নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মুক্তি আমার আলোয় এই আকাশে আমার মুক্তি ধুলোয় ধুলোয় ঘাসে ঘাসে

বন্ধু শুভ

আনকোরা যত নন্ভায়োলেন্ট নন্-কো’র দলও নন্ খুশী। ‘ভায়োরেন্সের ভায়োলিন্’ নাকি আমি, বিপ্লবী-মন তুষি! গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কন্ফুসি! স্বরাজীরা ভাবে নারাজী,নারাজীরা ভাবে তাহাদের আঙ্কুশি! © কাজী নজরুল ইসলাম

বন্ধু শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা নাটকের ক্রান্তিকাল এবং পাতা ঝরার দিন : নাট্য সমালোচনা

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৭



বাংলা নাটকের এমন একটা ক্রান্তিকালে আমরা এসে পৌছেছি যে, এখন আর নিছক কমেডি (ভ্যাড়ামি) ছাড়া নাটককে "যথাযথ" নাটক মনে করি না। শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক, এমনকি দর্শকগোষ্ঠী- সকলেই প্রেম, কমেডি, আঞ্চলিক ভাষার নাম ভাঙ্গিয়ে শব্দ বিকৃতি- এইসব বিষয়ে মত্ত হয়ে আছে। আশার বিষয় হচ্ছে, এইসব নাটক নামের ভ্যাড়ামির ভীড়েও কিছু বিষয়ভিত্তিক জনসচেতনামূলক বাস্তব বিষয় নিয়ে নাটক সিনেমা হচ্ছে এ দেশে। সচেতন দর্শকদের দৃষ্টির দিকে খেয়াল রেখে যারা শিল্পকে নতুন মাত্রা দিয়ে থাকেন, তাদের মধ্যে রেদওয়ান রনি অন্যতম।

রেদওয়ান রনি এই ঈদে ভাই ব্রাদার এক্সপ্রেস প্রজেক্টে "পাতা ঝরার দিন" নামে একটি নাটক দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। নাটকের বিষয়বস্তু ছিল 'Alzheimer রোগে আক্রান্ত রোগীর জীবনে ঘটে যাওয়া নানা বাস্তবতা এবং পরিবারের লোকদের উপর এর প্রভাব'।
[Alzheimer's is the most common cause of dementia, a general term for memory loss and other cognitive abilities serious enough to interfere with daily life. Alzheimer's disease accounts for 60 percent to 80 percent of dementia cases.]

Alzheimer রোগে আক্রান্ত হওয়ার অভিনয় করেছেন গুণী শিল্পী শ্রদ্ধেয় হাসান ইমাম। তিনি বরাবরই ভাল অভিনয় করেন, যথারীতি এই নাটকেও চমৎকার করেছেন। রোমানা রশীদ ঈশিতা নাটকটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ঈশিতার অভিনয় এক মিনিটের জন্যও অভিনয় মনে হয় নি, সারাক্ষণ মনে হয়েছে বাস্তবে পিতা হারানো উদভ্রান্ত একটি মেয়ে যে কি-না স্বামীর সংসারে অশান্তি ভোগ করে আপাতত বাবার সংসারে থিতু হয়েছে এবং এই পরিস্থিতিতে সে তার এক প্রতিবন্ধী বোনকে সামলাচ্ছে, সাথে প্রায়শই স্মৃতি ব্ল্যাংক হয়ে যাওয়া বাবাকেও। তার পুরো অভিনয় ছিল ন্যাচারাল, বিশেষ করে "আপনার বাবাকে পেয়ে যাবেন বোন" কথার বিপরীতে "থ্যাংকইউ" বলে কান্না করাটা হাজার দর্শককে কাঁদিয়েছে বোধ করি। সাথে এটাও উল্লেখ করতে হয়, বাবার খোঁজ করতে থাকা তরুণীকে একা দেখে "আপনি কি করেন", "আপনার বিয়ে হইছে" কিংবা কুরুচিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকানো লোকগুলো কিন্তু আমাদের সমাজের। আমাদের চারপাশে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা রাম শাম যদু কদুরাই সময়ে সুযোগে এসব কথা বলে থাকে। নিঃসন্দেহে এটা সচেতনতার একটি বড় দিক। রেদওয়ান রনি নাটকে বিষয়টি নিখুঁতভাবে পুশ করেছেন।

নাটকটিতে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন মৌসুমি হামিদ। ব্যক্তিগতভাবে মৌসুমির অভিনয়ের কান্না করা বা কান্নাকান্না ভাব করে থাকা এবং উত্তেজিত হয়ে জোরগলায় চিল্লিয়ে ঝগড়া করাটা বেশ ভাল উপভোগ করি। এক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। তার রোল ছিল একটা বস্তিতে বাস করা পতিতার। সে স্মৃতি-হারানো লোকটাকে চাচা বলে ডেকে, নিজ হাতে খাইয়ে দিয়ে, নিজের বিছানায় ঘুমাতে দিয়ে এবং জ্বরের ঔষুধ এনে- মানবতাবোধের এক বিশাল কীর্তি স্থাপন করেছে। নির্মাতা বুঝিয়েছেন- পতিতারা আমাদের মতোই মানুষ, তাদের মনেও দয়া মায়া আছে। অন্যের বিপদে তাদেরও মন কাঁদে। শেষে স্মৃতি হারানোর বিষয়টি বুঝতে না পেরে হাসান ইমামকে গালাগাল দেওয়ার পোজটা ছিল অসাধারণ। নাটকের শুরুতে দুইটা বাচ্চাসহ বন্যা মির্জার (অতিথিশিল্পী হিসেবে) উপস্থিতি নাটকে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মিলন ভট্টাচার্যের অভিনয় ভালো ছিল, এবং তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করার বিষয়টা সামনে নিয়ে এসেছেন।

এতসব প্রশংসার সাথে একটা অসঙ্গতিও তুলে ধরি। বাবা হারিয়ে যাওয়ার পর ঈশিতাকে কোন নিকটাত্মীয় (পুরুষ) সাহায্য করতে না আসাটা চোখে লেগেছে, যেখানে অফিসের সহকর্মী তাকে সাহায্য করছিল রাতেও। বিষয়টি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়েও ছিল না, যেহেতু লিফলেট করা হয়েছে এবং মাইকিং চলছিল।

সার্বিক বিবেচনায় নাটকটি অসাধারণ হয়েছে। মৌসুমি হামিদ কিংবা ঈশিতার মত পরীক্ষিত জাত শিল্পীদের দ্বারা ছোট একটি গল্পকেও প্রাণবন্ত করে দেখানো যায় এটা আবার প্রমাণিত হলো। ঘড়ি তোয়ালে স্যান্ডেল পরিবর্তন হয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে নির্মিত নাটকগুলোর প্রতি দৃষ্টি ক্ষীণ করে প্রযোজক পরিচালকগণ যদি বিষয়ভিত্তিক বাস্তবধর্মী বিষয়ের উপর বেশি বেশি নাটক টেলিফিল্ম নির্মাণ করেন, তবে অজানা বা স্বল্প জানার বিষয়গুলো নিয়ে জনমনে সচেতনতা তৈরি হবে ; সাধারণ দর্শক হিশেবে এটাই আমাদের কাম্য।

(৩১ আগস্ট ২০১৮ ইং তারিখে লিখিত)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:২০

ঋতো আহমেদ বলেছেন: ঘড়ি তোয়ালে হারানোর নাটকের ভিড়ে পাতা ঝরার দিনের নাটকগুলো বিলুপ্ত হতে চলেছে। আপনার রিভিউ ভালো লেগেছে। দেখেছি। চমৎকার একটি নাটক। আশা করি নির্মাতারা ভালো নাটকের দিকে ফিরে আসবেন আবার।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৩

বন্ধু শুভ বলেছেন: আমরাও সেই প্রত্যাশা করি। মন্তব্যের ধন্যবাদ।

২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৫

ট্রাভেলার মাসুদ বলেছেন: অন্যকে হেয় করা, কটুক্তি করা, ব্যাঙ্গাত্নক আচরণ শিক্ষা দেওয়াসহ আরও যে সকল নেগেটিভ আচরণ আছে তাই শিক্ষা দেওয়া হয় বর্তমান বাংলা নাটকে। শিক্ষনীয় কিছুই নাই। শুধু লোক হাসানোর জন্য সস্তা ভাবের নাটক। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? কে জানে এই উত্তর?

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:২৪

বন্ধু শুভ বলেছেন: ক্রান্তিকাল চলছে দাদা। পরিত্রাণের একমাত্র উপায় এদেরকে বয়কট করা।

৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:১৬

জগতারন বলেছেন:
বাংলাদেশে প্রায় সব নাট্যকার ও সংলাব রচিতাই আবাল।
শালার পুতরা গ্রাম্য কথ্য ভাষায় নাটক বানায়।
নাটক বানাতে হবে সাহিত্যের ভাষায়। যেমনঃ চলতি বা সাধু ভাষায়।
তবে পার্শ চরিত্রের কিছু সংলাব কথ্য ভাষায় হতে পারে।


নাট্য সমালোচনা +++
লাইক দিলাম।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:২৬

বন্ধু শুভ বলেছেন: ঠিক বলেছেন দাদা। ধন্যবাদ। অনুপ্রেরণা পেলাম।

৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: পাতা ঝরার দিন নাটকটি দেখেছি। ভালো লেগেছে।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:২৭

বন্ধু শুভ বলেছেন: আমারও
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.