নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মুক্তি আমার আলোয় এই আকাশে আমার মুক্তি ধুলোয় ধুলোয় ঘাসে ঘাসে

বন্ধু শুভ

আনকোরা যত নন্ভায়োলেন্ট নন্-কো’র দলও নন্ খুশী। ‘ভায়োরেন্সের ভায়োলিন্’ নাকি আমি, বিপ্লবী-মন তুষি! গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কন্ফুসি! স্বরাজীরা ভাবে নারাজী,নারাজীরা ভাবে তাহাদের আঙ্কুশি! © কাজী নজরুল ইসলাম

বন্ধু শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোথাও কেউ নেই : হুমায়ূন অাহমেদ ও শিল্পের শক্তি

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৮



ছবিঃ লুৎফর রহমান জর্জ, অাসাদুজ্জামান নূর ও অাব্দুল কাদের (বাম থেকে)


হুমায়ূন আহমেদের তুমুল জনপ্রিয় নাটক 'কোথাও কেউ নেই' ধারাবাহিকভাবে বিটিভিতে প্রচারিত হয় সম্ভবত ১৯৯৩ সালে। প্রথম প্রচারের পঁচিশ বছর পর, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কয়েক বৈঠকে প্রায় দশ ঘণ্টা ব্যাপ্তির নাটকটা দেখলাম ইউটিউবে।
হুমায়ূনের কাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য—তার সকল চরিত্র সংবেদনশীল। সবাই অদ্ভুত মায়া নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তিনি খুব কম চরিত্রকেই ভিলেন বা মানুষের ঘৃণার পাত্র বানান। আলোচ্য নাটকে শওকত সাহেবকে আপাত চোখে মনে হয় খুব খারাপ মানুষ। ছেলেমেয়েদেরকে কারণে-অকারণে মারধোর করেন। স্ত্রীকে ভালোবাসেন না। দুর্ব্যবহার করেন। অসুস্থ স্ত্রী সারাক্ষণ কুক কুক করে বলে তিনি স্ত্রীর সাথে রাত্রিযাপন পর্যন্ত করেন না। অথচ একটা সময় পার হলে দেখা যায়, এই রগচটা খিটমিটে স্বভাবের মানুষটার ভেতরেই শিশুর সারল্য, পবিত্রতা এবং অদ্ভুত মায়া লুকিয়ে আছে। তিনি একটা অফিসের হিসাব রক্ষক। তার এক দরিদ্র বন্ধু মুমূর্ষু কন্যার চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাইলে তিনি অফিসের একাউন্ট থেকে চোখবুজে তিন লাখ টাকা দান করে দেন। বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিয়ে বন্ধু-কন্যা সুস্থ হয়ে ফেরে বটে, কিন্তু শওকত সাহেবের চাকরি চলে যায়। জেল হয়। স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করা লোকটার ভেতর মায়া ভরপুর- এটাই শওকত সাহেব। প্রায় একই ঘটনা দেখা যায় আইনজীবী হুমায়ুন ফরিদীর চরিত্রে। তিনি মানুষকে অপমান করতে ভালোবাসেন। নরম করে কথা বলেন না। অথচ সেই মানুষটিই মায়ের জন্য কাঁদে। অতীতের জন্য কাঁদে। সুবর্ণা মোস্তফাকে দেখে তার মায়ের কথা মনে পড়ে।

কোথাও কেউ নেই নাটকের প্রধান চরিত্র মুনা (সুুবর্ণা মোস্তফা)। সুবর্ণা মোস্তফার ব্যাপারে অনেকেই একটা ভুল ধারণা পোষণ করেন। তারা মনে করেন তিনি ঠোঁট ফুলিয়ে কথা বলা ঠ্যাকারে মহিলা। ভুল ধারণার কারণ, তার বড় কোনো কাজ না-দেখা। এই নাটকে তিনি যে দুর্দান্ত অভিনয়টা করেছেন, চারপাশের সব আলো নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন। তার অভিনয়ের প্রতি আমার ভয়ঙ্কর রকমের মুগ্ধতা তৈরি হয়েছে, আগেও ছিল।
নাটকে মুনা অনাথ এক যু্বতী। তবে সাহসী, কর্মঠ এবং খুবই শক্ত মনের মানুষ। মামার সংসারে থাকে। চাকরি করে। অসুস্থ মামির সংসার সে নিজ হাতে আগলে রাখে। মামাতো ভাইবোনদের ভালোবাসা, স্বাদ-আহ্লাদ পূরণ করা, প্রয়োজনে শাসন—সবই করে মুনা।
মামুন সাহেবকে সে ভালোবাসে। সেই ভালোবাসার সংবাদ মামার সংসারের সবাই জানে। বেকার মামুনের একটা চাকরি হয়ে গেলেই তারা বিয়ে করে ফেলবে—এমনই ইচ্ছা। মামুনের চাকরি হয়। কিন্তু পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাকে চাকরিদাতার কন্যাকে বিয়ে করতে হয়। এভাবে মুনার হারানোর শুরু তার প্রেমিককে দিয়ে। এরপর ধীরে ধীরে সে সবাইকে হারাতে থাকে। এক পর্যায়ে, কোথাও কেউ নেই এক নিঃসঙ্গ নারীতে পরিণত হয় সে। মুনার চরিত্রটা মর্মান্তিক। সবাইকে সে আগলে রাখে অথচ বেদনা, হাহাকার, নিঃসঙ্গতা তার পিছু ছাড়ে না। এমন এক দুঃখী মেয়ে মুনা, তার দুঃখ দেখে অামার মতো পাষাণেরও চোখ ভিজে গেছে।

আলোচ্য নাটকের দ্বিতীয় প্রধান চরিত্র আসাদুজ্জামান নূর (বাকের ভাই)। বাহ্যত বাকের ভাইকে গুণ্ডা মনে হয়। সর্বক্ষণ সিগারেট টানে। নিজে সিগারেটে আগুন লাগায় না, অন্যকে দিয়ে দিতে হয়। আঙুলের মাথায় সবসময় একটা চেন ঘুরায়। বাকের ভাই কোনো কর্ম করে না। অথচ দুনিয়ার সব কর্মই তাকে করতে হয়। বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে ঝাঁপিয়ে পড়াই তার কর্ম। ভাবির আস্কারায় আমলা ভাইয়ের সংসারে কেবল রাত্রিযাপন করে। তাকে দিনে বাসায় পাওয়া যায় না। ছেলে-যুবক-বুড়ো সবাই তাকে বাকের ভাই বলে ডাকে। বাকের ভাইয়ে গাম্ভীর্যের সামনে সবাই ভয় পায়, কিন্তু প্রচণ্ড ভালোবাসে।
বাকের ভাই মুনাকে পছন্দ করে। ভালোও হয়তো বাসে। কিন্তু মুখে স্বীকার করে না। মুনার যাতে কোনো বিপদ না হয়, বাকের ভাই মুনাকে চোখে চোখে রাখে। দেখা হলেই বলে, কেমন আছো মুনা? মামুন (মুনার প্রেমিক) সাহেব কেমন আছে?
বাকের ভাই যখন জানতে পারে, মামুন বড়লোকের সুন্দরী কন্যাকে বিয়ে করেছে, আঙুলের মাথায় চেন ঘোরাতে ঘোরাতে বাকের ভাই হাজির হয় মামুনের অফিসে, তার মুখে থুতু দেয়ার জন্য। কারণ, সে মুনাকে দুঃখ দিয়েছে।
এই বাকের ভাই জেলে ঢুকলে মুনা তাকে দেখতে যায়। জেলে বাকের ভাইয়ের কেমন লাগছে জানতে চায় মুনা। বাকের ভাই জানায়—জেল তার ভালো লাগছে। কারণ, জেলে ঢুকছে বলেই মুনা তাকে দেখতে এসেছে। খাবার নিয়ে দেখতে এসেছে।
অদ্ভুত এই পাগলা গুণ্ডাটার জন্য সবাই কাঁদে। মুনা কাঁদে। বদি কাঁদে। মজনু কাঁদে। বকুল কাঁদে। দারোয়ান কাঁদে। শান্তি কটেজের তিন কন্যা কাঁদে। ধুনকর আইনজীবী কাঁদে।

শুরুতে বলেছি, হুমায়ূন আহমেদ কাউকে ভিলেন বানান না। গুণ্ডার মধ্যেও অদ্ভুত রকমের সংবেদনশীলতা তিনি ঢুকিয়ে দেন। ফলে দর্শকরা তাকে ভালোবাসতে শুরু করে। প্রথমবার যখন আলোচ্য নাটক বিটিভিতে প্রচারিত হয়, এবং মিথ্যা মামলায় বাকের ভাইয়ের ফাঁসির রায় হয়, তখন দর্শকরা ফাঁসির বিপক্ষে মিছিল বের করেছিল। এমন ঘটনা পৃথিবীর আর কোনো নাটকের ক্ষেত্রে ঘটেছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। এ এক অনন্য ইতিহাস।

হুমায়ূনের কাজের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হলো, ধর্মীয় অনুষঙ্গের নিঃসংকোচ ইতিবাচক ব্যবহার। নাটকে জ্ঞানী, বয়োবৃদ্ধ আবুল খায়েরকে সংলাপের ফাঁকে কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের ইংরেজি অনুবাদ উদ্ধৃত করতে দেখা যায় সুরার নাম, আয়াত নম্বরসহ।
জাদরেল উকিল হুমায়ুন ফরিদী, যিনি সারজীবন মেধার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে চলেছেন, সেই তিনি যখন বাকের ভাইকে ফাঁসি থেকে বাঁচাতে ব্যর্থ হন, একাকী আকাশের দিকে তাকিয়ে অশ্রুসজল চোখে আল্লাহর সাহায্য চান: ওহ গড, প্লিজ হেল্প মি। শো মি ওয়ে। শো মি ওয়ে।
মামলার রায়ের দিন বাসা থেকে বেরোবার মুহূর্তে মুনার মামা শওকত সাহেবকে দেখা যায় কোরআনে চুমু খাচ্ছেন। বুকে চেপে ধরছেন। ধর্মের এই ইতিবাচক ব্যবহার লেখক, নাট্যকারদের মধ্যে কমই দেখা যায়। প্রধান কারণ—জাত হারানোর ভয়। হুমায়ূন আহমেদ জাত যাওয়ার ভয় করতেন না। তিনি বাঙালি মধ্যবিত্ত মুসলিম সমাজের হৃদস্পন্দন ভালোভাবে ধরতে পেরেছিলেন।

কোথাও কেউ নেই নাটকটা যখন শেষ করেছিলাম তখন রাত সাড়ে তিনটা। রাতে ভালো ঘুম হয়নি, তারপর আরও দুইদিন ভালো ঘুম হয় নি। মুনার জন্য, বিশেষ করে বাকের ভাইয়ের জন্য অদ্ভুত এক বিষণ্নতায় ঘুম ভেঙে গেছে বারবার। পর্দার অভিনয় দেখে এই যে মনের ভেতর হাহাকার জেগে ওঠা—একেই বলে পাওয়ার অব আর্ট। শিল্পের শক্তি।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫১

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: চমৎকার পোস্ট

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩২

বন্ধু শুভ বলেছেন: বিলম্বমাশূলসহ ধন্যবাদ জনাব

২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৫৬

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন:



দেখতে হবে । ভাল লাগল লেখাটা ।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৩

বন্ধু শুভ বলেছেন: ধৈর্য্য নিয়ে বসে যান দাদা

৩| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:১২

রাজীব নুর বলেছেন: এযুগের পুলাপানরা কি এরকম একটা নাটক বানাতে পারবে?
পারবে না। তবু তাদের লাফালাফিটা বড্ড বেশি।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৫

বন্ধু শুভ বলেছেন: দাদা কলসি নাকি একটু বেশিই বাজে!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.