নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মুক্তি আমার আলোয় এই আকাশে আমার মুক্তি ধুলোয় ধুলোয় ঘাসে ঘাসে

বন্ধু শুভ

আনকোরা যত নন্ভায়োলেন্ট নন্-কো’র দলও নন্ খুশী। ‘ভায়োরেন্সের ভায়োলিন্’ নাকি আমি, বিপ্লবী-মন তুষি! গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কন্ফুসি! স্বরাজীরা ভাবে নারাজী,নারাজীরা ভাবে তাহাদের আঙ্কুশি! © কাজী নজরুল ইসলাম

বন্ধু শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাতকাহন : একটি সাধারণ পর্যবেক্ষণ (১)

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১২



"অমুক আমার প্রিয় লেখক" এইরকম কথাবার্তা অন্তত সমরেশ মজুমদারের বেলায় বলা বাহুল্য বৈ আর কিছু নয়। তবুও বলার জন্যই বলতে হয়। তিনি সত্যিই আমার অতি পছন্দের। তাঁর সাতকাহন আমার বেশি পছন্দ নাকি ত্রিরত্ন (উত্তরাধিকার+কালবেলা+কালপুরুষ) তা নিয়ে যে কোন বোদ্ধার সাথে আমার মতপার্থক্য থাকতেই পারে। এমনকি কোনটি সেরা তা নিয়ে সাহিত্যমনা কারোর সাথে মৃদু তর্ক হতেই পারে। তথাপি সর্বোপরি সমরেশ মজুমদারের লেখা যে একজন পাঠককে ডুবিয়ে রাখে তাতে কারোর-ই দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ নেই।

সাতকাহন বইটি (উপন্যাস) সম্পর্কে অনেকদিন আগে থেকেই অনেক আলোচনা শুনছিলাম। তবে এটা একটা "নারীবাদী ঘরানার বই" কথাটা শুনে কখনো কিনতে আগ্রহ দেখাই নি। অবশেষে আমার জনৈক বন্ধু বইটি আমাকে উপহার দিয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সেশনমেট এবং একসময়ের বন্ধু ছিলেন। তার উপহার পেয়ে বইটা আমার হস্তগত হলেও পড়ার বিশেষ আগ্রহ পাই নি। কিন্তু শেষে যখন বইটি পড়তে শুরু করলাম তখন থেকে আবার সেই "সমরেশ-ফ্যাক্টর" কাজ করতে শুরু করলো। সুতরাং একসময় পড়া শেষও হয়ে গেল। ফলাফল আমি যথারীতি মুগ্ধ। আমি আমার বন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। উনি এটা না দিলে হয়তো কোনদিনই পড়া হতো না।

এবার আসা যাক নারীবাদী ঘরানার বিষয় নিয়ে। বইটি নারীবাদী ঘরানার কি^না সেটা বিচার করবেন বইটির পাঠক নিজে। স্বতন্ত্র ব্যক্তিসত্তায় ধারণা হয়তো ভিন্ন হবে, কিন্তু বইটি নারীবাদের কোন অংশে পড়ে তা আমার বোধগম্য নয়। বইটি নিশ্চিতভাবে একটি মেয়ের সংগ্রামী জীবনের গল্প। দীপাবলী (নায়িকা) তার জীবনে যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছেন সেগুলোকে প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো-
১. হিন্দু ধর্মীয় সংস্কারজনিত সমস্যা,
২. চাকুরীসূত্রে প্রশাসনিক বিষয়জনিত সমস্যা,
৩. সাধারণ সামাজিক সমস্যা।
এসব ছাড়াও দুইটা বিষয় উল্লেখযোগ্য। এক. বন্ধুদের হঠাৎ কাছের ভাবা আবার হঠাৎই দূরের ভাবা, ২. দীপাবলীর উন্নাসিকতা। তবে কোনভাবেই পুরুষতান্ত্রিক সমস্যা দৃষ্টিগোচর হয় না।

এই সমস্যাগুলোকে তুলে ধরার মাধ্যমে লেখক মূলত একজন মানুষকেই পরিচিত করতে চেয়েছেন যিনি এমন একটা সমস্যার মধ্যে আছেন। কিন্তু একদল মানুষ আছেন যারা পুরো বিষয়টিকে নারীবাদের মোড়কে প্রতিষ্ঠিত করতে মরিয়া। আরও একটি বিষয় হচ্ছে, লেখক যেখানে দীপাবলী চরিত্রের মাধ্যমে একজনকেই তুলে ধরেছেন সেখানে কেউ কেউ বিশেষ করে নারীবাদীরা সুবিধা নেয়ার জন্য ভারতবর্ষের সকল নারীকে দীপাবলীর মানদন্ডে বিচার করে অভিযোগ করতে থাকে। একেকজন যেন নারীবাদের প্রিয়া সাহা! সত্যিকার অর্থে নারীবাদের স্বরূপ কী তা "নারীবাদী ঘরানার উপন্যাস" বলা লোকজন জানেন কি না তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হতে পারে।

লেখক ধন্যবাদ পাবেন এজন্য যে তিনি সবগুলো সীমাবদ্ধতা কোন-না-কোন চরিত্রের মাধ্যমে পরিস্কার করার চেষ্টা করেছেন। হিন্দু ধর্মীয় বিষয়গুলোর কথা লেখক বারংবার উল্লেখ করেছেন। দীপাবলীর ঠাম্মা (দাদি) যে সব বিষয়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন তা তিনি দীপাবলীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন। এই বিষয়টি বরং উপন্যাসের বড় অংশ জুড়ে বিস্তৃত। কিন্তু সমালোচকরা ধর্মীয় গোঁড়ামির বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খুলেন নি; আছেন নারীবাদ নিয়ে। সামাজিক কিছু বিষয়ের সীমাবদ্ধতার কথা উঠে এসেছে উপন্যাসটিতে। এই সমস্যাগুলো পুরুষতান্ত্রিক নয়, বরং সামাজিক কাঠামোগত সমস্যা। আমাদের ভারত বর্ষে ইউরোপীয়রা বাস করেছে সত্য তবে দেশটাকে ইউরোপ বানিয়ে দেয় নি। আর আমরাও ইউরোপীয়দের মতো কাঠামোর বাইরে বেরিয়ে আসতে পারি নি। সমস্যা সমাজের রন্ধ্রগত। এখানে নারী-পুরুষ ভাগ করা নিছকই বালকসুলভ কাজ।

বাকি যে ব্যাপারগুলো থাকে তা আরো বিষয়বিচ্ছিন্ন। যেমন প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দীপাবলী যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে তা সরকারি চাকুরীতে যা হয় এখানেও তা হয়েছে। এটাকে পুরুষ নারী দিয়ে বিচার করার সুযোগ নাই। কারণ প্রশাসনের বিষয়গুলো চাকুরি না হারানোর গায়েবি আশ্বাস আর সুবিধা ভোগী কিছু দলীয় লোক কিংবা প্রশাসনের নানা পদের লোকদের সুবিধা দেয়া লোকদের কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। এখানে জেন্ডার কোন বিষয় না। তাছাড়া দীপাবলীর কলকাতার অফিসে কিন্তু নারীদের ঘুষ খাওয়ার বিষয়টি লেখক সচেতনভাবেই উল্লেখ করেছেন। সুতরাং বিষয়গুলোর বিশ্লেষণ বিচারে এই উপন্যাসকে কোনভাবেই নারীবাদী ঘরানার বলা চলে না। উদার দৃষ্টিতে দেখলে ঘুষ নেয়া বা কোন অপরাধ করা নারী-পুরুষ বৈষম্যের কারণে হয় না।

আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হচ্ছে দীপাবলী নিজের দু'টি সীমাবদ্ধতার কারণে অধিকাংশ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে বন্ধুদের প্রতি তার হঠাৎ ভালোলাগা কাজ করা আবার হঠাৎ খারাপ লাগা কাজ করা। আধুনিক নারীবাদীরা একে ক্লিনিক্যালি "মুড সুইং" টার্ম ব্যবহার করে বৈধতা দানের চেষ্টা করে। আর কিছু অংশে দীপাবলীর উন্নাসিকতাকে দায়ী করা যায়। অন্তত অসীম, শমিত এবং অলোকের সাথে দীপাবলী অধিক মাত্রায় উন্নাসিকতা দেখিয়েছে।

সর্বোপরি উপন্যাসটি অসাধারণ। তবে কোনভাবেই নারীবাদী ঘরানার নয়। তবে দুঃখজনক হচ্ছে, যিনি আমাকে বইটা উপহার দিয়েছেন তিনি একজন নারীবাদী। তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক নয়। প্রায় নিশ্চিত করে বলা যায়। এবং ইনি উক্ত মনোভাব থেকেই আমাকে বইটি দিয়েছেন।

পরের পর্বে উল্লেখযোগ্য লাইনগুলো নিয়ে বলবো। ধন্যবাদ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৫

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: সমরেশ মজুমদার আমার ছোটবেলার পসন্দের লেখক
...............................................................................
তার এই বইটি আমার সংগ্রহে আছে এবং অনেক আগে
পড়া বিধায় স্মৃতির পাতায় আলোচনা করার মতো তথ্য
নেই, তবে বড় হবার পর কেন জানি তার লেখার স্টাইল
আর আকর্ষন করে না ।

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩১

বন্ধু শুভ বলেছেন: কার লেখা আপনাকে বেশি টানে? বিশেষত বড়বেলায়।

২| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:০৭

পুলক ঢালী বলেছেন: ত্রিরত্নে সময়ের পরিবর্তনে সমাজ বিবর্তন উঠে এসেছে। সাতকাহন ব্যতিক্রমী। একটা মেয়েকে যে কত প্রতিকুলতার মুখোমুখী হতে হয় তা যেমন উঠে এসেছে তেমনি মেধা দিয়ে অজপাড়ার (চা বাগান বা শিলীগুড়ি) একটা মেয়ের ভাগ্য বিরম্বনা কাটিয়ে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার কাহিনীও বর্নিত হয়েছে।
আপনি যেগুলো উন্নাসিকতা বলছেন সেটা হয়তোবা জীবনের শুরুতেই কূটিলতার মুখোমুখি হয়ে পোড় খাওয়া অভিজ্ঞতার ফসল হিসাবে এসেছে।
ভাল থাকুন।

(অনেক আগে যখন দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে সাতকাহন প্রকাশিত হতো তখন পড়েছি আবার পরে বই আকারে উপন্যাসটি পড়েছি। এখন ভুলে যাওয়া ভাসা ভাসা স্মৃতি নিয়ে মন্তব্য করলাম যেটা আসলে করা উচিৎ নয় :) )

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:২১

বন্ধু শুভ বলেছেন: হতে পারে। তবে আমার কাছে উন্নাসিকতা মনে হয়েছে। এটা নিজস্ব পারসেপশন।

৩| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৮

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: পর্যালোচনা ভাল লাগলো।
শুছেচ্ছা নিন।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:২২

বন্ধু শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা। অনুপ্রেরণা পেলাম।

৪| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর বিশ্লেষন করেছেন।
দীপা চরিত্রটা বহু মানুষের মনে দাগ কেটেছে।
বহু আগে পড়া অথচ আজও সাতকাহন এর ঘটনা গুলো ভুলিনি।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:২৬

বন্ধু শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা। আমারও দাগ কেটেছে দাদা, সত্যি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.