নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশা: বেসরকারি কর্মকর্তা, সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। জন্ম: কুমিল্লা, চৌদ্দগ্রাম, বাংলাদেশ ।

বিষাদ আব্দুল্লাহ

পথে পথে কুড়িয়ে নেই অভিজ্ঞতা

বিষাদ আব্দুল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাভার ট্রেজেডি এবং" বরফ গলা নদী"

২৯ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১:২৬

"বরফ গলা নদী" জহির রায়হানের এক কালজয়ী উপন্যাস । কাল থেকে মহাকালের বহতায় এই উপন্যাস এখনো উজ্জ্বল, ভাস্বর । গতো ২৪শে এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজায় ভবন ধসে হাজারো শ্রমজীবী মানুষের নির্মম মৃতু্তে আবারো আমার চোখ ফেরালো "বরফ গলা নদী"র দিকে ।১৬কোটী মানুষ সেই দিন দেখেছিলো লাশের মিছিল, অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে লাশের দীর্ঘ সারি, স্বজন, মা-বাবা, সন্তান, স্ত্রী, প্রেয়সী, আর সদ্য বিবাহিত স্বামীর অকাল মৃত্যু । বাতাসে লাশের গন্ধে ভারি হয়ে উঠেছিলো সাভারের আকাশ ।সেই লাশের গন্ধ বাংলার আকাশ ছুঁয়ে সমগ্র পৃথিবীতে পৌঁছে গিয়েছিলো মুহুর্তে, মিডিয়ার কল্যাণে ।কেঁদেছে বাঙ্গালি, কেঁদেছে পৃথিবী । শাসক-শোষক শ্রেণির মুনাফালোভের বলি সেই সর্বহারা মানুষ ।ঐ সাম্রাজ্যবাদীদের নির্মম শিকারে কি করুণ ভাবেই না জীবন দিতে হয়েছিলো হাজারো শ্রমিকদের । কিংবদন্তি কথা সাহিত্যিক, বুদ্ধীজীবী জহির রায়হানের "বরফ গলা নদী" উপন্যাসের চরিত্র গুলো ঠিক অনুরুপভাবে মিলে গেলো সাভার ট্রেজেডির সাথে ।এই উপন্যাসের চরিত্রগুলো হলো সালেহা বিবি, হাসমত আলী, মরিয়ম, মাহমুদ, হাসিনা, লিলি, দুলু, খোকন, মনসুর,তসলিম, শাহাদাত, রফিক, নঈম, খোদাবক্স, সেলিনা, আনিসা বেগম, প্রমুখ । এই চরিত্র গুলো মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে শ্রেণিসংগ্রাম, সমাজ, রাষ্ট্র, পৃথিবীর সাথে পাল্লা দিয়ে সর্বহারা মানুষ কিভাবে টিকে আছে , সাম্রাজ্যবাদীদের শোষণের মধ্য দিয়ে । কিভাবে টাকার লোভে মানুষের বিবেক, মনুষ্যত্ব বিকৃত হয়ে যায়, শ্রেণিকরণের উদ্ভব ঘটে ।আমি উপন্যাসের কিছু অংশ তুলে ধরছি ।



"পাড়ার লোকেরা আলাপ করছিলো নিজেদের মধ্যে । মাঝরাতে একটা ভয়ংকর শব্দে জেগে উঠে হকচকিয়ে গিয়েছিলো সকলে । এমন ভয়াবহ শব্দ কোথা থেকে এলো ? পরে তারা একে-একে দেখতে পেলো হাসমত আলীর বাড়িটা ধসে পড়েছে । ঘর ছেড়ে সকলে ছুটে বেরিয়ে এলো । কিন্তু অন্ধকারে ভাঙা ইটের স্তুপ ছাড়া আর কিছু নজরে এলো না কারো ।

ইটের স্তুট সরিয়ে, একটা মৃতদেহ বের করে, স্ট্রেচারে তুলে এনে ওর সামনে মুহুর্তে কয়েকের জন্য দাঁড়ালো ফায়ারব্রিগেডের চারজন লোক ।একনজর তাকিয়ে , দাঁতে দাঁত চেপে চোখজোড়া অন্য দিকে সরিয়ে নিলো মাহমুদ ।মাথাটা থেঁতলে গেছে মরিয়মের । কী কদাকার লাগছে এখন তাকে । মারা গেছে সে । কেন মরলো ? কেনই বা সে গতকাল আসতে গিয়েছিলো এখানে । না এলে সে নিশ্চয় মরতো না । ওদের বাড়ি নিশ্চয় ধসে পড়বেনা এভাবে ।তাহলে, মৃত্যুই কি তাকে টেনে এনেছিলো এখানে ? হাসিনার মৃত দেহ আবিষ্কৃত হলো একটু পরে । গলাটা ভেঙ্গে গেছে তার ।ঝুলে আছে দেহ থেকে; মাহমুদের মনে হলো ওর ঠোঁটের কোণে একটুকরো হাসি লেগে আছে । মেয়েটা কি হাসতে হাসতে মারা গেছে ? এ বয়সে যদি মারা যেতে হলো তবে জন্মেছিলো কেন ? আর এখন সে কোথায় আছে ? মৃত্যুর পর কোথায় যায় মানুষ ? কাল তাদের সকলকে দেখেছে মাহমুদ । হাসছিলো । কথা বলছিলো । হেঁটে বেড়াচ্ছিলো । এ-ঘর থেকে সে-ঘরে । এখন তারা কোথায় ? তাদের দেহগুলো এখনো দেখতে পাচ্ছে সে ।কিন্তু তারা নেই । কেন এমন হলো । চারপাশে লোকজনের কোলাহল বেড়েছে এখন ।

মানষের ভিড় । ছেলে-বুড়ো, জোয়ান-মরদ গিজগিজ করছে এসে । মাহমুদ উদাস দৃষ্টি মেলে তাকালো সবার দিকে । খবর পেয়ে থানা থেকে একদল পুলিশও এসছে ।

দুলুর মৃতদেহটা স্ট্রেচারে করে সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো । মাথার মগজগুলো সব বেরিয়ে গেছে ওর । সারা দেহ রক্তে চবচব করছে ।আহা, বাচ্চাটা-। কে যেন আফসোস করছিলো ।

বাচ্চা নয়, কুত্তার বাচ্চা । নইলে অমন করে মরতে হলো কেন? দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে উঠলো মাহমুদ ।"



মাহমুদ এই উপন্যাসের চরিত্রগুলো মধ্যে অন্যতম । যে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে সাংবাদিক পেশায় বেছে নিয়েছিলো । সৎ সাংবাদিকতার কারণে তাঁর চাকুরিটাও বেশি দিন স্থায়ী হলোনা । মাহমুদ যখন তাঁর বন্ধু শাহাদাতকে বললো :

" সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন ছিলো, সেতো চুরমার হয়ে গেছে ।সাংবাদিকতার নামে গণিকাবৃত্তি করেছি এ ক বছর ।মালিকের হুকুম তামিল করেছি বসে বসে । তেলকে ঘি বলতে বলেছে, বলেছি । হাতিকে খরগোশ বানাতে বলেছে, বানেয়েছি । তবু ব্যাটারা বেঈমানি করলো ।"

চাকুরি খুঁজতে খুঁজতে আর চায়ের দোকানে বাকি বাকি করতে জীবন যখন সহ্যসীমার অতিক্রম হয়ে যাচ্ছিলো । তখন মাহমুদ একটা ছাপাখানার গ্রুফ রিডারের চাকুরি নিলো । তাঁর পরিবারের আরেক সদস্য মরিয়ম,সে প্রাইভেট পড়িয়ে তার কলেজের খরচ চালায় । স্কুলে চাকুরি হওয়ার আশায় আশায় সেই চাকুরি ও হয়ে উঠেনি আর ।এক সময় ধনী পরিবারের সন্তান মনসুরের সাথে প্রেমের পরিণতিতে বিয়ে হয় । কিন্তু সে বিয়ে বেশিদিন আর স্থায়ী হয়নি । অন্যদিকে মাহমুদের বাবা হামমত আলী সরকারি কেরানী হেসেবে চাকুরি করছে । মা সংসারের জন্য সারাদিন কলুর বলদের মত খেটে মরছে । হাসিনা , দুলু, খোকন হলো ।মাহমুদের পরিবারের সদস্য । তারা ছোট । মাহমুদের বাসাটা উপন্যাসে এই রকম:

" চারপাশে নোংরা আবর্জনা ছড়ানো । কলার খোসা, মাছের আমিষ , মরা ইঁদুর, বাচ্চা ছেলেমেয়েদের পায়খানা-সব মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে । দুর্গন্ধে এক- মুহুর্তে দাঁড়িয়ে থাকা যায়না ।"



বৃষ্টি হলে ছাত বেয়ে ফুটো দিয়ে পানি এসে ঘরের মধ্যে পড়ে ।বাড়ির মালিককে বলার পরেও মেরামত করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও মেরামত করে দেয়নি । এভাবে একদিন রাতে বাহিরে একটানা বৃষ্টি হচ্ছে ,তখনো প্রেস থেকে মাহমুদ বাড়ি ফেরেনি। ঠিক ঐ সময় ছাত ধসে তার পরিবারের সবাই নিহত হন । রাত করে বাড়ি ফেরার কারণে মাহমদু বেঁচে যায় ।

কি অদ্ভুদ ভাবে মিলে যায় জহির রায়হানের "বরফ গলা নদী "উপন্যাসের সাথে ২৪শে এপ্রিল সাভারের ঘটে যাওয়া ইতিহাসের সবচে ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি । জহির রায়হান বুঝতে পেরেছেন ঐ সাম্রাজ্যবাদীদের লোভ-লালোসার বলি হবে সর্বহারা মানুষ, এইভাবে প্রাণ দিতে দিবে । যতদিন না, এই পৃথিবীতে শ্রেণিহীন, বৈষম্যহীন,সাম্যবাদী সমাজ গড়ে না উঠবে ততদিন হয়তে এভাবে সর্বহারা মানুষদের জীবন দিতে হবে ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৩:১২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: বরফ গলা নদী অনেকবার পড়েছি। অনেকবার খারাপ লেগেছে।

৩০ শে মে, ২০১৩ দুপুর ২:৩৯

বিষাদ আব্দুল্লাহ বলেছেন: মন্তব্যটি অস্পষ্ট লাগছে । উপন্যাসটি পড়ে ভালো লাগলো না কি ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.