নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঝাপসা বালকের পক্ষ থেকে সংগ্রামী লাল সালাম

ঝাপসা বালক

আতাউর রহমান

ঝাপসা বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারের আপোষ

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:২৯

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দীপন হত্যার পর বলেছিলেন, ‘পরিস্থিতি খুব ভালো, অবশ্যই ভালো’। তিনি আরও বলেছিলেন, দুই বিদেশী হত্যা, ব্লগার, লেখক, প্রকাশক হত্যা – এ সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা করেছেন, গুপ্ত হত্যার জন্য দায়ী হচ্ছেন খালেদা জিয়া ও তার পরিবার। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী ও কয়েকজন মন্ত্রী দাবি করেছেন,লন্ডন থেকে মা ও ছেলে এই সকল হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। পুলিশি তদন্ত শেষ হবার আগেই প্রধানমন্ত্রী, অপরাধীকে চিহ্নিত করে ফেললেন , কি আজব !!! কিন্তু সাংবাদিক সাগর- রুনির হত্যা , ইলিয়াস আলি গুমের ঘটনা আজও জনগণের কাছে ধুম্রজাল রয়ে গেল । এতে আর যাই হোক, এটা বোঝা যায় যে, সরকার এই সকল হত্যার ব্যাপারে আন্তরিক নয়। নিরপেক্ষ তদন্ত হোক, সেটাও বোধহয় সরকার চায় না। প্রধানমন্ত্রী তো বটেই, এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও যদি প্রকাশ্যে এই রূপ ঘোষণা দেন, তাহলে পুলিশের বুঝে নিতে বাকি থাকে না, তদন্তের গতিমুখ কোনদিকে হবে। প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেফতার নয় বরং সরকার ও বিশেষ করে সরকার প্রধানের ইচ্ছাপূরণই তাদের কাজ হবে।



পুলিশ নিরপেক্ষ নয়, কারন যে কোন ঘটনা ঘটার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দোষ চাপাচ্ছেন প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির উপর। বিএনপির কেউ যদি কোন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। হুকুমের আসামী বলে এই পর্যন্ত প্রায় সকল বিএনপি নেতা এবং মাঠপর্যায়ের শত শত কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু সাক্ষ্য প্রমাণ নিয়ে বিচার তো শুরু হয়নি। কারণ আইনের মধ্যে থেকে সাক্ষ্য প্রমাণ জোগাড় করে সঠিক তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করা এক জিনিস, আর বক্তৃতাবাজী এবং সামান্যতম প্রমাণ ছাড়া রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর দোষ চাপানো আরেক জিনিস।

ধারাবাহিকভাবে যে ব্লগার, লেখক ও প্রকাশক হত্যা চলে আসছে, সেই ব্যাপারেও সরকারের আশ্চর্যজনক নির্লিপ্ততা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, সরকার প্রকৃত দোষীকে ধরার ও শাস্তি দেয়ার জন্য আগ্রহী নয়। এই সুযোগে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কতোটা ঘায়েল করা যায়, সেটাই একমাত্র লক্ষ্য। সে জন্যও যে উপযুক্ত তথ্য-উপাত্ত যোগাড় করা দরকার,সেদিকেও কোন প্রচেষ্টা নেই। শুধু মুখে ঘোষণা দিলেই হলো। এতে অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে যারা পরিচিত ছিলেন, সেই সকল লেখক, বুদ্ধিজীবীদেরও একাংশ এই ব্যাপারে সরকারের সমালোচনা করতে বাধ্য হয়েছেন।গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়কারী ডা. ইমরান এইচ সরকার সম্প্রতি দীপন হত্যার পর ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, ‘সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও জনগণকে দমন করতে যতোটা আগ্রহী, ব্লগার, লেখক, প্রকাশক হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে ঠিক ততোটাই অনাগ্রহী’।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে নিহত হন অভিজিৎ রায়। তারপর আশিকুর রহমান (৩০ মার্চ), অনন্ত বিজয় দাস (১২ মে), নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় (৭ আগস্ট) এবং সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর দীপন একই প্রক্রিয়ায় চাপাতির ঘায়ে নিহত হলেন। ৩১ অক্টোবর একই সময় প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল ও আরও দু’জনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আশিকুর রহমান হত্যাকারীদের হাতেনাতে ধরে পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হয়েছিল। এই সাহসী কাজটি করেছিলেন দু’জন সাহসী ব্যক্তি যাদেরকে আমরা সাধারণত তৃতীয় লিঙ্গের বলে অবজ্ঞা করি। তাই যথার্থই সন্দেহ জাগে, সরকার আসলেই তদন্ত ও বিচারের ব্যাপারে আন্তরিক কিনা। এমন সন্দেহ সরাসরি প্রকাশ করেছেন সেই সকল বুদ্ধিজীবী যারা নিজেদেরকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে দাবি করেন। যেমন লেখক ও সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বিভিন্ন পত্রিকায় তিনি যে প্রবন্ধ ছাপিয়েছেন শিরোনাম – ‘প্রিয় দীপন’, তাতে তিনি লিখেছেন, ‘তারা (অর্থাৎ তরুণ সমাজ) বুঝে গেছে এ সরকার ব্লগার-লেখক-প্রকাশক হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে মোটেও আন্তরিক নয়। শুনে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, সরকার কোন এক ধরনের দুর্বোধ্য রাজনৈতিক সমীকরণের সমাধান করার জন্য নিজেরাই এ ঘটনাগুলো ঘটিয়ে যাচ্ছে কিংবা ঘটতে দিচ্ছে’।

এ বড় সাংঘাতিক অভিযোগ। আমরা তাহলে কি বুঝে নেবো যে, সরকার এই হিং¯্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে আপোষ করে চলতে চায়।

কারণ তার প্রকৃত প্রতিপক্ষ বিএনপি। সেই বিএনপি এখন জামায়াত, হেফাজত এই ধরনের মৌলবাদী বা উগ্রপন্থীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ আছে। আওয়ামী লীগের কৌশল হলো বিএনপিকে বিচ্ছিন্ন করো এই শক্তি থেকে। তাহলে বিএনপি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বন্ধু থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। সেই কারণে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে আগ্রহী নয়। সেই একই কারণে জামায়াতের কর্মীদের ঠালাওভাবে নিজ দলে টেনে নিচ্ছে। এই কৌশল বা অপকৌশলই হচ্ছে সরকারি দল আওয়ামী লীগের রাজনীতি। যদিও যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে এবং কয়েকজনের ফাসি পর্যন্ত হয়েছে। তবু বিএনপিকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে জামায়াতের সঙ্গে বা একই ভাবাদর্শের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তির সঙ্গে গোপন সমঝোতার প্রচেষ্টা অসম্ভব নয়। ‘বিচিত্র এই দেশ’
এটাও মনে করা যেতে পারে যে, ফাসির দড়িটা সামনে ঝুললে জামায়াতকে চাপের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে। বাকিরা আত্মসমর্পণ করবে। প্রতিদানে সরকারকেও মতাদর্শের ক্ষেত্রে কনসেশন দিতে হবে। দিচ্ছেও তাই। পুলিশ প্রধান একেএম শহীদুল হক নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের হত্যার পর পরই হত্যাকারীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে কিছু না বলে বরং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না দিয়ে লিখতে নসিহত করেছিলেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান পুলিশের এই নির্দেশনা প্রসঙ্গে যথার্থই বলেছিলেন, ‘পুলিশ সঠিক সময়ে সঠিক বার্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন সময় ব্লগার হত্যার সঙ্গে জড়িতদের খুজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা’।
আমার ধারণা পুলিশ রাজনৈতিক নির্দেশেই এই রকম বক্তব্য দিয়েছে। উগ্র মৌলবাদীদের সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্য নিয়েই।
প্রধানমন্ত্রী থেকে আরম্ভ করে মন্ত্রী ও সরকারি নেতারা যে প্রকৃত দোষীকে গ্রেফতার করার বদলে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে টানা বক্তব্য দিয়েই চলেছে, তাতে সরকারের প্রতি সাধারণভাবে সহানুভূতিশীল বুদ্ধিজীবীরাও ‘ব্লেইম গেম’ থেকে বিরত থাকার জন্য আহবান জানিয়েছেন। অধ্যাপক অনুপম সেন বলেছেন, ‘অবিলম্বে দোষারোপের রাজনীতি বন্ধ করে আসল অপরাধীদের খুজে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে’।
কারণটা হয়তো সেই ‘দুর্বোধ্য সমীকরণ’। তাই যদি হয়ে থাকে তবে বলবো সরকার হিমালয়সম ভুল করছেন। নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার লক্ষ্যে এবং প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে একমাত্র টার্গেট করার স্বার্থে তারা যদি একদিকে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে দেন এবং অপরদিকে চরম দক্ষিণপন্থীর সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেন তবে তা হবে আত্মহননের সামিল।
এখন দেখা যাচ্ছে, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদী চক্র কেবল লেখক, প্রকাশককেই হত্যা করছে না, পুলিশকেও হত্যা করছে। সরকার এই পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেবে?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫৯

হাম্বাখোর বলেছেন: দেশে প্রতিদিনই খুন ধর্ষণ হয়, এত এত ব্যাপার বাদ দিয়ে কেবল ব্লগার হত্যাকে হাইলাইট করা হবে কেন?

২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪৫

মোঃ আলামিন বলেছেন: ব্লগার মানেই ভিভি আইপি । আর যদি মুক্ত মনা হন তাহলে তো কথাই নেই। প্রতিদিন কত মানুষ খুন হচ্ছে , তাদের নিয়ে কেউ লিখছে না । এখানে সবাই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.