নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মুক্তি আমার আলোয় এই আকাশে আমার মুক্তি ধুলোয় ধুলোয় ঘাসে ঘাসে

বন্ধু শুভ

আনকোরা যত নন্ভায়োলেন্ট নন্-কো’র দলও নন্ খুশী। ‘ভায়োরেন্সের ভায়োলিন্’ নাকি আমি, বিপ্লবী-মন তুষি! গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কন্ফুসি! স্বরাজীরা ভাবে নারাজী,নারাজীরা ভাবে তাহাদের আঙ্কুশি! © কাজী নজরুল ইসলাম

বন্ধু শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কামড় ও প্রতিকার মন্ত্রণালয় (রম্য)

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২২



কামড় শব্দটি বহুল প্রচলিত। বহুল প্রচলিত না বলে— সর্বপ্রচলিত বললেই তা সর্বাংশে সত্য প্রতীয়মান হবে। কারণ প্রতিটি মানুষের জীবনের সাথে কামড় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কামড়ের প্রয়োজনীয়তাও অসীম। কামড় ছাড়া বেঁচে থাকা দায়। মরা মাছ, তাজা মুরগি— এমনকি কাঁচা জীবন্ত মানুষ— সব কামড় খেয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কেউ খাচ্ছে দাঁতের কামড়, কেউবা খাচ্ছে কথার। কথার কামড় রাজনীতিতে বহুল প্রচলিত। রাজনীতিতে কামড় খাওয়ার পর কামড়দাতা পুরস্কারস্বরূপ মামলা খেয়ে থাকেন। তার নাম হয় "মানহানি মামলা"। উকিল মুক্তার কোর্ট কাসারি ইত্যাদির যৌথ উদ্যোগ প্রযোজনা ও সম্পাদনায় কামড়দাতা মোটা অঙ্কের একটা অর্থ জরিমানা দিয়ে কামড়গ্রহীতার মান ফিরিয়ে দেন। অর্থ অনর্থের মূল কথাটা মান ফিরিয়ে দেয়ার যোগ্যতাবলে মিথ্যা প্রমাণ হল। আরেকটা বিষয় প্রমাণ হল যে, কিছু টাকা হস্তগত হলেই মানুষের সম্মান বেড়ে যায়। কখনোসখনো আনুপাতিক হারে বেড়ে যায়। এসব তো গেল কামড়ের উচ্চমার্গীয় তাত্ত্বিক আলোচনা। এবার মধ্যবিত্ত সমাজের গরমচিত্ত মানুষের আলোচনা পেশ করা যাক।
পোষাকে যেমন উচ্চবিত্তরা উত্তম, মধ্যবিত্তরা মধ্যম এবং নিম্নবিত্তরা নিচু দামের এবং মানের ধারক-বাহক। তেমনি ভাষার বেলায়ও। এই ধরুন, ধনীব্যক্তিরা ওয়াশরুমে যায়, মধ্যবিত্ত মানুষেরা টয়লেটে যায় আর নিম্নবিত্তরা যায় ল্যাট্রিনে। টয়লেট ল্যাট্রিনের মত আমূল পরিবর্তন না হলেও কামড় শব্দটা নিম্ন আয়ের মানুষের বাড়িতে ব্যবহার হতে গিয়ে ডারউইনের বিবর্তনবাদ কে হতাশ করে নি। কামড় কখনো হয়েছে 'কামড়াকামড়ি' কখনো হয়েছে 'কামড়াইছে'। যাহোক দুনিয়ার সব কিছুর গরিবি রূপ থাকলে 'কামড়' শব্দের গরিবি রূপ কেন থাকবে না! অন্য অ্যাঙ্গেলে চিন্তা করলে কামড়ের পরিবর্তনকে আমরা বাঙালির রসিকতা হিশেবে ধরতে পারি। ভোজনরসিক একটা জাতি ভাষারসিক হতেই পারে! কী- পারে না?
কথা হচ্ছিল গরিবানা নিয়ে। ভাষার গরিবানা। তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশসমূহের অন্যতম এই বাংলাদেশের মানুষের একটা বড় অংশ কাজকাম করে খায় ; যাকে বলে কায়িক শ্রম। কথা হচ্ছে দিনে কাজকাম করে গিয়ে রাতে তাদের শরীর কামড়ায়। কামড় জিনিশটা তাদের বেশি অপছন্দের না। তাই তারা মাথা ব্যথা হলে বলে মাথা কামড়ায়। পেট ব্যথা হলেও ওই একই কথা— কামড়ায়! পেট কামড়ায়। আহারে কামড়াকামড়ি! যাহোক, গরিব মানুষের আবার বেশি কাজকাম কী! যেহেতু কাজকাম কম সেহেতু একটুআধটু কাজঅকাজ (কাম-অকাম) তো করতেই হয়। কিন্তু মেনে নেয়া যায় কি? নাহ্। সামান্য গুতা দিলেই বলে ওঠে, "—কী? কামড়ায়—?" দুই-তিন আলিফ টেনে বলবে —কামড়ায়—!
ভাষা তো আর দুইজনের সম্পদ না ; বরং ভাষা সর্বজনীন। সুতরাং তৃতীয় লোকটি বসে থাকবে কোন "কামড়" খেয়ে?(!) তাই দুইজনের পারস্পরিক 'কামড়ায়' কাহিনি দেখলেই তৃতীয়জন পাশের চায়ের দোকান থেকে বলে উঠে— "দ্যাখো! লাগছে কামড়াকামড়ি"! সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ লিখে গেছেন, "অন্যের অপমান দেখার নেশা বড় নেশা", অথচ লাইনটা এমনও হতে পারত, "অন্যের কামড়াকামড়ি দেখার নেশা বড় নেশা"।
ইদানিং ৩০০ টাকার এনার্জি লাইট কোম্পানির প্রচারের জন্য ১০০ টাকায় বিক্রি করতে শোনা যায়, এমনকি দেখা যায় (যদি আপনি কষ্ট করে জানালা খুলেন অথবা সৌভাগ্যবান হলে চলতি পথে দেখবেন)। কোম্পানির প্রচার বলতে কি একটা লিমিটেড টাইম নাকি কোম্পানির সম্পূর্ণ উৎপাদনকাল— এই প্রশ্নের উত্তর বের করতে না পেরে আজকাল আশেপাশের অনেককেই এনার্জি লাইটের প্রচার গাড়ি দেখলেই বলে উঠতে শোনা যায়— "দ্যাখো, কুত্তার কামড় খাইয়া আইতাছে"! কী বিচিত্র রূপ এই কামড়ের! কত বৈচিত্র্যময় এই ধরণী! ঘটনা এখানে শেষ হলে কোন কথা ছিল না। এ নিয়ে লিখার প্রয়োজন হতো না। ঘটনা আরেকটু সাহস করে স্লাইড মিসটেক করে অথবা অধিকার বলে পারিবারিক সম্পর্কে প্রবেশ করেছে। স্বামী-স্ত্রী হালকা ঝগড়ার এক পর্যায়ে একজন অন্যজনকে বলে, "কী —, বাইরে তোমাকে কিছু কামড়াইছে নাকি"! ঝগড়ার হালকা ভাব কেটে যখন কিছুটা ঘনত্ব আসে তখন অপরপক্ষ তার বিশেষ ক্ষমতাবলে কামড়ের কথা রিপিট করতে ভুল করে না। কামড়েধরার বিষয়টা যখন প্রকট আকার ধারণ করে তখন পাশের ঘর থেকে "কামড়-দম্পতি"কে হিংসে করা ভাবীটা তার প্রতিবেশী আরেক ভাবী (জা) কে বলে উঠে- "দ্যাখেন ভাবী, লাগছে কামড়াকামড়ি"! ঘটনার নতুন মাত্রা পায় যখন "দ্যাখেন ভাবী" বলা তিনিও স্বামীর সাথে কামড়াকামড়ি লাগেন। তখন প্রথমের শ্রোতা ভাবী খেলাফতের অংশ হিশেবে তার প্রতিবেশী ভাবীর কাছে "দ্যাখেন ভাবী"র বীরত্বকাব্য বর্ণনা করেন।

কামড় নিয়ে ঐতিহাসিক একটা তথ্যের জানা যাক। এটা চিরন্তন সত্য টাইপের ঐতিহাসিক তথ্য। চুল ছোট রাখা লোক মাত্রই যেমন সেলুনে গিয়ে মাথা নিচু করতে হয়, ওয়াশরুমে গিয়ে যেমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে কোমরের কাপড় খুলতে হয়, তেমনি অন্যকে কামড়দাতা এবং কামড়গ্রহীতা সকলেই "মশা" বাবাজির কামড় খেতে হয়। আহ্! কত মাহাত্ম্য এই কামড়ের। কোনপ্রকার ছোট-বড় ভেদ নাই এই কামড় কর্মে!

এতসব কামড়াকামড়ি'র ইতিহাসের ভিড়ে মহাসত্য হচ্ছে- তরল ব্যতীত বাদবাকি সকল খাদ্য কামড় দিয়ে খেতে হয়। (আমাকে কামড় দেয়ার ধান্ধায় কেউ কেউ বলবে- "ট্যাবলেট তো গিলে খায়! তোমার বক্তব্যে ত্রুটি আছে"! আমি বলব- আইসক্রিম তো কামড় দিয়ে খায়!)। তবে কি আমরা স্বীকার করে নেব না যে, কামড় মানব জীবনের এক অমোঘ সত্য ঘটনা। কামড় দেয়া ব্যতিরেকে আমাদের জীবন অচল। কামড় সকল শ্রেণি পেশা বিত্ত চিত্ত নির্বিশেষে এক মহাসত্যের নাম। পুঁজিবাদী সাম্যবাদী সকল সমাজে কামড়ের অশেষ তাৎপর্য আছে। এত প্রয়োজনীয় একটা বিষয়ের যাবতীয় উন্নতি সাধনের মধ্য দিয়ে আমরা কি তাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি না? সরকার কি এ বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দিবে? সরকার কি একটি "কামড় ও প্রতিকার মন্ত্রণালয়" খুলবে? চর্চা চলবে কি জাতীয় পরিসরে? আগামী নির্বাচনের ইশতেহারে এই সম্পর্কিত কোন স্বচ্ছ ধারণা আমরা পাব কি?

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৪৬

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: প্রেমিকার কামড় :D

মজা করলাম B-))

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৫

বন্ধু শুভ বলেছেন: প্রেমিকার কামড় সুস্বাদু হতে পারে!

২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:৩৯

ঝিগাতলা বলেছেন: বেশ

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৬

বন্ধু শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয়!

৩| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৮

বন্ধু শুভ বলেছেন: সবাই খায় বলেই হয়তো নিরাপদ!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.