন মহা তারকা হয়ে শুধু অঞ্চল নয়, দেশ নয় সমগ্র পৃথিবীকে যেন আলোকিত করেছে। এই অঞ্চলে এত বেশি গুণীজন জন্ম হওয়ার কারণ হয়ত এই অঞ্চলের মানুষ হয়ত গুণীজনদের বেশি বেশি সম্মান এবং সমাদর বা কদর করতেন!মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, নজিবর রহমান সাহিত্য রত্ন, বিজ্ঞানী ড, আব্দুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন, যাদব চন্দ্র চক্রবর্তী, রজনীকান্ত সেন, মকবুলা মঞ্জুর এবং মহা নায়িকা সুচিত্রা সেন সহ আরও অনেকে আছেন যা লিখতে গেলে অনেক লম্বা হবে।

তিনিই প্রকৃত নেতা
মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৩১-এ সন্তোষের কাগমারীতে, ১৯৩২-এ সিরাজগঞ্জের কাওয়াখোলায় ও ১৯৩৩-এ গাইবান্ধায় বিশাল কৃষক সম্মেলন করেন। ১৯৩৭-এ মাওলানা ভাসানী কংগ্রেস ত্যাগ করে মুসলিম লীগে যোগদান করেন। সেই সময়ে আসামে 'লাইন প্রথা' চালু হলে এই নিপীড়নমূলক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন। এসময় তিনি "আসাম চাষী মজুর সমিতি" গঠন করেন এবং ধুবরী, গোয়ালপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৯৪০ সালে শের-এ-বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের সঙ্গে মুসলিম লীগের লাহোর সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৪৪ সালে মাওলানা ভাসানী আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৫-৪৬ সালে আসাম জুড়ে বাঙালিদের বিরুদ্ধে "বাঙ্গাল খেদাও" আন্দোলন শুরু হলে ব্যাপক দাঙ্গা দেখা দেয়। এসময় বাঙালিদের রক্ষার জন্য ভাসানী বারপেটা, গৌহাটিসহ আসামের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়ান। পাকিস্তান আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৯৪৭ সালে আসামে গ্রেফতারহন। ১৯৪৮-এ মুক্তি পান।
১৯৫০ সালে সরকার কর্তৃক রাজশাহী কারাগারের খাপরা ওয়ার্ড এর বন্দীদের উপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অনশন ধর্মঘট পালন করেন এবং ১৯৫০ সালের ১০ ডিসেম্বর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২’র ৩০ জানুয়ারি ঢাকা জেলার বার লাইব্রেরী হলে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠিত হয়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সহযোগিতার কারণে গ্রেফতার হয়ে ১৬ মাস কারানির্যাতনের শিকার হন। অবশ্য জনমতের চাপে ১৯৫৩ সালের ২১ এপ্রিল মওলানা ভাসানীকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়। পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৯৫৩ সালের ৩ ডিসেম্বর কৃষক-শ্রমিক পার্টির সভাপতি শের-এ-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট নামক নির্বাচনী মোর্চা গঠন করেন। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল বিজয় অর্জন করে এবং পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদে ২৩৭ টির মধ্য ২২৮ টি আসন অর্জনের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।


১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় 'স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান' দাবি উত্থাপন করেন। ১৯৭১ এর মার্চ মাসে শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন প্রদান করেন এবং ১৮ জানুয়ারি ১৯৭১ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের জন্য তার প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত যান এবংমুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন।

আপোষহীন নেতা ভাসানী
মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে আপোষহীন নেতাও বলা হয়।
একদিনের কথা...কি একটা দরকারে মাওলানা ভাসানীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল আইয়ুব খানের সাথে । আসরের নামাজ আদায় করে, সাথে তাঁর আরো কিছু অনুসারী নিয়ে তিনি পৌছুলেন প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে । যেতেই সেখানকার রিসিপশনিস্টরা এগিয়ে এলো । মাওলানা ভাসানী কিন্তু থমকে দাঁড়ালেন......
- প্রেসিডেন্ট কোথায় ? সব সময় সে আগায় আসে,আজ কেনো নাই ? - একটু বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ।
- প্রেসিডেন্ট একটু ব্যাস্ত আছেন,মিটিং করছেন । আপনি বসুন,তিনি কিছু সময় পর চলে আসবেন । - অফিসের কর্মকর্তা তাঁকে বোঝালো ।
কিন্তু মাওলানা ভাসানী তো মাওলানা ভাসানীই, এমনিই তো আর 'আপোষহীন' খেতাব পাননি ! তিনি তাদের কাছে জায়নামাজ চাইলেন । পাকিস্তান কার্যালয় , জায়নামাজ এলো । তিনি কার্যালয়ে জায়নামাজ পেতে নামাজ আদায় করা শুরু করলেন । কিছু পরেই আইয়ুব খান এলো । এসে দেখে মাওলানা ভাসানী নামাজে । বাধ্য হয়ে সে দাঁড়ায়ে রইল । নামাজ থেকে তো আর ডাক দেয়া যায় না । এদিকে মহাবিদ্রোহী নামাজ পড়ছেন তো পড়ছেনই......অনেকটা সময় পার হওয়ার পর , তিনি সালাম ফেরালেন । মুখে কিছু বললেন না, কিন্তু যা বোঝাতে চাইলেন আইয়ুব খানের তা বুঝতে বেগ পেতে হয়নি ।
পরে,মাওলানা ভাসানীর এক অনুসারী তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল , হুজুর,আসরের পর তো কোন নফল নামাজ নাই,আপনি পড়লেন যে ? জবাবে হুজুর বলেছিলেন ,' হ্যাঁ, নাই । কিন্ত সেই নামাজ যদি কোন জালেমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটা অংশ হয় , তাহলে পড়া যায় । '


১৯৭৬-এর ১৬ মে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঐতিহাসিক লং মার্চে নেতৃত্ব দেন। নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আপোষহীন, মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ১৯৭৬ সালে ১৭ই নভেম্বর এই দিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মহান নেতার ৩৯তম প্রয়াণ দিবসে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৯

এম ফজলুল করিম বলেছেন: ভাল লাগল পড়ে, সাথে আছি, ধন্যবাদ।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৬

বিদ্যুৎ বলেছেন: পড়ে এবং মন্তব্য করে ভাল লাগা জানানোর জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.