নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Bangladesh my home

বীরেনদ্র

Nothing much to say about

বীরেনদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

“মায়া” সভ্যতার ইতিহাস ( History of the Maya Civilisation)

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৩৮

পূর্বকথা- গুজব রটেছিল যে মায়া ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২১ শে ডিসেম্বর ২০১২ মহাপ্রলয় ঘটবে,কিন্তু ঘটে নি। মনে মায়াদের নিয়ে প্রশ্ন জাগল। সাংবাদিকের রিপোর্টে নাকি ৫টি W এর উত্তর থাকতে হয় Who(কারা ),কখন(When), কি(What), কোথায়(Where)এবং কেন(Why) ।আমি সাংবাদিক নই, কিন্তু কারা ছিল মায়ারা, কোন দেশে তাদের বাস, মায়াদের সময়কাল, মায়া সভ্যতার স্বরুপ কি ছিল এবং কেনই বা তারা হারিয়ে গেল তা জানার এবং জানানোর ইচ্ছে থেকেই শুরু করলাম মায়াদের নিয়ে লিখতে ।



সূচনাঃ-

মানুষের ইতিহাস কি বা কবে থেকে শুরু হয়েছিল তা নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে বিতর্কের শেষ নেই, কেউ ১০ কেউ বলেন ২০ হাজার বছর, কেউবা বলেন আরো পুরোনো। নতুন আবিস্কার পালটে দেয় পুরোনো ধারনাকে। অনেকের মতে আদিম মানুষ যখন লিখতে শিখেছিল ,যখন থেকে তারা পাথরে ,গাছের পাতায় সেই সময়ের মানুষের জীবন যাত্রা প্রনালী, তাদের চিন্তা ভাবনা, লিখে রেখে গেছে তখন থেকেই মানুষের ইতিহাসের শুরু আর তার আগের সময় হল প্রাগৈতিহাসিক কাল।



আদিমতম সময়ে মানুষ ছিল যাযাবর। খেয়ে পরে বাচতে তারা ঘুরে বেড়াত এক স্থান থেকে আরেক স্থানে। জন্তু জানোয়ারদের মত কোন স্থানের খাবার ফুরিয়ে গেলে তারা রওয়ানা দিত অন্য দিকে।তখন মানুষ চাষাবাস শেখেনি, ফসল ফলাতে শেখেনি , পশুপালন শেখেনি। আগুনের ব্যবহার বা রাধতে শেখেনি তাই খাবার দাবার কাঁচাই খেত, ঘর বাড়ী ছিল না ,তাই বাস করত পাহাড়ের গুহায়, গাছের ডালে। ভাষার ব্যবহার শেখেনি তাই যোগাযোগ ছিল অসংগঠিত শব্দের মাধ্যমে বা ইশারার মাধ্যমে(Non verbal Communication)।জন্তু জানোয়ারদের হাত থেকে বাচতে, শিকার করতে, ঘরবাড়ী বানাতে দরকার পড়ল অস্ত্রের, আর প্রথম অস্ত্র হিসেবে হাতে তুলে নিয়েছিল পাথর। সেই শুরু হল প্রস্তর যুগ বা Paleolithic age । পুরোনো প্রস্তর যুগের পর এল নতুন প্রস্তর যুগ, এর পর এল ধাতুর যুগ -তাম্রযুগ, ব্রোঞ্জ যুগ ইত্যাদি। একে একে সব কিছুই আয়ত্ব করল মানুষ। যাযাবর বৃত্তি ছেড়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করল , চাষাবাদ শিখল, আগুনের ব্যবহার শিখল, ধাতু গলিয়ে তৈরী করল অস্ত্র, গড়ে তুলল শহর ,গড়ে উঠল সভ্যতা। ডারউইনের মতে ভাষার উৎপত্তি এবং আগুনের ব্যবহার এই দুটো জিনিস ছিল মানব সভ্যতার ইতিহাসের মাইল ফলক। ভাষা উৎপত্তির ফলে আদিম মানুষ সে যুগের অনেক কিছুই লিখে রেখে গেছেন। ভাষা লেখার গোড়ার দিকে যখন কোন অক্ষর ছিল না তারা মনের ভাব লিপিবদ্ধ করত ছবি দিয়ে। ছবি দিয়ে লেখার এই পদ্ধতি যেমনটি পাওয়া যায় ব্যাবিলনের “হাম্মুরাব্বি’র নিয়মাবলী” বা পিরামিডের দেওয়ালে তা হল চিত্রলিপি বা Heiroglyphics । পৃথিবীর বিভিন্ন যায়গায় গড়ে উঠেছিল প্রাচীন যুগের সে সভ্যতা। এই সমস্ত সভ্যতাই গড়ে উঠেছিল কিন্তু নদীকে ঘিরে কারন হল খাওয়ার জন্য, গৃহস্থালী কাজের জন্য, কৃষিকাজের জন্য নৌ পরিবহনের জন্য নদী ছিল বিশেষ উপযোগী। খৃস্ট পূর্ব সময়ে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য আদিম সভ্যতাগুলো ছিল , মিশরীয় সভ্যতা, গ্রীক সভ্যতা, ব্যাবিলনিয়ান সভ্যতা, সিন্ধু সভ্যতা, ইনকা সভ্যতা, চৈনিক সভ্যতা, মায়া সভ্যতা প্রভৃতি।





মায়া সভ্যতা।

মধ্য আমেরিকার মেক্সিকো , গুয়াতেমালা,হন্দুরাস, বেলিজ, এবং এল সালভাদর, এই ৫ দেশে প্রায় তিন সহস্রাব্দী্রও বেশী সময় জুড়ে গড়ে উঠেছিল মায়া সভ্যতা। এই এলাকায় শিকারী যাযাবর মানুষদের বসবাসের সাক্ষ্য পাওয়া যায় ১১,০০০ বছর আগে থেকে। মায়া সভ্যতার প্রাচীনতম নিদর্শন মেলে ২৬০০ খৃস্টপুর্বাব্দে মেক্সিকোর ইয়াকাটুন উপদ্বীপে। প্রায় একই সময়ে বেলিজের কুয়েলোতে (Cuello, Belize ) মায়া বসতি গড়ে উঠেছিল । তৃতীয় খৃস্টাব্দ এ প্রায় নিরবিচ্ছিন্ন ৩ লক্ষ ১১হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তন ছিল মায়া এলাকার । পুরোনো ওলমেক এবং এজটেক সভ্যতার উপর গড়ে উঠেছিল মায়া সভ্যতা। জ্যোতির্বিদ্যা, স্থাপত্যশিল্প,অঙ্ক শাস্ত্র, চিত্রলিপির ব্যবহার, ক্যালেন্ডার বা দিনপঞ্জীর ব্যাবহার প্রভৃতিতে মায়ারা বিশেষ অবদান রেখেছিল। জঙ্গল পরিস্কার করে চাষাবাস, রাস্তাঘাট তৈরী, জলাধার নির্মান, বুনন , মৃত্তিকা শিল্প প্রভৃতিতেও মায়ারা ছিল সমান দক্ষ।



মায়াদের এলাকা- কে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ১)উত্তর পশ্চিম হন্দুরাস, গুয়াতেমালার পেতেন অঞ্চল , বেলিজ এবং চিয়াপাস অঞ্চলের গ্রীস্ম মন্ডলীয় বনভুমি ছিল মায়া সভ্যতার প্রান কেন্দ্র।





তিকালের জায়ান্ট জাগুয়ার মন্দির।







দক্ষিনের এই অঞ্চলে ছিল উর্বরভুমি এবং অসংখ্য নদীনালা। এই এলাকায় মায়াদের প্রধান শহর গুলো ছিল কোপান, ইয়াক্সচিলান,তিকাল এবং পালেঙ্কি( Copán, Yaxchilán, Tikal, and Palenque ) ২) গুয়াতেমালার পাহাড়পর্বতসংকুল উচ্চভুমি এবং প্রশান্ত মহাসাগর সংলগ্ন অঞ্চল ,এই এলাকার মায়াদের উপর প্রাচীন এজটেক সভ্যতার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়,





কারাকোলের কানান প্রসাদ ছিল ১৪০ ফুট উচুঁ





৩) দক্ষিনের মায়া সভ্যতার ভাঙ্গন শুরু হলে মায়ারা উত্তরের মেক্সিকোর ইয়াকাতান প্রদেশের সমতলভুমির এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন শুরু করে । এই অঞ্চলের প্রধান নগরীগুলো ছিল লাবনা, চিচেন ইজা এবং উক্সমল( Labná, Chichen Itzá and Uxmal )









লাবনা'র গেট।





টলটেকরা (Toltec) এই অঞ্চল দখল করে নেওয়ার পর মায়াসভ্যতার সমাপ্তি ঘটে।









পালেঙ্কীর প্রাসাদ।





মায়া সভ্যতার সময়কালঃ- অনান্য সভ্যতার মত মায়াদের ইতিহাসেও ছিল উত্থান, পতন। মায়া সভ্যতার কালকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়। খৃস্টপূর্ব ১৮০০ শতাব্দী থেকেপ্রশান্ত মহাসাগর সংলগ্ন অঞ্চলে গোড়াপত্তন হয় মায়া সভ্যতার। এই সময়ে মায়াদের তৈরী মাটির তৈরী পাত্র এবং পোড়ামাটির সামগ্রীর সন্ধান পাওয়া যায়। ২৫০ খৃস্ট পূর্বাব্দের মায়া ভাষার প্রথম চিত্রলিপি বা Heiroglyphics এর সন্ধান পাওয়া যায় এই এলাকায়। প্রিক্লাসিক পিরিয়ড টিকে থাকে ১০০ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত। ৩য় খৃস্টাব্দ থেকে শুরু করে ১০ম শতাব্দী পর্যন্ত মায়াসভ্যতার কালকে বলা হয়ে থাকে ক্লাসিক পিরিয়ড এই সময়কে বলা হয়ে থাকে মায়া সভ্যতার স্বর্নযুগ। এর পরের সময় হল পোস্ট ক্লাসিক পিরিয়ড।





মায়া রাস্ট্র ও সমাজ- ধারনা করা হয়ে থাকে মধ্য আমেরিকার মায়ারা উত্তর আমেরিকা থেকে ক্রমশঃ দক্ষিনে এসে বসতি স্থাপন করা শুরু করে। তৃতীয় শতাব্দীতে এসে মায়ারা বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র শাসন ব্যাবস্থা গড়ে তোলে।





মায়াদের ধর্ম- মায়ারা বিশ্বাস করত যুগে যুগে সৃস্টি এবং ধ্বংশের। মায়াদের এক যুগ হল ৫,২০০ বছর নিয়ে। বর্তমান যুগ শুরু হয়েছিল ৩১১৪/৩১১৩ বছর আগে এবং ২০১১/১২ সালে তা শেষ হবে। মায়া সৃস্টিতত্ব অনুযায়ী পৃথিবী সমতল, চতুস্কোন এবং চার কোনাকে ধরে রেখেছেন ৪ জন দেবতা।সমতল পৃথিবী হল শাপলার দিঘীতে ভেসে থাকা বিশাল আকৃতির কুমীরের পিঠ। পৃথিবীর প্রত্যেক কোনার আবার রঙ আছে যেমন পূর্বকোনা লাল রঙের, পশ্চিমকোন কালো, উত্তর কোন সাদা, এবং দক্ষিন কোন হলুদ, আর কেন্দ্রের রঙ হল সবুজ। আকাশ হল পৃথিবীর প্রতিফলনএবং তা পৃথিবীর কুমিরের মতই দুই মাথা ওয়ালা সাপ এর অংশবিশেষ। আকাশে্রও বিভিন্ন স্তর ছিল , আকাশের চার কোনায় চারজন অমিত শক্তিশালী “বাকাব” দেবতা উচু করে ধরে রাখতেন আকাশকে।

স্বর্গ ছিল ১৩ স্তরবিশিস্ট, আর প্রত্যেক স্তরেই থাকতেন একজন দেবতা। নরক ছিল ৯ স্তরের কইভাবে (চলবে)

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৩:২৯

লুকার বলেছেন: "পূর্বকথা- মায়া ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গত ২১ শে ডিসেম্বর ২০১২ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা ছিল ,কিন্তু হয় নি"

আপনার এই কথাটা ঠিক না। মায়া ক্যালেন্ডারে ঐ তারিখ পর্যন্ত দেখানো হয়েছিল মাত্র। ধ্বংসের কথা প্যানিক সৃষ্টি করে মজা দেখার জন্য কতিপয় ব্যক্তির উদ্ভাবন। আপনার মোবাইলে বা কমপিউটারের ক্যালেন্ডারে যদি ২১০০ সাল পর্যন্ত দেখানো থাকে, তার মানে কি ঐ বছরের পর পৃথিবী ধ্বংস হবে??

২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:১৫

তন্দ্রা বিলাস বলেছেন: +++

৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:২৯

কালা মনের ধলা মানুষ বলেছেন: আগেই পড়েছিলাম।

++++++++++

৪| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৪৪

রামীরা বলেছেন: পড়ে বেশ ভালো লাগলো।

৫| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৩২

স্বপনবাজ বলেছেন: +++

৬| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:১৫

৮ই ফাল্গুন বলেছেন: পরবর্তী পোস্টের অপেক্ষায় থাকলাম, এখনি কিছু বলা অনুচিত মনে হচ্ছে।

৭| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৯

অনন্যা নাসরিন অবন্তি বলেছেন: জানলাম অনেক কিছু । ধন্যবাদ !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.