![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পথে পথে কুড়িয়ে নেই অভিজ্ঞতা
গতকাল দীর্ঘ ছয় ঘন্টার জ্যাম অতিক্রম করে ক্ষুধার যন্ত্রণা ভোগ করে দেড় মাস পরে পবিত্র ঈদুল আযহা’র উৎযাপন করতে বাড়ীতে আসলাম ।মেজু ফুফুর বাসায় দাওয়াত ছিলো বিধায় ঢাকার সঙ্গী সেজু ফুফুর একমাত্র পুত্র মামুন আর আমি বাড়ীতে এসে ফ্রেশ হয়ে দাওয়াতে গেলাম ।আমার আব্বু আম্মু এবং আত্মীয়-স্বজনেরা সবাই ওখানে ।মামুনের মেজু বোন নাসরিনের সদ্যবিয়ের পরে কোন বিয়াইনখানা হয়নি । কারণ মামুনের আব্বু তখন বিদেশে অবস্থান করছিলেন ।সেই বিয়াইনখানায় আজকের অনুষ্ঠানের উপজীব্য ।ভোর পৌনে ছয়টায় ঘুম থেকে স্টার লাইন করে ঢাকা ছেড়ে বাড়ীতে আসার দকল এখনো আমাকে ছাড়েনি ।সমস্ত শরীর একবারে অবস হয়ে আসছে চোখের পাপড়িতে শান্তিঘুম পরীরদেশ থেকে উড়ে এসে আমার নেত্ররাজত্ব একেবারে সাময়িক পূর্ণদখলে ।মুহুর্তে আমি কোথায় যেনো, অন্য কোনখানে চলে গেলাম। ক্লান্ত শরীরে প্রশান্তির ঘুম আসবে এটাইতো স্বভাবিক ।ঘুম ভেঙে দেখি আম্মু ততক্ষণে অনুষ্ঠান থেকে ফিরে গৃহস্থালির কাজ-কর্ম শুরু করে দিয়েছে । আম্মুকে বললাম চা তৈরী করতে । মাগরিবের নামাজ পড়ে আম্মু চা বানিয়ে দিলেন ।তারপর আমার সাহিত্যমোদী আব্বুর স্কুলের পাঠাগার থেকে আনা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চতুরঙ্গ’ উপন্যাসটি পড়া শুরু করলাম ।সারারাত জ্যাঠামশায়, শচীশ, শ্রীবিলাস, দামিনী’র সাথে আমার বসবাস হলো ।এতো এতো ঘোরের মধ্যে ছিলাম কখন যে রাত গাঢ় হয়ে শেষের দিকে চলে যাচ্ছে তা খুব কম টের পেযেছি ।সকাল বেলা ঘুম ভেঙ্গে আম্মুর কাজে একটু সাহায্য করলাম ।তারপর ছোট ভাইয়ের আশির্বাদে ফেসবুকে প্রবশ করেই মাত্র যে খবরটি জানলাম । দুইবাংলা সমান জনপ্রিয় কবি, সাহিত্যিক, সাহিত্যসম্রাট, বুদ্ধিজিবী নীললোহিত, সুনীলগঙ্গোপাধ্যায় আর নেই ।গতকাল রাতেই পৃথিবীর দিগন্তকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে অম্বরবাহু,মায়াময় জাল, চিরচেনা কলকাতা শহর, মাতৃভুমিরস্নেহ, ছিন্ন করে দেহত্যাগ করেন । চলে গেলেন, না ফেরার দেশে, অচীনপুরে। আর তখনই মনে হলো সকালের আসন্ন শীতের অর্কের আলো অগ্নিমূর্তি রুপে আমার হ্নদবৃত্তে হামলা দিলো, চলতি শারদীয় পূজোৎসব এর আমেজ দুরে ঠেলিয়ে দিয়ে রহস্যাভিমানে প্রিয় সুনীল দা চলে গেলেন ।তাঁর সাথে আমার কখনো সাক্ষাৎ ঘটেনি অথচ তার এই চলে যাওয়ায় আমার সমস্ত মনদেহ বেশকিছুক্ষণ নিস্তেজ, নিষ্প্রাণ, নিথর, হয়ে উঠলো ! কিন্তু কেন?
হয়তো তাঁর কবিতা,উপন্যাসই আমাকে প্রিয় সুনীলদা বলা’র যোগ্যতা দিলেন
।মুহুর্তে ফেসবুকে আমার স্ট্যটাসে বদলে দিলাম ।আমাদের সুনীল দা’র ফটো সংবলিত কিছু কবিতাগুচ্ছ-
কেউ কথা রাখেনি
.. .. ..
৩০ বছর কাটলো
.. .. .. ..
কেউ কথা রাখেনা ।
অথবা,
ভালোবাসার পাশেই একটা অসুখ শুয়ে আছে ।
ইত্যাদি ইত্যাদি লেখে নিজেকে সারাক্ষণ ও আজকের দিনটিকে ব্যাস্ত রাখলাম ।সারাক্ষণ ঘরেরমধ্যে পাঁয়চারি করতেছি, মাইকেল মুধুসূদনের পহসন ‘একে কি বলে সভ্যতা’ আর ‘বুড়ো শালিকের গাঁড়ে রো’ পড়তেছি ।আর তখন ঘুমমামা আবার আসলো, বাহিরে রোদের নাচন, হরিৎ বৃক্ষগুলো বেশ ভালো লাগছে আবার বিষন্ন লাগছে, চিলের ডানার মতো, সদ্য প্রসূত নির্বাক শিশুর মতো নীলাম্বর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয়, রোদের উম নিতে রোদের চোঁয়া পেতে মা মুরগি আর তাদের ছানাগুলো রোদ পোহাচ্ছে, বাড়ীর আঙ্গিনার দ্বার ঘেষে বিশাল ধানক্ষেতের মাঠে ভরে আছে সবুজ ধান গাছ আর তার গায় চুঁয়ে অবিরাম সোনালী শিশির ঝরছে ।ঘুমন্ত চোখে ঘুম, তবু ঘুমে টলোমলো করে দুইচোখ, অবাধ্য ঘুম আমার ডাকে সাড়া দেয়না কিন্তু চেষ্টা করি ।আরেকটু ঘুমিয়ে নিতে এই সকাল বেলায় । কিন্তু আমার সব চেষ্টাবৃথা গেলো, বারবার সুনীলদার কবিতার লাইন আমাকে তাড়া করছে । গত সাপ্তাহ বেশ উপন্যাস পড়া হয়েছে আন্দালিব রাশদীর, মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের, ইমদাদুল হক মিলনের । যখন মিলনের ‘ভালেবাসার পাশেই’ উপন্যাসটি পড়লাম । ঠিক পড়া শেষে ভীষণ ইচ্ছে করলো সুনীল দা’র কবিতা পড়ি ।আর সঙ্গে সঙ্গে আমার নীলক্ষেত থেকে কেনা উনা’র ‘কবিতা সমগ্র-২’ পড়া শুরু করলাম । এক নিমেষে প্রায় অর্ধেক এর চেয়ে একটু কম পৃষ্ঠা পড়ে পেললাম মিনিট দশেকের মধ্যে ।তারপর প্রায় প্রত্যেকদিন উনার কবিতার শব্দ, ছন্দ, অনুপ্রাস আমার চিত্তে উঠে বাজে, করে নৃত্য যখন তখন ।গতকাল বাড়ীতে আসার সময় আমার ল্যাপটপ ব্যাগে কবিগুরুর ‘সঞ্চিয়তা’ আর সুনীল দা’র ‘কবিতা সমগ্র-২’ সঙ্গে নিতে ভুলে নি ।এই কয়েকদিন ঈদের ছুটিতে এই বইগুলি আমার হ্নদ্যরস হবে ।আমার সর্বসঙ্গীহবে,আমার নারী হবে, আমার জননীহবে,আমার ছায়া হবে, আমার ভাবনা হবে, আমার আনন্দ হবে .আমার প্রেমিকা হবে ।আমার গ্রামের প্রকিৃতীর সাথে কবিতার ছন্দগুলো বেশ জমবে ভালো । অথচ সুনীল দা আমাকে কান্না জগতে রেখে অন্যত্রে । গত কবিতা উৎসবে আমার চোখ হন্য হন্য হয়ে উনাকে খুঁজেছে । উনার অসুস্থতার কারণে না আসায় আমার আর দেখা হলোনা আর দেখা হবেনা। ঠিক অনুরুপ সদ্যপ্রয়াত কথাসাহিত্যিক, আরেক দিকপাল সাহিত্যের বরপত্র হুমায়ুন আহমেদ কে দেখার জন্য আমার চোখ অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়লো ।দেখার আশায়-আশায় আর দেখা হলোনা । জানি আর দেখা হবেনা । এই জনমে আর দেখবোনা আর দেখা হবেনা ।কথা দিলাম সুনীলদা ।আর কেউ না রাখুক আমি কথা দিলাম । তোমায় মনে রাখবো, আমার ছন্দে, রসদে, ভা্বনায়. কথায়, নিত্য চলার পথে ,আমার প্রাণভরা বন্ধুদের আড্যায়, অলসতায় অথবা কর্মময় জীবনে ।খুব ভয় লাগছে ।না জানি এবার কাকে হারাই.. .. .. ..
২৩.১০.১২.দুপুরবেলা, বাড়ীতে ।
(২২/১০/১২,সোমবার)
©somewhere in net ltd.