নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মুক্তি আমার আলোয় এই আকাশে আমার মুক্তি ধুলোয় ধুলোয় ঘাসে ঘাসে

বন্ধু শুভ

আনকোরা যত নন্ভায়োলেন্ট নন্-কো’র দলও নন্ খুশী। ‘ভায়োরেন্সের ভায়োলিন্’ নাকি আমি, বিপ্লবী-মন তুষি! গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কন্ফুসি! স্বরাজীরা ভাবে নারাজী,নারাজীরা ভাবে তাহাদের আঙ্কুশি! © কাজী নজরুল ইসলাম

বন্ধু শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কারা যেন তাকিয়ে থাকে অামার ফেরার পথে

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২৮



ছবিঃ সংগৃহীত

তখন বছরের শেষের দিক। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ। আমি যথারীতি ভার্সিটিতে ক্লাশ করি, স্বাভাবিক গতিতে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠি। সাধারণত কলেজ-ভার্সিটির আশপাশে কিছু মামা গজিয়ে উঠে। ফটোকপি দোকান, হোটেল, চায়ের টঙ প্রভৃতিকে পুঁজি করে মামাদের একটা আনুপাতিক পরিচিতি থাকে ছাত্রছাত্রীদের কাছে। আমাদের ভার্সিটির আশেপাশেও তেমন কিছু মামা আছে, আমাদের। এইসব মামাদের দোকানে কিংবা দোকানের বারান্দায় ফটোকপি নিতে, সকালের কখনোবা দুপুরের খাবার খেতে এবং টঙওয়ালা মামাদের দোকানের লাল রঙের চা খেতে খেতে আমি যখন ভার্সিটি লাইফের যৌবন উপভোগ করতে ব্যস্ত ঠিক তখনই— একদিন পাশের বাসার জেঠিমা আম্মার ফোন থেকে কল করে বললেন "তোমার মায়ের শরীরটা বেশি ভালো মনে হচ্ছে না। সময় করে এসে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও।" যাহোক যথাশীঘ্রম জেলা শহরে কিছুদিন ডাক্তারের শরণাপন্ন হলাম। কিন্তু কোন ফলাফল হলো না, বরং শরীরের অবস্থা উত্তরোত্তর খারাপ হতে লাগল। যদিও চিকিৎসক দু'জন ছিলেন অধ্যাপক এবং আম্মা আগেও এদের কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন। যাহোক ডিসেম্বরের ২৩ তারিখে আম্মাকে নিয়ে ঢাকা চলে গেলাম, কিন্তু ২৪ তারিখ ছিল আমার সেমিস্টার ফাইনালের প্রথম পরীক্ষা। ৩য় সেমিস্টারের প্রথম পরীক্ষা। বন্ধুরা পরীক্ষা পেছালো। আমিও পরবর্তী পরীক্ষাগুলো রীতিমত দিলাম। সবগুলো পরীক্ষা সকালবেলা ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে এসে দিয়েছি, এবং পরীক্ষা শেষে সন্ধ্যায় অসুস্থ মায়ের কাছে গিয়েছি। হাসপাতাল ছেড়ে ক্যাম্পাসে যখন পুরোপুরিভাবে আসি তখন মে শেষ হয়ে জুন আসি আসি করছে। ততদিনে ভার্সিটিতে নতুন ব্যাচ ভর্তি হয়েছে, পোলাপানগুলা ক্লাশ করতে শুরু করেছে, এমনকি কোন এক প্রোগ্রামকে সামনে রেখে তারা নাচগান রিহার্সাল করছে। অর্থাৎ তারা বেশ "পুরনো" হয়ে গেছে। অথচ আমি নতুন ব্যাচের কাউকে চিনি না, তারাও আমাকে কেউ চিনে না। অবশ্য এই অচলাবস্থা বেশিদিন থাকে নি।

সময়ের ব্যবধানে আস্তে আস্তে পরিচিত হয়ে গেলাম। যেহেতু আমি ওই ব্যাচের ২ বছরের সিনিয়র ছিলাম, তাই ওরা টের পাওয়া মাত্র যথাসম্ভব পরিচিত হয়ে গেল। একদিন এদের মধ্যে একটা ছেলে আমার কাছে একটা মামলা নিয়ে আসল। বিষয়বস্তু— হৃদয়ঘটিত ব্যাপারস্যাপার। আমি অদক্ষ মানুষ তবুও পরামর্শক হতে অনিহা করতে পারলাম না এই ভেবে যে— ২ বছরের সিনিয়র এক ভাইয়ের প্রেমিকা তো নাই-ই, সাথে প্রেমে পড়লে কিভাবে কি করতে হয়— তিনি তাও জানেন না, এমন কথা ছড়িয়ে দিলে 'ইজ্জতের ফালুদা' হয়ে যাবে।

তো ছেলেটা আমার কাছে মোটামুটি পরামর্শ নেয়। এবার একটা ঘটনা ঘটলো। একদিন ছেলেটা আমার কাছে মুখ কার্বনের ন্যায় কালো করে উপস্থিত হলো। কি বিষয় জিজ্ঞেস করতেই সে জানালো— "ভাই, মেয়েটা আপনার উপর ক্রাশ খাইছে। আপনেরে পছন্দ করে"। আমি "হাসবো না কাঁদবো" পরিস্থিতিতে পড়ে গেলাম। যে যাত্রায় পরামর্শক হওয়ার কাজ থেকে ইস্তফা দিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। কিছুদিন পর জানতে পারলাম, মেয়েটা তার ব্যাচে প্রেম না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং অটোপ্রমোশন নিয়ে সে তার এক ব্যাচ সিনিয়র "ভাই" এর সাথে প্রেম করছে। তার কিছুদিন পর থেকে দেখতে পেলাম। তারা থ্রিজি নেটের ন্যায় দুর্বার গতিতে প্রেম করে যাচ্ছে।

একজনের গল্প বলতেই অনেক বলে ফেললাম, কিন্তু আরো বাকি ছয় সদস্য!! কী করি কী করি!!

ছোট ভাইয়ের সম্ভাব্য প্রেমিকা, পরবর্তীতে অন্যজনের (সেও আমার ছোট ভাই) প্রেমিকা আমার উপর ক্রাশ খেয়ে যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে গেছে তা অনেকদিন ধরেই অব্যাহত ছিল। হয়তো এখনো আছে, তবে এখন আর কানে আসে না তেমন। হয়তো "বয়স বেড়েছে" বলেই কানে আসে না!

কিছুদিন পর নিজের ব্যাচমেট এসে জানালো কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের এক ললনা আমার উপর ক্রাশ খেয়েছে। ক্রাশ খেয়ে সে থেমে নেই, অনেকদিন থেকেই সে সিঙ্কিং সিঙ্কিং ড্রিঙ্কিং ওয়াটার। আমি কোথায় গেলাম, কি করলাম, কোন কালারের শার্ট আমাকে বাজে দেখায়, আজকে লাইব্রেরিতে আমি কোন কর্ণারে বসেছি ইত্যাদি ইত্যাদি আমার ব্যাচমেট বান্ধবীকে বলতো। অর্থাৎ সে আমাকে যথাসাধ্য ফলো করতো। বান্ধুবী বলার পর আমি বিষয়টা লক্ষ্য করলাম। ভয়াবহ অবস্থা। আমি এবার তাকে কিছু পেইন দিতে থাকলাম। আমার প্রতি তার দুর্বলতার মাত্রাটা অস্বাভাবিক পর্যায়ে ছিল। তাই আমি তার সামনে দিয়ে বেশি বেশি হেঁটে যেতাম। সে দাঁড়িয়ে আছে দেখলে তার সামনে কিছু সময় অবস্থান করতাম। বাসের জন্য অপেক্ষাতে আছে দেখলে আমিও এমন স্থানে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতাম যেন সে আমাকে দেখতে পায়। তবে এমন একটা ভাব নিতাম যেন আমি কিছুই জানি না, কিছুই বুঝি না, কিছুই দেখি না! দীর্ঘ দুই বছর এই মানুষটা আমাকে নানাভাবে নানা অ্যাঙ্গেলে ফলো করার পর যখন বুঝতে পারলো আমি আসলে ছলনায় মজে যাওয়া পাব্লিক না, তখন সে আস্তে করে অন্যত্র হ্যাঙ পজিশনে চলে গ্যালো। অর্থাৎ সে এখন আরেকজনের গফ মানে গার্লফ্রেন্ড।

তৃতীয় আরেকজনের কথা বলে আজকের গল্প শেষ করে দিচ্ছি। তিনিও আবার আমার বিভাগের। তার আর আমার মাঝে আরো তিন ব্যাচ বিরাজমান। তিনি আমাকে দেখে কিভাবে কিভাবে যেন পছন্দ করে ফেলেন। আমি এবারও প্রথমে বুঝতে পারি নি। তিনি আর কারো সাহায্য নেন নি, নিলেও পুরোপুরি নেন নি। তিনি আমাকে নানাভাবে প্রশংসিত করতে লাগলেন, প্রভাবিত করতে থাকলেন। তিনি আমাকে দেখলেই বলতে থাকলেন— "ভাইয়া, আপনি নাকি অনেক বই পড়েন? বই পড়া মানুষ আমার খুব ভাল্লাগে / ভাইয়া আপনি সবসময় চশমা পরবেন। চশমা পরলে আপনাকে দারুণ লাগে। / ভাইয়া, আপনার বাসা কোন জেলায়? আমাদেরকে (ব্যাচ) একবার নিবেন? / ভাইয়া, বাসার সবাই ভালো আছে? / ভাইয়া, একদিন আমাদেরকে আপনি জাদুঘরে নিয়ে যাবেন? ইত্যাদি ইত্যাদি"।

এসব বলাতেই সীমাবদ্ধ থেকে সে তৃপ্তি পাচ্ছিলো না, সে এবার আমাকে কিছুটা ফলো করতে লাগলো। আমি মামাদের দোকানে গেলে সিগারেট খাই কি-না, খেলে কোন ব্র্যান্ড? আমি কোন জুনিয়র ছেলে বা ক্লাসমেটের সাথে চলি, যার সাথে চলি সে সিগারেট খায় কি-না, এসব খোঁজ রাখতে শুরু করলো। ঈদের আগের দিন ঈদ মোবারক পাঠিয়ে রাখল। ঈদের দিন রিপ্লে দিলাম, সুযোগ পেল বলে আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর খোঁজ, আমি কি করি, কি পরি, কি পড়ি ইত্যাদির নানা আলাপ শুরু করে দিল!!

কিছুদিনের মধ্যেই সে আমার ক্লাসমেটকে (তার রুমমেট আপু) বলল আমার প্রতি তার ভালো লাগার কথা। আমি শুনে তো খুব পুলকিত বোধ করলাম। অনেকদিনের ব্যবধানে আবার ক্রাশ প্রসঙ্গ আসছে। আজকাল তো আবার আমার ক্রাশের মার্কেট ফল করছে! যাহোক আমি মানসিক প্রস্তুতি নেবার পূর্বেই কানে আসল, আমার বিভাগের এক ছোট ভাই, যে আমার থেকে দু ব্যাচ ছোট এবং আমর ক্রাশিত থেকে দুই ব্যাচ বড়, সে, ছোট ক্রাশ খাওয়া মাসুম বাচ্চাটার উপর ক্রাশ খেয়েছে। তার ক্রাশের গভীরতা এতই বেশি যে, মেয়েটাকে সে না পেলে মরে-টরে যাবে আরে কী সব যেন হেনতেন।

আমার মত যুদ্ধবিরোধী একজন মানুষের পক্ষে এমন পরিস্থিতিতে ক্রাশের প্রাপ্য সম্মান দিয়ে গার্লফ্রেন্ড করে ঘরে উঠানো (পড়ুন, মনে উঠানো) সম্ভব না। তাই আমি উহাদের ডাবল লেনের পথে অবস্থান করার পূর্বেই সরে দাঁড়ালাম। ডাবল লেনের কথা বলছিলাম। এক লেনে বিভাগের ছোট ভাই অবস্থান করলেও, অপর লেনে চড়ে ক্রাশিত ছোট মাসুম বাচ্চাটা পার্শ্ববর্তী এক জেলার বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম চান্স পেয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছে।

কিছুদিন পর জানতে পারলাম আমার আর ক্রাশিত মেয়েটার সমদূরত্বে অবস্থান করা ছেলেটার সাথে না হলেও মেয়েটার অন্য একটা প্রেম হয়েছে। লোকমুখে শোনা যায়, তার প্রেম থাকা অবস্থায় সে আমার উপর ক্রাশ খেয়েছিল। যদিও এসব কথা আলোচনা পর্যালোচনা ও বিচার সাপেক্ষ্য— তথাপি এসব কথা একবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

আমি ক্রাশ খেলাম যাদের উপর,

একজন আমার দুই ব্যাচ সিনিয়র, তিনি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার। তিনি আমার বিতর্ক শিক্ষার পথিকৃৎ। তার বয়ফ্রেন্ড তার ক্লাশমেট।

দ্বিতীয় ক্রাশ খাওয়া মেয়েটা সেই কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের-ই। তবে তাকে কখনো জানানো হয় নি। জানানোর মত সময় পাওয়ার আগেই জানতে পেরেছি, তার বফ মানে বয়ফ্রেন্ড আছে। অবশ্য ছেলেটাকে মানিয়েছে ও সাথে। প্রথম ক্রাশের সাথে দ্বিতীয় ক্রাশের ব্যবধান ৩ ব্যাচ।

তৃতীয় ক্রাশও দ্বিতীয় ক্রাশের ৩ বছরের জুনিয়র। ফার্মেসি বিভাগে পড়া এই অভাগীর নামটা পর্যন্ত জানি না। হয়তো কোন না কোন দিন শুনবো, "তোমার আর বলার দরকার নাই, ওর বফ আছে!!"

আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, আমার সাথে কেন এসব হয়? প্রেমের দেবী আফ্রিদিতি কি আমার উপর অসন্তুষ্ট?
কেন আমার পথে ওরা বারবার তাকিয়ে থাকে? ওরা কারা? কারা বারবার এসে আমার পথে দাঁড়িয়ে যায়? কারা?

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫৭

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, আমার সাথে কেন এসব হয়?
.........................................................................................
অসব বয়স কালের অসুখ,
সবারই হয়
কিছু দিন পর আর হয় না ।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৮

বন্ধু শুভ বলেছেন: কিছুদিন শুরু হতে চলল বলে!

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: দিন গেলে আর দিন আসে না ভাটা যদি লয় যৌবন,
থাকতে ক্ষুধা প্রেমসুধা পান করো রে পাগলা মন!

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৯

বন্ধু শুভ বলেছেন: খাসা বলেছেন ভাইটি

৩| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৩৪

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: ক্রাশ বলতে এমন একজনকে বোঝায় যাকে পাওয়ার যোগ্যতা ঐ ব্যাক্তির নেই।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫০

বন্ধু শুভ বলেছেন: দৃশ্যত তাই মনে হচ্ছে

৪| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫১

বন্ধু শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইটি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.