নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মুক্তি আমার আলোয় এই আকাশে আমার মুক্তি ধুলোয় ধুলোয় ঘাসে ঘাসে

বন্ধু শুভ

আনকোরা যত নন্ভায়োলেন্ট নন্-কো’র দলও নন্ খুশী। ‘ভায়োরেন্সের ভায়োলিন্’ নাকি আমি, বিপ্লবী-মন তুষি! গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কন্ফুসি! স্বরাজীরা ভাবে নারাজী,নারাজীরা ভাবে তাহাদের আঙ্কুশি! © কাজী নজরুল ইসলাম

বন্ধু শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ফাগুন আমার বসন্ত

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:১১



নিয়ম করে প্রতিবছর আমি একটা বিষয়ের জন্য অপেক্ষা করি। বসন্ত। জীবনের স্মরণীয় দুইটা বিষয় -যেগুলো একই সাথে হাস্যকরও বটে- বসন্ত চলে যাওয়ার পর অত্যধিক মন খারাপ থাকার ফলশ্রুতিতে একবছর কান্না করে দেয়া (সেটা সম্ভবত ইংরেজি ২০১২ সালের কথা) এবং ২০০৭ সাল শেষ হয়ে যাওয়ায় আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্না করে দেয়া। ২০০৭ সালের বিস্তারিত ঘটনার সংক্ষিপ্ত সারমর্ম ছিল এরকম- ক্রিকেট বিশ্বকাপের এই পুরো বছরটা আমি যেন বেঁচে ছিলাম জীবনের সেরা সময়ের মত করে। বিশেষ প্রাপ্তি কিছু যে ছিল তা কিন্তু নয়। বরং ক্লাস রোল খারাপ হয়ে গিয়েছিল। দুঃখজনক ছিল- বাংলা পড়াতেন যে ম্যাডাম (ইসমত আরা মুক্তা) তিনি এবং ইংরেজি পড়াতেন যে ম্যাডাম (জাহানারা ম্যাডাম) মিলে আমাকে 'ফাঁকিবাজ' উপাধি দিয়েছিলেন। ছাত্র হিশেবে দুজনই পছন্দ করতেন বলে তারা বিশেষ খেয়াল রাখতেন এবং বিশেষ এই নামটি দিয়েছিলেন। যদিও ম্যামদের সামনে বিষয়টি আমার জন্য ভয়াবহ হয়েছে ভাব দেখাতাম, সত্যিকার ঘটনা ছিল- বাইরে গিয়ে অন্যদের সাথে এক বিরাট যুদ্ধ জয়ের ভাব দেখাতাম। সাথে থাকত মৃদুহাস্য অহংকারী চেহারা। বিশেষ "অর্জনের" অহংকার। তবুও ২০০৭ এর বিদায়ে চোখের জল ঝরে গিয়েছিল। কারণ সদ্য কৈশোরে পা দেয়া আমি যেন বছরের সমস্ত মুহূর্ত প্রতিটা সেকেন্ড হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলাম। অনুভবের মাত্রা আমার নয়নের জল বিসর্জন করিয়েছে।

বসন্তের গল্প বলতে বসে ইংরেজি বছরের বিদায়ে কান্নাকাটির ফিরিস্তি করার উদ্দেশ্য একটাই- জন্ম থেকে আজ অবদি বেঁচে থাকা সমগ্র জীবনের সমস্ত দিনগুলোতে ওই একটিমাত্র বছরই উজ্জ্বল হয়ে আছে, যার সারাটা বছরই ছিল আমার বসন্ত।

পূর্ণ বছরের বসন্ত ওই একটা হলেও প্রতিবছরের বসন্ত আমি প্রতি ফাল্গুন ও চৈত্র মাসেই পাই। এই বসন্তে মন থাকে খুবই রোমান্টিক। দখিণা বাতাস গায়ে আছড়ে পড়তেই যেন সকল গ্লানি জরাজীর্ণ আবেশ কেটে যায়। মুহূর্তেই যেন ১৪ কিংবা ৩৪ বছর বয়সটাও ১৮ তে ফিক্সড হয়ে যায়। আমার জীবনে যদি আমি কোন কিছুর পূর্ণ অনুভব পেয়ে থাকি- সে এক "বসন্ত"। এই অনুভব ১০ বছর আগেও ১৮ বছর বয়সের মত করে পেয়েছি, সেই অনুভব আজও আমি পাই এবং ১৮ 'র মত করেই পাই। আমার প্রফুল্লহৃদয় বসন্ত বাতাসে আনন্দের সীমা অতিক্রম করে উল্লসিত হয়ে উঠে কবি সুকান্তের "আঠারো বছর বয়স" কবিতার মত করে। ঠান্ডা কিংবা গরম যেভাবে ইচ্ছা অনিচ্ছার বাইরে গিয়ে আমরা 'এমনিতেই' বুঝতে পারি, আমার মন বসন্তের আগমন ঠিক তেমনিই চিন্তার বাইরে থেকেই বুঝতে পারে। এটা আমার শক্তি। নিঃসন্দেহে ১৮ 'র শক্তি। এই ১৮ ই কেবল অনুভবে সেরা, এই ১৮ ইশ্রেষ্ঠ।

আমাদের অনেক কবি সাহিত্যিক এই বসন্তকে নিয়ে কিছু সংখ্যক গদ্যপদ্য লিখে গেছেন। গুরুদেব সুভাষ মুখোপাধ্যায় তো একটা পার্মানেন্ট ডিক্লেয়ারেশন দিয়েই গেছেন। গুরু বলে গেছেন- "ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত"। তিনি বাহ্যিক কোন আলামতের উপর ভিত্তি করে বসন্তের সত্যতা নিশ্চিত করতে রাজি নন। বরং তিনি দক্ষিণের ঝিরঝিরে হাওয়াকে গায়ে মেখেই সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছেন আজ বসন্ত বলে। তাছাড়া বসন্ত নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ আরো অনেকেই লিখেছেন গান, কবিতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্ত নিয়ে তার "মায়ার খেলা" গীতিনাট্যে
লিখেছেন-
‘আহা আজি এই বসন্তে,
এতো ফুল ফোঁটে,
এতো বাঁশি বাজে এতো পাখি গায়।’

কবিগুরু ছাড়া যেমন বসন্ত অসম্পূর্ণ তেমনি প্রেমের কবি নজরুলও বসন্তকে তুলে এনেছেন কবিতা ও গানে। কাজী নজরুল ইসলাম বসন্ত একটি গানে নিয়ে লিখেছেন-
‘বসন্ত আজ আসলো ধরায়,
ফুল ফুটেছে বনে বনে,
শীতের হাওয়া পালিয়ে বেড়ায় ফাল্গুনী মোর মন বনে।’

আরো লিখেছেন-
‘বসন্ত এলো এলো এলোরে,
পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহুরে।’

বসন্তকে কেন ঋতুরাজ বলা হয় একথা আর ব্যাখ্যার দাবি রাখে না। বরং এই বিষয়ে আলোচনা হওয়াটাই যেন পৃথিবীতে সময়ের সবচে' বাজে খরচ হবে। তবু কিছু নিন্দুক থেকেই যায় যারা বসন্তকে শ্রেষ্ঠ মানতে গড়িমসি করে। তাদের কারো কাছে বর্ষা সেরা ঋতু, কারো কাছে শীত মহান আবার কারো কাছে শরৎ অতিপছন্দের। বর্ষা ঋতুর আশীর্বাদে এদেশে ফসল ভালো হয়, এদেশের গাছে সবুজ প্রাণ আসে। এরকম কথার বিনিময়ে তারা বর্ষার শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে। এর বিপরীত দিকও যে আছে তা তারা খেয়ালে নিতে চান না। আবার শীতকালের পক্ষপাতীরা বলতে চান, এ বড় আরামের ঋতু, এ বড় আনন্দের ঋতু। গরমের রাঙা চোখ নেই, নেই কোন ঘামের অত্যাচার। সুতরাং শীত ঋতু সেরা ঋতু। আর শেষ দল শরৎকে তার স্বচ্ছ নীল আকাশ এবং তার বুকে ভেসে বেড়ানো শাদা মেঘের ভেলা দেখে, কিংবা জল থৈ থৈ করা বৃষ্টিহীন আবহাওয়া দেখে প্রেমে পড়েন। কিন্তু এ সবই শুভঙ্করের ফাঁকি। সবগুলো যুক্তিতেই আছে ফাঁকফোকর।

গাছে নতুন পাতা গজানোর দায়িত্ব নেয়া বর্ষার অতিবর্ষণ বন্যার সৃষ্টি করে কত মানুষের ভিটে কেড়ে নেয় সে হিশাব কে রাখে! তাছাড়া বর্ষার কারণে আমাদের পথঘাটের চেহারা বর্ণনা নাহয় না-ই করলাম। শীতে দুর্ভোগের কথা বলার দরকার আছে কি-না জানি না তবে আমাদের মতো দরিদ্র দেশের মানুষের জন্য শীত কিভাবে কাম্য (তাও আবার সেরা!) হতে পারে তা আলোচনার দাবি রাখে। শরৎকাল কি এমন রূপ দেখাবে যে সে সেরার দাবি করতে পারে! পারে না। কারণ ঝলক দেখানোর কিছুমাত্র বিষয় শরৎ ধারণ করে না। আমার কাছে শরৎ আর হেমন্তের মাঝে কোন পার্থক্য নাই। যদিও এই দুইটা ঋতু সম্পর্কে আমার মনে সামান্যতম বিশেষ অনুভূতি জাগ্রত হয় না। সে যাই হোক।

আসল ঋতু হলো বসন্ত। সেরা ঋতু হলো বসন্ত। বসন্ত ঋতুর রাজা। ঋতু-রাজ-বসন্ত। অন্যান্য ঋতুতে গাছের, মাছের, পাখির, বিলাসী মানুষের আরাম হলেও মানসিক তৃপ্তি টা ঘটে সেই বসন্তেই। জাগতিক সব বস্তু বর্ষা ঋতুতে ধুয়ে গেলেও, শরতে ফকফক করলেও, শীতে কুঁচকে গেলেও মনের কী লাভ? কিছুই না। মন জেগে উঠে বসন্তে, মন তাজা হয় বসন্তে, মন বেঁচে থাকে বসন্তে। পৃথিবীর সকল ঋতু, সকল বৈচিত্র, সকল সৌন্দর্য বসন্তের কাছে ম্লান। সব ফিকে। শুধু বসন্তই সেরা, বসন্তই শ্রেষ্ঠ।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৪

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আহা! কত প্রতীক্ষায় ছিলাম
আমি কত শত কবির হয়ে,
অশোক ফুল ফুটলো তবে
প্রতিটি মানবের অনুভবে।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৩৬

বন্ধু শুভ বলেছেন: আহা বসন্ত! আহা বসন্ত!!

২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:১০

রাজীব নুর বলেছেন: আমি যদি পারতাম আপনার মতোণ করে সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৩৮

বন্ধু শুভ বলেছেন: দাদা, আমি তো আপনাদেরই অনুসরণ করি। সব আপনাদেরই অবদান।

৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:১৭

অক্পটে বলেছেন: প্রাঞ্জল! অনেক যতনে সাজিয়েছেন লেখাটা। মুগ্ধ করে রেখেছিলেন যতক্ষণ পড়লাম।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:০৪

বন্ধু শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা। আপনার মন্তব্য আমার বড় প্রাপ্তি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.