![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই লেকাটাও মুক্ত মনা হতে নেয়া, কেহ মাইন্ড খাইয়েন না।
‘মৌলবাদ’ সম্ভবত আধুনিক পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যাপক ব্যবহৃত শব্দ। আদিতে এই শব্দটি বেশ নির্দোষ ছিলো, কিন্তু ভাষা ওসভ্যতার বির্বতনে এখন এটি হয়ে উঠেছে চরম নিন্দার্থক এবং ভীতিকর। এখন মৌলবাদ বলতে আমরাবুঝিÑপ্রতিক্রিয়াশীলতা, রক্ষণশীলতা, কূপমণ্ডুকতা, আদর্শিক উগ্রতা, চরমপন্থা, প্রগতি ও আধুনিকতা বিরোধিতা ইত্যাদি।মৌলবাদের সমার্থক শব্দে ভরে উঠেছে অভিধান। আজকের প্রেক্ষাপটে বলতে পারি, যা কিছু আধুনিকতা ও প্রগতি ও বিকাশের বিরোধী তা মৌলবাদ এবং যারা এই প্রগতিবিরোধী তন্ত্রে বিশ্বাসী তারা মৌলবাদী। দশকে দশকে আমরা অজস্র প্রজাতির মৌলবাদের উত্থান ও পতন লক্ষ্য করছি। যেমন, খ্রিস্টান ক্যাথলিক মৌলবাদ, সমাজতান্ত্রিক মৌলবাদ, নাৎসি মৌলবাদ, হিন্দু মৌলবাদ, জাতীয়তাবাদী মৌলবাদ প্রভৃতি। আমরা আরো শিখেছি যে, কোনো মৌলবাদই চিরস্থায়ী নয়। আজকের পরিবর্তিত বিশ্বে সর্বাধিক আলোচিত কট্টরপন্থার নাম ‘ইসলামি মৌলবাদ’। তবে আজ এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য এসব আলোচিত মতবাদ নিয়ে পুনঃ আলোচনা নয়; আজ আমরা আলো ফেলে দেখতে চাই বাঙলাদেশের একটি অন্ধকারাচ্ছনড়ব মতবাদের ওপর, যার যথার্থ ব্যবচ্ছেদ ইতঃপূর্বে ঘটেনি, যার নাম আমরা দিতে পারিÑ ‘সিলেটি মৌলবাদ’। অন্য যে কোনো মৌলবাদের মতোই ‘সিলেটি মৌলবাদ’ শব্দগুচ্ছটি বেশ ব্যাপক তাৎপর্য বহন করে, যা এককথায় ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। তবু সঙ্গত কারণেই প্রশড়ব জাগতে পারে, সিলেটি মৌলবাদ বলতে আমরা কী বুঝি? এটি এমন একটি প্রপঞ্চ যা ধর্মীয়, আঞ্চলিকতা, জাতীয়তাবোধ এমন আরো বহু চেতনার কিম্ভুত সমষ্টি; যার স্বরূপ উদঘাটন করতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে একটু পেছনে, ব্যবচ্ছেদ করে দেখতে হবে সিলেট এবং সিলেটিদের ইতিহাস স্বরূপ-প্রকৃতি।
একথা আমরা সবাই মোটামুটি জানি যে, সিলেটের আদি নাম ছিলোÑ‘শ্রীহট্ট’। শ্রীহট্টের আদি বাসিন্দারা মুলত মুণ্ডা, অহমিয়া, দ্রাবিড় বংশোদ্ভুত ইন্দো-আর্য হিন্দু বাঙালি। প্রাচীন হিন্দুদের তান্ত্রিক ধর্মগ্রন্থ ‘শক্তি সঙ্গম তন্ত্র’Ñতে সিলেটকে শিলগট্ট’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, তৎকালীন ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চল সিলেটের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত ছিলো। সিলেট বস্তুত তখন ছিলো প্রাচীন কামরূপ রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত। পরবর্তীতে শাহজালাল ও তার অনুচরদের প্রভাবে সিলেটের অধিকাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। মুসলমান শাসনামলে সিলেটকে সরকারি দলিলপত্রে ‘জালালাবাদ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। বিশ্বপরিব্রাজক ইবনে বতুতার রচনাবলিও একই সাক্ষ্য দেয়। ১৭৬৫ সাল থেকে বার্মাকে পরাস্ত করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ শাসকেরা সিলেটকে ভৌগলিক মর্যাদা দিতে শুরু করে। পরবর্তীতে সিলেটকে আসামের অন্তর্ভূক্ত করা হয় এবং ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এটি আসামের অন্তর্ভূক্ত ছিলো। দেশ বিভাগের সময় রেফারেন্ডামের মাধ্যমে প্রায় পুরো সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হয়। শুধু মাত্র করিমগঞ্জ, কাছাড় ও শিলচর মিলে করিমগঞ্জ সাবডিভিশন ভারতেই রয়ে যায়। সিলেটের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে ভাষার কথা। মূল সিলেট ছাড়াও ভারতের গৌহাটি, শিলচর, শিলং, কাছাড়, বরাক উপত্যকা, করিমগঞ্জ, আগরতলা, লন্ডন, মধ্যপ্রাচ্য মিলে সারা বিশ্বের প্রায় ১০ কোটি ৩ লক্ষ মানুষ সিলেটি উপভাষায় কথা বলেন। বাঙলার সাথে অনেক মিল থাকা সত্ত্বেও এডওয়ার্ড গেইট তার ‘হিস্ট্রি অব
আসাম’Ñগ্রন্থে সিলেটি ভাষাকে পূর্ব ভারতীয় ভাষাবংশের অর্ন্তভূক্ত এবং অহমিয়া ভাষার অপভ্রংশ রূপ বলে দাবি করেছেন। ভাষাবিজ্ঞানী জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসনও একই মত পোষণ করেন। তবে, সমসাময়িক ভাষাবিদ রেইমন্ড গর্ডন সিলেটি উপভাষার সাথে বাংলার ৭০ শতাংশ মিল রয়েছে বলে মনে করেন। উত্তর প্রদেশ ও বিহারের ‘কাইথি’ লিপির অনুকরণে সিলেটি ভাষা এককালে ‘নাগরি’ লিপিতে লিখিত হতো, তবে এসব লিপি এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে কালের ধুলোয়। বিপুল পরিমাণে হিন্দি, আরবি ও ফারসি শব্দের উপস্থিতি সিলেটি উপভাষার আরেকটি বৈশিষ্ট্য। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সিলেট বাঙলাদেশের অন্যতম প্রাচুর্যশালী অঞ্চল। বাঙলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসীর সংখ্যা সিলেট অঞ্চলে এবং অসংখ্য পরিবার প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার ওপর নির্ভর করে থাকেন। সিলেটি প্রবাসীদের অপচয়প্রবণতা সর্বজনবিদিত; তারা প্রাসাদোপম অট্টালিকা নির্মাণ করেন কিন্তু শিল্পকারখানা তৈরিতে কখনো খরচ করেন না, শিল্পায়নের চাইতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণে তাঁরা সাধারণত বেশি উদ্যোগী। সিলেটিরা ভ্রমণপিপাসু নন, সিলেটের বাইরে একমাত্র লন্ডন সম্পর্কেই তাঁরা খোঁজখবর রাখেন আর বাঙলাদেশ সম্পর্কে অনেকের জ্ঞান শোচনীয়ভাবে সীমিত।
একবার সারা বাঙলাদেশ ভ্রমণে গিয়ে আমি আবিস্কার করেছিলাম দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সিলেটিরা বেশ অলস। উত্তর বা দক্ষিণবঙ্গের মানুষ যেভাবে প্রতি ইঞ্চি জায়গা কাজে লাগিয়ে সারা বছরব্যাপী কৃষিকাজ করেন সিলেটে তা বিরল, এখানে একরের পর একর জমি আবাদহীন পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই অলস সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব তঁর¹¡
দেখতে পাই সিলেটের তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে, লন্ডন যাওয়া ছাড়া আত্মনির্ভর হওয়ার আর কোনো পথ তাদের জানা নেই। সিলেটের শিরায় শিরায় সবসময় প্রবাহিত হচ্ছে লন্ডন আর মধ্যপ্রাচ্যের মুদ্রা, ওই দু-টি অঞ্চলের আর্শীবাদ ছাড়া সে অচল। সিলেটের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সিলেটিরা বেশ সচেতন ও স্পর্শকাতর। স্বাজাত্যবোধ এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে জন্ম দিয়েছে এক কট্টর আঞ্চলিক মৌলবাদের, যার প্রমাণ পাই নন-সিলেটিদের প্রতি সিলেটিদের বৈষম্যমূলক আচরণে। বাঙলাদেশের বাসিন্দা হয়েও সিলেটিরা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষকে নির্বিচারে ‘নোয়াখালি’ বলে গালমন্দ করেন। সিলেটিদের কাছে নন-সিলেটি মাত্রই ‘নোয়াখালি’! কেউ হয়তো বগুড়ার বাসিন্দা, কেউ পাবনা-রংপুর-খুলনার; কিন্তু সিলেটিদের কাছে নিজেরা ছাড়া বাকি ৬০টি জেলার সবাই ‘নোয়াখালি’। এই আচরণ সিলেটিদের মূর্খতার প্রচণ্ড প্রকাশ। আঞ্চলিক মৌলবাদের ভয়াবহতম রূপটি ধরা পড়ে সিলেটি ভাষাতেও। সিলেটিরা অবলীলায় নিজেদের ‘সিলেটি’ এবং অন্যদের ‘বেঙ্গলি’বলে আজো অভিহিত করেন, যদিও জাতিত্বের পরিচয়ে বাংলাদেশের উপজাতি সম্প্রদায় ছাড়া বাকি প্রত্যেকেই ‘বেঙ্গলি’ বা বাঙালি। তবে উনড়বাসিক সিলেটিরা এসব যুক্তি বুঝতে রাজি নন, তাঁরা নিজেদের ছাড়া বাকি সবাইকে নিুশ্রেণীজাত বলেই মনে করেন। কুয়োর ব্যাঙ আর কাকে বলে! সিলেটি অঞ্চলে যে সকল নন-সিলেটিরা কাজের উদ্দেশ্যে বা বেড়াতে আসেন তাঁদের অধিকাংশই তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যান। স্থানীয়রা অনেক সময় তাঁদের সাথে চলিত বাঙলায় কথা না বলে সিলেটিতেই কথা চালিয়ে যান। আরেকটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক সত্য হচ্ছে যেÑএসব কর্মজীবীদের সন্তানেরা সিলেটের স্কুল-কলেজে সিলেটি সহপাঠীদের মৌখিক নির্যাতনের স্বীকার হয়। ‘পারলে আমাদের মতো কথা বলো, নইলে কথা বলতে এসো না’, ‘তুই তো একটা নোয়াখালি’Ñইত্যাদি। এটা বলা অন্যায় হবে যে সব সিলেটিরা বৈষম্যমূলক আচরণ করেন, তবে অধিকাংশরাই সচেতন বা অসচেতনভাবে এমনটি করে থাকেন। সিলেটি মৌলবাদের অন্যতম শিকার হচ্ছেন উত্তরবঙ্গের রিকশাচালকেরা, যাঁরা পেটের দায়ে এ অঞ্চলে রিকশা চালাতে আসেন। এদের মধ্যে অনেকেই খণ্ডকালীন রিকশাচালক, নিজের দেশে হয়তো অনেকেরই জমিজমা ও ফসল রয়েছে। সিলেটে এসে তাঁরা প্রথমেই মুখোমুখি হন ভাষিক এবং আঞ্চলিক নির্যাতনের। আমি নিজেও বহুবার মৌলভীবাজারের রাস্তায় রিকশাচালকদের নির্যাতনের শিকার হতে দেখেছি। আরোহী হয়তো তাঁকে যেতে বলেছেন একদিকে, তিনি গিয়েছেন আরেকদিকে,Ñসিলেটি ভাষা বুঝতে পারেননি বলে। রংপুরের তারাগঞ্জে তাঁর গায়ে কেউ হাত তুললে তিনি হয়তো অপরাজেয় নূরলদীনের মতো ‘জাগো বাহে’ বলে প্রতিবাদটুকু অন্তত করতে পারতেন; তবে সিলেটে তিনি তা করবেন না, এখানে তাঁর কথা-বলারও অধিকার নেই। নাট্যকার শাকুর মজিদের ‘লন্ডনি কইন্যা’ নাটকটি নিয়ে সিলেটবাসীরা রীতিমতো গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফেলেছিলেন। এই উন্মাদনার কারণটি আমার কাছে আজো অস্পষ্ট। এই সত্যটি অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই যে, অধিকাংশ সিলেটি তরুণেরা ‘লন্ডনি চেতনা’ নিয়ে বেড়ে ওঠে, লন্ডনই তাদের প্রথম প্রেম এবং লন্ডন যাওয়াই তাদের জীবনের লক্ষ্য। এই উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে খালাকে মা ডেকে, ভাবীকে বৌ ডেকে লন্ডন যাওয়ার উদাহরণও বিরল নয়; অন্তত ব্রিটিশ হাইকমিশনের বাৎসরিক রিপোর্ট সে কথাই বলে। তবে লন্ডন যাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় পন্থাটি হচ্ছে ‘লন্ডনি কইন্যা’ বিয়ে করা; স্থানীয়ভাবে যার আরেক নাম হচ্ছে ‘পেটিকোট ভিসা’। অধিকাংশ সিলেটি অভিভাবকই নিজেকে ধন্য মনে করেন যদি তাঁদের এস.এস.সি ফেল সুপুত্রটি অথবা কলেজের সুদর্শন গুন্ডাটি কোনো ‘লন্ডনি কইন্যা’ বিয়ে করে লন্ডন যেতে পারে। এই অপ্রিয় সত্যগুলো সবাই জানেন, এমনকি যাঁরা শাকুর মজিদকে সিলেটে ‘অবাঞ্চিত’ ঘোষণা করেছিলেন, তাঁদেরও অজানা থাকার কোনো কারণ নেই। দুঃখজনক হলো, এই সত্যগুলো জেনেও সিলেটিরা চমৎকার ভন্ডামো করেন। তাঁরা কিছুতেই আত্মসমালোচনা করতে রাজি নন, নিজেদের ভাবমূর্তির ব্যাপারে তাঁরা খুবই উদ্বিগড়ব থাকেন নিরন্তর। কী শোকাবহ এই স্ববিরোধিতা! সাহিত্য-নাটক-চলচ্চিত্র কি জীবনের প্রতিচ্ছবি নয়? যদি তাই-ই হয়ে থাকে তাহলে সত্য প্রকাশে বাধাটা কোথায়? লন্ডনপ্রেম খারাপ কিছু নয়, লন্ডন খুবই চমৎকার নগরী, লন্ডন যাওয়াতেও আমি আপত্তির কিছু দেখি না। লন্ডন প্রবাসীদের কল্যাণে সিলেট অনেক আর্থ সুবিধা উপভোগ করে আসছে। তবে সময় এসেছে, লন্ডনপ্রেমের নেতিবাচক দিকগুলো বিচার করে দেখার। আমরা কি পেরেছি বাঙলাদেশকে একটি আধুনিক, পরিশীলিত ও শিক্ষিত প্রজন্ম উপহার দিতে যা নিয়ে সিলেটবাসী গর্ব করতে পারেন? তুলনামূলক বিচারে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় আমরা পিছিয়ে আছি শিক্ষাক্ষেত্রে। সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি প্রতিটি সৃষ্টিশীল এলাকাতেই আমাদের অবস্থান শোচনীয়। এখানে শিল্পকারখানার অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া কঠিন। লন্ডনপ্রেমের হুজুগ সিলেটকে যতোটা কলঙ্কিত করেছে, অন্য আর কিছু ততোটা করেনি। আমাদের তরুণদের লন্ডনমোহের অবসান ঘটা জরুরি, অভিভাবকদের মোহমুক্তি ঘটা আরো বেশি জরুরি। আমাদের সিলেট বাঙলাদেশের সবচেয়ে রক্ষণশীল এলাকা বলা যায়। প্রগতির কথা বলা এখানে অত্যন্ত বিপদজনক। এখানে কবি শামসুর রাহমান নিষিদ্ধ, ‘লাল সালু’ নাটক নিষিদ্ধ, সম্প্রতি ডক্টর জাফর ইকবালও নিষিদ্ধ হয়ে গেছেন।
সিলেট নিয়ে কিছু বলা বা করাই মুশকিল। হেলাল খান পরিচালিত ‘হাছন রাজা’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর সিলেটে ব্যাপক তোলপাড় হয়, পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছিলো। লন্ডনপ্রবাসী সিলেটিরাও রক্ষণশীলতায় পিছিয়ে নেই, সেখানেও পাই সিলেটি মৌলবাদের প্রবল রূপ। সম্প্রতি, বাঙালি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ লেখিকা মনিকা আলি তাঁর বহুলবিক্রিত ‘ব্রিকলেন’ উপন্যাসটির চলচ্চিত্রায়নের ঘোষণা দিলে সিলেটিরা প্রচন্ড খেপে ওঠেন, অশান্ত হয়ে উঠে কার্ডফ-ব্রিকলেন-টাওয়ার হ্যামলেট। মনিকা আলির মা ইংরেজ, বাবা নন-সিলেটি বাঙালি-এটাই কি অশান্তির কারণ? মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখন বিপনড়ব পাশ্চাত্যেও, আর তা আমাদের হাতেই। তবে শুধু নন-সিলেটিরাই নন, সিলেটি মৌলবাদের শিকার কখনো কখনো সাধারণ সিলেটিরাও। এ অঞ্চলে বসবাসকারী ‘সৈয়দ’ বংশীয়দের কৌলিন্য ও জাত্যভিমান বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। ইসলামে জাত্যভিমান সাধারণত নিরুৎসাহিত করা হলেও, আদিম সৈয়দদের মধ্যে তা অত্যন্ত প্রকট; তাঁরা তৃপ্তি পান সাধারণ মানুষকে অবজ্ঞা করে। বাঙলার পলিমাটিতে জন্ম নিয়েও সৈয়দরা নিজেদের আরব-ইরান-তুরস্কের বংশধর বলে দাবি করেন, ভোগেন প্রান্তিক মানসিকতায়। এটি একটি অচিকিৎস্য মানসিক রোগ। অনেক ‘শিক্ষিত’ সৈয়দরাও নিজেদের গোত্র ছাড়া অন্য কোনো গোত্রে বৈবাহিক সম্পর্ক মেনে নেন না। এতে অবশ্য তাঁদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়, সিলেট অঞ্চলে সৈয়দ-অধ্যুষিত গ্রামের অভাব নেই। আমার শহর মৌলভীবাজারে একটি গ্রাম আছে, যেখানে অবিশ্বাস্য হলেও প্রতিটি পরিবারই নিজেদের সৈয়দ পরিবার বলে দাবি করেন। এই দাবির ওপর অবশ্য কোনো কথা নেই! সিলেটি মৌলবাদের সবচেয়ে করুণ, হাস্যকর, ভয়াবহ রূপ দেখতে পাই আরেকটি ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের বাসিন্দারা নির্দ্বিধায় দেশের যেকোনো প্রান্তে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি থাকেন, কিন্তু সিলেটিরা এর পুরোপুরি বিপরীত। দেশের অন্য কোথাও বিয়ের কথা উঠলে আজো সিলেটিদের রক্ত জমে বরফ হয়ে যায়। এই অদ্ভুত মানসিকতা সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীদের জন্য চমৎকার গবেষণার বিষয় বলে গণ্য হতে পারে। সিলেটিরা কোনোভাবেই তাঁদের বিশুদ্ধ অমলিন রক্তকে মলিন করতে চান না, যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে এই বিশুদ্ধতা। এই কপট ভন্ডামোর কোনো ভিত্তি নেই, এটিও একটি অসুস্থ মানসিকতা। এ জাতীয় কট্টর রক্ষণশীলতা কখনো কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না, বরং দেশের বিভিনড়ব অঞ্চলে আত্মীয়তার প্রচলন হলে সিলেটিদের গোঁড়ামি অনেকটা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। আমাদের জন্মস্থান সিলেটে একটি সামাজিক পরিবর্তন খুব দরকার এই মুহূর্তে আর তা আসতে হবে প্রগতিশীল সিলেটিদের মধ্য থেকে, আমাদের বৃহত্তর কল্যাণের জন্যেই। ঐশ্বর্যের অভাব দেখতে পাই না সিলেটে, কিন্তু সুশিক্ষা ও মেধার অভাব খুবই প্রকট। ‘মেধা প্রকল্প’, ‘নির্ঝর’Ñজাতীয় সংগঠনগুলো একসময় বেশ সাড়া জাগিয়েছিলো, এখনো কোনো কোনোটি ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে, ওভাবে টিকে থাকা মৃত্যুর চেয়েও মর্মান্তিক। শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজ করছে অত্যন্ত হতাশাজনক পরিস্থিতিÑযেদিকেই তাকাই দেখতে পাই চরম বন্ধ্যাত্ব। শ্রেণীকক্ষে স্থানীয় শিক্ষকেরা চমৎকার কমলালেবুর গন্ধযুক্ত সিলেটি বলেন; ভুলে যান বহিরাগত ছাত্রদের কথা, আর আঞ্চলিক রাজনীতি মারপ্যাঁচ কষে কোণঠাসা করে রাখেন নন-সিলেটি শিক্ষকদের। এই প্রবণতা স্থানীয় ছাত্রদের পরিশীলিত বাঙলা শেখার ক্ষেত্রে সহায়ক নয়। উচ্চারণে অশুদ্ধতা ও প্রবল সিলেটি প্রভাবের ফলে বিভিনড়ব জাতীয় প্রতিযোগিতায় আবৃত্তি-বিতর্ক থেকে শুরু করে আরো নানা ক্ষেত্রে আমাদের অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা উলেখে যাগ্য সাফল্য দেখাতে ব্যর্থ হয়; বিপুল উৎসাহ নিয়ে তারা প্রতিযোগিতায় যায় এবং সাধারণত অশ্বডিম্ব নিয়ে ফিরে আসে। শুধু শিক্ষক বা অভিভাবক নন, আমাদের অর্থমন্ত্রীকেও মাঝেমধ্যেই দেখি টিভিতে অবলীলায় সিলেটিতে কথা বলছেন, সিলেটিতে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন, সিলেটিতেই করছেন বাজেট পেশ। এমনকি দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠকেও তিনি সিলেটি সুরেই ইংরেজি বলেন। তাঁর কল্যাণে আজ বাঙলাদেশের এমন অনেকেই সিলেটি শিখে বসে আছেন, যাঁদের কখনো শেখার প্রয়োজন ছিলোনা। সমভাষী বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বা ঘরোয়া পরিবেশে নিজস্ব উপভাষায় কথা বলাটা অবশ্যই কোনো অপরাধ নয়, বরং সেটাই স্বাভাবিক; কিন্তু শ্রেণীকক্ষে, মঞ্চে, সংসদে, সাংবাদিক সম্মেলনে পরিশীলিত বাঙলা বলতে না চাওয়া, লিখতে না পারাটা কি অপরাধ বলেই গণ্য করা উচিত নয়? সিলেট, মহাসমুদ্রের একটি ক্ষুদ্রতম চর, আর আমরা সেই চরের অধিপতিরা, আর কিছু করতে না পারলেও জন্ম দিয়েছি একটি স্বতন্ত্র মৌলবাদের। সিলেটি মৌলবাদ, অত্যন্ত নীরবে, বহুদিন ধরেই ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ মহামারি আকারে, এখনই এই প্রগতিবিরোধী আঞ্চলিকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো দরকার। তিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেদের গোষ্ঠীবদ্ধ করে রেখে কোনো ইতিবাচক অর্জন আনা সম্ভব নয়। কোনো মুক্তমনের মানুষই আঞ্চলিক মৌলবাদে দীক্ষিত হতে পারে না; পারেন না সংকীর্ণতার দেয়ালে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখতে। পৃথিবীটা অনেক বড়ো, তবে আমাদের সুশীল ভণ্ডরা এখনো বেশ আদিম, তাঁদের সময় এসেছে কুয়োর বাইরে বেরিয়ে এসে বিশাল বিশ্বটাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার। আমরা প্রত্যেকে মানুষ, এবং আমরা প্রত্যেকেই বাঙলাদেশের বাঙালিÑএই সহজ সত্যটি উপলব্ধি করতে সিলেটবাসীর আর কতোকাল লাগবে?
‘মৌলবাদ’ সম্ভবত আধুনিক পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যাপক ব্যবহৃত শব্দ। আদিতে এই শব্দটি বেশ নির্দোষ ছিলো, কিন্তু ভাষা ওসভ্যতার বির্বতনে এখন এটি হয়ে উঠেছে চরম নিন্দার্থক এবং ভীতিকর। এখন মৌলবাদ বলতে আমরাবুঝিÑপ্রতিক্রিয়াশীলতা, রক্ষণশীলতা, কূপমণ্ডুকতা, আদর্শিক উগ্রতা, চরমপন্থা, প্রগতি ও আধুনিকতা বিরোধিতা ইত্যাদি।মৌলবাদের সমার্থক শব্দে ভরে উঠেছে অভিধান। আজকের প্রেক্ষাপটে বলতে পারি, যা কিছু আধুনিকতা ও প্রগতি ও বিকাশের বিরোধী তা মৌলবাদ এবং যারা এই প্রগতিবিরোধী তন্ত্রে বিশ্বাসী তারা মৌলবাদী। দশকে দশকে আমরা অজস্র প্রজাতির মৌলবাদের উত্থান ও পতন লক্ষ্য করছি। যেমন, খ্রিস্টান ক্যাথলিক মৌলবাদ, সমাজতান্ত্রিক মৌলবাদ, নাৎসি মৌলবাদ, হিন্দু মৌলবাদ, জাতীয়তাবাদী মৌলবাদ প্রভৃতি। আমরা আরো শিখেছি যে, কোনো মৌলবাদই চিরস্থায়ী নয়। আজকের পরিবর্তিত বিশ্বে সর্বাধিক আলোচিত কট্টরপন্থার নাম ‘ইসলামি মৌলবাদ’। তবে আজ এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য এসব আলোচিত মতবাদ নিয়ে পুনঃ আলোচনা নয়; আজ আমরা আলো ফেলে দেখতে চাই বাঙলাদেশের একটি অন্ধকারাচ্ছনড়ব মতবাদের ওপর, যার যথার্থ ব্যবচ্ছেদ ইতঃপূর্বে ঘটেনি, যার নাম আমরা দিতে পারিÑ ‘সিলেটি মৌলবাদ’। অন্য যে কোনো মৌলবাদের মতোই ‘সিলেটি মৌলবাদ’ শব্দগুচ্ছটি বেশ ব্যাপক তাৎপর্য বহন করে, যা এককথায় ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। তবু সঙ্গত কারণেই প্রশড়ব জাগতে পারে, সিলেটি মৌলবাদ বলতে আমরা কী বুঝি? এটি এমন একটি প্রপঞ্চ যা ধর্মীয়, আঞ্চলিকতা, জাতীয়তাবোধ এমন আরো বহু চেতনার কিম্ভুত সমষ্টি; যার স্বরূপ উদঘাটন করতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে একটু পেছনে, ব্যবচ্ছেদ করে দেখতে হবে সিলেট এবং সিলেটিদের ইতিহাস স্বরূপ-প্রকৃতি।
একথা আমরা সবাই মোটামুটি জানি যে, সিলেটের আদি নাম ছিলোÑ‘শ্রীহট্ট’। শ্রীহট্টের আদি বাসিন্দারা মুলত মুণ্ডা, অহমিয়া, দ্রাবিড় বংশোদ্ভুত ইন্দো-আর্য হিন্দু বাঙালি। প্রাচীন হিন্দুদের তান্ত্রিক ধর্মগ্রন্থ ‘শক্তি সঙ্গম তন্ত্র’Ñতে সিলেটকে শিলগট্ট’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, তৎকালীন ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চল সিলেটের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত ছিলো। সিলেট বস্তুত তখন ছিলো প্রাচীন কামরূপ রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত। পরবর্তীতে শাহজালাল ও তার অনুচরদের প্রভাবে সিলেটের অধিকাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। মুসলমান শাসনামলে সিলেটকে সরকারি দলিলপত্রে ‘জালালাবাদ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। বিশ্বপরিব্রাজক ইবনে বতুতার রচনাবলিও একই সাক্ষ্য দেয়। ১৭৬৫ সাল থেকে বার্মাকে পরাস্ত করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ শাসকেরা সিলেটকে ভৌগলিক মর্যাদা দিতে শুরু করে। পরবর্তীতে সিলেটকে আসামের অন্তর্ভূক্ত করা হয় এবং ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এটি আসামের অন্তর্ভূক্ত ছিলো। দেশ বিভাগের সময় রেফারেন্ডামের মাধ্যমে প্রায় পুরো সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হয়। শুধু মাত্র করিমগঞ্জ, কাছাড় ও শিলচর মিলে করিমগঞ্জ সাবডিভিশন ভারতেই রয়ে যায়। সিলেটের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে ভাষার কথা। মূল সিলেট ছাড়াও ভারতের গৌহাটি, শিলচর, শিলং, কাছাড়, বরাক উপত্যকা, করিমগঞ্জ, আগরতলা, লন্ডন, মধ্যপ্রাচ্য মিলে সারা বিশ্বের প্রায় ১০ কোটি ৩ লক্ষ মানুষ সিলেটি উপভাষায় কথা বলেন। বাঙলার সাথে অনেক মিল থাকা সত্ত্বেও এডওয়ার্ড গেইট তার ‘হিস্ট্রি অব
আসাম’Ñগ্রন্থে সিলেটি ভাষাকে পূর্ব ভারতীয় ভাষাবংশের অর্ন্তভূক্ত এবং অহমিয়া ভাষার অপভ্রংশ রূপ বলে দাবি করেছেন। ভাষাবিজ্ঞানী জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসনও একই মত পোষণ করেন। তবে, সমসাময়িক ভাষাবিদ রেইমন্ড গর্ডন সিলেটি উপভাষার সাথে বাংলার ৭০ শতাংশ মিল রয়েছে বলে মনে করেন। উত্তর প্রদেশ ও বিহারের ‘কাইথি’ লিপির অনুকরণে সিলেটি ভাষা এককালে ‘নাগরি’ লিপিতে লিখিত হতো, তবে এসব লিপি এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে কালের ধুলোয়। বিপুল পরিমাণে হিন্দি, আরবি ও ফারসি শব্দের উপস্থিতি সিলেটি উপভাষার আরেকটি বৈশিষ্ট্য। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সিলেট বাঙলাদেশের অন্যতম প্রাচুর্যশালী অঞ্চল। বাঙলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসীর সংখ্যা সিলেট অঞ্চলে এবং অসংখ্য পরিবার প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার ওপর নির্ভর করে থাকেন। সিলেটি প্রবাসীদের অপচয়প্রবণতা সর্বজনবিদিত; তারা প্রাসাদোপম অট্টালিকা নির্মাণ করেন কিন্তু শিল্পকারখানা তৈরিতে কখনো খরচ করেন না, শিল্পায়নের চাইতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণে তাঁরা সাধারণত বেশি উদ্যোগী। সিলেটিরা ভ্রমণপিপাসু নন, সিলেটের বাইরে একমাত্র লন্ডন সম্পর্কেই তাঁরা খোঁজখবর রাখেন আর বাঙলাদেশ সম্পর্কে অনেকের জ্ঞান শোচনীয়ভাবে সীমিত।
একবার সারা বাঙলাদেশ ভ্রমণে গিয়ে আমি আবিস্কার করেছিলাম দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সিলেটিরা বেশ অলস। উত্তর বা দক্ষিণবঙ্গের মানুষ যেভাবে প্রতি ইঞ্চি জায়গা কাজে লাগিয়ে সারা বছরব্যাপী কৃষিকাজ করেন সিলেটে তা বিরল, এখানে একরের পর একর জমি আবাদহীন পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই অলস সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব তঁর¹¡
দেখতে পাই সিলেটের তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে, লন্ডন যাওয়া ছাড়া আত্মনির্ভর হওয়ার আর কোনো পথ তাদের জানা নেই। সিলেটের শিরায় শিরায় সবসময় প্রবাহিত হচ্ছে লন্ডন আর মধ্যপ্রাচ্যের মুদ্রা, ওই দু-টি অঞ্চলের আর্শীবাদ ছাড়া সে অচল। সিলেটের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সিলেটিরা বেশ সচেতন ও স্পর্শকাতর। স্বাজাত্যবোধ এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে জন্ম দিয়েছে এক কট্টর আঞ্চলিক মৌলবাদের, যার প্রমাণ পাই নন-সিলেটিদের প্রতি সিলেটিদের বৈষম্যমূলক আচরণে। বাঙলাদেশের বাসিন্দা হয়েও সিলেটিরা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষকে নির্বিচারে ‘নোয়াখালি’ বলে গালমন্দ করেন। সিলেটিদের কাছে নন-সিলেটি মাত্রই ‘নোয়াখালি’! কেউ হয়তো বগুড়ার বাসিন্দা, কেউ পাবনা-রংপুর-খুলনার; কিন্তু সিলেটিদের কাছে নিজেরা ছাড়া বাকি ৬০টি জেলার সবাই ‘নোয়াখালি’। এই আচরণ সিলেটিদের মূর্খতার প্রচণ্ড প্রকাশ। আঞ্চলিক মৌলবাদের ভয়াবহতম রূপটি ধরা পড়ে সিলেটি ভাষাতেও। সিলেটিরা অবলীলায় নিজেদের ‘সিলেটি’ এবং অন্যদের ‘বেঙ্গলি’বলে আজো অভিহিত করেন, যদিও জাতিত্বের পরিচয়ে বাংলাদেশের উপজাতি সম্প্রদায় ছাড়া বাকি প্রত্যেকেই ‘বেঙ্গলি’ বা বাঙালি। তবে উনড়বাসিক সিলেটিরা এসব যুক্তি বুঝতে রাজি নন, তাঁরা নিজেদের ছাড়া বাকি সবাইকে নিুশ্রেণীজাত বলেই মনে করেন। কুয়োর ব্যাঙ আর কাকে বলে! সিলেটি অঞ্চলে যে সকল নন-সিলেটিরা কাজের উদ্দেশ্যে বা বেড়াতে আসেন তাঁদের অধিকাংশই তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যান। স্থানীয়রা অনেক সময় তাঁদের সাথে চলিত বাঙলায় কথা না বলে সিলেটিতেই কথা চালিয়ে যান। আরেকটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক সত্য হচ্ছে যেÑএসব কর্মজীবীদের সন্তানেরা সিলেটের স্কুল-কলেজে সিলেটি সহপাঠীদের মৌখিক নির্যাতনের স্বীকার হয়। ‘পারলে আমাদের মতো কথা বলো, নইলে কথা বলতে এসো না’, ‘তুই তো একটা নোয়াখালি’Ñইত্যাদি। এটা বলা অন্যায় হবে যে সব সিলেটিরা বৈষম্যমূলক আচরণ করেন, তবে অধিকাংশরাই সচেতন বা অসচেতনভাবে এমনটি করে থাকেন। সিলেটি মৌলবাদের অন্যতম শিকার হচ্ছেন উত্তরবঙ্গের রিকশাচালকেরা, যাঁরা পেটের দায়ে এ অঞ্চলে রিকশা চালাতে আসেন। এদের মধ্যে অনেকেই খণ্ডকালীন রিকশাচালক, নিজের দেশে হয়তো অনেকেরই জমিজমা ও ফসল রয়েছে। সিলেটে এসে তাঁরা প্রথমেই মুখোমুখি হন ভাষিক এবং আঞ্চলিক নির্যাতনের। আমি নিজেও বহুবার মৌলভীবাজারের রাস্তায় রিকশাচালকদের নির্যাতনের শিকার হতে দেখেছি। আরোহী হয়তো তাঁকে যেতে বলেছেন একদিকে, তিনি গিয়েছেন আরেকদিকে,Ñসিলেটি ভাষা বুঝতে পারেননি বলে। রংপুরের তারাগঞ্জে তাঁর গায়ে কেউ হাত তুললে তিনি হয়তো অপরাজেয় নূরলদীনের মতো ‘জাগো বাহে’ বলে প্রতিবাদটুকু অন্তত করতে পারতেন; তবে সিলেটে তিনি তা করবেন না, এখানে তাঁর কথা-বলারও অধিকার নেই। নাট্যকার শাকুর মজিদের ‘লন্ডনি কইন্যা’ নাটকটি নিয়ে সিলেটবাসীরা রীতিমতো গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফেলেছিলেন। এই উন্মাদনার কারণটি আমার কাছে আজো অস্পষ্ট। এই সত্যটি অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই যে, অধিকাংশ সিলেটি তরুণেরা ‘লন্ডনি চেতনা’ নিয়ে বেড়ে ওঠে, লন্ডনই তাদের প্রথম প্রেম এবং লন্ডন যাওয়াই তাদের জীবনের লক্ষ্য। এই উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে খালাকে মা ডেকে, ভাবীকে বৌ ডেকে লন্ডন যাওয়ার উদাহরণও বিরল নয়; অন্তত ব্রিটিশ হাইকমিশনের বাৎসরিক রিপোর্ট সে কথাই বলে। তবে লন্ডন যাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় পন্থাটি হচ্ছে ‘লন্ডনি কইন্যা’ বিয়ে করা; স্থানীয়ভাবে যার আরেক নাম হচ্ছে ‘পেটিকোট ভিসা’। অধিকাংশ সিলেটি অভিভাবকই নিজেকে ধন্য মনে করেন যদি তাঁদের এস.এস.সি ফেল সুপুত্রটি অথবা কলেজের সুদর্শন গুন্ডাটি কোনো ‘লন্ডনি কইন্যা’ বিয়ে করে লন্ডন যেতে পারে। এই অপ্রিয় সত্যগুলো সবাই জানেন, এমনকি যাঁরা শাকুর মজিদকে সিলেটে ‘অবাঞ্চিত’ ঘোষণা করেছিলেন, তাঁদেরও অজানা থাকার কোনো কারণ নেই। দুঃখজনক হলো, এই সত্যগুলো জেনেও সিলেটিরা চমৎকার ভন্ডামো করেন। তাঁরা কিছুতেই আত্মসমালোচনা করতে রাজি নন, নিজেদের ভাবমূর্তির ব্যাপারে তাঁরা খুবই উদ্বিগড়ব থাকেন নিরন্তর। কী শোকাবহ এই স্ববিরোধিতা! সাহিত্য-নাটক-চলচ্চিত্র কি জীবনের প্রতিচ্ছবি নয়? যদি তাই-ই হয়ে থাকে তাহলে সত্য প্রকাশে বাধাটা কোথায়? লন্ডনপ্রেম খারাপ কিছু নয়, লন্ডন খুবই চমৎকার নগরী, লন্ডন যাওয়াতেও আমি আপত্তির কিছু দেখি না। লন্ডন প্রবাসীদের কল্যাণে সিলেট অনেক আর্থ সুবিধা উপভোগ করে আসছে। তবে সময় এসেছে, লন্ডনপ্রেমের নেতিবাচক দিকগুলো বিচার করে দেখার। আমরা কি পেরেছি বাঙলাদেশকে একটি আধুনিক, পরিশীলিত ও শিক্ষিত প্রজন্ম উপহার দিতে যা নিয়ে সিলেটবাসী গর্ব করতে পারেন? তুলনামূলক বিচারে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় আমরা পিছিয়ে আছি শিক্ষাক্ষেত্রে। সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি প্রতিটি সৃষ্টিশীল এলাকাতেই আমাদের অবস্থান শোচনীয়। এখানে শিল্পকারখানার অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া কঠিন। লন্ডনপ্রেমের হুজুগ সিলেটকে যতোটা কলঙ্কিত করেছে, অন্য আর কিছু ততোটা করেনি। আমাদের তরুণদের লন্ডনমোহের অবসান ঘটা জরুরি, অভিভাবকদের মোহমুক্তি ঘটা আরো বেশি জরুরি। আমাদের সিলেট বাঙলাদেশের সবচেয়ে রক্ষণশীল এলাকা বলা যায়। প্রগতির কথা বলা এখানে অত্যন্ত বিপদজনক। এখানে কবি শামসুর রাহমান নিষিদ্ধ, ‘লাল সালু’ নাটক নিষিদ্ধ, সম্প্রতি ডক্টর জাফর ইকবালও নিষিদ্ধ হয়ে গেছেন।
সিলেট নিয়ে কিছু বলা বা করাই মুশকিল। হেলাল খান পরিচালিত ‘হাছন রাজা’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর সিলেটে ব্যাপক তোলপাড় হয়, পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছিলো। লন্ডনপ্রবাসী সিলেটিরাও রক্ষণশীলতায় পিছিয়ে নেই, সেখানেও পাই সিলেটি মৌলবাদের প্রবল রূপ। সম্প্রতি, বাঙালি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ লেখিকা মনিকা আলি তাঁর বহুলবিক্রিত ‘ব্রিকলেন’ উপন্যাসটির চলচ্চিত্রায়নের ঘোষণা দিলে সিলেটিরা প্রচন্ড খেপে ওঠেন, অশান্ত হয়ে উঠে কার্ডফ-ব্রিকলেন-টাওয়ার হ্যামলেট। মনিকা আলির মা ইংরেজ, বাবা নন-সিলেটি বাঙালি-এটাই কি অশান্তির কারণ? মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখন বিপনড়ব পাশ্চাত্যেও, আর তা আমাদের হাতেই। তবে শুধু নন-সিলেটিরাই নন, সিলেটি মৌলবাদের শিকার কখনো কখনো সাধারণ সিলেটিরাও। এ অঞ্চলে বসবাসকারী ‘সৈয়দ’ বংশীয়দের কৌলিন্য ও জাত্যভিমান বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। ইসলামে জাত্যভিমান সাধারণত নিরুৎসাহিত করা হলেও, আদিম সৈয়দদের মধ্যে তা অত্যন্ত প্রকট; তাঁরা তৃপ্তি পান সাধারণ মানুষকে অবজ্ঞা করে। বাঙলার পলিমাটিতে জন্ম নিয়েও সৈয়দরা নিজেদের আরব-ইরান-তুরস্কের বংশধর বলে দাবি করেন, ভোগেন প্রান্তিক মানসিকতায়। এটি একটি অচিকিৎস্য মানসিক রোগ। অনেক ‘শিক্ষিত’ সৈয়দরাও নিজেদের গোত্র ছাড়া অন্য কোনো গোত্রে বৈবাহিক সম্পর্ক মেনে নেন না। এতে অবশ্য তাঁদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়, সিলেট অঞ্চলে সৈয়দ-অধ্যুষিত গ্রামের অভাব নেই। আমার শহর মৌলভীবাজারে একটি গ্রাম আছে, যেখানে অবিশ্বাস্য হলেও প্রতিটি পরিবারই নিজেদের সৈয়দ পরিবার বলে দাবি করেন। এই দাবির ওপর অবশ্য কোনো কথা নেই! সিলেটি মৌলবাদের সবচেয়ে করুণ, হাস্যকর, ভয়াবহ রূপ দেখতে পাই আরেকটি ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের বাসিন্দারা নির্দ্বিধায় দেশের যেকোনো প্রান্তে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি থাকেন, কিন্তু সিলেটিরা এর পুরোপুরি বিপরীত। দেশের অন্য কোথাও বিয়ের কথা উঠলে আজো সিলেটিদের রক্ত জমে বরফ হয়ে যায়। এই অদ্ভুত মানসিকতা সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীদের জন্য চমৎকার গবেষণার বিষয় বলে গণ্য হতে পারে। সিলেটিরা কোনোভাবেই তাঁদের বিশুদ্ধ অমলিন রক্তকে মলিন করতে চান না, যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে এই বিশুদ্ধতা। এই কপট ভন্ডামোর কোনো ভিত্তি নেই, এটিও একটি অসুস্থ মানসিকতা। এ জাতীয় কট্টর রক্ষণশীলতা কখনো কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না, বরং দেশের বিভিনড়ব অঞ্চলে আত্মীয়তার প্রচলন হলে সিলেটিদের গোঁড়ামি অনেকটা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। আমাদের জন্মস্থান সিলেটে একটি সামাজিক পরিবর্তন খুব দরকার এই মুহূর্তে আর তা আসতে হবে প্রগতিশীল সিলেটিদের মধ্য থেকে, আমাদের বৃহত্তর কল্যাণের জন্যেই। ঐশ্বর্যের অভাব দেখতে পাই না সিলেটে, কিন্তু সুশিক্ষা ও মেধার অভাব খুবই প্রকট। ‘মেধা প্রকল্প’, ‘নির্ঝর’Ñজাতীয় সংগঠনগুলো একসময় বেশ সাড়া জাগিয়েছিলো, এখনো কোনো কোনোটি ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে, ওভাবে টিকে থাকা মৃত্যুর চেয়েও মর্মান্তিক। শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজ করছে অত্যন্ত হতাশাজনক পরিস্থিতিÑযেদিকেই তাকাই দেখতে পাই চরম বন্ধ্যাত্ব। শ্রেণীকক্ষে স্থানীয় শিক্ষকেরা চমৎকার কমলালেবুর গন্ধযুক্ত সিলেটি বলেন; ভুলে যান বহিরাগত ছাত্রদের কথা, আর আঞ্চলিক রাজনীতি মারপ্যাঁচ কষে কোণঠাসা করে রাখেন নন-সিলেটি শিক্ষকদের। এই প্রবণতা স্থানীয় ছাত্রদের পরিশীলিত বাঙলা শেখার ক্ষেত্রে সহায়ক নয়। উচ্চারণে অশুদ্ধতা ও প্রবল সিলেটি প্রভাবের ফলে বিভিনড়ব জাতীয় প্রতিযোগিতায় আবৃত্তি-বিতর্ক থেকে শুরু করে আরো নানা ক্ষেত্রে আমাদের অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা উলেখে যাগ্য সাফল্য দেখাতে ব্যর্থ হয়; বিপুল উৎসাহ নিয়ে তারা প্রতিযোগিতায় যায় এবং সাধারণত অশ্বডিম্ব নিয়ে ফিরে আসে। শুধু শিক্ষক বা অভিভাবক নন, আমাদের অর্থমন্ত্রীকেও মাঝেমধ্যেই দেখি টিভিতে অবলীলায় সিলেটিতে কথা বলছেন, সিলেটিতে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন, সিলেটিতেই করছেন বাজেট পেশ। এমনকি দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠকেও তিনি সিলেটি সুরেই ইংরেজি বলেন। তাঁর কল্যাণে আজ বাঙলাদেশের এমন অনেকেই সিলেটি শিখে বসে আছেন, যাঁদের কখনো শেখার প্রয়োজন ছিলোনা। সমভাষী বন্ধ
০৭ ই জুলাই, ২০১১ বিকাল ৩:৩০
bijon007 বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ০৭ ই জুলাই, ২০১১ দুপুর ২:১৮
বিপ্লব কান্তি বলেছেন: হা হা
আবাদি ও শুধু নয় , হালা মাড় খাওরা (ভাতের ফেন খাওয়া লোক) ও বলা হয়ে থাকে ।
নোয়াখাইল্লা তেমন বলা হয় না ।
০৭ ই জুলাই, ২০১১ বিকাল ৩:৩১
bijon007 বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ০৭ ই জুলাই, ২০১১ দুপুর ২:২৬
চনদন বলেছেন: আপনার লেখার হাত ভালো।
সিলেটিদের নিয়ে যা বলেছেন অধিকাংশ খাঁটি সত্য। আমি আমার যৌথ পরিবারেই দেখেছি এই সব জিনিস।
০৭ ই জুলাই, ২০১১ বিকাল ৩:৩২
bijon007 বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ০৭ ই জুলাই, ২০১১ দুপুর ২:৩৫
রাইসুল জুহালা বলেছেন: মূল সিলেট ছাড়াও ভারতের গৌহাটি, শিলচর, শিলং, কাছাড়, বরাক উপত্যকা, করিমগঞ্জ, আগরতলা, লন্ডন, মধ্যপ্রাচ্য মিলে সারা বিশ্বের প্রায় ১০ কোটি ৩ লক্ষ মানুষ সিলেটি উপভাষায় কথা বলেন।
১০ কোটি লোক সিলেটি কথা বলে! এই সংখ্যাটা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।
৫| ০৭ ই জুলাই, ২০১১ বিকাল ৪:০৩
আমি নি (?) বলেছেন: আপনার লেখাটাও আঞ্চলিকতার দোষে দুষ্ট। পুরো লেখাটা পড়লে সিলেটিদের সম্পর্কে একটা মন্দ ধারনা তৈরি হয়। যা অনান্য অঞ্চলে সিলেটের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।
পেশাগত কারনে আমকে কয়েক বছর আপনার শহর মৌলভীবাজারে থাকতে হয়েছিল। সেকারণেই ব্যক্তিগত ভাবে আমিও কম বেশি এজাতীয় আঞ্চলিকতার মুখোমুখি হয়েছি। অনেক শিক্ষত মানুষ আমার ডেস্কের সামনে বসে বলেছে-আপনি তো বাঙালী, আপনার সাথে তো বাঙলায় কথা বলতে হবে! যেন বাঙলায় কথা বলাটা খুব গর্হিত ব্যাপার।
ধর্ম একটা বড় সমস্য হয়েছ সিলে্টী নন সিলেটী মিলনে। আমরা বিয়ের অনুষ্ঠান বলতে বুঝি গায়ে হলুদ, বিয়ে বৌভাত। কিন্তু সিলেটে তা মেহেদী বিয়ে ও অয়ালিমা। শুধু নামকরন নয়, এ সংক্রান্ত সামাজিক দর্শন টাই যেন আলাদা। সেখানে একটা বিয়েতে আসম্ভব রকম বাহুল্য খরচ করা হয় এবং তা বাধ্যতামুলক। আমি আমার অফিসের বেশ কয়েকজন তরুন অফিসার কে দেখেছি, ১০/১২ লাখ টাকার যোগার করতে পারছে না বলে বিয়ের সাহস পাচ্ছে না। এই দুর্মূল্যর বাজারে ১২/১৪ ভরি অলংকার কেনা আর কয়েক গ্রাম মানুষ ডেকে ভজন পর্ব করান তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
একজন দরিদ্র কর্মচারী কথা খুব মনে পরে। তাঁর মায়ের হার্টের সমস্যা ছিল। টাকার অভাবে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে পারল না। বৃদ্ধা মারা গেলেন। কদিন পরে তাঁর কূলখানিতে গিয়ে আমি অবাক। পাচটি গরু জবাই হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মত খরচ!
পরে লক্ষ করলাম সিলেট অঞ্চলে বিয়ে, কুলখানী আর শীত মওসুমে ওয়াজমাহফিল হল অনেকেরই রোজগারের রাস্তা। এসব দেখিয়ে তাদের প্রবাসি সজন দের কাজ থেকে ভাল সাহায্য (সিলেটী ভাসায় লিল্লাহ) আদায় করে।
প্রবাসীদের পাঠান অর্থ তেমন কোন উন্নয়ন মুলক কাজে ব্যয় হয়না। প্রসাদতম বাড়ি, মসজিদ, ঈদগাহ আর বড়জোর ব্যাবসায়ীক উদ্দেশ্যে কমুনিটি সেন্টার নির্মাণ। বিয়ে কুলখানীর অনুষ্ঠান তো আছেই।
এক প্রবাসীকে দেখলাম তিনি রমজান মাসে দেশে এলেন। তাঁর বাড়ি লাগোয়া অনেকখানি কৃষি জমি কিনে ঈদগাহ বানালেন। চারিদিকে বাউন্ডারী ও কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে। যদিও ঐ গ্রামে আরও কয়েকটা ঈদগাহ আছে। আসলে প্রতিটা বংশের জন্য আলাদা আলাদা মসজিদ, ঈদগাহ কবরস্থান না থাকলে তাদের বংশের মান থাকে না,তাতে কৃষি জমির যত শ্রাদ্ধই হোক না কেন।
এগুলি বলে আমি সিলেটি সম্পর্কে ঘৃণা প্রকাশ করছি না। আমি চাই তারা আধুনিক হোক। মুক্তমনা হোক। নইলে জগত থেকে তো বটেই, দেশ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
তাছাড়া সিলেটিদের অনেক অনন্য গুনও তো আছে। তারা খুব অতিথিপরায়ণ, আলাপী ও অহিংস। খুব বেশি খুন খারপী আর সন্ত্রাসের ঘটনা আমি সিলেট অঞ্চলে দেখিনি। অনেক প্রগতীশিল সামাজিক আন্দলনের সুচনা পর্ব আমি সেখানে দেখে এসেছি।শাহ আব্দুল করিমের মত অসাম্প্রদায়িক মানুষ একটি যুগে দুটি জন্মে না।
সিলেটী সাদকড়া খুব মিস করি।
০৯ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ১০:৪৩
bijon007 বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ০৭ ই জুলাই, ২০১১ বিকাল ৫:২১
ইমন কুমার দে বলেছেন: আপনার লেখায় তীব্র সিলেট বিদ্বেষীতা লক্ষ্যনীয়। মনে হচ্ছে কোনো কারনে আপনি সিলেটের লোকজনদের উপরে ক্ষিপ্ত। কিছু বিষয়ের সাথে আমি একমত কিন্তু আপনি যা লিখেছেন তার বেশির ভাগের মধ্যেই আপনার ব্যাক্তিগত আক্রোশের ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। উল্টাপাল্টা কথা প্রকাশ করে আপনি শুধু সিলেট বাসিকে যে ছোট করার চেস্টা করলেন মাত্র। নেগেটিভ দিক গুলা তুলে ধরতে চেয়েছেন ঠিক আছে। পজেটিভ দিক গুলার ধারে কাছে ও যান নাই।
আপনি বলেছেন সিলেটের স্কুল কলেজে নন সিলেটিদের অবজ্ঞা করা হয়। চুড়ান্ত ফালতু একটা কথা। আমি নিজে সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। ঐখানে দেখেছি বাইরের কোনো ছাত্র আসলে, শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারলে তাকে অন্য রকম সম্মান দেওয়া হতো।
এম.সি কলেজেও দেখেছি একই অবস্থা।
আপনার লেখায় সিলেটিদের মেধা নিয়ে ও অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য লক্ষ্যনীয়। আমি নিজে সিলেটি। আমি গর্ববোধ করি আমার পরিচয় নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা সাবজেক্ট টি থেকে শেষ করলাম পড়াশোনা। আমি না আমার সাথে যারা ই এখানে এসেছে সিলেট থেকে সবাই অনেক ভালো অবস্থানে আছেন।
সিলেটের মতো অতিথিপরায়ণ, হিংসাহীন লোক আপনি পুরা বাংলাদেশের কোথাও খুঁজে পাবেন না।
আপনি বলেছেন
উচ্চারণে অশুদ্ধতা ও প্রবল সিলেটি প্রভাবের ফলে বিভিনড়ব জাতীয় প্রতিযোগিতায় আবৃত্তি-বিতর্ক থেকে শুরু করে আরো নানা ক্ষেত্রে আমাদের অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা উলেখে যাগ্য সাফল্য দেখাতে ব্যর্থ হয়; বিপুল উৎসাহ নিয়ে তারা প্রতিযোগিতায় যায় এবং সাধারণত অশ্বডিম্ব নিয়ে ফিরে আসে।
আপনার লেখা পড়ে আমার তো মনে হচ্ছে আপনার ই এই সমস্যা আছে।
আপনি চাইলে এই মুহুর্তে আমি আপনাকে নুন্যতম ১০০ জনের নাম বলে দিতে পারবো যারা জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগীতায় সারা বাংলাদেশের ছেলে মেয়েদের সাথে প্রতিযোগীতার মাধ্যমে পুরুস্কার ছিনিয়ে নিয়েছে । তাও আবার আবৃতি, অভিনয়, রবীন্দ্রসংগীতের মতো বাংলা ভাষার সর্বোত্তম বিকাশের ক্ষেত্রগুলোতে।
নিজেকে প্রচার করছি না , আপনার পোস্টের ভুলগুলা ধরানোর জন্যই বলছি, আমি নিজে সিলেটের ছেলে, আমি নিজের ঝুলিতেও ২ হালির বেশি জাতীয় পর্যায়ের পুরুস্কার রয়েছে।
শুধুমাত্র একটা এলাকার লোকজনকে ছোটো করার জন্য আজেবাজে পোস্ট দেওয়া ছেড়ে দেন। ২ /১ একজন কে যাচাই করে পুরা এলাকার লোকদের কে বিবেচনা করবেন না।
৭| ০৯ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ১০:৫৬
অতৃপ্ত প্রেতাত্মা বলেছেন:
২৮ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৪:০৪
bijon007 বলেছেন:
৮| ২৭ শে জুলাই, ২০১১ সকাল ১১:৪৩
পাথরের কান্না বলেছেন: আপনার ব্যাক্তিগত আক্রোশের ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। উল্টাপাল্টা কথা প্রকাশ করে আপনি শুধু সিলেট বাসিকে যে ছোট করার চেস্টা করলেন মাত্র।
২৮ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৪:০৩
bijon007 বলেছেন: আপনিকি সিলেটের.......????
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জুলাই, ২০১১ দুপুর ২:১৪
লওল০০৭ বলেছেন: + dilam... Ami ekjon Sylhety... amader character niye ja bolsen tar sathe ami 99% ekmot.... r Non-sylhety der amra AABAADI bole thaki,noakhali ekhon temon use kora hoy nah... :/