নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইসলাম হলো শান্তির বাণী।।।।\nfacebook id www.facebook.com/mujib.boksh

বকস মুজিব

আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। আমি মুসলিম এটাই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়।।।

বকস মুজিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধন্যবাদ জামানী সরকার

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫০

জার্মানিকে যারা ''নাৎসীর দেশ'' বা ''হিটলারের গোষ্ঠী'' বলে জানেন, তাদের জন্য বলছি।- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের জার্মানি আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের জার্মানির মধ্যে অনেক ফারাক। লক্ষ লক্ষ ইহুদী, ভিন্ন রাজনৈতিক মতবাদে আর ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসীদেরকে গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে, কিংবা লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করার ভয়াবহতা কেবলই ইতিহাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে জার্মানরা তাদের জীবনে মানবিক হবার সবচেয়ে বড় শিক্ষাটা পেয়েছে। বর্তমান জার্মানরা আসলেই অনেক মানবিক আর সভ্য।
জার্মানির পাড়ায় পাড়ায় এখন আহত, অসুস্থ আর ঠিকানাহীন পশু-পাখিদের সেবা করার জন্য সেচ্ছাসেবী সমাজকর্মীদের সংঘ আছে। সরকারী তহবিল যারা পাননা, তারাও নিজেদের পকেট থেকে চাঁদা দিয়ে অসুস্থ আর ঠিকানাহীন পশু-পাখিদের সেবা করেন। যার খরচ বছরে লক্ষ লক্ষ ইউরো। আর মানুষের সেবা করার বেলায় তো জার্মানদের তুলনাই নেই। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।
জার্মানরা সম্প্রতি আট লক্ষ শরণার্থীদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, যা দেখে আমি মোটেও অবাক হইনি। বরং একজন জার্মান নাগরিক হিসেবে আশা করছিলাম- জার্মানরা এ মানবিক আচরণটি দেখাবে। যুদ্ধবিদ্ধস্থ সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, কসভো, ইরিট্রিয়া সহ আরো অন্যান্য দেশের বেশিরভাগ শরণার্থীরাই মুসলিম, এবং যার সংখ্যা খুব শীঘ্রই হয়তো দশ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে। জার্মান সরকার ও বিরোধী দলগুলোর আন্তরিকতার সঙ্গে সঙ্গে এ বিশাল সংখ্যক শরণার্থীদেরকে সাদরে গ্রহণ করতে জার্মান সাধারণ নাগরিকদের স্বতস্ফূর্ততাও বিশ্ববাসী দেখেছে। মাসের পর মাস ধরে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়া বিপদগ্রস্থ এসব শরণার্থীদেরকে আশ্রয় দিতে প্রয়োজনীয় বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র আর চিকিৎসার সংস্থানে সরকারকে সহযোগিতা করছেন দেশের অসংখ্য বিত্তবান ব্যাবসায়ী আর সুপরিচিত নাগরিকেরা। আর যারা আর্থিক সহযোগিতা করতে পারছেন না, তারাও এগিয়ে এসেছেন শিশুদের জন্য বস্ত্র, খেলার সামগ্রী, কিংবা কিছু চকলেট নিয়ে। ''শরণার্থীরা স্বাগতম''- লিখে অনেকে দাঁড়িয়ে আছেন সীমান্ত নিকটবর্তী রেল ষ্টেশনগুলোতে।
আট বা দশ লক্ষ শরণার্থীদেরকে প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে তাদেরকে কয়েক বছর ধরে বসিয়ে খাওয়ানোর সামর্থ জার্মানির আছে। কিন্তু এতে সমস্যা দুটো।- প্রথমত সক্রিয় নাৎসী সদস্যরা সব সময়ই জার্মানিতে শরণার্থী বা বিদেশী অভিবাসী গ্রহণের বিরোধী। নাৎসী সদস্যরা এ বছর গত আট মাসে ১৫০টিরও বেশি শরণার্থীদের আশ্রয়কেন্দ্রে আগুন দিয়ে সেগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে। জার্মান সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী খুবই শক্ত হাতে এ সমস্যাটা মোকাবেলা করছে। তারা অপরাধীদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করছে, এবং প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে দিনরাত নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিয়েছে।
২য় সমস্যাটি হচ্ছে, মুসলমান ইমিগ্রেন্টদেরকে আশ্রয় দিতে সাধারণ জনগণের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করে। মুসলমানরা যেখানেই যায়, সেখানেই তাদের ইসলাম প্রতিষ্ঠা আর জিহাদী কর্মকান্ডকে প্রাধান্য দেয়,- এটা জার্মানদের অজানা নয়। ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সকে দেখেও জার্মানরা এ শিক্ষা পেয়েছে। গত কদিন থেকে ফেসবুকে দেখেছি- আমার অনেক বাঙলাদেশী স্যাকুলার বন্ধুরাও ভবিষ্যত জার্মানিকে নিয়ে অনেক ধরনের আশংকা প্রকাশ করছেন। তাদের জন্য বলছি,- এই লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদেরকে গ্রহণ করার পূর্বেই বর্তমান জার্মান সরকার নাগরিকদেরকে আশ্বস্ত করেছেন, সিরিয়া ছাড়া বাকি শরণার্থীদের ৯৯ ভাগকেই দ্রুত তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এই ৯৯ ভাগ শরণার্থীরাই জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার যোগ্যতা রাখেনা। কারন, তারা অবৈধভাবে ইউরোপে ঢুকেছে এবং তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য জার্মানির অর্থনৈতিক আর সামাজিক সুবিধা ভোগ করা। যুদ্ধবিদ্ধস্থ দেশ বলে সিরিয়ান শরণার্থীদেরকে রাখা হবে সর্বোচ্চ তিন বছর। তিন বছর পর শুরু হবে সিরিয়ানদেরকেও দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া। তাই, জার্মানিতে আশ্রয় নেয়া এই আট বা দশ লক্ষ শরণার্থী কোনভাবেই স্থায়ীভাবে জার্মানিতে থেকে যাওয়ার সুযোগ পাবে না।
সরকারী হিসেব মতে, শুধুমাত্র সিরিয়া থেকে আগত শরণার্থীদের মাত্র শতকরা ১৬ ভাগের জার্মানিতে কোনো না কোনো কাজ করার ক্ষমতা আছে। আর জার্মানিতে গ্রহণযোগ্য উচ্চ শিক্ষিত সিরিয়ান শরণার্থীদের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি নয়। যাদেরকে তাদের যোগ্যতা ও কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে ব্লুকার্ড বা জার্মানিতে কাজের অনুমতি দেয়া হবে।
তাই জার্মানি সিরিয়া হয়ে যাবে, এমন আশংকার কিছু নেই। তবে জার্মানরা আট লক্ষ শরণার্থীকে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এমনকি শিশুদের স্কুলে পাঠানো এবং ভাষা শেখানোর ব্যবস্থাসহ আশ্রয় দিয়ে যে মানবতার পরিচয় দিয়েছে তা সত্যিই প্রসংশনীয়। তাই হয়তো এখন শরণার্থীদের মুখে খুব বেশি শোনা যায়- আই লাভ জার্মানি, আই লাভ মার্কেল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.