নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মুক্তি আমার আলোয় এই আকাশে আমার মুক্তি ধুলোয় ধুলোয় ঘাসে ঘাসে

বন্ধু শুভ

আনকোরা যত নন্ভায়োলেন্ট নন্-কো’র দলও নন্ খুশী। ‘ভায়োরেন্সের ভায়োলিন্’ নাকি আমি, বিপ্লবী-মন তুষি! গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কন্ফুসি! স্বরাজীরা ভাবে নারাজী,নারাজীরা ভাবে তাহাদের আঙ্কুশি! © কাজী নজরুল ইসলাম

বন্ধু শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা গরিব সিনেমা, গরিব শিল্প ও সেফাতুল্লাহ সমাচার

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:১৮



বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারের মত ভাষাও জনপ্রিয় হতে পারে তা আমরা দেখতে পাই জনৈক সেফাতুল্লাহ ওরফে সেফুদার কল্যাণে। তিনি বাংলাভাষার কিছু শব্দ ও বাক্যকে জনপ্রিয়তার পূর্ণ মাত্র দিয়েছেন। এমন কিছু শব্দ ও বাক্য হচ্ছে- গরিব, ছোটলোক, মদ খাবি মানুষ হবি, ট্রস ট্রস করে, ওকে মদ খাইতে বল ইত্যাদি। আজকের আলোচনার অবতারণা "গরিব" শব্দ নিয়ে। এই গরিব শব্দের বহুুল ব্যবহার পূর্বকাল থেকেই হয়ে আসছে। তবে শব্দটিকে 'যথাযথভাবে' তুলে ধরতে চিত্র পরিচালক আমজাদ হোসেনরা এবং মান্না অমিত হাসানরা ব্যর্থ হয়েছেন! বাধ্য হয়েই সেফাতুল্লাহ ওরফে সেফুদা গরিব শব্দের ব্যবহারপূর্বক শব্দটিকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। বলা হয়ে থাকে তার হাত ধরে বাংলাদেশে ভারী, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের পাশাপাশি "গরিব শিল্পের" পত্তন হয়।

লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে নিম্নোক্ত পোস্টারের সিনেমাগুলো "নগ্নতা মানে অশ্লীলতা নয়" যুগের।
নগ্নতা কেন অশ্লীলতা নয় সে বিষয়ে পরে আসছি। তার আগে বলা দরকার সে সময়ে গরিব শব্দের কদর কতটুকু ছিল। কতটা সময়োপযোগী ছিল আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে। মাথাপিছু আয় কত ছিল সে সময়। কত ছিল সুদসহ মাথাপিছু ঋণ। কিন্তু তার জন্য তো মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হতে হবে। থাক আপাতত সেফাতুল্লাহ সাহেবের থিওরি নিয়ে আলোচনা চলুক, রাজনৈতিক কথাবার্তা বাদ থাকুক। রাজনৈতিক রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স কল না করে গরিব বিষয়ে কনফারেন্স টা কল করতে পারলেই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হতে পারে।

গরিব শিল্পের আলোচনা চলার সময়ে একটা যৌক্তিক প্রশ্ন তোলা সঠিক হবে এরকম যে, উল্লিখিত সময়ের বেশিরভাগ সিনেমায় একজন নায়ক থাকতেন নিশ্চিত ছ্যাঁকা খাওয়ার জন্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই (প্রায় সবসময়) এই পরিণতি বরণ করতে হতো নায়করাজ রাজ্জাক তথা আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে বাপ্পারাজ সাহেবকে। ছোটবেলায় আমরা শুনতাম এবং প্রচার করতাম যে, তিনি ছ্যাঁকা খাওয়ার বিনিময়ে অধিক পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন। কিন্তু ছোটবেলার শ্রুত কথা ও স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রচার করা এই অমোঘ বাণীটি যখন বড়বেলায় এসে ভুল বলে জানলাম তখন মনে মনে "ছবির নামের আগে পরে 'ছ্যাঁকা' থাকে না কেন" ভেবে নিজেকে খুবই ছোট লাগতে শুরু করল। যে মহান পুরুষ দিনের পর দিন ছ্যাঁকা খেয়ে বহু ছ্যাঁকা খাওয়া পাব্লিকের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে তার পুরাতন শুকিয়ে আসা ঘা কে তকতকে জীবিত করে তুলে, ইতোমধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া প্রেমের কথা মনে করিয়ে, অন্যের বউ হয়ে যাওয়া প্রেমিকার আলিঙ্গনসহ নানা খুনসুটির কথা মনে করিয়ে, মনের গভীর থেকে গভীততর খাদ থেকে হৃত/অপহৃত ভালোবাসার জন্য কেঁদে কেঁদে বুক ভাসানোর এবং জ্বলে জ্বলে পুড়ে পুড়ে খাঁটি সোনা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন-, তাঁর কর্মকান্ডের সাথে মিল রেখে কেন সিনেমার নামের আগে পরে "ছ্যাঁকা" রাখা হলো না- এই প্রশ্ন যেন মন থেকে নামছেই না। এই প্রশ্ন, এই ব্যথা যেন আমার একার না ; এই ব্যথা আমার মতো হাজার স্বজনপ্রীতিহীনতায় বিশ্বাসী লাখো যুবকযুবতী কপোতকপোতীর। সেফাতুল্লাহ এই বিষয়ে সঠিকভাবে দৃষ্টিপাত করলে আমরা হয়তো কিছু সিনেমায় নামের বদল দেখতে পাবো। অথবা তাঁকে নিয়ে কিছু নতুন সিনেমা দেখতে পাবো। কিংবা তাকে উৎসর্গ করে ছ্যাঁকা মার্কা অথবা ছ্যাঁকার গল্প অবলম্বনে কিছু সিনেমা নির্মিত হবে। অথবা তাঁর ছ্যাকা খাওয়ার গল্প অবলম্বনে একটি নতুন পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি তৈরি হবে। এই সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা অন্যদিন হবে, আজ এ বিষয়ের সমাপ্তি টানছি।

"নগ্নতা মানেই অশ্লীলতা নয়" বলে আসলে কী বুঝানো হয়েছে সেই বিষয়ের কিছু তথ্য উপস্থাপন করা দরকার। প্রথমে দুইটা গল্প বলা যাক।
১. ১৯৯৩ সালে জার্মানির 'স্টার্ন' পত্রিকায় টেনিস তারকা বরিস বেকার ও তাঁর বান্ধবী বারবারা ফেলটাসের একটি ছবি ছাপা হয়। সেখানে বারবারা ফেলটাস ছিলেন সম্পূর্ণ নগ্ন। সেই ছবিটি তুলেছিলেন বারবারা ফেলটাসের বাবা স্বয়ং! তখন দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবিদ্বেষে বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এই ছবিটি তোলা ও ছাপা হয়েছিল। কারণ বারবারা ফেলটাস নিজে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ছিলেন।

২. এই ছবি কিছুদিন আগে পুনরায় ছাপায় এ দেশের (ভারত) দু'টি পত্রিকা। আর তার জেরে হইচই শুরু হয়। একদল আইনজীবী মামলা রুজু করেন আদালতে। তাঁদের বক্তব্য ছিল, নগ্ন নারীদেহের ছবি ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। তা ছাড়া নগ্ন নারীশরীর দেখলে পুরুষের মনে কাম জাগা স্বাভাবিক। নিম্ন আদালত এই যুক্তিকে মেনে নেয়। কিন্তু, শীর্ষ আদালত সম্পূর্ণ উল্টো রায় দিল।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণণ এবং বিচারপতি এ কে সিক্রির বেঞ্চে মামলাটির দীর্ঘ শুনানি হয়। বিচারপতিরা বলেছেন, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নারীশরীর মানেই তা সবসময় অশ্লীল নয়।

উপরোক্ত ঘটনা থেকে আসলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ঘোরতর কৃষ্ণ বর্ণের মানুষের জন্য সম্পূর্ণ নগ্ন হওয়া অশ্লীলতা না হলে ভারতীয় উপমহাদেশের শংকর (আধা থেকে প্রায় কালো) মানুষজনদের জন্য অর্ধনগ্নতা কোনভাবেই অশ্লীলতা নয়। আবার নিম্ন আদালত এগুলোকে অশ্লীলতার পর্যায়ে রাখলেও উচ্চ আদালত বলছে উল্টো কথা! অর্থাৎ কম পোষাক কখনোই অশ্লীলতা হতে পারে না। অন্তত "উচ্চ" ধারণা পোষণ করলে এমনটাই মনে হওয়া উচিৎ। উচ্চ আদালত থেকে এটাই শেখা গেল। আমরা বরং এসব নগ্নতাকে ওমর সানির মায়া মায়া কান্না, মান্নার ওই শুয়োরের বাচ্চা ডায়লগ, জসিমের অভাবী সংসার, অমিত হাসানের প্রতি বড় ভাইদের অবহেলা, বাপ্পারাজের প্রতি প্রেমিকার চিরবিতৃষ্ণা কিংবা নায়ক রুবেলের ট্রাক ড্রাইভারির সাথে "উচ্চ" ধারণা পোষণ করে বিনোদন হিশেবেই নিতে পারি।

এবার আসা যাক সেফাতুল্লাহ'র প্রসঙ্গে। প্রথম একটা সিদ্ধান্তহীনতার কথা বলা যাক। তাকে আমরা ; বিশেষত আমি কী নামে ডাকবো তা নিয়ে বিশেষ অসুবিধায় আছি। তার বয়স বলছে তাকে দাদা বা বড় জ্যাঠা বলে ডাকতে কিন্তু সে নিজে আমাদের শিখালো কি-না দাদা তথা সেফুদা! কিভাবে এত মুরব্বি একজন মানুষকে নাম ধরে ডাকি! কী পাপের কথা বাপু! নাম ধরে, আপনি তুমি করে সম্বোধন করে বলার জন্য যখন একটা সিদ্ধান্তে আসবো বলে চিন্তা করি তখন মস্তিষ্ক একটা সিগনাল পাঠায়, একজন কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, অভানেতা, সাংবাদিক, জাতিসংঘের উপদেষ্টাকে কিভাবে ভাই দাদা বা কাকা বলে সম্বোধন করবি রে মুখপোড়া! স্যার বল স্যার! তিনি উপরোক্ত বিশেষণেই কেবল বিশেষিত না রে পাগলা, তিনি যে কতিপয় কারণে এদেশের ফেসবুকবাসীদের গুরু হয়ে আছেন। তিনি এদেশে মদের বিজ্ঞাপন প্রচার করেছেন তৃণমূলে, আমাদের গার্ডিয়ানদের ছ্যাত ছ্যাত করে বেতের বাড়ি দেয়াকে তিনি আধুনিকায়ন করে ত্রস ত্রস করেছেন। তিনি গরিব শব্দটিকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। তিনিই প্রথম প্রচার করেছেন মদ খেলে বুদ্ধি খুলে। তিনি বাঙালির গরিবানা দেখে মদ বানানোর সহজ ফর্মুলা তথা ভাত পঁচিয়ে মদ বানানোর বিষয়টি সবাইকে জানিয়েছেন। তিনি সামান্য কিছু নন। তিনি মহান। তিনি বিরাট। তিনি বিশাল। তার তুলনা হয় না!

বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কিছু "গরিবি সিনেমার পোস্টার" এই লেখার মূল আকর্ষণ।

[মাদকদ্রব্য গ্রহণ মৃত্যুকে তরান্বিত করে]


















মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৩৯

কালীদাস বলেছেন: প্রায় সব কয়টা পোস্টারই দেখি "নগ্নতা মানেই অশ্লীলতা নয়" যুগের সিনামার :(( সে ছিল এক অভুতপূর্ব সময়, হয় চিৎকার সর্বস্ব মান্নার সিনামা অথবা :#)

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৫৮

বন্ধু শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ।
"গরিব বলেই কি নগ্নতা?" অথবা "নগ্নতা মানেই অশ্লীলতা নয় কেন?" টপিকে একটা রাউন্ড টেবিল কননফারেন্স হতে পারে বোধ করি!

২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:১৫

রাজীব নুর বলেছেন:

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.