নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মুক্তি আমার আলোয় এই আকাশে আমার মুক্তি ধুলোয় ধুলোয় ঘাসে ঘাসে

বন্ধু শুভ

আনকোরা যত নন্ভায়োলেন্ট নন্-কো’র দলও নন্ খুশী। ‘ভায়োরেন্সের ভায়োলিন্’ নাকি আমি, বিপ্লবী-মন তুষি! গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কন্ফুসি! স্বরাজীরা ভাবে নারাজী,নারাজীরা ভাবে তাহাদের আঙ্কুশি! © কাজী নজরুল ইসলাম

বন্ধু শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের শুভেন্দু দা

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪০



প্রায় কুড়ি বছর পর শুভেন্দু দা'র সাথে দেখা হলো। বুঝতে পারছেন কার কথা বলছি?
আমাদের শুভেন্দু দা'..............! উত্তর পাড়ার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ লেগ স্পিনার। কয়েকটিমাত্র প্রীতি ম্যাচ খেলার ভাগ্য হয়েছিল শুভেন্দু দা'র। লেগস্পিন স্পেশালিষ্ট হলেও ব্যাটিং করতেন দারুণ। অলরাউন্ডার বলা যায় কি-না গবেষণার বিষয়। পাশের গ্রামে গিয়ে ছয় বলে ছয়টা চার মেরে নিজেকে যুবরাজ সিং এর উত্তরসূরী ভাবতেন শুভেন্দু দা। দেদারসে চাপাও পিটাতেন এই ব্যাপারটা নিয়ে। শুভেন্দু দা ইন্টার-পাড়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টেও খেলেছিলেন। খেলেছিলেন কি! তিনিই ছিলেন সুপার হিট স্পিনার। সাথে ব্যাট চালানোটা তো ছয়টা চার মারার মধ্য দিয়েই প্রমাণ দিয়েছিলেন। সীতা আর গীতা দুই বোনই যে শুভেন্দু দা'র প্রেমে হাবুডুবু খেত সেটা বন্ধুমহলে ছিল প্রায়ই আলোচনার বিষয়বস্তু। শুভেন্দু দা যখন ব্যাটিংয়ে নেমে চার ছয় হাকাত তখন গীতা-সীতাদের সাদা কান খুশিতে লাল হয়ে যেত। গীতা সীতার পরিচয় আপাতত গোপন থাকুক; যথাসময়ে বলা যাবে। পাড়ার ছেলে-পেলেরা শুভেন্দু দা'র কাছে অংক নিয়ে ভীড় জমাতো। তিনি অংক কষে দিতেন বিনে পয়সায়। আসলে কিছু কচিকাঁচা শুভেন্দু দা'র ভক্ত ছিল। শুধু ভক্ত না; গুরু-শিষ্য টাইপ ভক্ত! কয়েকজন তো শুভেন্দু দা'র কল্যাণেই পরীক্ষার বৈতরণী পার হয়েছে। শুভেন্দু দা'র একটা প্রেমের গল্প আছে। সবাই জানেন তো? আসলে দাদার রিলেশন টা ছিল "আই লাভ" কিসিমের। "ইউ" টা ছিল না। বুঝলেন না? দাদা চোখে তাকিয়ে তাকিয়েই সময়টা কাটিয়ে দিলেন। সাহস করে বলতে পারলেন না মাইরি! একবার "সাহস" করে ফুল নিয়ে বাসায়ও গিয়েছিলেন। কিন্তু বিধিবাম! হাত পায়ের অত্যধিক কাঁপুনি জনিত কারণে ফুলের তোড়াখানা মাধবীলতা দিদির বাড়ির পিছনে সিমের চাঙের উপর রেখে চলে এসেছিলেন। ওঁ হ্যা..., দিদির নাম মাধবীলতা। দাদা আমাদের মানে যাদের সাথে ফ্রি ছিলেন তাদের কাছে 'মাধু' 'মাধু' বলে গপ্প করতেন। বিয়ের পর দাদার মাধু কিভাবে দাদাকে শায়েস্তা করবে, বৌদির বকবকানি শুনে দাদা কিভাবে না শোনার ভান করবে, বৌদি রেগে গেলে শুভেন্দু দা কিভাবে আদিখ্যেতা করবে- এগুলো আমরা নিজেরা আলাপ করতাম। টিভি টকশোর মত নতুন নতুন মতামত আসত। বিয়ের পর দাদার জীবন গোলাপি রঙের বালিশের ধূসর ওয়ারের ন্যায় বিবর্ণ হবে- বলে আমি তামাশা করতাম। খুবই হাসাহাসি হত। এসব নিয়ে পাড়ার দুষ্টু বন্ধুরা প্রায় দাদাকে ক্ষেপিয়ে তুলতো। ক্ষেপিয়ে তুলতো আসলে ভুল। ক্ষেপাবার চেষ্টা করতো। কখনো কখনো শুভেন্দু দা ওদের সাথে রাগ করতেন কিন্তু ক্ষেপে যাওয়াটা আড়াল করতেন। দাদার বিয়ের দাওয়াত, বৌ-ভাতের খাবারের মেনুর খবর নিতে নিতে দাদাকে খুবই বিরক্ত করতাম মনে আছে, দাদাও এন্তার কানমলা দিতেন। শুভেন্দু দা'র অবশ্যি অন্য একটা পরিচয় ছিল; "চুপচাপ কমিটির সভাপতি"। দাদা যে কি পরিমান ভীতু ছিল সেটা বলাই বাহুল্য। মা কালির দিব্যি, দাদার হাঁটা ছিল গো-বেচারা টাইপ (লোকমুখে কথিক আছে, "গো-বেচারা" টাইপ হাঁটা নাকি ভার্সিটি লাইফেও বজায় রেখেছিলেন)। ভাবছেন অযথা মিথ্যাচার করছি? মা কালীর দিব্যি, মা সরস্বতীর দিব্যি। সত্যি বলছি। ভার্সিটি লাইফে প্রেমে পড়ে জাপানি রিক্সায় না চড়তে পারলেও তিনি নাকি বেশ বাকপটু হয়েছিলেন শোনা যায়। যাহোক, ফাইনালি দাদা গ্রাম ছেড়ে একদা শহরে চলে গেলেন ভার্সিটি পড়বেন বলে (আগেই বলছি)। ছাত্রত্বের ইতি টেনে দাদা শেষে ইনকাম ট্যাক্স অফিসার হয়েছিলেন। তারপর একদিন ছুটিতে এসে আমাদের সাথেই গপ্প করছিলেন। হঠাৎ বললেন চলি। আড্ডা থেকে তো গেলেন গেলনই, বাড়ি থেকেও চলে গেলেন। আর খোঁজ পেলুম না কুড়িটা বছর। তবে মাঝে সাঝে আলোচনায় দাদা কে নিয়ে কথা হতো। লোকমুখে শুনেছি তিনি বিলেত গিয়েছেন আবার বিয়েথাও করেছেন এক বিদেশিনীকে। কী জানি বাপু! বিলেতিরা কিভাবে বিয়ে করে। এক সাথে থাকলেই ওরা বিয়ে মনে করে কি-না!

আমিঃ দাদা কেমন আছো?

শুভেন্দু দাঃ কিরে তোর একি হাল!! বুড়ো হয়ে গেছিস দেখছি! পেট বেড়েছে, গোঁফ রেখেছিস!

আমিঃ দাদা কোথায় ছিলে এতদিন?

শুভেন্দু দাঃ য়্যূরোপে ছিলাম। পড়াশোনার অধ্যায়টা বড় করতে গিয়েছিলুম।

আমিঃ আমাদের এদেশে থাকবে তো দাদা?

শুভেন্দু দাঃ তুই কেমন আছিস?

(অনেক বছর পর দাদার এই কথাটা স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলতে দেখলাম। তাছাড়া এতক্ষণ আমাকে বিশেষ কিছু জিজ্ঞেসও করে নি)

আমিঃ ভাল আছি, খুব ভাল। দাদা কেমন কাটছে দিনকাল?

শুভেন্দু দাঃ ছেলেমেয়ে চারটাকে মানুষ করেতেই দিন কাটছে। অবশ্যি এক ছেলে এক মেয়ে আমার কাছে থাকে, বাকি এক ছেলে এক মেয়ে সিলভিয়ার কাছে মানুষ হচ্ছে। এছাড়া বিলেতে একটা কলেজে পড়াই। এভাবেই সময় কেটে যায়।
(বুঝলাম, দাদার বৌয়ের নাম সিলভিয়া)

আমিঃ ও............হ্যা দাদা। তুমি নাকি বিয়েথা করেছো?

শুভেন্দু দাঃ (আকাশের দিকে তাকালেন। এমন সময় দুটি টিয়া পাখি উড়ে যাচ্ছে) আজকাল আর টিয়া পাখি খুব একটা দেখা যায় না রে! দেখ পাখি দুইটা একসাথে আছে অথচ ইচ্ছা করলেই দু'দিকে চলে যেতে পারবে। কত স্বাধীন! সব মানুষ যদি পাখির মত স্বাধীন হত!

আমিঃ ঠিক বলেছো।

শুভেন্দু দাঃ এখন যাই রে! জীবনের বাঁকে আবার দেখা হয়ে যাবে।

আমিঃ সেকি গো! আমাদের বাড়ি তে একবার তো চলো।

শুভেন্দু দাঃ না, আরেক দফা আসলে যাব।

আমিঃ পাড়ার ক্লাবে অন্তত একবার চলো।

শুভেন্দু দাঃ না রে! আমি চললাম। আমার বিলেত যাওয়া জরুরি। ছেলেমেয়ে চারটা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে ছাড়া তো দু'টার চলেই না।
.
দাদা চলে গেলেন। পিছনে তো ছায়াটাও নিয়ে গেলেন। আগে জানতাম- "মানুষ চলে যায়, ফেলে যায় ছায়া, রেখে যায় মায়া"। কিন্তু কেমন জানি মনে হচ্ছিল দাদা ছায়াটাও ফেলে যান নি, মায়াটাও রেখে যান নি।
ও হ্যা, কিছু পুরনো স্মৃতি রেখে গেছেন।
(সংক্ষেপিত)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫৩

সাজিদ শুভ বলেছেন: জীবনে এরকম মানুষদের অভাববোধ হয় যখন তাদের আর আড্ডায় পাওয়া যায় না

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২৪

বন্ধু শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

তবে বন্ধু হারানোর জন্য অামরাও কিছু ক্ষেত্রে দায়ী।

২| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: বাহ !!

৩| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৬

বন্ধু শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.