![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পথে পথে কুড়িয়ে নেই অভিজ্ঞতা
শাহবাগ শুধু একটি নাম নয়। শাহবাগ নামক শব্দটি আন্দোলন সংগ্রামের সমার্থক শব্দ। যে কোন প্রগতিশীল আন্দোলন, মুক্তির প্রশ্নে, অধিকার আদায়, বাকরুদ্ধ মানুষের বাক উদ্ধারের একটি পবিত্র ভূমি। শাহবাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এদেশের মুখপত্র বললে বেশি বলা হবে না। শাহবাগ হলো সাংস্কৃতিক রাজধানী। নানা শ্রেণি পেশার মানুষদের শ্বাস নেয়া দেয়ার মুক্তস্থান, বুক ভরে কথা বলা, আলাপ আলোচনার প্রধানতম ভালো লাগার জায়গা। কবি, সাহিত্যিক, প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পদচারণায় মুখরিত থাকার তীর্থস্থান। একজন রিকশাওয়ালা, একজন চা বিক্রেতা একটু ঝিরিয়ে নেয়, ভূমিহীনদের নিকুঞ্জ। সেই পবিত্রতম ভূমিকে কুৎসিত, বিবস্ত্র, উলঙ্গ করার অধিকার কারও নেই। তাহলে কারা এই সর্বনাশ করলো শাহবাগের ? চিত্রশিল্পীদের আড্ডার জায়গা কা’রা কেড়ে নিলো ! গানওয়ালাদের গানের গলা কারা টিপে ধরলো! যে জন্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুখে তালা ঝুলে তা কি সফল হয়েছে ? আদতে সফল হয়নি। শাহবাগ আর আমার প্রিয়তমার মতন নয় তা পুরোপুরি রাষ্ট্রযন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে, সাম্রাজ্যবাদীদের উর্বর ভূমি। প্রতিবাদী মানুষের শেষ আশ্রয় অথবা পান্থশালা আজ পুঁজিবাদীদের দখলে। শাহবাগের বস্ত্রহরণের যাতনা হৃদয়ের গহীনে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করে।শাহবাগ মোড়ের বিজ্ঞাপনবোর্ডের দিকে তাকালে প্রিয় কবি শঙ্খ ঘোষের কবিতাটি মনে পড়ে যায়ঃ
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে
একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি
তোমার জন্য গলির কোণে
ভাবি আমার মুখ দেখাব
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।
একটা দুটো সহজ কথা
বলব ভাবি চোখের আড়ে
জৌলুশে তা ঝলসে ওঠে
বিজ্ঞাপনে, রংবাহারে।
কে কাকে ঠিক কেমন দেখে
বুঝতে পারা শক্ত খুবই
হা রে আমার বাড়িয়ে বলা
হা রে আমার জন্মভূমি!
বিকিয়ে গেছে চোখের চাওয়া
তোমার সঙ্গে ওতপ্রোত
নিওন আলোয় পণ্য হলো
যা-কিছু আজ ব্যক্তিগত।
মুখের কথা একলা হয়ে
রইল পড়ে গলির কোণে
ক্লান্ত আমার মুখোশ শুধু
ঝুলতে থাকে বিজ্ঞাপনে।
প্রিয় শহরে এখন বিজ্ঞাপন আর বিজ্ঞাপন। সমস্ত পথজুড়ে বিজ্ঞাপন। যে জায়গাতে হাঁটি, প্রেয়সীর মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নাগরিক যন্ত্রণা ভুলার চেষ্টা করে যে প্রেমিক, সেই জায়গা এখন বিজ্ঞাপনের দখলে, স্কুল বালক-বালিকার হাঁটার জায়গায় বিজ্ঞাপন, অগুনিত মানুষের চলার পথে বিজ্ঞপন। চোখ ঝলসে যায়, আমার চোখের আলো নষ্ট হয়ে যায় অত্যাধিক আলোর ঝলকানিতে। আমি আর তাকাতে পারি না।
একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এসে এই দেশ কোন পথে এগুচ্ছে ! এদেশের মানুষের বর্তমান অবস্থান কোথায় ! কারা এই রাষ্ট্র সম্পদের ভোক্তা ? কিছুদিন আগে একটি অর্থনীতি বিষয়ক সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এদেশে বৈষম্য ক্রমাগত উর্ধ্বগতির দিকে। ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, গরীবরা আরও গরীব হচ্ছে তথা হতদরিদ্র হচ্ছে। শাহবাগ মোড়ের বিশাল বিজ্ঞাপনবোর্ডের দিকে তাকালে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। ড. আকবর আলী খানের ‘শুয়ারের বাচ্চাদের অর্থনীতি’ নামক প্রবন্ধটি সাথে এদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পন্ন মিলে যায়। এদেশ কি শুধুই উচ্চবিত্তদের? যদি তাই হয় জনগণের দেশ এই দেশ তা কি জোর দিয়ে বলা যায়!
দেশে টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা ৪১ টি (ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য), প্রিন্ট মিডিয়ার সংখ্যা অগুনিত, অনলাইন পোর্টালতো ব্যাঙের ছাতার মতো তার হিসেব কে রাখে । একটি দরিদ্র দেশে এতগুলো টিভি চ্যানেল, অগুনিত সংবাদ মাধ্যম থাকা সত্ত্বেও গণমানুষের হাঁটার জায়গায় বিজ্ঞাপন নামক বিষফোঁড়টিকে কি স্থান দিতে হয় ! তবে নির্ধিদ্বায় বলা যায় এই দেশ শুধুই বুর্জোয়াদের দেশ। এই দেশ উচ্চবিত্তদের দেশ। এই দেশ মুনাফাখোরের দেশ। আপামর জনগণের নয়।
বিশ্বায়নের যুগে, অবাধ তথ্য প্রযুক্তির যুগে, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এসব বিজ্ঞপনী সাইনবোর্ডের কি কোন দরকার আছে? কোন সুস্থ্য মানুষের তা বোধগম্য হওয়ার কথা নয়। এসব বিজ্ঞাপনের অত্যাচারে ঝর্ঝরিত নগরের খেটে খাওয়া দিন মজুর। এ দেশের মানুষের নূন্যতম অধিকার আছে বলে তো আর মনেহয় না। কোথায় যাবে মানুষ ! কা’র কাছে জানাবে কৈফিয়ত ! যাদের কাছে বলবে তারা আজ অধরা প্রভুদের দাস। এখন ফুটপাতে ঘুমন্ত মানুষগুলোর মুখে বিজ্ঞাপনের দানবগুলো হাঁটে। অসহায় মানুষগুলোর কিচ্ছু করা থাকে না। তাদের নিয়তি কবি দাউদ হায়দার তার কবিতায় যেমনটি বলেছিলেন ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’। যদি এইসব সাইনবোর্ড গুলো মানবকল্যাণে ব্যবহৃত হতো, মানুষ উপকৃত হতো তাহলে কোন সমস্যা থাকার কথা নয় কিন্তু তা হচ্ছে কি! নিশ্চয় না। তাহলে একটি দরিদ্র দেশে এত অর্থের অপচয় কোন যুক্তিতে ! কেনো এত বিদ্যুতের অপচয় !
রাষ্ট্রীয় কর্তাব্যক্তিদের কি উচিৎ ছিলো নাহ! শহরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে সাইনবোর্ডগুলোর বদলে সৌন্দর্যবর্ধক বৃক্ষরোপন করা ! ফুলের বাগান করা ! শহরের মোড়ে কোথাও কোথাও বিজ্ঞাপনবোর্ডের সাথে ফুলের বাগান দেখা যায় কিন্তু একই সাথে যদি বিজ্ঞাপনবোর্ড আর ফুলের বাগান থাকে তাহলে তাকে কি সৌন্দর্যবর্ধন বলা যায় ? তা নির্ধিদ্বায় সুশ্রীর পরিবর্তে কুশ্রী। বিজ্ঞাপনের আলোয়ে গাছগুলোকে দেখায় ম্রিয়মাণ ও মৃত।এটি সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বুর্জোয়াদের ফাঁদপ্রকল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। শহরের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ব্যাপক হারে শুধু মাত্র গাছ লাগানো ছাড়ার এর কোন বিকল্প নেই। প্রকৃতঅর্থে এই শহরকে তখনি সুন্দর দেখাবে যখন দেখবো আমরা শহরের কোন ফুটপাতে সর্বহারা, নিঃস্ব মানুষগুলো আর ঘুমায় না। নগরের প্রতিটি মানুষ না খেয়ে ঘুমায় না। প্রতিটি মোড়ে মোড়ে বৃক্ষ আর তার শরীরজুড়ে বাতাসের ঢেউ। প্রতিটি মানুষের মুখে পুষ্পের হাসি, হাসির ফোয়ারা। যাহোক, শুধু একটাই প্রত্যাশা, প্রিয়তমার মতো শাহবাগ বুর্জোয়াদের ফাঁদ প্রকল্প থেকে মুক্তি পাক। শাহবাগ ফিরে পাক তার যৌবন, শাহবাগ ফিরে যাক আন্দোলন সংগ্রাম, গণমানুষের কাছে। শাহাবাগ ভরে ওঠুক সুশোভিত পত্রপল্লবে, ফুলে ফুলে…
২| ২৯ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৮
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: শাহাবাগ জায়গাটা বই মেলার সময় খুব ভালো লাগে।
৩| ২৯ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২১
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আরো অনেক সমস্যা আছে দেশে। সেগুলো সমাধান করে বিজ্ঞাপনের দিকে নজর দিবে সরকার...
৪| ৩০ শে মে, ২০১৮ সকাল ১১:০০
মোঃ ফখরুল ইসলাম ফখরুল বলেছেন: মুনাফাখোরের দেশ
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৫
রাজীব নুর বলেছেন: পুরোটাই অপচয় না।
এর দরকার আছে।