নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মুক্তি আমার আলোয় এই আকাশে আমার মুক্তি ধুলোয় ধুলোয় ঘাসে ঘাসে

বন্ধু শুভ

আনকোরা যত নন্ভায়োলেন্ট নন্-কো’র দলও নন্ খুশী। ‘ভায়োরেন্সের ভায়োলিন্’ নাকি আমি, বিপ্লবী-মন তুষি! গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কন্ফুসি! স্বরাজীরা ভাবে নারাজী,নারাজীরা ভাবে তাহাদের আঙ্কুশি! © কাজী নজরুল ইসলাম

বন্ধু শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের নারীবাদীরা কেমন নারীবাদী?

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৪০



নারীবাদের ধরণ প্রকৃতি নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা হয়েছে এবং নারীবাদী আন্দোলনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে এমন রেফারেন্স হাজারেরও বেশি ; এমনকি লাখেরও। কিন্তু আমাদের নারীবাদীদের এবং উপনারীবাদীদের* মনের অবস্থা কী- তা নিয়ে আলোচনা খুব একটা দেখা যায় না। কাজী নজরুল ইসলাম তার "ভাব ও কাজ" প্রবন্ধে- কাজ করতে যাওযার আগে ভাবার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন, আবার ভেবে বসে না থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজে লেগে পড়ার কথা বলেছেন। অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চেয়েছেন- কাজ যেমন ভাবনার উপর নির্ভর করে এগিয়ে যায় তেমনি কাজ না করে (শুধু ভেবে) বসে থাকলে স্পিরিট বা আত্মার পবিত্র শক্তির* কোন মূল্য থাকে না। তাই সঙ্গত কারণেই এখন সময় এসেছে আমাদের নারীবাদীদের মনের ভাব ও কাজের প্রকৃতি পরীক্ষা করে দেখার।

একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে নারীবাদ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সবচে' বড় হয়ে ওঠা প্রশ্ন হচ্ছে-
১. নারীবাদীদের কাজ কি কোন নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক নারীদের অধিকারের জন্য কাজ করা?

২. নারীবাদ কি নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করবে? তাদের কর্তব্যের বিষয়ে গুরুত্ব দিবে কি^না?

৩. নারীবাদী মনোভাব পোষণ করার জন্য কতটুকু শিক্ষা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হবে? নাকি অবান্তর কথা বলে পরিচিত হওয়াই নারীবাদ?

৪. নারীবাদ না মানবতাবাদ- কোনটি অধিক প্রয়োজন? বিশেষ করে বর্তমান পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে নারীবাদ ধারণা (তত্ত্ব) নারীদেরকে কি নারী হিশেবেই রেখে দিচ্ছে না?

উপরের চারটি কথারই ব্যাখ্যা আমরা দেখব। আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা এবং উদাহরণের আলোকে বক্তব্য তুলে ধরছি।

গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের দেশীয় (পরিচিত) নারীবাদীদের কর্মকান্ডে তীব্র রাজনৈতিক অন্ধত্ব প্রকাশ পেয়েছে। বাসে ধর্ষণ ও গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের ঘটনায় নারীবাদীদের প্রতিক্রিয়া ছিল শহর ও অর্থের মানদন্ডের সাথে অনুপাত বজায় রেখে নির্দিষ্ট পরিমান। জাতীয় পত্রিকাগুলো এ ক্ষেত্রে সাক্ষী হতে পারে। নারীবাদী কর্মকান্ডে রাজনীতির প্রভাব পরিলক্ষিত হয় মূলত- বড় দুই দলের নারীবাদীদের কর্মকান্ডে। (দৃষ্টান্তরূপে বলা যায়-) মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলাতে নির্দিষ্ট একটি দলের সমর্থক নারীবাদীরা মাঠ সরগরম করে ফেলল অথচ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেয়েদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় তারা ছিল নীরব। আবার উলটো* দিকের রাজনৈতিক দলের নারীবাদীদের অবস্থাও একই রকম। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঘটনায় তারা কান্নাকাটি করলেও মাসুদা ভাট্টির ঘটনায় তারা ছিল মূক। মাসুদা ভাট্টি কিংবা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভয়বহতা কতটুকু তা বিষয় না। বিষয় হচ্ছে আমাদের নারীবাদীদের প্রতিবাদ রাজনৈতিক পরিচিত দেখার পর কেন? ভিন্ন দলের সমর্থক নারী কি তাদের কাছে নারী না? তাদের এমন চরিত্রের বিপরীতে তারা কি নারীবাদী পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে? পাঠকের সমীপে প্রশ্নটা থেকে গেল।

রাষ্ট্র, সমাজ, গোত্র, গোষ্ঠী কিংবা পরিবার- সর্বত্র প্রতিটা মানুষের দুই প্রকারের রুল থাকে। একটা হচ্ছে পাওয়ার অন্যটি হচ্ছে দেয়ার। অর্থাৎ একটি হচ্ছে অধিকার অন্যটি হচ্ছে কর্তব্য। যারা নারীবাদের ধারক ও বাহক তারা নারীদের অধিকারের জন্য যেভাবে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে "সম-অধিকার" বুলি কপচাতে থাকে তারা সেভাবে কিংবা তার সিকিভাগও কর্তব্য পালনের বিষয়ে জোর দিতে শোনা যায় না। জোর কি, হালকাভাবে বলতেই ভুলে যান বোধ করি। একটা মানুষ যদি পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে থাকে তবে সে কখনোই কর্তব্য পালনের কথা না বলে অধিকারের জন্য কান্নাকাটি করতে পারে না। যারা বিভিন্ন ইস্যুতে রাষ্ট্রের কাছে "অধিকার" "সম-অধিকার" বলে গলা ফাটায় তারা তাদের কর্তব্যের কথা মিনমিন করেও বলবে না- এমতাবস্থায় কিরূপে তাদেরকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ বলা চলে?

নারীবাদীদের জন্য কতটুকু শিক্ষা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন তার একটি স্পষ্ট রূপরেখা থাকা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, এই বিষয়টি নারীবাদ তত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেননা অধুনা এই বিষয়টির ব্যাপক গড়মিল পরিলক্ষিত হয়। যেহেতু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের অধিকার সবক্ষেত্রে সমানভাবে নিশ্চিত হয় নি, সেহেতু নারীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সংগঠন থাকবে এটা একটা সাধারণ ও স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু অবান্তর কথা, দাবি ও হাস্যকর কর্মকান্ডের মাধ্যমে কিছু নারীবাদী(?) নারীবাদ বিষয়টিকে এতটাই হাস্যকর ও সংকীর্ণ করে তুলে যে তখন বিষয়টি সাধারণ মানুষের মনে নারী অধিকারের বদলে বিনোদনের খোরাক হিশেবে* বেশি কাজ করে। বাংলাদেশি একজন লেখিকা রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে পুরুষের মত করে পেশাব করার অধিকার চেয়ে দেশ থেকে নির্বাসিত হয়েছেন। অবশ্য নারীবাদের আড়ালে এই লেখিকার বিতর্কিত মত ও মন্তব্য অনেক। এই বঙ্গমুলুক থেকে সেই মহিলা বিতাড়িত হলেও তার কিছু ভক্ত এখনো আছে। তারা খেলাফত নিয়ে আজকাল কিছু উল্টাপাল্টা বকে যাচ্ছে।

কিছুদিন আগে খবরের কাগজে "পুরুষের মত অর্ধনগ্ন অবস্থায় পথ চলার অধিকার" চেয়ে বিশাল আন্দোলন দেখলাম। বায়োলজিক্যাল কারণে নারী পুরুষ ভিন্ন দৈহিক আকৃতির অধিকারী হবে এটাই স্বাভাবিক। সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে এই স্বাভাবিকতা ধরে রাখতে নারী ও পুরুষকে কিছু সামাজিক রীতিনীতি মেনে চলতে হয়। আর পুরুষের যেমন এক বস্ত্র স্বাভাবিকতা তেমনি নারীর জন্য দুই বস্ত্র। এই স্বাভাবিকতার বিষয়টি কিন্তু প্রাকৃতিক কারণেই। আমাদের কিছু নারীবাদী যখন এমন বিষয়কে পুরুষের চাপানো বিষয় বলে উল্লেখ করে তখন বিষয়টি নিছক কমেডি ছাড়া আর কিছুই হয় না। এজন্যই নারীবাদীদের জন্য সুনির্দিষ্ট শিক্ষা প্রয়োজন। বলাই বাহুল্য, বুক খালি রেখে চলার "অধিকার" প্রত্যাশী নারীবাদী মানুষটিও তার ভাইয়ের জন্য কোন "নগ্নবক্ষ" ওয়ালা রমণী বিয়ের পাত্রী হিশেবে পছন্দ করবে না। এই তাদের ধর্ম, এই তাদের কর্ম।



কিছুদিন আগে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল যখন উত্তরোত্তর সাফল্য লাভ করছিল তখন, এবং মারিয়া মান্দা'র বয়স ভিত্তিক ফুটবলে ভালো করছিল তখন- এদেশে প্রশংসার বন্যা ভেসে যাচ্ছিল। আবার কিছুদিন পর তাদের খারাপ ফলাফলে এদেশের মানুষের মুখে কিছু গালাগালও দেখতে পেয়েছি আমরা। কিছু নারীবাদী এসবের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এভাবে (যথাক্রমে), সুযোগ পেলে মেয়েরাও দেখিয়ে দিতে পারে এবং পুরুষের মুখের ভাষা কত খারাপ, দেখো দেখো। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার ভাব ধরা কোন নারীবাদীকে দেখলাম না এরকম একটা প্রশ্ন তুলতে যে, মেয়েরা খেলতে নামলে "বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল" কিংবা "বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল" বলা হয় অথচ পুরুষ যখন তখন পুরুষ শব্দটা থাকে না কেন? পুরুষ নামলে টিম বাংলাদেশ বলা হয় কেন? এখন থেকে "বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দল" বলতে হবে- মর্মে প্রস্তাব করতে কাউকে দেখলাম না! পাঠক, বুঝতেই পারছেন- জ্ঞানের কতটা দৈন্যতা থাকলে এরকম অবস্থা হতে পারে।

আজকাল হয়েছে আরেক যন্ত্রণা। ফেসবুকের এই সস্তা জনপ্রিয়তার যুগে নারীবাদ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দু'কথা লিখে সবার দৃষ্টির কেন্দ্র হওয়াই যেন কতিপয়ের বাতিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়টি অত্যন্ত ভয় ও বেদনার। আজকে আমাদের সংবিধানের ধারা উপধারা না জানা মেয়েটাও নারীবাদের তালিম দিচ্ছে ফেসবুকের নীল দুনিয়ায়! বড়ই ভয়ংকর সে চিত্র। কারণে অকারণে পুরুষের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করাই এদের কাছে নারীবাদ। এসব মস্তিষ্ক নষ্ট হওয়ার আলামত বৈ কিছু না।

শেষ প্রশ্নটি ছিল নারীবাদ না মানবতাবাদ- কোনটি প্রয়োজন? পাঠক, পরমাণু অস্ত্রের বর্তমান যুগে নারীবাদী কথাটা কতটা গুরুত্বের সৃষ্টি করতে পারে? নারীবাদ বুলি না কপচায়ে যদি মানবতাবাদ নিয়ে কাজ করতো তবে নারীদের সমস্যারও সমাধান হয়ে যেত। পারমানবিক অস্ত্রের এই মহাযজ্ঞে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই এক অজানা হুমকির মধ্যে বসবাস করছে। অথচ নারীবাদীদের মনে সব সময় পুরুষের বিরোধিতা করার একটা প্রবণতা ঘুরপাক খেতেই থাকে। গোটা সিস্টেম টা যেখানে পঁচে গিয়ে তাদেরকে একটা অংশে ডাউন দিচ্ছে, তারা সে অংশকে মেনে নিয়ে (এমনকি কখনোকখনো এটা তাদের কামনার বস্তু হয়ে যায়-) বড় আনন্দেই আছে। টুথপেস্টের বিজ্ঞাপনে নারীকে অর্ধনগ্ন করিয়ে কোম্পানি ব্যবসা করছে এটা তাদের মাথায় আসছেই না। এমন আরো হাজারো বিষয়ের বিজ্ঞাপন আছে যাতে পণ্যের চেয়ে একটা নারীর নারীত্বকে (পড়ুন শরীর) ব্যবহার করে কোম্পানি ব্যবসা করছে। প্রকারান্তে কোম্পানি যেন নারীকেই পণ্য হিশেবে ব্যবহার করছে। কিন্তু সে তাদের কে বুঝাবে?

আমরা চাই সকল বাদ-তন্ত্রের তালিম উঠিয়ে রেখে এক "মানবতাবাদ" নিয়ে সবাই আগ্রহী হোক। কাজে লেগে সবাই মানবতার, মানবতাবাদ হয়ে উঠুক এক আরাধ্য ধ্যান-জ্ঞান।

ডা. আকাশ আত্মহত্যা করেছে বলেই আজকের এই আলোচনার অবতারণা- এমনটা ভাবার কারণ নেই। বেশ অনেকদিন থেকেই আমাদের চারপাশে থাকা নারীবাদী চরিত্রগুলো আমাদেরকে এই বিষয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে। ভাবনা এবং অধিকতর ভাবনার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে এইসব নারীবাদী লেবাসধারী সুবিধাবাদীদের কে সঠিক পথে আনতে হবে। অথবা তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। আমরা কখনোই চাই না নারীবাদ কারো ব্যক্তিগত পরিচিতির প্লাটফর্ম হোক। ঠুনকো চিন্তা থেকে থেকে বৃহৎ একটি বিষয়কে নিয়ে কথা বলার অধিকার এইসব ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করনেওয়ালা মানুষদের থাকতে পারে না। আমরা চাই ওরা মানুষ হয়ে উঠুক। চিন্তার প্লাটফর্ম হোক মানবতাবাদ। তারা হয়ে উঠুক মানবতাবাদী।

.................................................................................

*উপনারীবাদী-
বিভিন্ন মতবাদ অনুযায়ী নারীবাদী হতে পারেন যে কোন লিঙ্গের বা শুধুমাত্র কোনো
নারী (এই ক্ষেত্রে নারীবাদী পুরুষরা হবেন উপনারীবাদী বা 'প্রোফেমিনিস্ট';) যিনি নারীবাদে বিশ্বাস করেন।

*স্পিরিট বা আত্মার পবিত্রতার শক্তি কথাটি কাজী নজরুল ইসলামের "ভাব ও কাজ" প্রবন্ধে ব্যবহৃত হয়েছে।

*উলটো, হিশেব- কথা দু'টি প্রথাগত নিয়মের বাইরে এসে লেখা হয়েছে। এগুলো যথাক্রমে উল্টো এবং হিসেব এর অর্থ দিবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি মন দিয়ে পড়লাম।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৬

বন্ধু শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:০১

খাঁজা বাবা বলেছেন: প্রশ্নগুলি অত্যন্ত যৌক্তিক।
আমার মনে হয় নারীবাদীরা শুধু নারীই থেকে গেছেন, মানুষ হতে পারেন নি।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৮

বন্ধু শুভ বলেছেন: সেটাই হয়েছে কাল।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.