![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মিথ্যে হাসির অন্তরালে লুকিয়ে থাকা এক রহস্যময় ব্যক্তিত্ব। রহস্যময়তার এ গভীরতা জানার সামর্থ্য অস্তিত্বহীন। একটু রাগী, প্রবল স্বপ্নবাজ। স্বপ্নদ্রষ্টা। ভালো মানুষ হবার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
পৌষ মাস চলে আসবে সপ্তাহখানেক পর। তবে এখন থেকেই শীত শীত ভাবটা চলে আসাটা যেন একটু বিরক্তিরই কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আলভীর। ছাদের কার্নিশ এ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোন ধ্যানে যে মগ্ন হয়ে উড়ে চলছিল কোন জগতে, আলভী ই জানে।
" চাচা, কে জানি আসছে, আপনের লগে দেহা করতে চায়। কইল কলেজের বন্ধু ছিলেন নাকি উনার",
পেছন থেকে রুস্তম শেখের ডাক।
রুস্তম, আলভীর বাসার চারপাশের বাগান আর গাছপালা দেখাশোনা করে, টুকটাক কাজও করে দেয়।
ডাক দেয়ার মুহূর্তখানেক পর আলভী যেন শুনতে পেল কথাগুলো। উদাস মনে পেছন ফিরে তাকালো। গম্ভীরতায় ডুবন্ত কিছু শব্দ বের হলো যেন খুব কষ্ট নিয়ে,
" তুমি যাও, আসছি আমি। "
সুন্দর করে ছাদ দিয়ে, তিন তালা বাড়ি বানিয়েছে আলভী, শহর থেকে অল্প একটু দূরে। বাসার সামনে বসার জন্য সুন্দর উঠান, বাসার দুই পাশে ফুলবাগান আর পেছনের দিকটা কদম আর কৃষ্ণচুড়ার গাছে ভর্তি, তা পেরিয়ে ছোট্ট একটা পুকুর।
উঠানের কোনায় বেলীফুল গাছনার নীচে বসা লোকটাকে দেখে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইল আনমনে, তারপর একটু উচ্চস্বরেই,
-" আরে! অ্যালেন! "
অ্যালেন তাকিয়ে রইল, মুচকি হেসে।
আচ্ছা অ্যালেন এর পরিচয় ই তো দেয়া হলোনা, ও আলভীর কলেজ জীবনের খুব ভাল একটা বন্ধু ছিল। মাঝখানে সবপ্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে কোন আকাশে যে মিলিয়ে গিয়েছিল, বাস্তবতার রহস্য কাটানোতে বুঁদ থাকা আলভী যেন ওর খোঁজটাও কখনও করেনি।
চাপদাড়িতে বেশ লাগছে অ্যালেনকে। সব পেকে গেছে দাড়ি। চুলগুলোও একই, একটু এলোমেলো বটে।
মুচকি এক ফালি হাসি দিয়ে যেন পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে একজন আরেকজনের দিকে। আলভী ই সামনে এগুলো, এগিয়ে গিয়ে এক প্রকার শক্ত মায়ায় জড়িয়ে ধরল অ্যালেনকে। অনেকক্ষন জড়িয়ে ধরে রাখলো। তারপর বেলীফুল গাছের নীচে বসল দুজন।
- " কানাডা গিয়েছিলাম, হুট করেই। সবাইকে ছেড়ে যাবার কষ্টটা এতোটা আঘাত করেছিল যে, আমি সাহসই পাইনি কাওকে বলব, তাই না বলেই চলে গিয়েছিলাম। নানান ঝামেলা কাটিয়ে উঠলাম, আবার জড়ালাম, আবার উঠলাম। অনেক টাকা আয় করলাম, অনেক, বৌ বাচ্চা সব বিদেশ স্যাটেল, স্থায়ী বাসিন্দা। মায়ের চলে যাওয়াটা দেখতে পারিনাই রে শুধু, বাবা তো বেশিরভাগ সময় হাসপাতালেই থাকে এখন, বুয়া রেখে দিসি। দিনশেষে সব আছে কিন্তু.. ",
এক দমে এতোগুলো কথা বলে যেন একটু থামলো অ্যালেন। বিষাদের নিঃশ্বাস ছেড়ে শেষ করল বাক্যটা,
" কিন্তু শান্তি নাই রে, জীবনটাকেই যেন চিনতে পারলাম না, অনেক খোঁজ করে তোকে বের করলাম। কেমন আছিস তুই?"
নীচের দিকে তাকিয়ে ছিল আলভী, অইদিকে তাকিয়েই বলতে শুরু করলো,
" আমি, আমি আছি, বেশ আছি। সূর্য উঠে সেই অনেক সকালে, সঙ্গে আমিও, পুকুরপাড় দিয়ে হেঁটে চলে যাই বাগানে। ফুলগাছগুলোর দিকে তাকিয়ে কোথায় যেন ডুবে যাই, হয়তো সুগন্ধে। উঠানের ঘাসগুলোর উপর খালি পায়ে হেঁটে চলি অর্থহীন এক রাজ্যের রহস্যে ডুব দিয়ে। বাড়ির পেছনে বাঁধাই করা পুকুরে মাছ ধরতে বসি, কখনও বিকেল পেরোয় সেই বসাতেই। এক সময় কৃষ্ণচূড়ার পাশ দিয়ে সূর্য ডুবে যায়, সন্ধ্যে ঘনিয়ে যায়। রাজ্যের বিষণ্ণতা নিয়ে ছাদের কোনায় থাকা কদম গাছের উপর দিয়ে চাঁদ উঁকিঝুঁকি দেয়, আমি তাকিয়ে থাকি। বাতাস আসে দক্ষিন দিক থেকে, চলে যায়। এক সময় নিস্তব্ধ রাত আসে, শূন্যতায় ভর করা, ভালোবাসার অভাবহীন কোলাহলময় শহরের পাশে চুপটি করে যেন ঘুম জড়িয়ে যায়। পরদিন আবার সকাল হয়। নতুন দিন। অনেক ভাল আছি রে, অনেক। "
: এই আলভী, ভাবি কই?
" পুকুরপাড়ে, কদম গাছের এখানে। "
অন্যপাশে তাকিয়ে বলল আলভী, যেন চোখে চোখ রাখতে ভয় পাচ্ছে। চারপাশ কেমন আবছা হয়ে আসছে, সব যেন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছিল।
আলভী উঠে দাঁড়াল, "অ্যালেন চল, ভাবীর সাথে পরিচয় হবি না! "
দুজন মিলে বাড়ির পেছনের পুকুরপাড়ের পাশের কদম গাছের নীচে দাঁড়িয়ে আছে। গতোকালের বিষণ্ণ বিকেলে ঝড়ে পড়া শুকনো পাতায় টপ করে এক ফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ল আলভীর। অ্যালেন দাঁড়িয়ে আছে হতভম্ব হয়ে। আলভী মুচকি হাসছে আর গাল গড়িয়ে জল পড়ছে শুকনো পাতার গায়ে।
জীবনটা, সত্যিই খুব রহস্যময়। মায়ায় জড়ানো প্রত্যেকটা স্মৃতি এক পড়ন্ত বিকেলে সকলকে কাঁদায়। কতো স্বপ্নের রোদ উঠে কদম গাছের নীচে আর কতো স্বপ্ন এই কদম গাছের নীচেই ঢেকে যায়, তার হিসেব কেউ রাখেনা। দিনশেষে প্রকৃতি পুরোটা স্বার্থপরতা নিয়ে আগের মতোই চলতে থাকে। ইটপাথরের শহরে কোনো কিছুর অভাব না থাকলেও, ভালোবাসার যেন বড্ড অভাব রয়ে গেছে এই এখনও। কারোরটা আবেগহীনতায় ভুগে সেই দূরে পার করে দেয় হাজারলক্ষ পড়ন্ত বিকেল। আর কারোর কারোর সহস্র বিকেল যেন কদম গাছের পাশ দিয়েই বয়ে যায়। কারোর পূর্ণতায় জীবন নাই আর কারো কারোর জীবনে পূর্ণতা নাই। আমরা তবুও বেঁচে থাকি। এই মিথ্যে স্বপ্নের শহরের প্রত্যেকটা রাত দুঃখবিলাশ করে হলেও বেঁচে থাকি, শতোরঙা সব স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে। ভেঙেচুরে শতোবার গড়ি, তবুও অপেক্ষায় থাকি, জীবন থেকেও যেন অপূর্ণ না থাকি।
২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:১৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কসম্ভবত গল্প! সম্ভবত গল্প!
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:২১
রাজীব নুর বলেছেন: এটা কি গল্প?