![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পথে পথে কুড়িয়ে নেই অভিজ্ঞতা
ফারহানার জন্যে শেষ পঙ্ক্তিমালা
এই শরতে সমুদ্র দেখার খুব ইচ্ছে করছে । আমার নগ্ন কৃষ্ণচরণ দুটি সমুদ্রজলের স্পর্শ পেতে চায় । শুন্য হাত দুটি কাশফুলের দেহ চুঁয়ে পুর্ণতা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল। এই শরত এতো মধুময় । তাইতো, গভীর রাতে বকুল আর হাসনাহেনার বাতাস উৎসব করতো আমার জানালার প্রান্তে, প্রশস্ত শয়নকক্ষে । মনেহয় বকুল আর হাসনাহেনা খুলে দিল তার স্বর্বস । সারা রাত মাথার বালিশকে প্রিয়সী মনে করে বুকের কিনারে রাখি । আঁধার যখন আমার নিকেতনের চির অতিথি । তখন আমি শরতনিশি মায়া মেখে আমাদের বাড়ীর আঙ্গিনার পাশে বিশাল মাঠের ধানগুচ্ছের বৃদ্ধি হওয়া দেখতাম । তাদের ঘিরে পাগল করা সমীরের নৃত্য উপভোগ করতাম । কিন্তু এখন কেন যেন আমার স্বনয়ন দুটি বড়ই তুলকালাম । এক্কেবারে অবাধ্য ফটিকের মত কি যেন খুঁজে বেড়ায় ।
কিন্তু কাকে?কোন শারতীকে?
যেন দিগন্ত নিলীমার অভ্র, গাঢ় ঘননিশি আর শরতের বিস্তৃত শুভ্র মেঘের মিশ্রণে মন্জিমা কায়া হয়ে ফুটতো সে । মৃদু তরঙ্গের চাংখা দিঘীর শাপলা ফুলের মত । কখনও শরতের সমস্ত শুভ্র দিয়ে কবির কবিতার সর্বশেষ লেখার মায়াবতী ছন্দের আদলে গড়ে উঠতো । তরুণ চিত্রশিল্পীর মধুর হরণ করা রমনীর তৈলরংচিত্রের কারুময়ে।তৃপ্তিময়, দীপ্তযুবতী কচি নারী হয়ে উঠতো ।
কিন্তু এই ভবঘুরে হ্নদয়,চির বাউন্ডুলে মন আমার অবাধ্য ক্ষুধার্ত নয়ন কাকে খুঁজে? কতদিন যে এই নয়ন আমার পরিপুর্ণ স্তনস্ফীত বয়সন্ধির সেই রমণীকে দেখেনি । যে রমণী এখনো আমার গাঢ় ঘুমের গহীনে প্রণয়ের ঘর তৈরী করে নি:সঙ্গ হওয়ার ভয়ে ডাকতো আমায় ।এখনও ডাকে, অমায়িক অঙ্গুরী সংকেতে। আমার সমস্ত বয়:সন্ধিময়,অস্থি, মজ্জা আর শয়নকক্ষ জানে । সে কি যে সিডর বয়ে যেত আমার সর্বত্রে । যে তুমি এই ভরা পুর্ণিমার শরতে, ভোরের ঝিকিমিকি সোনালী শিশিরে, সদ্য বিদায়ী বর্ষাকালে, পুর্ণভরা শরতে, ভাবী হেমন্তে-শীতে, আমার পাঁজরে জোঁকের মত বসে থাকতে । যতটুকু একজন রুপসী হরিণীকে মানায়, ঠিক সেভাবে সদ্য বিদায়ী কিশোরীর খোলস ছেড়ে লজ্জারাঙা শরীর নিয়ে বিকাল বেলার দিগন্তে মিলিয়ে যাওয়া ট্রেনের শব্দের মত হেটেঁ যেতে আমাদের বিদ্যালয়ে । বড়ই ভালো লাগতো, চক্ষু আমার তোমার আচ্ছাদিত দেহের গহীনে অতিবেগুনী রশ্মির মত প্রবেশ করতো । তুমি লাল লজ্জারাঙা কৃষ্ণচুড়া হয়ে উঠতে।নিজেকে কিভাবে সামলাবে, সে নিয়ে কি যে ব্যাস্ত সময় কাটাতে ।
হা-হা-হা.. .. ..
আমি আরও তোমাকে অসহ্য বিষফোঁড়ার মত জ্বালাতন করতাম । বিদ্যালয়ে তোমার আসার আগমুহুর্তে, ঠিক যেখানে তুমি বসতে সেই জায়গাটুকু আমার কৃষ্ণ হাত চোঁয়া পেতো আর ঠোঁটযুগল চুমু খেতো । তীরবিদ্ধ ধনুকের মত শিহরণ করতো আমার শরীরে ।তোমার ও কি তা হতো! আমাকে দেখে ।এখনও বড়ই জানতে ইচ্ছে করে । আমারই মত বন্ধুদের নয়নজুড়ে, বুকের পাঁজর ভেঙ্গে,নিষ্ঠুর হাসি দিয়ে যে তুমি ক্লাসে প্রবেশ করতে । মনে হতো সমস্ত আকাশের সৌষ্ঠব মায়া ম্লান হয়ে গেছে । তুমিতো সর্বশেষ বিধির তৈরী করা শারতী নিলীমা ।
তখন সে কি কান্ড!
আমার বুকের, মনের, দেহের জ্বলাতন বেড়ে যেতো প্রচন্ড ।
সেই তুমি.. .. ..
শুনেছি আজ বন্ধু লোকমানের কাছে । তুমি গতকাল কোন সৌভাগ্যবান পুরুষের একান্ত অধিকারে চলে গেলে ।বড়ই অসময়ে হে শারতীদেবী । তোমার শারদীয় আকাশ সাজালে । এখনও আমার কিছু দেখা হয়নি । বহু বৎসর তোমাকে দেখেনি । টুকটাক তোমার সুনাম-বদনাম শুনতাম । তোমাকে নিয়ে বন্ধুদের আলোচনা-সমালোচনা আমার অপছন্দ হতো । সব ছাড়িয়ে তুমি জীবন্ত চির সবুজ তরুণী । আমার নেত্রকোণে এখন ও তুমি, যে কোন কিশোরীর প্রভা নয়নের মণি অথবা টুইটম্বুর ভরা যুবতীর মত টসটসে কিংবদন্তী মনোহরিণী,বিস্তৃত কাদম্বিনী ।
মনেপড়ে ২০০৭ সালের কথা, তুমি যখন সাদা সেলোয়ার-কামিজ পরে দুধে ধোয়া পুর্ণিমার মত আমাদের মহাবিদ্যালয়ে এসেছিলে, তোমার বড় বোন লাভলীর সাথে । আমি বড়ই অনধিকার অভিমানে, রাগে, ক্ষোভে দেখা করিনি ।মনে হয় যেন তুমি আমার চির প্রনয়ণী । সেই দিন শুধু তোমার অগোচরে, অলক্ষ্যে পিছু-পিছু আমি ছুটে গেছি ।অনতিদুরে তোমার বিজন নীভৃত্বে চলে যাওয়া দেখেছি । মনে-মনে অন্তর্মুখী মানবীর মত বোবা কান্না কেদেঁছি । দেখেনি কেউ ।শুধু দেখেছে আমার নিশিরজনী, আমার মত সর্বদুখী প্রণয় হারা প্রিয় পাখিগুলো । আজ এই শহরের বুকজুড়ে শরতের আকাশ ভীষণ কেদেঁছে । এত জলভরা কান্না আমি এই শহরে দেখিনি । মনেহয় বিস্তীর্ণ নিলিমার কোথাও বিস্ফোরণ ঘটেছে । নি:শব্দে, বড়ই বিনয়ী অভিমানে শহুরে পাখিরা ভিজে গেলো ।অদ্ভুদ নীরবে, বিজনে । ভাবতেই পরিনি এত বিষাদী হয়ে উঠবে । হয়তো তোমার খবর, আমার মত মহী-সমীরণের ও অপছন্দ। অমাবস্যার রাতের মত, বুভুক্ষ বিখারীর মত, ব্যাক্তিটির তৃষ্ণার্ত আখিঁপাতের মত । আমার ও ইচ্ছেকরে আবার তোমায় দেখি । সেই তুমি আজ আমার স্বপ্নের নিকেতন বিধ্বস্ত করে দিলে!
আজই তুমি চলে যাবে অন্যত্রে, অন্যের বাহুডোরে । হয়তো আর দেখবোনা । আর দেখা হবেনা-
শুনো, মনে রেখো, তোমায় আজীবন দেখার ইচ্ছে করবে । ইচ্ছে করে ।
তখন সেইদিন- ।
তুমি দেখা দিবে তো.. .. .. !
এখন বড় ভালো লাগে, প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণে’র
এই কবিতার চরণ গুচ্ছ-
তুমি চলে যাচ্ছো, নদীতে কান্নার কল্লোল,
তুমি চলে যাচ্ছো, বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ,
তুমি চলে যাচ্ছো, চৈতন্যে অস্থির দোলা, লঞ্চ ছাড়ছে,
টারবাইনে বিদ্যুৎগতি ঝড় তুলছে প্রাণের বৈঠায় ।
কালো ধোঁয়ার দুরত্ব চিরে চিরে ভেসে উঠছে তোমার
অপসৃয়মাণ মুখশ্রী, তুমি ডুবতে ডুবতে ভেসে উঠছো ।
তোমার চলে যাওয়া কিছুতেই শেষ হচ্ছে না,
তিন হাজার তিন ধরে যাচ্ছো, যাচ্ছা আর যাচ্ছো।
(কবিতা: তুমি চলে যাচ্ছো, পৃষ্ঠা:১৭৪)
বই:প্রকৃতি ও প্রেমের কবিতা সমগ্র ।
২৯/০৯/২০১২,
৪৯১, মালিবাগ বাগান বাড়ী আবাসিক এলাকা, শনিবার রাতে ।
বিষাদ আব্দুল্লাহ ।
২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৪
বিষাদ আব্দুল্লাহ বলেছেন:
৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:১১
বিষাদ আব্দুল্লাহ বলেছেন: Bondhu Tomar Jonye Valobasa [email protected] Alam
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:০৫
এস.কে.ফয়সাল আলম বলেছেন: আপনার এই লেখা সত্যিকারের একজন ফারহানার কাছে পাঠিয়ে দিলাম